somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুনদের রক্ত চুষে নিচ্ছে আউটসোর্সিং-এ অভিজ্ঞরা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে যারা একদম শুরু থেকে ওডেস্ক-এ কাজ করেন তাদের বেশিভাগই এখন সুপারস্টার বলা চলে, একেকজনের প্রোফাইলে কয়েক হাজার ঘন্টা, কিংবা কয়েকশ প্রজেক্টের লিস্ট। এসব দেখে তাদের অবশ্যই সুপারস্টার বলা চলে। আমরা সকলে তাদের অনেক অনেক সম্মান করি এবং সবাই তাদের ফ্যান বলা চলে। কিন্তু এদের অনেকেই অনেক সাধারন ছেলেমেয়ের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাদের রক্ত চুষে নিচ্ছে, আমাদের মেধাকে পিষে মারছে। আমরা কয়জনে সেই খবর জানি? আপনি কি জানেন? তাহলে দেখুন আমার আজকের পোস্ট। শুরুতেই বলি, এসব সম্মানিতদের মধ্যে মাত্র গুটিকয়েক মানুষই এই অসাধু কাজে লিপ্ত। অসাধু বলাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা জানি না। তবে আমার কাছে এটি অসাধু।

বাংলাদেশ ওডেস্কে যারা কাজ করেন তাদের বেশির ভাগই এস.ই.ও, ডাটা এন্ট্রি টাইপের কাজ করেন, কারন এই কাজগুলি অনেক সহজ এবং এই কাজে খুব দ্রুত সময়ে ভাল টাকা পাওয়া যায়। মাত্র ২ থেকে ৩ মাসের মাথায় এসে দেখা যায় নিজের কাজের চাপ সামলাতে না পেরে সকলেই টিম খুলেন এবং টিমে কাজের সহযোগী ঢুকান। তারপর সকলে মিলে মিশে কাজ করেন। মাস শেসে টিমের জন্য একটা নির্দিষ্ট % কেটে রেখে বাকি টাকা সবাইকে কাজের পরিমানমত দিয়ে দেন। এখানে আমি যে কথাগুলি বললাম তা বলা যায় প্রায় সকলেই করেন। এমনকি আমি নিজেও একই কাজ করি, যদিও আমি নিজে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করি, তবে আমার টিম এ সব ধরনের মেম্বারই আছেন। যাই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।

যারা টিম ওপেন করে মেম্বার ঢুকান, তারা সেই মেম্বার দিয়ে কী কাজ করান? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই মেম্বার এমনকি ইন্টারনেট চালানো কি জিনিস তাই জানে না। সে হয়তো লোকমুখে ওডেস্কের নাম শুনেছে কিংবা টিম এডমিন তাকে অফার করেছেন জয়েন করার জন্য। সে হাসিমুখে জয়েন করে। তারপর সাতপাঁচ কিছুই না জেনে, বুঝে ওডেস্ক এ সাইন আপ করে। তারপর -

শুরুতেই এডমিন একজন মেম্বারের প্রোফাইলের মাত্র একটা বা দুইটা টেস্ট দিয়ে দেন। তারপর প্রোফাইল ১০০% করে কাজে বিড করতে বলেন সেই মেম্বারকে। কিন্তু মজার বিষয় হল, সেই মেম্বার এমনই অজ্ঞ, সে জানেই না তার এডমিন কি করেছে এবং তার প্রোফাইলের কি অবস্থা। এর পরেই কাহিনী শুরু হয়। (আমি কিন্তু আগেই বলেছি, এই কাজগুলি দেশের গুটিকয়েক বদমাইশ এ করে। তাই আবার সবার কথা আমার ঘাড়ে চাপাবেন না। ওজনের চাপে ঘাড়ের নালী ছিড়লে প্রবলেম হবে ভবিষ্যতে।)

যেহেতু ছেলেটা বা মেয়েটা নেটের কিছুই বুঝেনা। তাই তাকে প্রথমে বলা হয় ক্যাপচা এন্ট্রির কাজ করার জন্য। সে খুশি মনে করতে থাকে। অনেকেই আবার যারা নিজেরা এস.এম.এম বা সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং-এর কাজ করেন, তারা সেই ছেলেটাকে দিয়ে ‘ইউ লাইক হিট’ (http://www.youlikehits.com)-এর পয়েন্ট উঠান। যারা এই কাজটা করেন তারা নিশ্চয় জানেন যে ফেসবুক ফ্যানপেজ লাইক-এর জন্য এই পয়েন্টই আসল এবং এটা করার পরে জাস্ট ফ্যানপেজ-এর লিঙ্ক বসালেই আর কোন কাজ থাকে না। এখন এডমিন ছেলেটাকে দিয়ে ১০,০০০ (দশ হাজার)-এর মত পয়েন্ট উঠান মাত্র ১০০ বা ২০০ টাকায়। ক্ষেত্র বিশেষে কিছুটা বেশি হয়। (আমার নিজের চোখে দেখা কিছু শয়তান এই কাজ করে।)

