somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃথাই ভালোবাসার গল্প

১৭ ই মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

নীরবে শুধু তাকিয়ে রইলো আমার চোখের পানে, পলক ফেললো না একটিবারও। দৃষ্টির সে ভাষা বুঝতে চেষ্টা করতে লাগলাম।
রাতের খাবারের টেবিলে নিত্যিদিন ঝগড়া হতো, তারপরে ঘুমুতে আসার সময় চোখের মণি ঠিকরে বেরুতো ঝগড়ার অবশেষ হয়ে রয়ে যাওয়া রাগের ঝাঁঝটুকু... দৃষ্টিতে আজ সে ঝাঁঝ ছিল না।
তবে কি দুঃখ ছিল? কষ্ট ছিল? নাহ...সে দৃষ্টিতে কোনো দুঃখ ছিল না, স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট ছিল না। ছিল না কোনো বিশেষ রাতের দুষ্টুমি ভরা চোখে ঝরে পড়া কামনার ছায়া। বাবার বাড়ি যাবার আনন্দও ছিল না...আতিপাতি করে খুঁজে বেড়াতে লাগলাম একের পর এক নানা স্বাদের অনুভূতি...আর সব হাতড়িয়ে শেষে এসে হতাশ হয়ে পড়লাম।
সে দৃষ্টিতে যে শুধুই শূন্যতা ছিল... ছিল না অপেক্ষা। হয়তো অনাগত দিনের ভাবনা ছিল...তবে সে দৃষ্টিতে ফেলে আসা দিনগুলোর ভালোবাসার স্পর্শ ছিল না।


মায়ের পাশে শোয়া নিয়ে প্রতিদিনের কাড়াকাড়িতে ছোট্ট ছেলেটারই জয় হয়েছিল সেদিন। মায়ের পাশে শুয়ে ঘুমের ভান ধরে থাকা পিটপিট করতে থাকা চোখে আর সরু গোলাপি ঠোঁটের দিগবিজয়ী হাসির ছটায় সে জয়ের আভা বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছিল। হেরে যাওয়া অভিমানী মেয়েটা তখন উলটা পাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে ছিলো। জোর করেই যেন চোখ বুজে থাকতে চাইলো। হেরে যাবার দুঃখে উপচে পড়া চোখের পানিতে প্রাণপণে বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করে গেল। কান্নার দমকে দমকে পিঠ কেঁপে উঠছিল। তার মায়ের দৃষ্টি তখনো যেন শূন্য ছিল। মেয়েটা একবার চোখের কোলে গড়িয়ে পড়া পানি মুছবে বলেই যেন চোখ খুললো। আর ওই এক পলকেই আমি বুঝে গেলাম...... সে দৃষ্টিতে হেরে যাবার কষ্ট ছিল, অভিমান ছিল মায়ের উপর, শুধু সে দৃষ্টিতে অপেক্ষা ছিল না। ততোক্ষণে ঘুমে গলে পড়েছে ছেলে, তার দৃষ্টিপানে না চেয়েই বুঝতে পারছিলাম...হয়তো তার দৃষ্টি মায়ের মতো শূন্য ছিল না। কিন্তু সে দৃষ্টিতে আমার স্থান ছিল না। আমি নিঃশব্দেই বেরিয়ে এলাম শোবার ঘর হতে...ফিরে চললাম।

খুব নিষ্ঠুরভাবেই যেন বুঝতে পেলাম সারা জীবন ধরে ঘোর অবিশ্বাস করে চলা সে অমোঘ সত্য... মৃতদের জন্য কেউ অপেক্ষায় থাকে না




২.

ঈশ্বরের দরবারে তখন নীরবতা। পৃথিবীর কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া মানবসন্তানের কান্নাতে সভাসদদের কেউ কেউ নিদারুণ কৌতুক অনুভব করছিল। স্বর্গে এসে লোভী মানবসন্তানেরা কতো কিছু চায়......ধন-সম্মান-নারী-সুখ, কতো কিছুই না চাইতে পারে পৃথিবীর পরীক্ষায় পাশ করে আসা বুদ্ধিমান মানুষেরা। আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়া এ বোকা মানবসন্তান চেয়েছিল অন্যকিছু, চেয়েছিল পৃথিবীতে তার ভালোবাসার মানুষদের কাছে ফিরে যেতে। সেই প্রথম যেন ঈশ্বরের নিজেকে বিজয়ী মনে হয়েছিল। তিনি যেন তার সভাসদদের দেখিয়ে দিলেন, মানুষের মনের ভালোবাসা তার সবচাইতে সেরা সৃষ্টি।

কিন্তু পৃথিবীতে ফেরার যে নিয়ম নেই! অনেক তর্ক-বিতর্কের পর সে সুযোগও দেয়া হয়েছিল মানুষটাকে, সভাসদেরা শর্ত দিয়েছিল একটাই, পৃথিবীতে কমপক্ষে একজন মানুষকে খুঁজে পেতে হবে, যে মৃত্যুর এতো দিন পরও ভালোবেসে তার অপেক্ষায় থাকবে। অন্যথায় তাকে নরকে যেতে হবে। ঈশ্বর তখনো মানুষের ভালোবাসার উপর আস্থা রেখেছিলেন। সে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন ভালোবাসার মানুষদের কাছে।


নরকের ভয়ে যে মানুষ পিছু টলেনি, তাকে হেরে ফিরতে দেখে ঈশ্বর বুঝি হতাশই হলেন। মনে মনে ভাবলেন, ভালোবাসা কি তবে বৃথা গেল?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬
৫৫টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×