কোনো পরিসংখ্যান ছাড়া একেবারে ডাইরেক্ট কিছু কথা বলি। আগে আমাদের গ্রামে টেলিভিশন ছিলো একেবারে হাতেগুণা দুটি। তাও সাদা-কালো। একটা ছিলো মামুনদের। আরেকটা আহমদউল্লাহ স্যারের বাড়িতে।
টেলিভিশনে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান কিংবা বিশ্বকাপের কোনো খেলা দেখতে পাড়ার মানুষ ঐ দুই বাড়িতেই ভীড় করতো।
এখন সেদিন আর নাই। বলতে গেলে ঘরে ঘরেই রঙীন টিভি।
হারিকেন জ্বালিয়ে আমরা পড়ালেখা করতাম। হারিকেনের চিমনি আম্মা সবসময় পরিষ্কার চকচকে করে রাখতেন। ঘরে যে কোনো কিছুর অভাব থাকুক , সেটা পোষানো যেতো। কিন্তু কেরোসিন যেন ঠিকঠাক থাকে সেদিকে আম্মা খেয়াল রাখতেন। নাহলে পড়ালেখার সমস্যা হবে। এখন, বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। হারিকেন আর কেরোসিন নাই বললেই চলে।
যুবক ছেলেরা আগে মোমবাতির ব্যবসা করতো। এখন সেই মোমবাতি দেখা যায় শুধু জন্মদিনের কেকে আর মাজারে।
চিটচিটে তেলের গন্ধমাখা পুরানো ছেড়াফাঁড়া বই পড়েই আমাদের স্কুল জীবন গেছে। এখন বছরের প্রথম দিনেই শিশুরা বই পায়। মহা আনন্দ নিয়ে পড়ে।
পাড়ায় কোনো চার চাকার "কারগাড়ি" আসা দূরের কথা। মোটর সাইকেল যার ছিলো সে ছিলো বিশাল বাহাদুর। তার কারিশমা দেখে কে? একবার কার যেন একটা কারগাড়ি আসলো। তখন টয়োটা, হোন্ডা এসব কিছুই চিনতাম না । সেই গাড়ীর পেছনে শুরু হলো ল্যাংটা ছেলেদের মিছিল। চারপাঁচ জন করে গাড়ীর ওপরে ওঠে, তারপর সুরুৎ করে নেমে পড়ে। অনেকটা কুল রানিং ছবির-ববস্লাইয়ারসের মতো। এখন সেই গ্রামে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিগত দামি গাড়ীর মালিক। আর মোটর সাইকেল এখন দশ বিশ না। শত শত।
মফস্বল শহর না, বিভাগীয় শহরেও কোনো ডায়ালাইসিস রোগির চিকিৎসা ছিলোনা। একমাত্র ব্যবস্থা ছিলো ঢাকার মাত্র একটি জায়গায়।
আর প্রতি ডায়ালাইসিসের দাম ছিলো- আকাশছোঁয়া, যা রীতিমতো সাধ্যের বাইরে। এখন, মোটামুটি প্রতি শহরেই ডায়ালাইসিস করার বন্দোবস্ত আছে।
নৌকা চড়েই ফুফুর বাড়ি যেতে হতো। আনন্দ লাগলেও , বিশাল একটা ঝক্কি ছিলো। সেইসব অজপাড়াগাঁয়েও এখন বেশ সুন্দর রাস্তা হয়েছে।
ঢাবি'র ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কয়েকজন বড় নেতার হাতে ইয়া বড় লম্বা সেলফোন দেখেছিলাম। নেতার সাগরেদরা মাঝে মাঝে সেসব ফোন বহন করতো। আর একেকজন বিশাল ভাব নিতো। গ্রামেতো ল্যান্ড ফোন চিন্তাও করা যায়না। শহরের মাত্র দুয়েকটি বাসায় ছিলো ল্যান্ডফোন। সেই ফোন এখন হাতে হাতে। একজনের দুটি করে ফোন। দুই ফোনের আবার চারপাঁচটা করে সিম।
বস্ত্রহীন মানুষতো এখন গ্রামে নাই বললেই চলে। আর ঢাকা শহরের বনানী, গুলশান ঘুরলেই দেখা যায় জৌলুসের দিক দিয়ে এসব যেন একেকটা আমেরিকা আর ইউরোপ ।
মানে- লুটপাট যেমন হয়েছে। অস্বীকার করার কোনোও উপায় নাই -গ্রাম থেকে শহরে নানা উন্নয়নও হয়েছে।
এতো উন্নয়নের পরও -সেদিন নামাজের পর মসজিদের সামনে একজন ডায়হার্ড আওয়ামীলীগ কর্মিকে বললাম- ভাই বুকে হাত দিয়ে বলেনতো- নির্বাচনখানা সুষ্ঠু হয়েছে কিনা?
উনি কিছুই না বলে চলে গেলেন।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর ফিরে এসে মাথার টুপি পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বললেন- জ্বি ভাই। নির্বাচন একেবারে সুষ্ঠু হয়েছে। অনেক দেশও তো তাই বলেছে।
আমি বললাম- এই কথা বলতে পাঁচ মিনিট সময় লাগলো কেন?
বললেন- ভাই নামাজ পড়ার পরও ওযুটা ছিলো। বুঝেনইতো- ওযু থাকা অবস্থায় এসব কথা বলা যায়না।
আমি বললাম- তা এখন কেন এসব কথা বলা যায়। পাঁচ মিনিটের ভিতর কী এমন হলো?
বললেন ভাই, এখন আর ওযু নাই। এইমাত্র মুতে হালকা হয়ে আসলাম।
পরের ওয়াক্তে ওনার সাথে আবার দেখা। নামাজের পর।
বললাম, নির্বাচনের ব্যাপারে আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিলো । কী এখন জিগ্গাসা করবো। নাকি আপনি মুতে আসবেন??
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:১৩