somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানি দিন

২৬ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক) বছরে না । মাত্র একদিনেই কোটি গরু হত্যা করা হয়। খাবারের প্রয়োজনেই। একটা গর্ভবতী হাতিকে যন্ত্রণা দিয়ে খুন করা, একটা কুকুরের ওপর এসিড ছোড়ে মারা, একটা বিড়ালকে লাত্থি দিয়ে লোলা করে দেয়া , একটা প্রাণীকে তড়পে তড়পে খুন করা আর খাবারের প্রয়োজনে চাষাবাদ করে পশু খুন করা একনা। আপনি বেগান। এটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দ। কিন্তু জীব হত্যা মহা পাপ বলে-সেটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া ঠিকনা। আরশোলা যখন-আপনার ঘরে প্রবেশ করে। তখন এর সুড়ে আপনি চুমু খাননা। বেগান বলে আপনি গায়ে বসা -মশাকেও আদর করে হাত বুলিয়ে ছেড়ে দেননা। বরং মারেন। মেরে মশার রক্ত বের করেন। কীটনাশক ঔষধ যখন ছিটান- তখন এদেরও শ্বাসকষ্ট হয়। এরাও জীব। ঠিক তেমনি আপনি মাংস খেতে পছন্দ করেন। সেজন্য আরেকজন কেন মাংস খায়না-সেটা নিয়ে জোরজবরদস্তি করাও ঠিকনা। যার যার স্পেসে তাকে থাকতে দিলেই জগতের অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যায়।

দুই) উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও কিছু মানুষ যখন বলেন- "কোরবানির টাকা গরীবকে দিয়ে দিলে গরিবী দূর হতো"। এই লাইনটা পড়লেই আমার কাতুকুতু ছাড়াই হাসি আসে। তাইলে, পৃথিবীতে দেশগুলোর গরীব থাকার কারণ হলো- কোরবানি দেয়া। আকলিমা চাচীকে হাজার পাঁচেক টাকা দিতে চাইলে- চাচা বললেন- ওকে ঐ টাকা দিলে। ওর পোলায় নিয়ে যাবে কিছু। এটা ওটা কিনে খরচ করবে আরো কিছু। কিছু বুঝে ওঠার আগে হাত খালি হয়ে যাবে। লাভের লাভ কিছুই হবেনা। বরং এর চেয়ে আরো কিছু টাকা দিয়ে একটা বাছুর সহ গাভী কিনে দিন। এগুলো লালন পালন করবে। গাভীর দুধ বিক্রি করবে। বাছুর বড় হবে। কোরবানির আগে বিক্রি করে দিয়ে সে লাভবান হবে । কোরবানি বন্ধ করে দিলে -এরকম হাজারো আকলিমা চাচীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথও বন্ধ হয়ে যাবে। নোবেল জয়ী কলকাতায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় - অর্থনীতিতে নোবেল পেলেও - "টেলিভিশন" কেনা বিষয়ক ঘটনায় বলেছিলেন- একজন ফুটপাতের দোকানদার অর্থনীতির যে বিষয়গুলো বুঝেছে-তা আমি বুঝতে পারিনি। কোরবানির টাকা দিয়ে দিলেই গরীবি দূর হয়না। একটা রাষ্ট্র গরীব হয়- শিক্ষিত শ্রেণীর অবাধ লুটপাট আর দূর্নীতির মাধ্যমেই।

তিন) অর্থ সরাসরি দান করে দিলে- মানুষ অলস হয়। দেশ গরীব হয়। দেশে ভিক্ষাবৃত্তির পথ তৈরি হয়। বাছুর থেকে শুরু করে বড় দন্তপশু হওয়া পর্যন্ত এমনকি পশু কোরবানি হওয়ার পর পর্যন্ত এর সাথে একটা অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া জড়িত থাকে। গরুর খড়, ভূষি, ঘাষ, গরুর খাবার, রাখাল, লালন-পালন, গরু পরিবহন, কসাইদের জীবনযাপন ইত্যাদি প্রতিটি কাজে অর্থের গতি তৈরি হয়। ভিক্ষার থলেতে অর্থ জমা থাকে। গতি থাকেনা। ট্রিলিয়ন ডলারের আর্থিক লেনদেন হয়- বিশ্বব্যাপী শুধু একদিনের পশু কোরবানির মাধ্যমেই। দয়াকরে, বক্সের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে শিখুন।

