somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্কুলবেলা এবং প্রথম নীলখাম

১৫ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তখন হাই স্কুলের সবচাইতে উপরের ক্লাসটাতে পড়ি । আমার এক আংকেলের বিয়ে ঠিক হলো । বিয়ের তারিখ ঠিক হলো । যথারীতি সব আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত করা হলো । সব আত্মীয় স্বজন আসল । আত্মীয় স্বজনের মধ্যে ফুফুরা এবং আমার কাজিনরা সবাই একত্র হলাম । এক ফুপাত কাজিন এর সাথে ওর আর এক কাজিন আসল । তার সাথে পরিচয় হলো । তার নাম লারা । পরিচয়ের পর সবার সাথেই তার খুব ভাল বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে উঠল । প্রতিদিন আমরা কাজিনরা মিলে সবাই একসাথে বেড়াতে যেতাম । গল্প করতাম । দুষ্টুমি করতাম । ওরা বিয়ের সময় প্রায় ১০/১২ দিন ছিল । এই সময়ে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল ।
বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওরা এবং আমার কাজিনরা সবাই চলে গেল । যাওয়ার সময় বলল এই যোগাযোগটা ওরা ধরে রাখতে চায় । তো কিভাবে এই যোগাযোগটা ধরে রাখা যায়? তখন আমাদের কাছে মোবাইল ছিল না । ওদের বাড়ী থেকে আমাদের বাড়ী দুরে হওয়াতে যাওয়া আসা সম্ভব না । তাছাড়া পারিবারিক শাসনের কারনে যে কোন সময় ইচ্ছা করলেই যে কোন জায়গায় যাওয়াও সম্ভব না । তারপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হলো আমরা চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখব । সেখনেও সমস্যা । ওদের এবং আমাদের কারও বাড়ীর ঠিকানায় চিঠি গেলে তো অভিভাবকদের হাতে কোরবানী হতে হবে । তো বুদ্ধি একটা বের করতে হবে । অনেক চিন্তার পর ওরাই ঠিক করল স্কুলের ঠিকানায় ক্লাস এবং রোল নম্বর লিখে পাঠাবে । তারপর ঠিকানা নিয়ে ওরা চলে গেল । ছোটবেলাতে কাজিনরা এবং আত্মীয় স্বজন আসলে ভাল লাগে আবার চলে গেলে খারাপ লাগে । এক্ষত্রেও ব্যতিক্রম হলো না । একমাস হয়ে গেল কোন যোগাযোগ নেই ।
আমাদের হেডস্যার ইংরেজী পড়াতেন । অনেক রাগী স্বভাবের লোক । প্রচন্ড ভয় পেতাম স্যারকে । উনার ক্লাসে টু শব্দটি কেউ করত না । একমাত্র টিফিন ছাড়া বাহিরে যাওয়া নিষেধ । উনি আমাদের সময়ে দুইবার আমাদের জেলাতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন । বলে রাখি উনি আমার বাবার এবং আমার সব আমাদের পরিবারের সব আংকেল ও ফুপুদেরও স্যার । আমার আংকেল এবং ফুপুদের ভাল ছাত্র হিসেবে স্কুলে একটা সুনাম আছে । সেই হিসেবে আমাকে স্যার একটু ভাল করে চিনে এবং খোঁজ নেন ।
একদিন আমি স্কুলে যাইনি । হেডস্যার ক্লাসে এসে আমাকে খোঁজলেন নাম ধরে । আর দপ্তরীকে বললেন দুটো বেত নিয়ে আসতে । দপ্তরী স্যারের কথামত বেত নিয়ে হাজির । ক্লাসে আমাকে পাওয়া গেল না । আমি ওইদিন অনুপস্থিত । সবাই ভাবছিল আমার মতো একজন নিরীহ ছাত্রকে কেন এভাবে খোঁজা হলো ? তাও আবার বেত সহকারে । স্যার ক্লাসে কিছু বললেন না তাই বোঝা গেল না । স্যার ক্লাস শেষ করে চলে গেলেন । যাবার আগে দপ্তরীকে ডেকে স্যারের বেত ও সাথে আনা উপকরন অফিসরুমে রাখতে বললেন । আর সেই উপকরনের মাঝে ছিল একটা নীল খাম । আর ওটাই রহস্য । ক্লাসের শেষে আমার এক বন্ধু যাকে আমরা জং উপনামে ডাকতাম সেই জং দপ্তরীর পেছনে দৌড় । দপ্তরী অফিসে পৌছানোর আগেই তার কাছে গিয়ে জিগ্গেস করল ঘটনা কি? তখন দপ্তরী ঘটনা খুলে বলল । তখন জং দপ্তরীর কাছ থেকে নীল খামটা দেখতে চেয়ে নিয়েই ভোঁ দৌড় । উদ্দেশ্য আমাকে হেডস্যারের হাত থেকে বাচানো । তারপর জং বাড়ী এসে আমাকে পুর্বাপর সব ঘটনা খুলে বলল । ওকে বললাম এবারের মতো বাঁচিয়েছিস । স্যার আমাকে ক্লাসে পেলে কি যে কেয়ামত হতো সেটা কল্পনা করতে পারছিলাম না । আর আমি জানতাম না যে আমাদের স্কুলে কারও নামে চিঠি এল সেটা আগে খুলে দেখা হয় । সেই নীলখামের ভেতরে এই গানটা লেখা ছিল
" আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকব ।
ছায়ার মাতো তোমার পাশে তোমার হয়ে থাকব ।"
তারপর দ্বিতীয়বার এইরকম অভিশপ্ত ণীলখামের হাত থেকে বাঁচার জন্য ঘটনা জানিয়ে তাড়াতাড়ি একটা চিঠি লিখে একটা হলুদ খামে পাঠিয়ে দিলাম । প্রাপক লারা ।
আজও ওই ঘটনাটা মনে করে আমার সেই কাজিনরা এবং আমার সেই ক্লাসের সেই বন্ধুরা হাসতে হাসতে পড়ে যাই । আর ভাবি ছোটবেলাটা কত আনন্দময় ছিল আমাদের । আর কতই না সহজ সরল দুষ্টো ছিলাম আমরা ।
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×