এক) ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপ থেকে নেয়া ছবিগুলো ভারতের। ত্রাণ নিয়ে একটা বোট উপকূলে পৌঁছানোর সাথে সাথে শুরু হয়েছে এই হতদরিদ্র অসহায় মানুষের সামান্য সাহায্য পাওয়ার জন্য দৌড়। বাংলাদেশের লোকসংখ্যা সতেরোকোটি। আর ভারতে অতি দরিদ্র বা চরম দরিদ্র সীমার নীচে বাস করে আঠারো কোটি মানুষ। কিন্তু এরচেয়ে বড় তাজ্জব ঘটনা হলো- গতকালই ভারতের লোকসভায় ২১ টি মিগ যুদ্ধ বিমান কেনার জন্য পাঁচহাজার কোটি রুপির বাজেট পাশ হয়েছে। বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনায় আগে শীর্ষে ছিলো সৌদি। আর এখন হলো ভারত। একমাত্র চায়না ছাড়া এমন কোনো অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশ নেই যাদের কাছ থেকে ভারত যুদ্ধাস্ত্র কিনে না। আর এই বিপুল গরীব জনগোষ্ঠি যে শুধু ভারতে আছে তা না। বাংলাদেশে আছে, পাকিস্তানে আছে, তৃতীয় বিশ্বের সবগুলো গরীব দেশে আছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো- এই গরীব দেশগুলো অস্ত্র বানায় না। কিন্তু নিজ দেশের মানুষকে ভুখানাঙ্গা রেখে বিপুল অর্থ ব্যয়ে দেশকে অস্ত্রে সজ্জিত রাখে। আর ধনী দেশগুলো দেশে দেশে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুদ্ধাস্ত্র বেচে।
দুই) বাংলাদেশের অনেক মানুষ ভারতকে প্রচন্ড ঘৃণা করে। অনেক মানুষ ৭১ এর যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানকে থু থু দেয়। আমেরিকায় এসে কিছু বিস্ময়কর জিনিস দেখলাম। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য এই দেশে নাম লিস্টে রাখতে হয়। কারো ভাগ্য ভালো থাকলে খুব দ্রুত পাওয়া যায়। আর ভাগ্য ভালো না থাকলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। এক ভাইকে ভারত থেকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করে এসে -ভারতকেই গালি দিতে দেখেছি। উইগুর মুসলমানদের নির্যাতনের জন্য যারা চায়নাকে এতো ঘৃণা করতো- আজ ভারত-চায়না দ্বন্দ্বে তারাই চায়নাকে সাপোর্ট করছে। অথচ দশ-থেকে বারো লাখ রোহিংগাকে নিজ দেশ থেকে উচ্ছেদ করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার জন্য চায়নাই দায়ী। ছোট ভাইয়ের স্নেহে বর্মাকে আগলে রেখে- রোহিংগাদের বিষফোড়া ভেবে বর্মা থেকে এই চায়নাই তাদেরকে বিতাড়িত করেছে। ভারতকে গালি দিতে দিতে আমরা প্যাটেল ব্রাদার্সে ফ্রেশ সবজির বাজার করি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এরকম দেখেছি। মিটিংএ পাকিস্তানকে গালি দিচ্ছে। আর মিটিং শেষ করেই পাকিস্তানী মালিকানাধীন গ্যাস স্টেশান সহ নানা ব্যবসায় কাজ করতে যাচ্ছে। আপনি প্রচন্ড ভারত বিরোধী। কিন্তু হাসপাতালে যখন চিকিৎসায় যান। তখন ভারতীয় ডাক্তার শুনে কি কখনো উনার চিকিৎসা নেয়া প্রত্যাখান করেন? কিংবা কাতার এয়ারওয়েজের পাকিস্তানি পাইলট শুনে কি সাথে সাথে যাত্রা বাতিল করেন? যদি না করেন- তবে সবক্ষেত্রে পাকিস্তানকে - সবক্ষেত্রে ভারতকে বয়কট করার আওয়াজ তোলেন কেন?
তিন) হাজার মাইল দূরের চায়নার উইগুর মুসলমানের জন্য আপনার বুক কাঁপে। দরদ উথলে ওঠে। কিন্তু নিজ দেশের মুসলমান ডাক্তারকে , মুসলমান ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন কেন? মুসলমান বোনকে ধর্ষণ করেন কেন? দূর্বল প্রতিবেশী মুসলমান ভাইকে ঘরছাড়া করেন কেন? তখন,, আপনার দরদ কোথায় থাকে!!!!!
চার) আন্তর্জাতিক সমস্যা নিষ্পত্তিতে ভারত -চায়না কেউ কি বাংলাদেশের পাশে ছিলো। ছিলোনা। উল্টো জাতিসংঘে বার্মার পক্ষ নিয়েছিলো-শুধু চায়না, ভারত না। এমনকি সুসভ্য হিসাবে পরিচিত জাপানও। চায়না-জাপানের বৈরি সম্পর্ক থাকার পরও। সবাই যার যার স্বার্থ দেখে। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধে ভারত সাহায্য করেছিলো। কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিলো। সেই ভারত এখন -একটা গরু চুরির জন্য মানুষ খুন করে ফেলে- ফেলানীকে লাশ বানিয়ে কাটা তারে ঝুলিয়ে রাখে। বাংলাদেশ থেকে হাজারগুন বেশী খয়রাতি গ্রহণ করার পরও বাংলাদেশকে খয়রাতি দেশ বলে উপহাস করে। এসব করে ভারত -প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ঘৃণা বাড়ায়। আবার বাংলাদেশের অসংখ্যা মানুষ শুধু চিকিৎসেবার জন্য ভারতে যায়। বলিউডের গান না হলে বাংলাদেশের কোনো বিয়ের উৎসবই হয়না। তাই, একচেটিয়া ঘৃণা বলেও কিছু নেই। একচেটিয়া ভালোবাসা বলেও কিছু নেই। জাপান আমেরিকার পার্ল হারবারে এট্যাক করেছিলো । আমেরিকা জাপানে বোমা মেরেছিলো। এখন- এক দেশ ছাড়া আরেক দেশের চলেনা। হলিউডের ম্যুভি টোকিও আর লসএণ্জেলসে একই সাথে রিলিজ হয়। জাপানি ফোনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কথা বলেন। বন্ধুর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে কুটনৈতিক সম্পর্ক হয়। বন্ধুর সাথে কুটনীতি হয়না। রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব হয়না। তাই, একচেটিয়া বন্ধু বলেও কোনো দেশ নেই। একচেটিয়া শত্রু বলেও কোনো দেশ নেই।