somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তর্জনী

০৭ ই মে, ২০০৯ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

ভীষণ ভার ভার লাগছিল মাথাটা। এলিয়ে পড়াতেই শান্তি, তবু মাথাটা তুলতেই হলো। শরীরের সব শক্তি এক করে মাথাটা তুললাম। অচেনা কোনো জায়গায় আছি, তবে কোথায় বুঝতে পারছি না। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরটা। শুধু ময়লাটে একটা হলদে বাল্ব জ্বলছিল মাথার উপর। আলোর চাইতে তা অন্ধকারই বেশি ছড়াচ্ছিল, ঘোলা ঘোলা চোখে অন্তত তা-ই মনে হলো। কাঠের চেয়ার, তার আবার একটা হাতল ভাঙ্গা। পায়াটাও নড়বড়ে, একটু নড়তেই ক্যাঁচকোঁচ করে উঠলো। ভীষণ ভারভার মাথাটা একটু ঘুরিয়ে পুরো ঘরটা দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম। বন করে মাথাটা আরেকবার চক্কর মেরে উঠলো। মনে হলো যেন আবার জ্ঞান হারাচ্ছি। টেবিলে ঢলে পড়লাম। ঢলে পড়ার আগে শেষ মুহূর্তের হঠাৎ ঝলকে জিনিসটা চোখে পড়লো। একটা তর্জনী! একলা পড়ে আছে ধূলোমাখা টেবিলে। সাথে মধ্যমা নেই। অনামিকাটাও নেই। কেনে আঙুলটাই বা কোথায় কে জানে! জ্ঞান হারালাম ... ... তার আগে নিজের আঙুলগুলো গুনে দেখার অবসর হলো না।



২.

ইছামতি নদী। সে নদীর ধারেই গ্রামটা। ইছামতি মরে গেছে তাও বহুত দিন হলো। বর্ষায়ও এখন আর এর রক্তচক্ষু দেখা যায় না। ভীষণ রকম স্রোত নেই। শান্ত ঢেউ খেলা করে মাঝে সাঝে। তাই তেলকালি ছড়িয়ে ইছামতির বুক চিরে লঞ্চ স্টিমার আর চলে না। শান্ত নদীটার ধারেই তার চাইতেও শান্ত গ্রামটা। হলুদে হলুদ একটা গ্রাম। অবারিত সর্ষে ক্ষেত। দুচোখ যতোদূরে যায় শুধুই হলুদ। তার মাঝে মাঝে হঠাৎ এক ফালি সবুজ যেন মানুষের বসতির কথা মনে করিয়ে দেয়। বিকেলের যে মিঠেল হাওয়া নদীতে একটু স্রোত খেলিয়ে যায়, সে হাওয়ায় একটা বিশাল হলুদ ঘুড়ি ভাসছিল একদিন। মনে হয়েছিল যেন সর্ষের হলুদ আকাশে ছড়িয়ে গেছে। এগার-বার বছরের কিশোর একটা ছেলে নাটাই হাতে ছুটে চলছিল সর্ষে ক্ষেতের আল বেয়ে। আঙুলে তার সুতো প্যাঁচানো। কখনো কখনো দুএকবার আলপটকা টানে ঘুড়িটাকে তেড়িয়া করে ছুটাচ্ছিল, মেঘেদের সাথে কাটাকুটি খেলছিল।

সেই বিকেলে হঠাৎ করেই সর্ষে ক্ষেতের মাঝের সবুজ মনুষ্যবসতি সর্ষের রঙে হলুদ হয়ে উঠলো। আগুন জ্বলে উঠেছিল ...সর্ষে রঙ্গা হলুদের আগুনে ক্ষেত আর শান্ত সে ঘরগুলো একরঙা হয়ে গিয়েছিল...বিধাতারই কৌতুক বোধহয়। দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল ছাড়াছাড়া গুলির আওয়াজ। আল বেয়ে ছুটে চলা কিশোরটা হঠাৎ গুলি খেয়ে উপুড় হয়ে পড়লো। তার হলদে ঘুড়িটা তখনো মেঘেদের সাথে উড়ছিল।




৩.

আতংকের একটা পর্যায়ে মানুষ তার স্রষ্টাকে ডাকতেও ভুলে যায়। মেজর খুরশীদ সেরকম আতংকে বিহ্বল হয়ে গেল। বিস্ময়ে হাঁ করা মুখটা বন্ধ করার কথা মনে রইলো না। ঘরের উপস্থিত সৈন্যরাও বিস্ফারিত নয়নে টেবিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ আগেও তারা বিজাতীয় ভাষায় প্রার্থনা করছিল। আস্তে আস্তে তাদের সব গুঞ্জন বন্ধ হয়ে এল। অস্বস্তিকর নীরব সে ঘরে টেবিলে মাথা এলিয়ে পড়ে আছে কিশোর ছেলেটা। হাতের কাটা অংশ থেকে তখনো রক্ত ঝরছিল, আঙ্গুল কাটা সে রক্তে টেবিল লাল। সে রক্তের মাঝেই কাটা তর্জনীটা টেবিলে একটু একটু করে লাফিয়ে উঠলো। নাচের ভঙ্গিমায় কড়া বাঁকিয়ে নড়তে লাগলো... ... ধীরে ধীরে যেন নাটাইয়ের সুতা ছাড়ছে। আতংকে দুড়দাড় করে সেনারা ঘর ছেড়ে পালাতে লাগলো। মেজর খুরশীদ শুধু ফ্যাকাশে মুখে বিস্ফারিত নয়নে বসে রইলেন.........





একাত্তরে ইছামতি পাড়ের বিনোদপুর গ্রামে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটেছিল। পুরো গ্রাম পরিকল্পনামাফিক দখলে নেবার পর হঠাৎ করেই ৩৫ খানসেনা নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬
৪৬টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×