somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভরা ভরা সাধু

২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীতের সময়, গ্রামটি বেশ সুন্দর দেখালেও, বৃষ্টির দিনে এখানকার অধিকাংশ রাস্তা চলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যদিও গ্রামের প্রধান সড়কটি ইট দিয়ে তৈরি, তবুও দিনের পর দিন ব্যবহার আর সংস্কারের অভাবে তা একটু ঢিলে হয়ে গিয়েছিল।
একদিন, গ্রামের একজন দিনমজুর হাঁটতে গিয়ে রাস্তায় ঢিলেঢালা একটি ইট দেখতে পেল । সে ভাবল, "এই ইটটা এখানে পড়ে আছে কেন?" বাড়ির কোনো কাজে লাগবে মনে করে, সে ইটটি কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে গেল।
পরের দিন, পাশের বাড়ির অন্য এক ব্যক্তি লক্ষ্য করল যে, রাস্তার ভাঙা জায়গা থেকে কয়েক ইট গায়েব হয়ে গেছে। তখন তারও মনে হলো, "রাস্তায় তো অনেক ইট রয়েছে, দুই-একটা ইট আমারও বাড়ির কাজে লাগবে!" এরপর সেই ব্যক্তি পাঁচ-ছয়টি ইট তুলে আনল । এভাবে, একের পর এক গ্রামের মানুষ রাস্তায় থাকা ইটগুলো ঘরে নিয়ে যেতে লাগল। কেউ ভাবল, "যেহেতু সবাই নিচ্ছে, আমিও না হয় কয়েকটা নিয়ে আসি!" দিনে দিনে রাস্তার ইটগুলো যেন, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই পৌঁছে গেল।
কিছুদিন পর বৃষ্টি এল। রাস্তার অবস্থা ভয়ানক খারাপ হয়ে পড়ল ৷ যেহেতু ইটের কোনো অংশই আর অবশিষ্ট নেই তাই এটি মাটির রাস্তার মতো কাদামাটি ও পানি দিয়ে ভরে গেল। হাঁটা তো দূরের কথা, ছোট শিশুদের স্কুলে পাঠানোও মুশকিল হয়ে পড়ল। এই অবস্থা দেখে, গ্রামের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ল। কিন্তু রাগ করছে তারা কার সাথে?
রাস্তা থেকে ইট সরানোর বিষয়ে তারা একে অপরকে দোষারোপ শুরু করল। "ঐ লোকটা শুরু করেছিল!", "না, ও শুরু করেনি, আরেকজন আগে নিয়ে গেছে!" – এমনই কাঁদা ছোড়াছুড়ি আর শোরগোল গ্রামে চলতে থাকল।
সবার মনের মাঝে একটি ধারণা ঢুকে গেল যে, অপর কেউ এই দোষের জন্য দায়ী। নিজে নয়, অন্যরাই "চোর", "ফাঁকিবাজ"।
মাঠে-ঘাটে কিংবা চায়ের দোকানে, সব জায়গায়, নিজেকে সৎ প্রমাণের চেষ্টা চলছিল৷ এভাবে ধীরে ধীরে, আরও নানান বিষয়ে, তারা অন্যদের দিকে আঙুল তোলার প্রবণতায় অভ্যস্থ হয়ে উঠলো ।
অবশেষে গ্রামের একজন সৎ আলেমের নেতৃত্বে, যিনি গ্রামের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও কারও কাছে দোষী নয়, সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল, এখন থেকে কেউ আর রাস্তায় থাকা জিনিসে হাত দেবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! যে যেমন ছিল, তেমনই রয়ে গেল।
তবুও দুইএকটা শিশু বড়ো হচ্ছে যারা ঐ আলেমের মতো দুই একজনকে আদর্শ মানতে ভালোবাসে৷ হয়তো অল্প অল্প করে হলেও এই গ্রামে আলো আসবে৷
এই গল্পটি আসলে আমাদের সমাজের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। আমাদের জীবনে প্রায়ই এমন হয় – সামান্য সুযোগ পেলেই আমরা নিজের সুবিধার কথা ভাবি। কিন্তু সেই সুবিধা নিতে গিয়ে যে সমাজের ক্ষতি হচ্ছে, তা বুঝতে চাই না। সমাজের কেউ যদি একটি ছোট অপরাধ করে ধরা পড়ে, তখন সবাই মিলে তাকে দোষারোপ করি, তার বিচার চাই, তাকে অপমান করতে কুণ্ঠাবোধ করি না। অথচ, নিজেরাই হয়তো কোনো না কোনো অন্যায় কাজ করে চলেছি, যা সমাজের সামগ্রিক ক্ষতি করছে। তবুও আমাদের মানসিকতা এমন যে, নিজের ভুলকে লুকিয়ে রেখে অন্যের ভুল বড় করে দেখতে চাই।
আজও গ্রামের মানুষ সেই কাদা-মাটির রাস্তা ধরে হাঁটে, আর ভাবতে থাকে, “যদি কেউ প্রথমে ইট না নিত, তাহলে এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।” কিন্তু তারপরও কেউ সেই সময়ের ভুলটা স্বীকার করতে চায় না। নিজের স্বার্থের জন্য সমাজের মঙ্গলকে অবহেলা করার ফলে কী ক্ষতি হয়, তা আমরা বুঝতে চাই না। এভাবেই নেতিবাচক ঘটনা একে অপরকে ছুঁয়ে সমাজজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, এবং শেষে এমন একটা অবস্থা হয় যেখানে আমরা সবাই অন্যদের দিকে আঙুল তুলে বলি – “ও-ই চোর,” “ও-ই ফাঁকিবাজ,” “ও-ই দালাল,” যেন নিজে ছাড়া আর সবাই খারাপ।
এই ছোট্ট গ্রামটির ইটের রাস্তার কাহিনী তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সমাজের মঙ্গলের জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই কিছুটা দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যের ভুল খোঁজার আগে নিজেদের দিকে তাকাতে হবে, যাতে আমরা একসঙ্গে সমাজের উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারি।
--- ভরা ভরা সাধু
--- আব্দুল্লাহ আল- মাহমুদ৷
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×