somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর ষড়যন্ত্রেই 'গুন্ডে' সিনেমার ইতিহাস বিকৃতি

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি গুন্ডে সিনেমায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যে বিকৃতিসাধন হয়েছে তাতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং সংক্ষেপে 'র' এর ইন্ধনের সন্দেহ করা হচ্ছে।

ভারত বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এই চেষ্টার মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলিউড এবং ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ। স্লো পয়জনিং এর মত আমাদের কৃষ্টি কালচার আচার-ব্যবহার, উৎসব সবখানেই তারা এর মধ্য দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।



এরই ধারাবাহিকতায় তাদের নতুন ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হচ্ছে 'গুন্ডে' যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ, বাঙালী জাতিকে ভারতীয় ইতিহাস গেলানো সম্ভব হয়। যদি বাংলাদেশের মানুষ সেই ইতিহাস মেনে নেয় তাহলে তো হলই যদি নাও নেয় তাতেও 'র' এর খুব একটা ক্ষতি নেই।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কয়েকটি মতামত প্রচলিত আছে। বাংলাদেশের মানুষেরা মনে করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই। লড়াইটা মূলত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এবং তাদের দালালদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই। ভারতীয়রা বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধে আমাদের সহায়তা করেছে। ভারতের এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের প্রতি বাংলাদেশের জনগণও কৃতজ্ঞ।

দ্বিতীয় মত, উপরের মতের সব কিছুই সমর্থন করে শুধু শেষাংশে এসে মনে করে ভারতীয়রা সহায়তা করেছে তবে সেটা নিজেদের স্বার্থেই এবং স্বাধীনতার পরে এ তেতাল্লিশ বছরে তারা সেটা সুদে আসলে উসুল করে ফেলেছে।

তৃতীয় মত, পাকিস্তানের তৎকালীন দালালদের অনুসারীদের। তারা মনে করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ যাতে ভারতের হস্তক্ষেপ তথা ষড়যন্ত্রের ফলে পেয়ারা পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়। এরা আবার উপরের দ্বিতীয় মতের শেষাংশের সাথে একমত পোষন করে।

চতুর্থ মত, এরা মনে করে যুদ্ধটা মূলত ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণ এবং ফলাফল নিয়ে মতভেদ থাকলেও যুদ্ধটা যে হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই বিষয়ে তাদের কোন মতভেদ নাই। আশ্চর্য হলেও সত্য এই মতের অনুসারী বাংলাদেশের খুব একটা না থাকলেও ভারত এবং পাকিস্তানে এই মতের অনুসারীদের সংখ্যাই বেশি।

পাকিস্তানীরা এই কথা বলে নিজেদের স্বান্তনা দেয়। কারণ বাংলাদেশের গেরিলা যোদ্ধাদের থ্রি নট থ্রি বন্দুকের সামনে তখনকার সময়ের অন্যতম সেরা আর্মির ভরাডুবি এবং ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ আত্ম সমর্পণ প্রচণ্ড লজ্জার তার চেয়ে বরং ভারতীয় ষড়যন্ত্রকে যুক্ত করে তাদেরকেই প্রধান শত্রু বানাতে পারলে পুটুর ব্যাথা কিছুটা কমে।

অপরদিকে যুদ্ধের পুরোটা সময়ে ময়দানে না থেকে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোন্দল সৃষ্টির অব্যাহত চেষ্টা করেও ভারতীয়রা দাবী করে যুদ্ধটা ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ।


দুই

বাংলাদেশের জন্ম নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন নাম করা সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, নাম ব্যবহার করে। ক'দিন আগেও বিবিসি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

তো বলছিলাম 'র' কিভাবে এক ঢিলে দুই পাখি মারছে সেই কথা। ধরুন গুন্ডে সিনেমায় এই ভয়াবহ মিথ্যাচার ও ইতিহাসবিকৃতি করেও ভারত পার পেয়ে যেত/যায় তাহলে তো তাদের স্লো পয়জনিং এর যে কৌশল সেটা সফল হল।

এখন ধরেন এই ঘটনার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কি হবে ? প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মতের অনুসারীরা এর প্রতিবাদ করবে। এখানে বল রাখা দরকার প্রথম মতের অনুসারীরা ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ও বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে চতুর্থ মতের অনুসারীরা ভারত অথবা পাকিস্তানের প্রতি দালাল মানসিকতা পোষন করে।

দ্বিতীয় মতের অনুসারীরা ভারতবিদ্বেষী এবং তৃতীয় মতের অনুসারীরা ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের প্রতি সহানূভূতিশীল এবং ভারত বিদ্বেষী। যখন এই ঘটনার প্রতিবাদ আসবে তখন এক কাতারে দাঁড়াচ্ছে কারা ?