এটা কিন্তু ছেলেটার মাসিক কোন ইনকাম নয়। “হালকা পাতলা” কাজ আরকি। আসল কাজ আরো করুণ ভাই। পড়েন তাইলে বুঝবেন।

এখন, এই এডমিন ওডেস্কে অন্তত ৫ ডলার প্রতি ঘন্টায় কাজ করে। আর সে ১০ হাজার পয়েন্ট-এর জন্য মাত্র কয়েকশ টাকা দেয় ছেলেটিকে। আপনি যদি এটাকে ঘন্টায় কনভার্ট করেন তাহলে হয়তো সর্বোচ্চ ০.৫ ডলার/আওয়ার হবে। অর্থ্যাৎ মাত্র ৫০ সেন্ট পার আওয়ার। তাহলে হিসেব কী দাড়ালো? সে নিজে খাচ্ছে ৪.৫ ডলার প্রতি ঘন্টায়, আর কাজ হচ্ছে ৫০ সেন্টে। এই সময়ে সে হয়তো আরো কয়েকটা প্রজেক্ট হ্যান্ডেল করে।

এই এডমিন কখনো এই ছেলেটিকে কিছু শেখাবে না। ওইযে ‘ইউ লাইক হিট’-এর পয়েন্ট কিভাবে উঠাতে হয় তা শিখিয়েছে। আপাতত এতটূকুই, কিছুদিন পরে ছেলেটা তার নিজের প্রোফাইলে ব্যাক লিঙ্ক বা এস.ই.ও-এর কাজ পেলো। তখন এডমিন তাকে জাস্ট একটা লিঙ্ক দিয়ে দিবে, হয়তো কিছু ফোরাম সাইট বা ডিরেক্টরী লিঙ্ক-এর লিস্ট। আর তাকে বলবে তুমি এইগুলিতে সাইন আপ করবে আর পোস্ট মারবে বায়ারের সাইটের লিঙ্ক। এতোটুকুই। ছেলেটা কিন্তু এখনো জানেনা এস.ই.ও কি জিনিস। তার বস যা বলেছে তাই করবে সে। এভাবে এক মাস করার পরে তার টাকা নেওয়ার সময় আসবে।

এবার আসি মজার বিষয়ে আর সব শেষ প্রসঙ্গে। ছেলেটি যখন টিমে জয়েন করে, তখন তাকে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিলো। যেমন-
১। এক বছরের আগে তুমি টিম থেকে বের হতে পারবানা চান্দু।
২। পেমেন্ট ২ ভাবে হবে। তুমি যেটা পছন্দ কর সেটাই। এক, ডলারের দাম সবসময় ৭০ টাকা করে ধরে মাস শেষে তুমি টোটাল পেমেন্টের ৫০ পারসেন্ট পাবা। অথবা দুই, আমার সাথে ঘন্টা প্রতি কাজ করবা। ২০ টাকা বা ২৫ টাকা প্রতি ঘন্টা। মাসে যে কয় ঘন্টা কাজ করবা তার বিল তুমি পাবা।
৩। বসের কথা শুনিতে তুমি বাধ্য।

আগেই বলেছি, ছেলেটি নেট কাকে বলে তাই জানে না, কাজ পারা আর না পারা সে অনেক দূরের বিষয়। সুতরাং, বস তাকে যা বলেছিল সে শুধু আপন মনে হু হু করেছিল। ১০০ ভাগ সত্য কথা, সে তখন বসের কথা এক দন্ডও বুঝতে পারে নাই। এমনকি সে এখন বুঝতে পারে না। :P সে অন্ধ ছেলে। তার সব ক্রিয়েটিভিটি তার বস শেষ করে দিয়েছে সেই যেদিন থেকে সে ‘ইউ লাইক হিট’-এর পয়েন্ট উঠায় আর ক্যাপচা এন্ট্রি করে সেদিন থেকেই। অবশ্য ফিরে পাবে একসময় সব। কিন্তু জানেন তো, বাঙালি ফ্যাড়া কলে না পড়লে টের পায় না। বস তাকে যে পেমেন্ট দেয় সব সে আপন মনে মেনে নেয়। এমনকি সে নিজেও জানেনা তার মাসিক ইনকাম কত।

