somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখের জীবন -জীবনের সুখ

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২১ শতকে সুখের অন্বেষায় ২৫০০ বছর আগের এ্যরিস্টলের চিন্তা- Nicomachean Ethics । এ্যরিস্টটল বলেন, সুখী হতে হলে "First, one must be completely virtuous"। মানুষকে পরিপূর্ণভাবে সুনীতিসম্পন্ন, ধর্মচারী হতে হবে। কোন মানুষই পরিপূর্ণরুপে ধর্মচারী হতে পারেনা যদি তার ভিতর দয়া আর প্রেম না থাকে। কিছুদিন আগে তাবলীগের এক দল আরেকদলকে লাঠি নিয়ে তাড়া করে। এক ভাই কাতর চিত্তে বলছেন- ভাইকে আমাকে মারো, কিন্তু নদীতে ফেলে দিওনা। আমি সাঁতার জানিনা। কিন্তু উন্মত্ত ধর্মোম্মাদের দল লোকটিকে তাড়া করে নদীতে ফেলে দেয়। একজন যখন আরেকজনকে মারার জন্য লাঠি হাতে নেয়-তখনই তার ধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হয় । কারণ- তারতো প্রেম নাই। আর যার প্রেম নাই , তার ধর্মও নাই। নবী সাঃ ও বলেছেন- "তাঁর কাছে যাও , যে তোমার কাছে আসেনা। তাকে দাও, যে তোমাকে কিছুই দেয়না। যে তোমার নিয়ত ক্ষতি করে তার তুমি কল্যাণ কামনা করো।"

মনিপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সলের ডঃ হেগডের কথা- মানুষ যখন কারো কল্যাণ কামনা করে তখন তার দেহের কোষগুলোও নাকি উৎফুল্ল থাকে, আনন্দে থাকে। পাপ মানুষকে সাময়িক আনন্দ দেয় আর পূণ্য মানুষের চিরস্থায়ী আনন্দের দরজা খুলে দেয়।

ছোট ছোট আনন্দ মানুষকে বড় বড় বেদনার দিকে নিয়ে যায়। ছোট ছোট বেদনা নিয়ে যায় বড় বড় আনন্দের দিকে । সুখের জন্য মন যা করতে চায়- সেটা কখনোই করা যাবেনা। মন যেটা করতে চায়না বরং সেটা করতে হবে। যেমন- মন সকালে ঘুম থেকে ওঠতে চায়না। ওঠতে হবে। মন শরীর চর্চা করতে চায়না, সেটা করতে হবে। মন বেহুদা আড্ড দিতে চায়, সেটা দেয়া যাবেনা। মন জাংকফুড খেতে চায়, সেটা খাওয়া যাবেনা। বিখ্যাত নিউট্রিশান এক্সপার্ট জিল ক্যাসল বলেন- সুখের জন্য নিজের শরীরটাকে ফিট রাখতে হবে। আর মানুষ যে রকম খায়। তার শরীরও সে রকম হয়। জাংক ফুড খেলে শরীরও জাংক হবে। চর্বি যুক্ত খাবার খেলে শরীরও চর্বি যুক্ত হবে। সবুজ, সতেজ খাবার খেলে শরীরও সতেজ থাকে।

যতই দুঃখ আর যন্ত্রণাদায়ক হোক সুখের জন্য বাইসকে মানে অসৎ অভ্যাস, দোষ আর লোভকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। লোভ হলো পাপ, আর আকাঙ্খা হলো ট্রাপ। মানুষের আকাঙ্খা যত বাড়তে থাকে , তার সুখ তত কমতে থাকে এবং সে আকাঙ্খার ফাঁদে ততই জড়াতে থাকে। প্লেজার আর হ্যাপিন্যাস দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। বেশীরভাগ মানুষই প্লেজারের দিকে ছুটে হ্যাপিন্যাসের দিকে ছুটেনা। ঘুষ খেয়ে বড়লোক হওয়া, কুঅভ্যাস রপ্ত করা, ক্ষমতার প্রদর্শণ করা, দাম্ভিকতা, অহংকার এসব মানুষকে সাময়িক প্লেজার দেয়, কিন্তু হ্যাপিন্যাস দেয়না। কারো প্রতি দয়া, সহানুভূতি, জাস্টিস মানুষকে প্রকৃত সুখ দেয়। এ্যরস্টটলের মতে কামনার চেয়ে মিতাচার ভালো ; অর্থের চেয়ে জ্ঞান ভালো; রক এণ্ড রোল জীবনের চেয়ে নিষ্ঠাবান জীবন ভালো।

