পাবনায় একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে যা আমাদের কারোই কাম্য ছিলনা। একেকটা ঘটনা আমাদের ধর্মীয় বৈষম্যবাড়িয়েই চলেছে। হিন্দু সম্প্রদয়ের সাথে আমাদের দূরত্ব আরোও বাড়ছে। তাদের কাছে আমাদের সকল মুসলিম বাংলাদেশী একেকজন ভিলেন। আমাদের ধর্ম তাদের কাছে সবচেয়ে খারাপ। ফেইসবুকে তাদের পেইজ ও ব্লগে তাদের কমেন্ট আর পোষ্ট পড়ে তাই মনে হচ্ছে।
একটা কথা আপনাদের মনে রাখা উচিৎ যে এদেশে আমরা যুগের পর যুগ ধরে একসাথে বসবাস করে আসছি। ঘুম থেকে উঠলেই একে অন্যের মুখ দেখতে হয়, বাসায়, অফিসে, বাজারে, রাস্তায় সবখানেই একসাথে আছি আমরা। এইতো গত মাসেই ৫ দিন ব্যাপি আপনাদের দূর্গা পূজা হয়ে গেল। অসংখ্য মুসলিম ছেলেদের দেখলাম পূজায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছে, হিন্দু ছেলেদের সাথে একসাথে আনন্দ করছে। সারা এলাকায় আলোকসজ্জা। সম্প্রীতির এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
দেখেন, বাংলাদেশের মুসলিমরা খুবই সাধারণ। তারা ধর্ম নিয়ে কখনোই বেশি কট্টর না। আরবদের মতো না। তবে মানুষের ভাল-মন্দ আজীবন সকল গোত্রেই ছিল, আমাদের মুসলিম বলেন বা বাংলাদেশী বলেন, আমাদের মধ্যেও আছে। এক পরিমল কে দিয়ে আমরাও সকল হিন্দুকে বিচার করি না। তাই যদি কোথাও কোন মুসলিম কোন অন্যায় করে তার জন্য আমাদের সবাই ও আমাদের ধর্মকে দোষ দেওয়া মোটেও সমিচিন হবে না।
এখন আসি ফেইসবুক ও ব্লগ প্রসংগে। ফেইসবুকে প্রায় প্রতিটি হিন্দু পেইজেই ইসলাম ও ইসলামের নবীকে নিয়ে খুবই বাজে কথা বলা হয়। এর অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে। ফেইসবুকে হিন্দুদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেইজ হচ্ছে, "হিন্দু বীর যুব সংঘ"। এই পেইজে খুবই জঘন্যভাবে ইসলাম ও তার সম্মানিত ব্যক্তিকে প্রতিনিয়ত আক্রমন করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই পেইজে অসংখ্য কলকাতার দাদারা আছেন এবং তারাই সবচেয়ে বেশি এই আক্রমনগুলো করে থাকেন। বাংলাদেশী হিন্দুদের মনে সংখ্যালঘু হয়ে থাকার একটা দুঃখ থাকতেই পারে, এটা থাকাই স্বাভাবিক, সকল জাতির সংখ্যালঘুদেরই এটা থাকে। কিন্তু তাদের এই দুঃখ যতটা না আমাদের বাংলাদেশী সনাতনিদের , তার চেয়ে বেশি মনে হয় এই দাদাদের। এরা আমাদের পাশের বাড়ির প্রতিবেশিদের আমাদেরি বিরুদ্ধে উস্কিয়ে দিচ্ছে। দাদারাই ইসলামের নামে জঘন্য আজেবাজে কথা বলে আর অতি উৎসাহী হিন্দু বীরেরা সেইসব শেয়ার করে নিজেকে সত্যই বীর ভাবতে শুরু করে। তারা পরবর্তী সম্ভাভ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখেনা। এদের বয়সও বেশি নয়। জ্বলন্ত যৌবন। কিন্তু যারা এসব করেছে তারা এইটা ভুলে বসে আছে যে, তার দুর্দিনে তার পাশে বসবাস করা একজন মুসলিমকেই সে সবচেয়ে আগে খুজে পাবে।
অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে বাংলাদেশে। অনেক সংখ্যালঘুই নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু যা ঘটেছে তা যতটা না ধর্মীয় সংঘাত তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি স্বার্থের অথবা রাজনৈতিক স্বার্থের। বাংলাদেশে ধর্মীয় দাংগা কখনোই হয় নি। যারা মুসলিম নামধারী, অপেক্ষাকৃত কমজোর বলে সেইসব মানুষের ক্ষতি করে নিজের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন তারা মুসলিম নামটা দয়া করে বাদ দিয়ে এইসব করবেন, কারণ যখনই দূর্বলদের ক্ষতি করবেন মনে রাখবেন, আপনি আর মুসলিম নন।
আর যারা নিজেদের হিন্দু বীর যুব বলে দাবী করেন, তাদের কাছে আমার একটা সাধারণ প্রশ্ন, আপনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে যদি আমি আপনার বাবা মা কে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করি, আপনি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন নাকি চুপ করে ঘরের ভিতরে বসে থাকবেন? যার গায়ে সামান্য মানুষের রক্ত আছে সে তো এইটা সহ্য করবে না। ঠিক বলেছি কিনা?
একটা কথা মনে রাখবেন। আমাদের নবী এবং আমাদের ধর্ম..আমাদের বাবা-মা র চেয়েও অনেকগুন বেশি সম্মানিত ও ভালবাসার। ইসলামের প্রতি আমাদের ভালবাসা ও সম্মান অন্য যেকোন জাতিবাদ, সংস্কৃতিবাদ ও দেশপ্রেমের চেয়েও অনেকগুন বেশি।
তাই আমাদের ধর্মে আঘাত করে আপনারা যদি মনে করেন যে আমরা আঈন আদালতের অপেক্ষা করবো সেটা আপনাদের দুঃস্বপ্ন। ঠিক যেমনি আপনি আপনার মা-বাবার উপরে আক্রমন হলে আপনি আঈন আদালতের অপেক্ষা করবেন না।
আমেরিকা কি করে ইন্ডিয়া কি করে, এতো কিছু বুঝার টাইম ভাই আমাদের নাই।
এটা আমেরিকা বা ইন্ডিয়া না, কোনদিন হবেও না।
মনে রাখবেন, একমাত্র সম্মান দিলেই সম্মান পেতে পারেন। খুচাখুচি করলে অঘটন আরো বাড়বে। ক্ষতি কাদের বেশি হবে তা সহজেই অনুমেয় যা আমরা কখনোই চাই না
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২১