somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকতা সংশয়বাদীতার দ্বন্দ্বে তারুণ্য

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারুণ্যে সংস্কার অস্বীকারের প্রবনতা থেকে প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে তারুণ্যের প্রথম বিদ্রোহের আঘাত সামাজিক বিশ্বাসের বিরোধিতা করতে চায়, তারা প্রতিটি বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, নিজের ব্যক্তিত্ব নির্মাণের প্রক্রিয়ায় প্রতিটি প্রথাকে এভাবেই যাচাই করে নেয়।

বিদ্যমান সামাজিক প্রথাগুলো, পারিবারিক সংস্কারগুলোর বিরোধিতার একটা পর্যায়ে তারা ধর্মবিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তাকে প্রশ্ন করে। দৈনন্দিন জীবনযাপনে, সামাজিক যোগাযোগের কোনো জায়গায় ধর্মীয় সংস্কার ততটা স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য নয়, প্রথা ও কৃষ্টির কতটুকু ধর্মীয় অনুশাসনজাত আর কতটুকু সামগ্রীক মূল্যবোধ সেটুকু যাচাই করার মানসিক পরিপক্কতা গড়ে ওঠার আগে তারুণ্যের এই আস্তিকতা-নাস্তিকতা কিংবা মানসিক দ্বৈরথ ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্লেষণী ক্ষমতাচর্চার সূচনা হয় প্রথম যৌবনে, তার আগ পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন ধরণের তথ্যের আয়ুধে নিজেকে সজ্জিত করি, ব্যক্তিগত বিশ্লেষনী ক্ষমতায় অনেকেই অবশ্য তারুণ্যেই ইর্ষণীয় বিশ্লেষণী ক্ষমতা অর্জন করে, প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার ভেতরে না গিয়েও অনেকে দ্বান্দ্বিক বিশ্লেষণে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলে, এবং একই ধরণের ভাবনাকাঠামোতে সামাজিক সংস্কার বিশ্লেষণ করে সেটার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়।

সামাজিক সংস্কার, আপাত ভালো এবং মন্দের ধারণা সমাজের অন্তর্গত ভাবনাবৈপিরীত্বগুলো ধারণ করে। সমাজের মানুষগুলোকে কোনো না কোনো নিয়মের অধীনে থাকতে হয়, তারা যেনো পরস্পরের সাথে অহেতুক বিবাদে জড়িয়ে না পরে, যেনো অন্তর্কলহে নিজেদের শক্তিনাশ না করে সে জন্যে প্রতিটি ভাবনাকাঠামোর সাথে এক ধরণের উদযাপন ও প্রথা সংযুক্ত করে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ সমাজে বিরাজ করে এবং মানুষ ব্যক্তিগত অভিরুচি মেনে এর যেকোনো একটিকে গ্রহন করে কিংবা সবগুলোকেই একই ভাবে বর্জন করে।

দৈনন্দিন জীবনযাপনে বিমূর্ত ধর্ম মূলত সামাজিক প্রথা হিসেবে উপস্থাপিত হয় একজন সাধারণ মানুষের কাছে, একই ধরণের কাঠামোবদ্ধ সংস্কার অপরাপর ভিন্ন সংস্কার কিংবা সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে, পারিবারিক সংস্কার এবং মানুষকে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের দায়ে এভাবে অস্বীকারের ক্ষোভ থেকেও কেউ কেউ প্রচলিত ধর্মীয় মতবাদের উপরে আস্থা হারায়, কারণ যেমনই হোক না কেনো তরুণের সামনে আমাদের সমাজের অন্তর্গত বিরোধগুলো যেভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে এবং যেভাবে সে তার পরিচিত পরিমন্ডলকে বিশ্লেষণ করছে এসব মিলেমিশে তারুণ্যের দ্রোহের একটা প্রকাশ হতে পারে নাস্তিকতা কিংবা ইশ্বরের অস্তিত্বে সরাসরি সংশয় প্রকাশ।

নিখাদ বিজ্ঞান কি কোনো সময় এমন কোনো প্রশ্নের সমাধা করতে পারে? বিজ্ঞানের পরিধির ভেতরে থেকে কি ইশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের ধাঁধা সমাধান করা সম্ভব? বিজ্ঞান কি ইশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে নির্ণায়ক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে? প্রশ্নগুলোর উত্তর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ঋণাত্মক। বিজ্ঞান যে কাঠামোর উপরে বিস্তার লাভ করেছে সেখানে ইশ্বর কোনো পরিমাপযোগ্য বিষয় না, এমন কি ইশ্বরের অস্তিত্বে কি কি প্রভাব আশেপাশের পরিবেশে থাকতে পারে সেটাও প্রচলিত কাঠামোবদ্ধ জ্ঞানে অনুপস্থিত সুতরাং ইশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে কোনো লিটমাস টেস্ট বিজ্ঞানে নেই।

বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত আমাদের গাণিতিক, দার্শণিক এবং পরীক্ষণজাত জগতের বিভিন্ন পরিবর্তনকেব্যাখ্যা করতে সহায়তা করতে পারে। সেসব পর্যবেক্ষণজাত জগতকে ধর্মীয় পুস্তকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেটার অসারতা প্রকাশ করতে পারে, ক্ষেত্র বিশেষে সেটার অসম্পূর্ণতা কিংবা অন্তর্গত ভ্রান্তি প্রমাণ করতে পারে।
ধর্মীয় দর্শণে আমাদের দৃশ্যমান জগতকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেসব আধুনিক বিজ্ঞানের কষ্ঠিপাথরে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে, স্থানীয় দার্শণিকদের প্রভাবে যেভাবে পরিচিত জগতকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ধর্মপুস্তকে সেটা মধ্যযুগের পরে ততটা কার্যকরভাবে জগত ব্যাখ্যা করতে পারছে না।

