একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং পঁচাত্তরের সিপাহী বিপ্লবের ভূমিকা টেনে স্বরাষ্ট্র ও তথ্যমন্ত্রী এক হাত নিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীরের বিতর্কিত ভূমিকা টেনে তাকে আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের চেয়েও অযোগ্য বলে দাবি করেন কাদের সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দীন খান আলমগীর পাকিস্তান আমলে সরকারের ডিসি ছিলেন। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকিস্তান সরকারকে সহায়তা করেছিলেন।’
আর আজ তাকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই সাবেক নেতা।
এ সময় কাদের সিদ্দিকীকে প্রশ্ন করা হয়- তার অর্থ মহিউদ্দীন খান আলমগীর রাজাকার। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কারো নাম ধরে বলছি না অমুক রাজাকার। তবে তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) পাকিস্তান সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত ডিসি ছিলেন। ওই সরকারের আনুগত্য করেছিলেন।’
‘তিনি আরো বলেন, ‘এক সময় বলা হতো সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য। এখন জনগণ দেখছে তার চেয়েও আরেক অযোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পেয়েছে দেশ।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আরো বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে র্যাব-পুলিশ সবই রয়েছে। তাদের রেখে তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের ব্যবহার করতে চাইলে দেশের মানুষ তা মেনে নিবে না।’
জামায়াত-শিবির দমনে ছাত্রলীগকে ব্যবহারের কথা বলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশাসনিক ব্যর্থতা প্রমাণ মেলে বলেও জানান তিনি।
’৭৫- এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কাদের সিদ্দিকী। বলেন, ‘জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু সিপাহী বিপ্লবের সময় ট্যাঙ্কের ওপর উঠে উল্লাস ও নাচানাচি করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘জাতির দুর্ভাগ্য যে সেই ইনুকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্যমন্ত্রী বানিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলে যাকে ইচ্ছে তাকে মন্ত্রী বানাতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন কাদের সিদ্দিকী।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘পাকিস্তান রক্ষায় শেষ দিন পর্যন্ত যারা চেষ্টা করেছিলেন, আজ তাদেরকেই সরকারের মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা করা হচ্ছে।’
এ সময় কাদের সিদ্দিকী পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবির সরকারের ইন্ধনে হামলা করছে বলেও অভিযোগ করেন। সাংবাদিকরা এমন অভিযোগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-শিবির দেশজুড়ে পুলিশের ওপর যে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাতে সরকারের সহায়তা আছে বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।’
কারণ ব্যাখ্যায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা চলাকালে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরাও রয়েছে। আর ক্ষমতাসীনদের উপস্থিতিই প্রমাণ করে হামলায় সরকারের ইন্ধন রয়েছে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সরকার পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলা মোকাবেলা করতে না পারলে জনগণই তাদের মোকাবেলা করবে। জনগণ কখনো দেশকে পাকিস্তানী রাষ্ট্রে পরিণত হতে দিবে না।’
যুদ্ধাপরাধের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কাদের সিদ্দিকী। বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারে সরকার ইচ্ছা করে দীর্ঘসূত্রিতা করছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার সব যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তার না করে হাতে গোনা ৮/১০ জনকে ধরে বিচার সম্পন্ন করার পায়তারা করছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচারে শরিয়া আইনের কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের শপথ ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলেও দাবি করেন কাদের সিদ্দিকী। আর এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।
কৃষকশ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘সংবিধানে দেশের মালিক জনগণ। অথচ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিজেদের মালিক মনে করছেন। তাদের মনে রাখা উচিত মালিক নয়, দেশের সেবা করার জন্য জনগণ তাদের ভোট দিয়েছে।’