বিশ্ব ভালবাসা দিবস নাকি ভ্যালেনটাইন ডে
ভালোবাসা দিবসের বিকিকিনি
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যবসা এখনো ইউরোপ, আমেরিকা বা পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতো জমে না উঠলেও এ দেশের কিছু কিছু ব্যবসায়ী এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন সারা বছর ধরে। ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কার্ড, ফুল আর উপহারসামগ্রীর দোকানে বেচাকেনা বেড়ে যায়.............{১৪-০২-১০ কালের কন্ঠ}
বিশ্বজুড়ে ‘ভালোবাসা দিবস’ উদ্যাপনের প্রস্তুতি
মোহাম্মদ আসিফ। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারের প্রকৌশলের ছাত্র। ওই তরুণ চার বছর ধরে মনের কোণে লুকিয়ে রেখেছেন এক তরুণীকে। কিন্তু মনের কথাটি এত দিন প্রকাশ করতে পারেননি তাঁর কাছে। এবারের ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চান না তিনি। ভালোবাসার মানুষটির কাছে এবার তিনি মনের গোপন কথাটি প্রকাশ করবেনই.........{১৪-০২-১০ প্রথম আলো}
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, টিভি নাটক, টক-শো, অনুষ্ঠান, ফিচার, ক্ররপত্র ইত্যাদি নানা বিধ আয়োজনে ছিল মুখরিত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, শহর, জেলা, বিভাগ, দেশ তথা গোটা বিশ্ব।।
যা দেখেছি.......
দেখেছি ফুলের দোকানে রমরমা ব্যবসা, ফুলের গায়ে আগুন
দেখেছি বিভিন্ন প্রকাশনা, খবর, অনুষ্ঠান
দেখেছি ধানমন্ডিসহ শহরের উল্ল্যেখযোগ্য স্থান সমূহে উপচে পরা ভীর, যুগলবন্দি মানব সকল।
দেখেছি মা-বাবার উৎকণ্ঠিত কোমলমূখ
দেখেছি স্কুল পড়ুয়ারাও পিছিয়ে নেই!......হায়!
দেখেছি.....দেখেছি....দেখেছি....
শুধু দেখিনি দিবসটি বিষয়ে আলোচনা হতে
শুধু শুনিনি দিবসের মূল ইতিহাস বিষয়ে কাউকে বলতে
বার বার মনে হয়েছে, কেন যেন সবাই এর আয়োজনের আড়ালে দিবসের ইতিহাসকে আড়াল করতে চাচ্ছেন।
{{{{আমি এখানে এদিন বিষয়ে কিছু বিষয় লিখব ভেবেই শুরু করলাম। এটিই আমার প্রথম পোষ্ট। বানান, বাক্য গঠন, ভাষাগত ইত্যাদি যেকোন ভুলের জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
গঠনমূলক সংযুক্তি, সমালোচনা ও মন্তব্য আশা করব আপনাদের সবার কাছে।}}}}
ভ্যালেটাইন ডে বনাম ভালবাসা দিবস
*ভ্যালেনটাইন অর্থ: "উৎস, প্রভাব—নানান বিষয়ে অনেক কিছুই জানে যে"
*ভ্যালেনটাইন, একজন কৃশ্চিয়ানের নাম। সে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর পাদরি ছিল।
*ভ্যালেনটাইন ডে নিখাঁদ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
*এটি একজন খ্রিস্টান পাদরিকে অমর করে রাখার নিমিত্তে তার স্মৃতিচারণ মাত্র।
মূল ইতিহাস:::::::::
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন'স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দি করেন। ভ্যালেইটাইন ছিল কৃশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারক, আর সম্রাট ছিলেন রোমান দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। ভ্যালেইটাইন যেমন একজন ভাল পাদ্রী ছিলেন তেমনি ছিলেন ভাল চিকিৎসক।
(যেমন ডা. জাকির নায়েক, তিনি যেমন সুদক্ষতার সাথে ইসলামের প্রচার চালাচ্ছেন তেমনি তিনি একজন ভাল চিকিৎসকও বটে)
বন্দি অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টীহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২৭০।
অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন'স স্মরনে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষনা করেন।
খৃষ্টানজগতে প্রাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন :
২৩ এপ্রিল - সেন্ট জজ ডে,
১১ নভেম্বর - সেন্ট মার্টিন ডে,
২৪ আগস্ট - সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে,
১ নভেম্বর - আল সেইন্টম ডে,
৩০ নভেম্বর - সেন্ট এন্ড্রু ডে,
১৭ মার্চ - সেন্ট পযাট্রিক ডে।
তাই বলা যায়, ভ্যালেনটাইন ডে একটি নিখাঁদ ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
উপরোল্লেখিত ঘটনাটিই সবচে বেশী প্রচলিত।
আরো কিছু উল্ল্যেখযোগ্য বণর্নাও আছে::
সম্রাট লক্ষ্য করেছেন, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিনতম মুহূর্তে ধৈর্যের পরিচয় বেশি দেয়, বিবাহিত যুবকদের তুলনায়। অনেক সময় তারা স্ত্রী-পুত্রের টানে যুদ্ধে যেতেও অস্বীকৃতি জানায়। তাই সম্রাট যুগল বন্দী তথা যে কোনো পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
