সুবিধা আদায় করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দেওয়া হয় নানা উপহার-উপঢৌকন। ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয় অনেকে। আবার বিকিয়ে দেয় মানসম্ভ্রম। এ প্রবণতা শুধু মানুষের মধ্যে নয়; সুবিধা আদায়ে এক ধরনের পেঙ্গুইনও মানসম্ভ্রম বিকিয়ে দেয়। গবেষকরা এদের 'যৌনকর্মী' বলে অভিহিত করেছেন। অ্যাডেলাই নামের এ পেঙ্গুইন অ্যান্টারটিক উপকূলে বাস করে। বন্যপ্রাণী গবেষকরা দীর্ঘদিন এদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানান। তারা বলেছেন, প্রজনন মৌসুমে অ্যাডেলাই পেঙ্গুইন বাসা বাঁধে। এ জন্য দরকার হয় পাথর। আর এ পাথর রাজা বা কিং পেঙ্গুইনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। শারীরিক সম্পর্কের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট পাথর পেয়ে থাকে এরা।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষক ড. ফিওনা হান্টার বলেন, তিনি দীর্ঘদিন পেঙ্গুইন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের আচরণ ও স্বভাব সম্পর্কে পেয়েছেন চমকপ্রদ তথ্য। তিনি বলেন, সঙ্গীহীন স্ত্রী পেঙ্গুইন যৌনতা নিয়ে নিঃসন্দেহে হতাশ থাকে। এরা কেবল যৌনসুখের জন্যই রাজা পেঙ্গুইনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। আর পাথরের বিষয়টি তো আছেই। তিনি বলেন, যেসব স্ত্রী পেঙ্গুইনের সঙ্গী আছে, এরাও রাজা পেঙ্গুইনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। উদ্দেশ্য সুন্দর পাথর সংগ্রহ করা। তিনি যত পেঙ্গুইনের ওপর নজরদারি করেছেন, এদের সবই এ কাজ করে থাকে।
ড. ফিওনা হান্টার বলেন, পেঙ্গুইনের একজনই সঙ্গী থাকে। তাই কোনো পুরুষ পেঙ্গুইন বুঝতে পারে না, আসলে পাথর আনতে গিয়ে কী ঘটছে। এ কারণে পুরুষদের সন্দেহও থাকে না। সাধারণত স্ত্রী পেঙ্গুইন একাই পাথর সংগ্রহে যায়। এ কারণে পুরুষ পেঙ্গুইন সন্দেহ করে না। এককথায় বলতে গেলে, রাজা পেঙ্গুইনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি পুরুষরা ভাবতেই পারে না। মজার বিষয় হলো, কখনও কখনও পেঙ্গুইন ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়। রাজা পেঙ্গুইনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী_ এমন ভান করে। স্বার্থ উদ্ধার হলেই কেটে পড়ে। অর্থাৎ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন না করেই পাথর নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পেঙ্গুইনের যৌনতা নিয়ে রয়েছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। সাতটি সম্রাট পেঙ্গুইনের একটি বছর শেষে সঙ্গী বদলায়। আর রাজা পেঙ্গুইনের বন্ধন টিকে থাকে কয়েক বছর। এরপরই এরা সঙ্গী বদলে নেয়।
গবেষক ডি বায়রুন বলেন, পেঙ্গুইন মাঝেমধ্যে 'সিল'-এর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। অ্যান্টার্কটিকে কম বয়সী এবং যৌনতা নিয়ে হতাশ সিল এ কাজ করে থাকে। একবার ৯০ কেজি ওজনের একটা সিল ১৫ কেজি ওজনের একটা পেঙ্গুইনকে আক্রমণ করল। আধ ঘণ্টার বেশি সময় সিলটি এটির ওপরে ছিল। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন, পেঙ্গুইনটা মারা গেছে। কিন্তু যখন সিল ও পেঙ্গুইন দু'দিকে চলে গেল, তখন তিনি বিষয়টি অনুধাবন করেন।
পেঙ্গুইন সম্পর্কে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ড. ফিওনা হান্টার। তিনি বলেন, কেবল যৌনকর্মী নয়; ক্রিমিনাল পেঙ্গুইনও আছে। এরা অন্য পেঙ্গুইনের বাসা থেকে পাথর চুরি করে। পেঙ্গুইনগুলো যখন পাথর সংগ্রহে ব্যস্ত, এরা তখন দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। এরা দূরে সরে গেলেই পাথর নিয়ে সটকে পড়ে ক্রিমিনাল পেঙ্গুইন। বিষয়টি যে ধরা পড়ে না তা নয়। মাঝেমধ্যে এরা ধাওয়াও খায়।
সূত্র : বিবিসি

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