চার) একবার এক সাহাবী হযরত ওসমান রাঃ এর কাছে গিয়েছেন-কিছু সাহায্যের জন্য। সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। হযরত ওসমান রাঃ উনার ম্যানেজারের সাথে হিসাব কষেই যাচ্ছেন । হিসাব শেষ হচ্ছেনা। একসময় হিসাব শেষ হলো। হযর‌ত ওসমান রাঃ বললেন- এক মুদ্রার হিসাব মিলাতে পারছিলাম না। সাহাবা অবাক। হযরত ওসমানের মতো এতো ধনী মানুষ মাত্র এক মুদ্রার হিসাবের জন্য এতো ব্যাকুল কেন?
সাহাবার মনের কথা বুঝতে পেরে হযরত ওমর রাঃ বললেন- এক মুদ্রা বড় কথা না। বড় কথা হলো-আমার কতটাকা আয় হচ্ছে। এর ওপর ভিত্তি করেই আমার যাকাত দিতে হবে। একপয়সার গরমিল হলে- আমার যাকাত দেয়ার হিসাবেও গরমিল হবে। এই এক মুদ্রার হিসাবের জন্য যদি আমি কেয়ামতের দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আটকে যাই- তখন কে আমাকে উদ্ধার করবে? এই হলো সত্যিকারের ইসলাম। এই হলো ইসলামের আসল সোন্দর্য্য। তাই -একজন মুমিন মুসলমানকে তার প্রতিটি আয় ব্যয়ের হিসাব রাখতে হয়। পশুর চামড়া বিক্রির টাকার হিসাবের ওপরও এমনি গূরুত্ব দেয়া হয়েছে। বারবার বলা হয়েছে, প্রতি পয়সা হিসাব করে, বিধবা -অনাথ এবং একে--বারেই দুঃস্থ মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিতে। এই চামড়া বিক্রির একটি পয়সাও আপনি রাখতে পারবেন না। এটাও গরীবের হক। আপনার কাছে রাখা এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

পাঁচ) কোরবানি দেয়া না বরং কোরবানী দেয়ার পদ্ধতির সমালোচনা অবশ্যই করতে পারেন। অত্যন্তু নির্মমভাবে কোরবানীর পশুগুলোকে পরিবহন করা হয়- এটা সত্যই কষ্টদায়ক। কোরবানির পশু যেন কোনো রকম কষ্ট না পায় সে কথা বারবার বলা হয়েছে। বলা হয়েছে-একে আদর করতে। পশুর জন্য নিজ হৃদয়ে কোমলতা তৈরি করতে। এক গরুকে জবাই করার সময় আরেক গরুর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে। আড়াল করে রাখতে। ভালো জায়গায় রাখতে। মশা মাছির কাছ থেকে হেফাজত করতেও বলা হয়েছে। বলা হয়েছে- মুক্ত স্থানে কোরবানি না দিতে। কোরবানির পর -পরিবেশ যেন ঠিক থাকে সে কথাও বলা হয়েছে।
বারবার বলা হয়েছে- হাড়িতে মাংস সিদ্ধ হওয়ার আগে যেন- পরিবেশটা বিশুদ্ধ হয়। কোরবানীর যাবতীয় বর্জ্য দুর হয়।করোনাকালীন এই সময়ে এটার ওপর আরো বেশি জোর দিতে হবে। এ ছাড়া হালাল আয়েই শুধু কোরবানি না , জীবনের সব কিছুই হালাল হতে হবে। হারাম আয় থেকে কোটি টাকার কোরবানি না দিয়ে হালাল আয় থেকে এক গরুর একভাগ কোরবানি দিন। রবের সন্তুষ্টিই যেন আপনার তৃপ্তি হয়। কোটি টাকার গরু দেখানো যেন আপনার গৌরব না হয়। গরীবের প্রাপ্য অংশ থেকে এক টুকরো মাংসও যদি আপনার ফ্রিজে ইচ্ছাকৃতভাবে ঢুকে পড়ে। তবে আল্লাহ না করুন- আপনার কোরবানি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আখিরাতে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