সেন্ট ভেলেনটাইন এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। গোপনে তার গির্জায় পরিণয় প্রথা চালু রাখে। এ খবর জানাজানি হলে সম্রাট তাকে জেল বন্ধী করার নির্দেশ প্রদান করে। জেলের ভেতর-ই পরিচয় ঘটে জেলার-এর এক অন্ধ মেয়ের সাথে। বন্দি অবস্থাতেই চিকিৎসা করে অন্ধ মেয়ের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেয়—বলে ইতিহাসের বর্ণনায় পাওয়া যায়। এভাবে ভেলেনটাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে লেখা এক চিঠিতে সে জানায়—'ইতি, তোমার ভ্যালেনটাইন'। এর আগে-ই মেয়েটি ৪৬ জন সদস্যসহ তার খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল।
আরেকটি বণর্নাঃ
গোটা ইউরোপে যখন খ্রীষ্ট ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালন করা হতো রোমীয় একটি কালচার।
মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি জারে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম বের হয়ে আসতো, সে পূর্ণ বৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। সাথে সাথেই তাকে চিঠি লিখত, এ শিরোনামে,
‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ তাদের মাঝে এ সম্পর্ক সারা বৎসর বিদ্যমান থাকত। বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো।
এ কালচারটি কতক পাদরির গোচরীভূত হলে তাদেরকে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে। তারা মনে করল, একে সমূলে উৎপাটন করাও অসম্ভব। তাই শুধু শিরোনামটি পাল্টে দিয়ে একে খ্রীষ্ট ধর্মায়ন করে দেয়া যায়। তাই নির্দেশ জারি করা হল, এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভেলেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে।
কারণ, এটা খ্রীষ্ট নিদর্শন, এভাবেই তারা ধীরে ধীরে খ্রীষ্ট ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হবে।
এই হল মোটামুটি মূল ইতিহাস।
ভ্যালেটাইন ডে এর সাথে বর্তমান ভালবাসা দিবসের সাথে কী মিল আছে তা কি কেউ বলতে পারবে?
মিল থাকলে তার সাথে আমাদের সামাজিক বা নৈতিক দিক কতটি সমর্থিত?
এর লক্ষ্যতো আর এই নয় যে মানুষ তার মনুষ্যত্ব ভুলে, নিজ পরিচয় ভুলে লীলায় মজবে।
মুসলমানরা কেনই বা বিধর্মীয় আচারকে নিজেরা পালন করবে সেকথা বাদ দিলাম খোদ ধর্মভীরু খ্রীষ্টানরাই এদিনের বর্তমান রূপ দেখে হতবাক হন!!
জনৈক পাদরি বলেন, "আমাদের পিতা-মাতারা এমন একটি ধর্মীয় নিদর্শনের বর্তমান পরিণতি দেখে ব্যথিত, বিষণ।"
যেমন, কিছু কিছু কার্ডে দু’টি পাখা বিশিষ্ট একটি শিশু বাচ্চার, অন্তরের চার পাশে তীর তাক করে ঘুর্ণয়মান ছবি যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে।
‘আমরা কি জানি, এটা কীসের নিদর্শন বহন করে?
এ নিদর্শনটিকে রোমানদের নিকট ভালোবাসার প্রভু মনে করা হয়।
তাহলে এটি খ্রীষ্টিয় কোন প্রভুতো নয়ই বরং সেই রোমান দেব-দেবির থেকে আসা প্রতীকি!!!
যদিও ভেলেনটাইনকে ‘আতারিত’-যা রোমানদের বিশ্বাসে ব্যবসা, সাহিত্য, পরিকল্পনা ও দস্যুদের প্রভু- এবং ‘জুয়াইবেতার’-যা রোমানদের সব চেয়ে বড় প্রভু-সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সে উত্তরে বলেছিল, এগুলো সব মানব রচিত প্রভু, প্রকৃত প্রভু হচ্ছে, ‘ঈসা মসিহ।’
এ দিবসটি বিষয়ে আরো কিছু কথা বলা প্রয়োজন কেননা, বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে এ দিনটির বেশ কদর বেড়ে গেছে।
ঘটছে নানা অঘটন।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্ম দিনের উৎসব এমনকি ধর্মোৎসবের সবক্ষেত্রেও ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জার অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা দ্বিধা করেন না।
খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব পালন নিষিদ্ধ হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন উৎসব পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উৎযাপন করা নিষিদ্ধ দেয়। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানীতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।
তাই আমার কাছে এদিনটিকে একপ্রকার "আতংক দিবস" বলেই মনে হয়। কারণ এদিন অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একপ্রকার আতংকের মধ্যেই থাকেন বলা যায়।।
-সমাপ্ত-
লেখক
কে. এম. মাহদী হাসান
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১০ রাত ১২:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