জীবনের সৃষ্টিবিষয়ে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও বিনাশ বিষয়ে বিজ্ঞানের মতবাদে আস্থা স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ না কি ধর্মীয় পুস্তকে আস্থা স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে কোনো স্থির সিদ্ধান্ত জানাতে পারে না প্রচলিত বিজ্ঞান।

কেউ যদি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের পথ ধরে ধর্মীয় পুস্তকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেটাকে ভ্রান্ত, মিথ্যা, অলীক কল্পনা ঘোষণা দিয়ে কোনো বিবৃতি দেয় অধিকাংশ বৈজ্ঞানিক সূত্র সেটার সপক্ষেই থাকবে।
বিজ্ঞানের ভেতরে কোনো অলৌকিকত্ব নেই বরং প্রতিদিনই এর বিভিন্ন অনুসিদ্ধান্ত পরীক্ষাগারে প্রমাণিত হচ্ছে, সেসব অনুসিদ্ধান্তের কিছু কিছু আমাদের সাদা কালো ধারণাকে ততটা আমলে নেয় না বরং বিজ্ঞানের যুক্তি প্রকাশের জন্য যে গণিতকে আমরা ব্যবহার করি সেই গাণিতিক বিধিগুলো মেনেই তারা নিজেদের উপস্থাপিত করে এবং গণিত ও আমাদের মডেল প্রকৃতির ভেতরে যোগাযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ কেউ কেউ এক ধরণের দার্শণিক বিভ্রান্তিতে আটকা পরে যান সেটা ব্যক্তির অনুধাবনজনিত ব্যর্থতামাত্র। বিজ্ঞানের অনুসিদ্ধান্তগুলোর ব্যর্থতা এখানে কম।

বিজ্ঞানের গাণিতিক কাঠামোর অন্য রকম একটা সৈন্দর্য্য আছে, আমাদের পরিচিত জগতে নেই এমন অনেক ধরণের সম্ভবনা এই গাণিতিক বিশ্লেষণে যাচাই করা সম্ভব এবং গাণিতিক বিশ্লেষণের সত্যতাও যাচাই করা সম্ভব। এভাবেই আমরা যৌক্তিক বিশ্লেষণের একটা পর্যায়ে নিউট্রন স্টার কিংবা ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব ও চরিত্র সম্পর্কে যেসব সিদ্ধান্ত পেয়েছি, এমন সব বৈশিষ্ট্য মেনে চলা অদৃশ্য নক্ষত্রের সন্ধানও আমরা পেয়েছি।
অতিরিক্ত চাপে ও তাপে পদার্থের কি ধরণের গাঠনিক পরিবর্তন হবে কিংবা হতে পারে সেসব গাণিতিক বিশ্লেষণের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা পরীক্ষাগারে প্রমাণ করেছি।

জীবনের সৃষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট সূত্রে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলেও কি কি প্রভাবক জীবনের বিকাশকে পরিবর্তিত করতে পারে সে সম্পর্কে আমরা জানি, আমরা জানি কিভাবে একেবারে কোষীয় পর্যায়ে বিবর্তন ঘটে। বিবর্তনের ধারণাকে অস্বীকার করা ব্যক্তিবর্গ বিবর্তনের ধারণাকে প্রতিনিয়ত সমর্থন করেন কিন্তু তারা যখনই বিবর্তনবাদকে বিবর্তনবাদ হিসেবে দেখতে চান তখনই তারা কোনো এক অজানা কারণে তার পূর্বপুরুষকে গাছের উপরে বসে ল্যাজ নাড়াতে দেখেন এবং সাথে সাথে বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করেন।

এসব ব্যক্তিগত বাছাই কিংবা বিবেচনা বিজ্ঞানের জগতকে ততটা প্রভাবিত করে না। সে তার মতো এগিয়ে যায়, যাচ্ছে। আমাদের বৈজ্ঞানিক কাঠামো আমাদের যতটুকু জানাতে পারে সেই সম্পূর্ণ জায়গাটাতে ইশ্বরের অস্তিত্ব ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এরপরও ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত জগতে ইশ্বরেরঅস্তিত্ব মেনে কোনো নির্দিষ্ট একটি ধর্মীয় সংস্কারে আবদ্ধ থেকে জীবনযাপন করতে পারেন কিন্তু তার এই ব্যক্তিগত বিশ্বাসের অবস্থান থেকে তিনি প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করেন না।

ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসের ভেতরে একটা দার্শণিক আড়াল তৈরি করতে পারা মানুষগুলো অবশেষে নিজেকে নাস্তিক হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং অপরাপর সবাই এই কাঠামোর ভেতরে এসে নিজেকে সংশয়বাদী হিসেবে উপস্থাপন করেন। সে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রজ্ঞা অর্জন করার পর যদি কোনো তরুণ নিজেকে নাস্তিক ভাবে কিংবা বিশ্বাস করে তার বিশ্বাসকে কোনোভাবেই টলানো যাবে না, তার আগ পর্যন্ত আসলে নিজস্ব বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব তাকে প্রতিমুহূর্তে পীড়ন করে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×