শুধুই ইন্দ্রিয়গত আনন্দ হলো পশুর। মানুষের আনন্দ হলো মানবিক প্রশান্তির। ইন্দ্রিয়গত আনন্দ শুধুই কামনাতৃপ্তি। যেটা পশুর ন্যাচার। চাবুকের ন্যাচার হলো কাটা, পশুর ন্যাচার হলো খাওয়া আর কামনাতৃপ্তি করা। মানুষের ন্যাচার হলো-চিন্তাশীল হওয়া। গভীর চিন্তাশীলতা মানুষকে শুদ্ধাচার হিসাবে তৈরি করে। শুদ্ধাচার জীবনের জন্য পরিমিত এক্সটারনাল গুডস দরকার- যেমন-বাসস্থান, সুবন্ধুত্ব, খাদ্য। অভুক্ত উদরে শুদ্ধাচারী হওয়া যায় না। ‘Hungry people are angry people’।

একজন শুদ্ধাচারী মানুষ কখনোই নিজেকে প্রদর্শন করেনা। সে দেখে কিন্তু দেখায়না। মানুষের উচিত সে যতটুকু প্রদর্শণ করে তারচেয়ে বেশি যেন থাকে। সে যতটুকু বলে তার চেয়ে বেশি যেন সে জানে। মানুষ ভালো কিছু করলে সে সবাইকে তাঁর কথা বলে। আর মানুষ মহান কিছু করলে সে কথা তাকে আর বলতে হয়না। বরং সব মানুষই তখন তাঁর কথা বলে। মানুষের যেমন ব্যক্তিগত শুদ্ধাচারের দরকার আছে, তেমনি পুরো সমাজ ব্যবস্থারও শুদ্ধাচার প্রয়োজন। ব্যক্তিগত শুদ্ধাচার আর সামাজিক ন্যায়বিচার পারষ্পরিক সম্পর্কিত। সাধারণ মানুষের বাহ্যিক চেহারার জৌলুস যখন নেত্বস্থানীয় মানুষের চেহারার জৌলুসের সাথে তেমন পার্থক্য হবেনা -বুঝবেন সেই সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা আছে। আর সেই সমাজটি সুখের সমাজ। এই একটি ফরমূলায় দেখবেন- আমাদের প্রার্থীদের চেহারা মাশাল্লাহ চর্বিতে চকচক করছে। আর ভোটারদের অবস্থা অভুক্ত, ভুখানাঙ্গা। আমলাদের চেহারা চকচক করছে- মজুরের চেহারা ভুখানাঙ্গা। সুতরাং এই সমাজটি সুখের নয়। শুদ্ধাচার থেকে এই সমাজ যোজন যোজন দূরে।

এ্যরিস্টটলের কথায় ফিরে আসি। সুখের জন্য পুরিপূর্ণ শুদ্ধাচারী ধর্মময় জীবন যাপন দরকার। যার মাঝে প্রেম থাকবে-প্রাণের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি। দার্শনিক Epictetus এতো সুন্দর করে বলেছেন-" আমি যদি বুলবুলি হতাম তবে বুলবুলি পাখির মতো গান করতাম, যদি হংস হতাম তবে জলেতে কলরোল করতাম।
আমি একজন চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী মানুষ হয়েছি তাই স্রষ্টার বন্দনা হৃদয়ে গুণ্জরণ করি। আর এতেই আমার সুখ, এতেই আমার প্রশান্তি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×