কথা শেষ হয়নি। আরো কথা আছে। ছেলেটির যখন নতুন কোন কাজে ইন্টারভিউ আসে, তখন এডমিন নামে মাত্র কিছু বলে দেয় বায়ারকে। কারন ছেলেতো আর কিছুই বোঝে না বায়ার কি বলেছে। আর এডমিনের অত সময় নেই যে বিস্তারিত কিছু বায়ারকে বলবে। তাহলে আপনিই বুঝুন উনি কতটুকু করেন একটা ইন্টারভিউ আসলে। আমার চেনা একজনের কাহিনী শুনলে আপনি হয়তো হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাবেন। দুই লাইনে বলি -

বায়ার বলেছে, “তুমি তোমার স্কাইপে আইডি দাও। আমি সেখানে বিস্তারিত কথা বলব। আর তুমি সপ্তাহে কয় ঘন্টা কাজ করতে পারবে?”
এডমিন বলে দিলো, “স্যার, আমাকে দ্রুত হায়ার করুন। তাহলে আমি ভালভাবে কাজ করা শুরু করে দিবো।”

এখন কথা হল, এই টিমে এসে ছেলেটি কি শিখলো, আর নিজে কি পেল। কথা শেষ করব একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে। সবার জন্যই প্রযোজ্য।

এক ছেলে এক টিমে কাজ করে ওডেস্কে। টিমে আছে প্রায় ৬ মাসের মত। এতদিনে সে শুধুমাত্র “ইউ লাইক হিট”-এর পয়েন্ট তুলেছে। আর কোন কাজের প্রতি তার কোন ধারনা নেই। কিন্তু তার মাসিক ইনকাম কত আর হবে বুঝুন। বড়জোর দুই হাজার টাকা। কিন্তু সে দেখে তার আশে পাশে সবাই ওডেস্কে কত কত টাকা কামায়। তাই অনেক দুঃখে সে একদিন তার এক বন্ধুকে ফোন করলো। তার সে বন্ধু আবার ওডেস্কে ভাল পজিশনে আছে। সে ফোনে বলল, “দোস্ত তোর কি খবর?”
বন্ধু বলে, “আমি তো ভালই, তুই?”
বলে, “আমি তো সেই আগের মতই। কেন??”
- “এতদিনেও এই কথা?”
- “হ্যা, আমি তো খালি পয়েন্ট উঠাই। কিন্তু টাকা তো পাই নারে।”
বন্ধুতো অবাক। এখন ছেলেটা তাকে প্রশ্ন করল, “দোস্ত, একটা সত্য কথা ক দেখি, you like hit-এর হেড অফিস কোন জায়গায়? আমি গিয়া জিজ্ঞেস করব অদের রেট কত করে।”
এই কথা শুনে বন্ধু তো আকাশ থেকে পড়লো। বলে, “এই ব্যাটা, তুই এইসব কি পাগলের মতন কস? তোর মাথা ঠিক আছে? এদের হেড অফিস এইখানে আসবে কি করে? ছেলে তো অবাক, বলে কেন কি হইলো আবার?”
বন্ধু বলে, “তুই পয়েন্ট উঠাস আর তুই জানস না? আবার অদের হেড অফিস খুজস?” এবার বন্ধু তাকে সাজেশন দিল, “তুই অই টিম থেকে চলে আয়। আমি তোকে কাজ শিখাবো। ”

উপরেরটা কিন্তু একদম সত্য ঘটনা। এটা ঘটেছে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। এখন কথা হচ্ছে, ছেলে ওডেস্কে কাজ করে, আর সে ঢাকায় you like hits-এর হেড অফিস খুঁজে। তাহলে আপনিই এখন বুঝুন, সে গত ৬ মাসে কি করেছে টিমে? আর টিমের এডমিনের প্রোফাইল হল একটা হাই প্রোফাইল।

যাই হোক, বলতে বলতে অনেক বলে ফেলেছি আমি। শেষ করার আগে আবারো বলি, গুটি কয়েক খাদকের জন্য সকলের বদনাম হবে। আর এইসব খাদক কিন্তু ছোটখাটো বা নতুন নয়। তারা সকলেই ওডেস্ক-এর সুপারস্টার।
২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×