somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত আতা

০৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সখের কিছু দিয়ে যদি ইফতার করা যায়; তবে তার মূল্য কতটুকু?
ছেলেটার সাথে দেখা হলো স্কুল থেকে ফেরার পথে। রাস্তায় দাড়িয়ে ভ্যানের অপেক্ষা করার চেয়ে একটু হেঁটে নেয়া ভালো। তাই হাঁটা শুরু করলাম। লক্ষ্য করলাম, দূরে দু’টি ছেলে ভ্যানে বসে আছে। আন্দাজ করলাম, ওরা আমাকে দেখেই দাড়িয়েছে। এগিয়ে যেতেই শুনলাম, তাদের কেউই ভ্যান চালক নয়। তবে আশ্বাসের বাণী হলো; চালক রাস্তার পাশের বাড়িতে গিয়েছে। এখনই আসবে এবং আমারর গন্তব্যের দিকেই তার যাওয়ার ইচ্ছা আছে। শুনে দাড়িয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণ পরেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কে যেন মনের সুখে হাসতে হাসতে রাস্তার দিকে আসছে। বুঝলাম এই চালক। ভ্যানের সাথে তার সম্পর্ক; আমার যাওয়ার সাথে তার ভ্যানের সম্পর্ক। অথচ সে খুব পরিচিতর ভাব ধরে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, দেখেন তো ভাই ঐ মাথার আতা ফলটা পেকেছে না?
আমি মানুষের সম্পর্কের বন্ধনে তার সাথে তাল দিয়ে উপরের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে লক্ষ্য করলাম। গাছটিতে অনেক আতা ফল ধরেছে। তার মধ্যে বড় একটি আতা লাল টকটকে ঘিয়ে ভাব ধারণ করেছে। তার শক্ত মনোভাবে প্রভাবিত হয়ে বল্লাম, হ্যাঁ তাইতো মনে হয়।
অমনি সে খুব দ্রুত গাছটির মাথায় চড়ে গেল। বাড়ি থেকে একটা কিশোর বেরিয়ে এলো। তার ভাবে মনে হচ্ছিল, সে চাচি্ছল না যে কেউ গাছে চড়ুক। যেহেতু চালকটি খুব উচ্ছ্বাসে একেবারে মাথায় উঠে গিয়েছে; সেহেতু সে শুধু নিরূপায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে।
হঠাৎ চালকটি চার-পাঁচটি আতা ফল ছিঁড়ে নীচে ফেল্ল, এবং ভাব এমন দেখালো যে, সে গাছওয়ালার উপকার করছে। আমি দেখলাম সব কটি আতা আঘাত পেল; হয়ত এগুলো পাকার আগেই পঁচে যাবে। সর্বশেষ কাঙ্খিত আতা ফলটি পারতে গিয়ে, সে ছোট ছোট আতায় ভরা ডালটিই ভেঙ্গে ফেল্ল। এবার কিশোরটি নীরবতা ভেঙ্গে বলেই ফেল্ল, এই ভাই কী করছেন? নামেন তো।
চালকটি দ্রুত গাছ থেকে নেমে তার কাঙ্খিত আতা ফলটি হাতে নিয়ে কিশোরকে উদ্দেশ্য করে, “এই আমি এটা নিলাম; বাকিগুলো তুমি রাখে” বলতে বলতে গাড়ির কাছে এল এবং গাড়ি চালু করতে করতে আমাকে বল্ল, ‘ভাই দ্রুত উঠেন। মন পরিবর্তন হওয়ার আগেই ভাগি’। ইতিমধ্যে অনেক যাত্রী হলো। ভ্যান ছাড়ার সাথে সাথে সবাই বলছে, আতাটির দাম কত। তাতে আন্দাজ হলো, এটির দাম সত্তর-আশি টাকার কম নয়।
চালক খুব আনন্দে গাড়ি চালাচ্ছে আর বলছে, “এই ফলটি আমি আরও দুইদিন আগে দেখেছি। আজ মনকে থামাতে পারলাম না। আমি আতা খুব পছন্দ করি। বাড়ির মুরুব্বি মহিলাটি খুব ভালো। উনাকে বলার সাথে সাথেই বল্লেন, ঠিক আছে চড়ো। আমি কাল এটা দিয়েই ইফতার করব।”
গন্তব্যে পৌছানোর কিছু আগে, রাস্তার পাশ থেকে চালকের এক পরিচিক লোক বল্ল, এটা বিক্রি করে যা। কত নিবি?
