প্রতিবার নির্বাচন এলেই শুরু হয় লগি বৈঠা, কক্টেল, পেট্রলবোমা, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আর আমাদের যন্ত্রনা। ক্ষমতাশীনরা সবাই ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কেউ চুপিচুপি বিচারকদের বয়স বাড়িয়ে নিজের লোকদের জায়গামত আনে। কেই সংবিধান ইচ্চামত টাইপ করে আমাদের বলে এটাই আসমানী কিতাব, এর বাইরে গেলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। ফাইজলামির একটা সীমা থাকা উচিৎ। দিনের পর দিন মারামারি, মানুষ খুন, জ্বালাও-পোড়াও। সবাই নাকি জনগণের জন্য এইসব করে। কোন সেই জনগণ তাও আজ পর্যন্ত বুঝা গেল না। যেভাবেই হোক তাদের ক্ষমতা চাই। তারজন্য যদি অসংখ্য মানুষ গুলি করে রাস্তায় মারতে হয় অথবা সারাদেশের মানুষকে ঘরে বন্দী করে রাখতেও হয় তারপরেও ক্ষমতা তাদের চাই ই চাই। তার জন্য সবকিছু এমনভাবে সাজানো হয় যাতে পরে কোন অসুবিধা না হয়। রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, পুলিশপ্রধান, নির্বাচন কমিশনার সবাই একেকজন চড়ম প্রভুভক্ত প্রানী বানানো হয়। তাদের না থাকে ন্যায়-অন্যায় বোধ, না থাকে সৃষ্টিকর্তার ভয় না থাকে মানুষের প্রতি ভালবাসা। এমন দূর্ভাগা হয়ে কেন বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছিল কে জানে? আল্লাহ আমাদের রহমত দিন।
যাই হোক, একদল যাকে সামনে রেখে নির্বাচনে জিততে চায় অন্যদল তাকে মানে না, অন্যদল যাকে দিয়ে নির্বাচন চায় তাকে আরেকদল মানে না। তারমানে বুঝা যার যে জনগণের কথা বলে এতো মায়া কান্না তাদের প্রতি কোন ভরসা নাই। তাদের কাছে গেলে উস্টা খেতে হতে পারে বলেই ভয়ে নিজের লোক দিয়ে কোনমতে নির্বাচনে জিতলেই তো খেল খতম। খালি আরাম আর আরাম। তারপরে জনগন জাহান্নামে যাক না মরুক তাতে উনাদের কি। অথচ বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া এতোই কম যে, তারা চালের দাম একটু কম আর নিরাপরে চলাফেরা করতে পারলেই তারা খুশি। সোজা সাপ্টা কথা হচ্ছে, জনগনের জন্য কাজ করবেন, জনগন আপনাদের এমনিতেই ভোট দিবে। খুবই সিম্পল। আর নয়-ছয় করবেন তো যা ভোট আছে তাও যাবে।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনানদেজ-তারানকো প্রস্তাব করেছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে। এযাবত কালে যত প্রস্তাব শুনলাম এটাই সবচেয়ে ভাল প্রস্তাব। এবং শুধু এইবার নয়, পরবর্তী ৪ টা নির্বাচন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। একমাত্র তা হলেই নির্বাচন ব্যবস্থার একটা স্থায়ী সমাধান হয়। শুধু তাই নয়, একমাত্র এভাবেই আমাদের দুষ্ট রাজনীতিবীদদের জনগনের কল্যানে মনোনিবেশ করানো সম্ভব।
আওয়ামীরা ছাড়া দেখলাম সবাই তারানকোর প্রস্থাবে সম্মতি দিয়েছে। আওয়ামীরা দেয়নি কারণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ফল তারা খুব ভাল করেই জানে। যাই হোক, তারা আবার ধুয়া তুলেছে জাতিসংঘ নির্বাচন করে দিলে নাকি আমাদের সম্মান (যদি থাকে কোন) ধুলোয় মিশে যাবে। আমরা স্বাধীন জাতি আমাদের নাকি নাক কাটা পরবে। কিন্তু আবার যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ভিক্ষার টাকা চুরি করে ধরা খেয়ে প্রোজেক্ট বাতিল হয়ে যায় তখন কিন্তু এদের লজ্জা করেনা। অথবা স্বাধীন দেশের মানুষদের মেরে যখন অন্য কোন দেশ কাটা তারে ঝুলিয়ে রাখে তখন তাদের চিপলেও চেতনা বাইর হয় না। কি আর কমু।
আমরা ২ দলের এই ক্ষমতার খেলা থেকে রেহাই চাই। প্রতিদিন মৃত মানুষের খবর আর স্বজনের আজাহারি দেখতে তো আর ভাল লাগে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৪