প্রথম মত যারা বাংলাদেশের অনুসারী, বাংলাদেশের দালাল, দ্বিতীয় মত যাদেরকে মোটা দাগে বলছি ভারতবিদ্বেষী (বাংলাদেশ বড় ফ্যাক্টর না ভারতের বিরোধীতা করাই আসল) তৃতীয় মত, যারা নিজেরাই মুক্তিযদ্ধু সম্পর্কে উল্টো মত পোষন করে কিন্তু ভারত বিদ্বেষের সুযোগ থাকায় মোটা দাগে প্রথম ও দ্বিতীয় মতের সাথে তাদেরকেও একমত হতে হচ্ছে।

এবং পুরো খেলার মূল পয়েন্টটা হচ্ছে এখানেই। অর্থাৎ 'র'র এখানে রিভার্স খেলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিরোধ পূর্ণ তিনটি মতকে এক কাতারে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং যার মূল অংশটার (দ্বিতীয় ও তৃতীয় মত) ভারত বিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি একটা কমন মত দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে এবং যেটা অবশ্যই পাকিস্তানী বা তার দালালদের প্রচারিত মত না।

এখানে বলে রাখা দরকার চতুর্থ যে মত সেটার দিকে তাদের তেমন আগ্রহ নেই মূলত দু'টো কারনে প্রথমত, যে নিজের দেশে থেকে নিজের দেশের জন্ম নিয়ে বাইরের দেশের মতকে সমর্থন করে অনুসরন করে সে তো আগে থেকেই বেজন্মা, দ্বিতীয়ত, তারা তো অলরেডি দালাল হয়ে গেছে এবং কারো না কারো পক্ষেই কথা বলছে তাদের নতুন করে দূষিত করার কি দরকার।


তিন

এখন এই যে এত ধোয়াশা, কুয়াশা এত সবের পেছনে কি শুধু আমি উপরে যা বললাম তাই ! ব্যাক্তিগতভাবে আমার তা মনে হয় না। কেন মনে হয় না। তার পেছনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনা স্মরনে আনা উচিৎ।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত অগভীর সমুদ্রের দুটো গ্যাস ব্লক ভারতীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসিকে বরাদ্দ দিয়েছে। আর চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ভারতের কাছ থেকে আরো পাঁচশত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে সরকার।

এবং এই পুরো ঘটনাটাই এক রকম চাপা পড়ে গেছে গুন্ডে নামের একটা সস্তা সিনেমার ইতিহাস বিকৃতিতে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিঝুম মজুমদার: সত্যের পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

নিঝুম মজুমদার: সত্যের পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন যত দ্রুত বদলাচ্ছে, তত দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সত্যের রূপ—কেউ লুকিয়ে ফেলতে চায়, কেউ বিকৃত করে, কেউ আবার নিজের স্বার্থে তা ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামাজিক আলাপ

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০১

সেদিন দেখলাম নায়িকা বুবলি কোন এক প্রোগ্রামে জ্ঞান দিচ্ছেন কিভাবে সংসার করতে হয়, কিভাবে সঠিক লাইফ পার্টনার চয়েজ করতে হয়। অথচ তার নিজের লাইফ পার্টনার চয়েজ, সংসার কোন কিছুরই ঠিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্রপতি হিসাবে ড. ইউনুসের বিকল্প বাংলাদেশে নেই !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৪


রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাহেবের মন ভালো নেই। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে তিনি রীতিমতো কোণঠাসা! শেখ হাসিনা ভারতে প্রস্থানের পূর্বে তাকে জানিয়ে যান নি। শেখ হাসিনা চুপ্পু সাহেবকে উনার দুরবস্থার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×