চালক জবাব দিল পাঁচশ টাকা। তারপর যাত্রীদের মধ্যে থেকে একজন বল্ল, ”শখের জিনিসের কি দাম হয়?”
ভ্যান চালকের জবাব, “পাঁচ লাখ টাকা হলেও তো আমি ওকে এটা দিতাম না।”
আমি চিন্তায় পরে গেলাম। চালকটি মনের অজান্তে গাছওয়ালার ক্ষতি করে এসেছে। গাছওয়ালা যদি জানত, সে তার আতাগুলোর বারোটি বাজাবে, তবে জীবনেই উঠতে দিত না। ধূর্ততা দিয়ে সে বিশ্বাস অর্জন করল, দ্রুত ফলটি নিয়ে পালিয়ে এলো, আবার এই আতা দিয়েই সে ইফতারের মতো পবিত্র বিষয়কে জড়িয়ে নিল। বাড়ির মহিলাটি তাকে গাছে চড়তে দিল বলে, মহিলাটি তার দৃষ্টিতে ভালো। অথচ সেই মহিলাটিকে সে আড়াল করে দ্রুত প্রস্থান করল; কারণ সে জানত, সে যা করেছে তার জন্য কথা শুনতে হবে।
অবাক বিষয় হলো, সে বল্ল, পাঁচ লাখ টাকা দিলেও নাকি সে আতাটি বিক্রি করবে না। অথচ মাত্র দু’শ টাকা দিলেই সে এটি বিক্রি করে দিত।
অস্তিত্ব খসে গেলে কিংবা মনে জায়গা পাওয়া প্রাণ সরে গেলে, কেউ নিঃস্ব হয় না। ভদ্র মহিলাটি নিজেও অসহায়, তার বাড়ি দেখে বুঝা গেল। হয়ত সহজ-সরল বিশ্বাসে তিনি চালকটিকে অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনি এক আতা এবং পাঁচ-ছয়টি নষ্ট হয়ে যাওয়া ফলের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। বরং তিনি কষ্ট পাবেন; আবার শান্তিও পাবেন যে, ছেলেটিকে তিনি কিছু একটা দিতে পেরেছেন।
জামিদারের দারোয়ানের হয়ত কিছু নেই; তবুও সে পাহারার অধিকারে নিজেকে জমিদারের অংশ ভাবে। যদিও জমিদার কখনও দারোয়ানের জন্য নিজের পরিচয় দিতে নারাজ তবুও নরক ও স্বর্গের পথ থেকে আড়াল করা জায়গাতেই আত্মার মিলন হয়। অদ্ভূত টানে, সে মিলনের সমাপ্তি হলেই মূর্খদের কর্ম রেস অন্যকে ব্যথা দেয়।
চালকটি, সাধারণ ভাব জেনেও তাতে স্বার্থপরতার তীব্র কাঙ্খায় সরল চাতুর্য দিয়ে ছোট একটি ঘটনা ঘটালো। অথচ এখান থেকে কত-শত শিক্ষার বিচ্ছুরণ হলো; সে নিজেও বুঝল না। বাড়ির ঐ মহিলাটির খবর জানি না; তবে ঐ বাড়ির ঐ কিশোরটি আর কখনও কাউকে সরল বিশ্বাসে আতা গাছে চড়তে দিবে না। কিশোরটি মনের অজান্তে অদ্ভুত আতা দেখে ফেলেছে। এই আতা কেউ কাউকে দিতে চায় না। এই আতা দিলে আঘাত লাগে। যে পায় সে তার মর্ম বুঝে না কিন্তু যে হারায় সে কষ্ট পায়।
চালকটি ফির কখনও এই আতা গাছটির তোতা হতে চাইলে; কিশোরটি তীব্র ঘৃণায় হয়ত প্রতিবাদ করবে।
------ অদ্ভুত আতা
------ আব্দুল্লাহ আল- মাহমুদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৪২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×