somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলেমেলো বিবর্তন কথন

০৫ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিবর্তনবাদ দিয়ে আগ্রহের একটা কারন আধুনিক মনস্তত্ত্বে এটার প্রভাবটা বোঝার চেষ্টা করা। বিবর্তনের প্রভাব আমাদের উপরে প্রতিনিয়ত ক্রিয়াশীল। অনেক রকম কথাই শুনেছিলাম বিবর্তনবাদের বিপক্ষে কাঁচা যুক্তি, এখানেও অনেকগুলো কাঁচা যুক্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে না এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। তবে তাদের খোঁড়া যুক্তির বিস্তার খুব বেশী দুর আগাতে পারে না। কিন্তু এই দ্্বন্দ্বটার মানসিক দোলাচল মানুষকে উন্মুল করে দিতে পারে।
পরীক্ষাগারের জন্তু এবং পতঙ্গগুলো যাদের উপর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংএর বিভিন্ননিরীক্ষা চলছে এটা প্রায় সবর্উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত গবেষণার অংশ। কোষবিদ্যায় আমার আগ্রহের কারন মূলত কিছু বই পড়ে, আর কোষবিদ্যার সাথেই কোষের বিভিন্ন অংশের সমন্বয় এবং মিথষ্ক্রিয়ার বিষয়টাও চলে আসে। তেমন গভীর ভাবে অধ্যায়ন করা হয় না, বিভিন্ন উৎস থেকে যখনই খানিকটা পারি সঞ্চয় করি, তাই বিস্তারিত উৎস এবং গবেষণানিবন্ধের নাম দেওয়া একটু কঠিন আমার জন্য। ফ্রুট ফ্লাই বা ফলের মাছি যাদের জিবনকাল সংক্ষিপ্ত এবং যাদের জেনেটিক গঠন একটু সরল তাদের উপর নানাবিধ পরীক্ষা চলছে, এবং এই ধারাবাহিক গবেষণার ফলে এখন মানুষ মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারে এর কোন জিনের কি কাজ, কোন কোন জীন শরীরের কোন কোন অংশ গঠনের কাজ করে। এবং এসব জীন আলাদা করার প্রযুক্তি হাতে আসার পর বিজ্ঞানীর স্বেচ্ছাচার বেড়েছে অনেক, তারা এখন বিভিন্ন জিনের অবস্থান বদলে দিচ্ছে, ফলে পতঙ্গের শাররীক বিকৃতি ঘটছে, কিছু ছবি দেখার সুযোগ হয়েছিলো, সেখানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংএর ফলে মাছির চোখের জীনকে প্রতিষ্ঠাপিত করা হয়েছিলো পা তৈরি করে এই জিন দিয়ে ফলাফল, চোখের বদলে সেখানে 2টা পা গজিয়েছে।

একবার একটা সেমিনারে টেনেসি ইউনিভার্সিটির এক গবেষক এসেছিলো তার চলতি গবেষণার আলোচনা করতে, বিষয়টা মনোমুগ্ধকর, মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার সীমা নেই আসলে। আমাদের শরীরবৃত্তিয় বিষয়গুলোকে জানার চেষ্টায় আমাদের মস্তিষ্কের খবর আদানপ্রদানের ধারাটা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে, তবে তাদের কাজ ছিলো কৃত্রিম চোখ তৈরি বিষয়ক। চোখের গঠন এবং কাজ আসলে সরল, এটা বাইরে থেকে আলো পরিমিতভাবে ভেতরে প্রবেশ করায় এবং সেখান থেকে অপটিক্যাল নার্ভের মাধ্যমে সেই খবর যায় মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক ওটা বিশ্লেষণ করে আমাদের স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে একটা পরিচিত কাঠামোর কথা স্মরণ করায় আমাদের। এসব নিয়ে 1930-40এর দিকে সাইকোলজির গবেষণা হয়েছে, তাই আমাদের ধারনা জন্মানোর কাজটাও আমরা বুঝতে পারি। এখানেই সংজ্ঞায়িত করার প্রক্রিয়াও চলে আসে। এবং যাবতীয় বিনির্মান আর পূনঃসংজ্ঞায়িত করার বিষয়াসয়, বাক্যদর্শন, শব্দদর্শন, এবং এই বিষয়ক বিভিন্ন দার্শনিক ভাবনাও চলে আসে।

