somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহানুভূতির ফাঁদ

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকেই পুরো শহর উত্তপ্ত। আদালতের রায়ের পর চোর-ডাকাতদের পরিবার রাস্তায় নেমে এসেছে। নারী-শিশুরা রাস্তার মাঝখানে বসে আছে, নড়বড়ো মাদুর পেতে কেউ শুয়ে পড়েছে, কেউবা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তাদের অভিমান রাষ্ট্রের ওপর, সমাজের ওপর, বিচার ব্যবস্থার ওপর।
এই শহরেই কিছুদিন আগে একটা বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। মধ্যরাতে একদল মুখোশধারী ঢুকে পড়ে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে, হাত-পা বেঁধে ভয় দেখিয়ে সব লুট করে নিয়ে যায়। এরপর শহরের অন্যপ্রান্তে এক গৃহস্থের ঘরে হামলা হয়। লুটপাটের পাশাপাশি মারধর, এমনকি একজন বৃদ্ধা গুরুতর আহত হয়। মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা চাইল কঠোর বিচার।
শেষ পর্যন্ত কিছু অপরাধী ধরা পড়ল। আদালতে বিচার হলো, কয়েকজনের শাস্তি হলো, কেউ যাবজ্জীবন, কেউ মৃত্যুদণ্ড পেল।
এবার শুরু হলো নতুন নাটক। শাস্তিপ্রাপ্তদের পরিবার পথে বসলো। তাদের দাবি—তাদের স্বামীরা নির্দোষ, রাষ্ট্র তাদের জীবন ধ্বংস করেছে। তারা ক্ষতিপূরণ চায়, না হলে রাস্তায় পড়ে থাকবে।
শুরুতে পথচারীরা বিষয়টা উপেক্ষা করল। কিন্তু দিন গড়ানোর সাথে সাথে আবেগের বন্যা বয়ে গেল। কেউ তাদের জন্য খাবার নিয়ে এলো, কেউ ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিল। দেখো, ছোট্ট শিশুরা না খেয়ে বসে আছে! এক বৃদ্ধা মহিলা ডুকরে কেঁদে উঠলেন, “বাবারে, এত ছোট্ট বাচ্চারা কী দোষ করল?”
শহরের লোকজনের চোখ কেঁদে এল। এই তো সেদিন যারা বিচার চেয়েছিল, তারাই এবার নরম হয়ে গেল। একদিন আগেও যারা আদালতের রায় দেখে হাততালি দিয়েছিল, তারা আজ বলছে—“না, এটা ঠিক হয়নি।”
কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাহলে কি চোর-ডাকাতদের ছেড়ে দেওয়া হতো? তাহলে কি রাষ্ট্রের উচিত ছিল বিচার না করা?
এদিকে প্রশাসনের লোকজন চিন্তায় পড়লো। রাস্তায় বসে থাকা এসব মানুষকে সরাতে হবে, নইলে শহরের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হবে। কয়েকজন নারী পুলিশ এগিয়ে গেল, বুঝিয়ে বলল—“আপনারা যান, রাস্তায় বসে থাকলে সমস্যা হবে।”
কিন্তু তারা নড়ল না।
শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোর করে সরানোর চেষ্টা করল। হঠাৎ কেউ একজন ভিডিও ধারণ করে ফেলল, তারপর মুহূর্তের মধ্যে সেটি ভাইরাল হয়ে গেল—“দেখুন, নিরীহ নারীদের কীভাবে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!”
এবার পুরো শহর স্তম্ভিত।
যারা বিচার চেয়েছিল, তারাই বলছে—“এটা খুব অন্যায় হলো।”
যারা জানত, এই পরিবারের কর্তারাই ডাকাতি করেছে, তারাও বলছে—“আহারে, বাচ্চাগুলোর কী দোষ!”
কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন—এভাবে চললে আইন কোথায় থাকবে? যদি কাল দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবার তার শিশুকে নিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে, দাবি তোলে ক্ষতিপূরণ—তাহলে রাষ্ট্র কী করবে?
এভাবেই আবেগের চক্রে ঘুরতে থাকে সমাজ। একদিকে বিচার চাই, অন্যদিকে সহানুভূতিতে নরম হয়ে পড়ি। কিন্তু এই সহানুভূতি কি আদৌ সুবিচার নিশ্চিত করে? নাকি এটিই সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচারের অন্তরায়?
রাষ্ট্র জানে, এসব প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়। কিন্তু একবার যদি আবেগের কাছে আইন হেরে যায়, তবে আর ন্যায়বিচার থাকবে না, থাকবে কেবল সহানুভূতির ফাঁদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×