ছয়) তাই, বলছি কি। আপনার বেগান হওয়া অথবা ধর্মীয় কারণ ছাড়া দুটো কারণে হয়তো আপনি গরুর মাংস খান না। একটা হলো- খেতে খেতে অনীহা চলে আসা। অথবা, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া । তারপরও বেশীরভাগ মানুষ মাংস খেয়ে বেঁচে থাকে। ধনী মানুষদের খাওয়ার জন্য কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ড, বার্গার কিং সহ নানা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন একশত কোটি জীব হত্যা করা হয়। কিন্তু দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে। হাজারো এতিম শিশু আছে। মক্তবের হুজুর আছেন। এক হুজুরের ওয়াজে শুনে সত্যি আমার কান্না এসেছিলো। -সারা বছর জুড়ে মাসের পর মাস, দিনের পর দিন তারা শুধুমাত্র সবজির খিচুড়ি খেয়ে জীবন পার করেন। সারা বছরে তাদের প্লেটে শুধু একদিন গরুর মাংস জুটে। কোরবানির ঈদে। বছর জুড়ে এই ঈদের জন্য - এই দিনটির জন্য তারা প্রতীক্ষায় থাকেন। সুতরাং অতিরিক্ত পশুবাদি হতে গিয়ে এইসব এতিম শিশুদের প্লেট থেকে একদিনের মাংস খাওয়ার দিনটি দয়া করে ওঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না।

সবার জন্য পবিত্র কোরবানীর ঈদের শুভেচ্ছা রইলো। ঈদমোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:০০
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্

লিখেছেন আরোগ্য, ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

যেহেতু জন্মসূত্রে মা বাবার কাছ থেকে ধর্ম হিসেবে ইসলাম পেয়েছেন তাই হয়তো নিজেকে মুসলিম হিসেবেই পরিচয় দিয়ে থাকেন কিংবা কোন কারণে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আপনি কী মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমাকে আমার ভাল্লাগে না X#(

লিখেছেন শায়মা, ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩


তোমাকে আমার ভাল্লাগেনা
এক্কেবারেই ভাল্লাগে না,
দেখলে পরে নামটা তোমার
বিরক্তিতে কুচকে কপাল
চোখটা ফেরাই অন্যদিকে।

কি অসহ্য তোমার নামে,
গা জ্বলে যায় বোকামীতে,
বোকার মতন বকবকানী,
গাঁক গাঁক গাঁক গকগকানী।
যাচ্ছো করেই কবে থেকেই!

লজ্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড: ইউনুস কি কাজের থেকে কথা বেশী বলছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:০৩



ড: ইউনস অবশ্যই কাজের থেকে কথা বেশী বলছেন, ইহা শেখ হাসিনা সিনড্রম; তিনি এই ধরণের ১টি পদ বরাবরই চেয়ে আসছিলেন ; এতদিন পরে, ৮৪ বছর বয়সে পেয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকুব জাতি ড. মুহম্মদ ইউনূসের বক্তব্য বুঝতে পারল না

লিখেছেন আহা রুবন, ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১৬



বেকুব জাতি ড. মুহম্মদ ইউনূসের বক্তব্য বুঝতে পারল না। তার অফিস থেকে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হল! এই ব্যাখ্যা পেয়ে আমরা ধন্য! কত গভীর একটা ভাব প্রকাশ করলেন অথচ তার সাক্ষাতকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা পরবর্তী দেশ শাসনে সবচেয়ে যোগ্যব্যক্তি কি তারেক রহমান?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪



আমরা যেহেতু ভোট দিতে চাই, সেহেতু ভোট দেওয়ার লোকতো আগে থেকেই খুঁজে রাখা দরকার। আমার জামাইয়ের মতে শেখ হাসিনা পরবর্তী দেশ শাসনে সবচেয়ে যোগ্যব্যক্তি তারেক রহমান। কেউ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×