চোখের অন্ধত্ব 2 ধরনের হয়, একটা হতে পারে চোখের ভেতরের অংশ আলো সংগ্রহ করে অপটিক্যাল নার্ভে পাঠাতে পারছে না, আরেকটা হতে পারে অপটিক্যাল নার্ভ কাজ করছে না। কিংবা 2টাই ঘটতে পারে। অপটিক্যাল নার্ভ ঠিক থাকলে এবং চোখের কাঠামোভিত্তিক জটিলতা হলে ওটাকে অস্ত্রপচার করে নিরাময় করা সম্ভব, কিন্তু যদি অপটিক্যাল নার্ভের সমস্যা থাকে তাহলে সেটা প্রতইস্থাপিত করে নতুন অপটিক্যাল নার্ভ বসানোর কাজটা হয়তো দূরহ, কিংবা বিজ্ঞান এখনও ওতটা সাফল্য লাভ করে নি এ বিষয়ে, তাই তারা ভিন্ন একটা ধরনা সামনে এনেছেন।
চোখের সামনে আলোক সংবেদি কোষ কিংবা হালের ডায়োড ভিত্তিক ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং এই ক্যামেরার সিগন্যাল সরাসরি মস্তিস্কে প্রবেশ করানো হবে। সাইবর্গিয় ধারনা হলেও এটা অনেক জন্মান্ধকে দেখার সুযোগ করে দিবে। তবে একাজের জন্য প্রধান কিছু বাধা আছে, ক্যামেরাটার ভার সহনীয় হতে হবে, সিগন্যালটা পাঠানোর জন্য একটা যন্ত্র তৈরি করতে হবে, এই প্রসেসর বসানো হবে কোথায়, কিভাবে সিগন্যাল যাবে, এসব নিয়েই তাদের গবেষণা, তবে বেশীরভাগ প্রসেসরের সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য নু্যনতম 1।5 ভোলট বিদু্যতপ্রবাহ লাগে, এটা নিয়ে গবেষনা করে তারা একটা জৈব যৌগ আবিস্কার করেছে যেটা এই পরিমান বিদু্যত তৈরি করতে সক্ষম, এবং এটা মাছের তেলে মাছ ভাজার মতো বিষয়, আলোকসংবেদী বিদু্যত কোষ,
বিস্তারিত যারা এই বিষয়ে কাজ করে তারা বলতে পারবে তবে আমার কাছে চমকপ্রদ মনে হয়েছে।বিজ্ঞানের শুভক্ষমতা নিদর্শন এসব। যদিও মাথার খুলি ফুটো করে মাথায় তার ঢুকিয়ে দেওয়ার আইডিয়া আমার পছন্দ হয় নি এর পরও জীবের বিবর্তনের ফলে যা আমরা জন্মসূত্রেই লাভ করেছি সে বিষয়টার প্রাথমিক প্রতিস্থাপন একটু কর্কশ হবে। বিবর্তন প্রায় 20 কোটি বছরের বিষয়, এই সময়ে প্রকৃতি যা করেছে সেটা পরীক্ষাগারে 100 বছরে অতিক্রম করার চেষ্টা করলে সফল হওয়ার সম্ভবনা কম হলেও আশাবাদ দিয়ে যায়।

অপ্রাসঙ্গিক এরপরও বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আছেন যার কাজ গনমানুষের জন্য গবেষনা করা, সেই গোলাম রব্বানি স্যারের কাজের কিছু অংশ জানা হয়েছিলো বন্ধুদের কল্যানে, তার একটা প্রাণের তাগিদে করা কাজ হলো মানুষের হৃদয়স্পন্দন বা ইসিজিকে ডিজিটালাইজড করে ল্যাবে নিয়ে আসার জন্য সস্তা এবং পোর্টেবল একটা যন্ত্র তৈরি করা। সেটাতে করে গ্রামের বিভিন্ন মানুষের কাছে এই যন্ত্র নিয়ে যাওয়া হবে, তাদের ইসিজি রেকর্ড করা হবে, এবং সেটাকে আবার ল্যাবের কম্পিউটারে ডিসপ্লে করে হৃদযন্ত্রের সমস্যা বিশ্লেষন করে সে অনুযায়ি নিদান দেওয়া সম্ভব হবে। হয়তো প্রাথমিক ভাবে এটা বহুল প্রচলিত হবে না, তবে তার আত্মত্যাগ এবং গনমানুষের জন্য গবেষণা করার মহত্ব আমাকে ঋণী করেছে, আমার ভেতরেও একটা প্রণোদনা দিয়েছে, সব মানুষের জন্য গবেষণা করো তবে নিজের দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে গবেষণা করো। ভবিষ্যতে কি হবে কে জানে এরপরও এমন কিছু কিছু মানুষ আশার উৎস হিসেবে টিকে থাক বাংলাদেশে।

এবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি, এই যে গবেষনাগুলো, একেবারে বিচ্ছিন্ন, চোখের গঠনপ্রনালী কার্যপ্রনালীর সাথে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিয়ের সরাসরি কোন োযোগসূত্র নেই তবে এরা সবই একটা ধারাবাহিক বিবর্তনের সূত্রে গাঁথা। এমন ভাবেই আমাদের সমস্ত জীবই আসলে অনেক নিরীক্ষার ফসল। বিবর্তনবাদের কার্যকরন বোঝার চেষ্টা , গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টার সাথে সাথে এর উপর পরিবেশের প্রভাবও যেমন আলোচনা করতে হয় তেমন ভাবেই একটা সময় ভাবতে হয় প্রকৃতির উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবা। এবং এই উদ্দেশ্য বলে কিছুরই প্রমান পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে এই পৃথিবীতে অযৌন জননের মাধ্যমের বংশবিস্তার করা প্রাণীসমুহের ভেতরে মেরুদন্ডি প্রাণী খুবই কম, একেবারে নগন্য বললেই হয়, তবে এক ধরনের সরীসৃপ যাদের কোনো পুরুষ নেই এমন একটা প্রজাতির আবিস্কার করার দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ। মেয়েরা ডিম পাড়ছে, যেই ডিম ফুটে বাচ্চা হচ্ছে এবং এই বাচ্চা জেনেটিক্যালি মায়ের সাথে 100% মিল রাখে এই আবিস্কার সমস্ত সৃষ্টিতে পুরুষের প্রয়োজনীয়তার প্রতি একটা বিশাল প্রশ্নচিহ্ন, একজন তাদের জীবনযাপনধারা দেখে অনুমান করেছে বোধ হয় মেয়ে মেয়ে মিলনেই এদের ডিমের নিষেক হয়, সমকামীদের জন্য সুখবর হতে পারে এটা হয়তো কিন্তু আসলে প্রাকৃতিক বৈচিত্র আমাদের প্রতিনিয়তই একটা নতুন ভাবনার সামনে ঠেলে দেয় এটাই আমার কাছে প্রকৃতির মুল আবেদন মনে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×