"ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন নি "।
বিলেতে প্রচন্ড ঠান্ডা শীতের রাত। কোনো কারণে ঘরের হিটিং সিস্টেম ভালো কাজ করছেনা। গৃহে আগত মেহমানের যেন ঠান্ডা না লাগে সেজন্য মার্গারেট এলিজাবেথ নামে এক মহিলা উনাকে এক হিটিং স্টোভ দিলেন ব্যবহার করার জন্য। কিছুক্ষণ পর মার্গারেট মেহমানের কোশালাদি দেখার জন্য এসে দেখেন-মেহমানের রুম আগের মতোই ঠান্ডা। আর উনি সারা শরীরে কাপড়ে আবৃত করে বই পড়ছেন। মার্গারেট বললেন- আপনি হিটিং স্টোভ অন করেন নি কেন?
অরেন্জ মংক নামে খ্যাত মেহমান বললেন- স্টোভ অন করতে গিয়ে দেখলাম-স্টোভের ভিতর বেশ কয়েকটি ইঁদুর বাসা বেঁধেছে । মেশিন অন করলে ওদের যদি কোনো ক্ষতি হয় । ওরাতো এখানে অনেকদিন থেকেই আছে। আমার চেয়ে ওদের অধিকারই বেশী। তাই আর অন করলাম না। পশ্চিমা বিশ্বে ওরেন্জ মঙক নামে খ্যাত এই ব্যক্তি ছিলেন- স্বামী বিবেকানন্দ আর মহিলা মার্গারেট এলিজাবেথ পরে হয়েছিলেন-মানবতাবাদী সিস্টার নিবেদিতা। বিজেপি'র তাত্ত্বিক গুরু হিসাবে খ্যাত ডঃ সোব্রামানিয়ান স্বামী বিবেকানন্দের মহত্ব বুঝাতে এই ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন।
হিন্দুপাঠ অনুযায়ী সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয়েছিলো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। কারা করেছিলো সে যুদ্ধ? দেবতা -দেবতায়। হিন্দু হিন্দু মিলে। তখনতো একজন মুসলমানও ছিলোনা। কারবালার ভয়াবহ যুদ্ধও মুসলমান মুসলমানের সাথেই হয়েছিলো। হিন্দু মুসলমানে হয়নি। রামায়ন অনুযায়ী সীতাকে অপহরণ করেছিলো- রাবন। এই রাবন নাকি আপাত মস্তক ব্রাহ্মণ ছিলো- পরে রাক্ষস হয়েছিলো। এটাও ডঃ সোব্রামানিয়ানের লেকচার থেকে শুণা। এই ধর্মের মাঝেই রাক্ষস থাকে, ফিরিশতা ইবলিশ হয়ে যায়। মোদি -অমিত শাহের ধারণা -ভারতের মুসলমানরা বহিরাগত। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। ভারতের খণ্ডকালীন মুসলিম শাসকগোষ্ঠী বাইরে থেকে এসেছিলেন। কিন্তু আপামর মুসলমানরা বাইরে থেকে একজনও আসেনি। ওরা হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছে। হিন্দুদের আদি পুরুষরা যেমন ভারতেই ছিলেন। ঠিক তেমনি এইসব ধর্মান্তরিত মুসলামানদের আদিপুরুষরাও এই ভারতেই ছিলেন। সুতরাং ভারতের মাটির ওপর হিন্দুদের যেমন অধিকার ঠিক তেমনি মুসলমানদেরও সেই অধিকার।
মানুষ একবারও চিন্তা করেনা- এই যে অফিসে ফাইল আটকা পড়ে, প্রতিটি অফিস দূর্নীতির একেকটা আখড়া হয়ে ওঠে , রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, খাদ্যে ভেজাল, চিকিৎসায় নানা অসংগতি , শিক্ষায় অধোগতি, খুন, ধর্ষণ, গুম ইত্যাদি নানা অনিয়মের একটিও কি কোনো ধর্ম না ইসলাম না হিন্দু ধর্ম করতে বলে? এসবের দিকে নজর না দিয়ে কেন এক ধর্মের প্রতি আরেক ধর্ম এতো ঘৃণা পোষণ করে। কেন এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষকে এতো শত্রু মনে করে। আপনার আমার আসল শত্রুতো এইসব দূর্নীতি, ঘুষ, খুণ, ধর্ষণ, খাদ্যে ভেজাল নানা অসংগতি ইত্যাদি। আচ্ছা, ভারত থেকে যদি সব মুসলমান বিতাড়িত হয়ে যায়- তবে খোলা আকাশের নীচে পুরিষের প্রকাশ কি বন্ধ হয়ে যাবে? বিষাক্ত ঢাকা -দিল্লীর বাতাস কি নির্মল হয়ে যাবে? বেকারতৃের অভিশাপ মুছে যাবে। খুন, ধর্ষণ কমে যাবে? অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে যাবে? তবে, ধর্মের জন্য মানুষ কেন এতো প্রচণ্ড রকমের বাড়াবাড়ি করে। নিজের ধর্ম ভালোবাসতে গিয়ে যে অন্যের ধর্ম ঘৃণা করে-সে আসলে কোনো ধর্মকেই ভালোবাসেনা।
যে স্বামী বিবেকানন্দ ইঁদুরের জন্য কাতর হয়েছিলেন তাঁর অনুসারি মোদি শুধু ধর্মের কারণে আজ মানুষ তাড়াবার সব আয়োজন সম্পন্ন করে এনেছেন। ছিঃ মোদি ছিঃ । মোদি আজ চারদিকে মুসলিম আতঙ্ক দেখছেন। পলাশ হক যেমনটি বলেছেন- "লাঠির সামনে, বুটের সামনে, বন্দুকের নলের সামনে মোদির আর মানুষ নজরে পড়ছে না। গান্ধী আর আম্বেদকরের ছবি হাতে ছাত্র ছাত্রী নজরে পড়ছে না। আশা, হতাশা, স্বপ্ন, সাফল্য, ক্ষোভ, যন্ত্রণা ভরা প্রাণ নজরে পড়ছে না।
শুধু মুসলমান নজরে পড়ছে! ওদের পরিচিতি ওরা শুধুই মুসলমান! ওয়েলডান! শুধু একটা কথা মনে করিয়ে দিই, Herald Wilson বলেছিলেন, a week is a long time in politics. The fortunes can change drastically just in the course of a single week.
আজ বিগিনিং অফ দ্য গ্রেট ফল শুরু হল। কান পেতে শোনো ফ্যাসিস্টশক্তি, ওই প্রতিটি গুলির আওয়াজ আসলে পতনের শব্দ! তুমি পড়বেই! তুমি পড়তে বাধ্য!
আজকে সারা ভারতে যে আগুন জ্বলছে- আমার মনে হয় ধর্মের অন্তরালে মোদি রাবন হিসাবেই আবির্ভাব হয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৪০