somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিখ্যাত ইতালীয়ান বিজ্ঞানী বেতার আবিস্কারের জনক গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কনির মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীকে জ্ঞান বিজ্ঞানে যাঁরা অগ্রসর করে গেছেন তাঁদের অন্যতম বেতার আবিস্কারক গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কনি। বেতারের জনক মার্কনি নামেই যিনি সমাধিক পরিচিত। রেডিও আবিষ্কার করে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন বিজ্ঞানী মার্কনি। মার্কনি ছিলেন ইতালীয় উদ্ভাবক এবং প্রকৌশলী যিনি বেতার যন্ত্রের সম্প্রচার পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি একটি ব্যবহারিক রেডিওগ্রাফ পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। এই উদ্ভাবনকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের অসংখ্য ব্যবসায়িক ও প্রাযুক্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ১৯০৯ সালে কার্ল ফের্ডিনান্ড ব্রাউনের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বেতার সম্প্রচার পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপনের জন্যই তাদেরকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। বিশ্বখ্যাত এই বিজ্ঞানী ১৯৩৯ সালের ২০ জুলাই মাত্র ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। আজ এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যুদিন, তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


(শিশু মার্কনি)
গুলিয়েলমো মার্কোনি১৮৭৪ সালের ২৫শে এপ্রিল ইতালির বোলোনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষাপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ছিলেন না। তার পিতা ছিলেন ইতালির একজন ধনী ব্যবসায়ী। সাত বছর বয়সে কিছু দিনের জন্য মার্কনি স্কুলে গিয়েছিলেন এবং তার পর থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেন, স্ফুলিঙ্গ থেকে যে শব্দতরঙ্গের সৃষ্টি হয় তা বিনা তারেই কিছু দূর যেতে পারে। শুরু হলো তার গবেষণার কাজ। তিনি চার তলায় একটি ঘরে বসে বোতাম টিপে নিচতলার একটি বেল বাজিয়ে ফেললেন যেখানে তারের কোনো যোগাযোগ ছিল না। ইতালি সরকার এ ক্ষুদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের প্রতি তেমন আগ্রহ না দেখানোর ফলে মার্কনি পিতার উৎসাহে অনেকটা বাধ্য হয়েই ইংল্যান্ডে চলে যান।


গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কনি বিশ বছর বয়সে মার্কিন বিজ্ঞানী হার্জের একটা প্রবন্ধ থেকে জানতে পারেন যে, সদ্যপ্রয়াত এক বৈজ্ঞানিক এমন একটা বৈদ্যুতিক যন্ত্র বের করতে পেরেছেন, যার সাহায্যে ঘরের একদিক থেকে প্রেরিত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বিনা তারে ঘরের অন্যদিকে আগুনের ফুলকি জ্বালিয়ে দেয়। মার্কনি হার্জের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরীর চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকলেন। মার্কনির কাজ শুরু হলো লন্ডন জেনারেল পোস্ট অফিসের একটি কক্ষ থেকে পাশের বাড়ির কাছে বার্তা প্রেরণের মধ্য দিয়ে।


একনিষ্ঠ অধ্যাবসায় ও গবেষণায় তিনি এমন একটা যন্ত্র তৈরী করলেন, যার মাধ্যমে এক মাইল দূর পর্যন্ত বিনা তারে সংকেত পাঠানো সম্ভব। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল আটলান্টিকের এপার থেকে ৩৩৭৮ কিলোমিটার দূরে ওপারে বার্তা প্রেরণ। অতঃপর ১৮৯৯ সালে ইংলিশ চ্যানেলের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত বিনা তারে সংবাদ আদান-প্রদান করতে সক্ষম হন মার্কনি। সেকালের বিজ্ঞানীরা অনভিজ্ঞ মার্কনির এ স্বপ্নের সফলতা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেন এই ভেবে যে, ভূপৃষ্ঠের বক্রতার জন্য বহু দূরবর্তী অঞ্চলে এ ধরনের বার্তা পাঠানো সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি এ অসম্ভবকে সম্ভব করলেন ১৯০১ সালে এবং আটলান্টিকের এপার থেকে ওপারে বেতারসঙ্কেত পাঠাতে সক্ষম হলেন। তার এ সাফল্য ছিল মানবজাতির জন্য যুগান্তকারী।


১৯০১ সালে গুগলিয়েলমো মার্কনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তার বিহীন সংযোগ (বেতার) স্থাপন করেন। বেতার হল তার ব্যতীত যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। রেডিও (বেতার), টেলিভিশন (দূরদর্শন), মোবাইল ফোন, ইত্যাদিসহ তারবিহীন যেকোনো যোগাযোগের মূলনীতিই হল বেতার।


বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয় বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রেডিও টেলিস্কোপ। এতে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে দ্রুতগতিতে মার্কনি আবি®কৃত বেতারযন্ত্রের ব্যবহার বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষপ্রান্তে অনেক দেশের বিজ্ঞানী প্রায় একই সময়ে বেতার আবিষ্কার করলেও গুগলিয়েলমো মার্কনিকেই বেতারের আবিষ্কারক হিসাবে ধরা হয়। পূর্বে শুধু রেডিওতে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে বেতার প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে সর্বত্র।


১৯০৯ সালে সরকার কর্তৃক তিনি সম্মানিত হন এবং ইতালি সরকার তাকে আজীবন সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে। ১৯০৯ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মার্কনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন (তিনি কার্ল ব্রাউন এর সাথে যুগ্মভাবে এ পুরস্কার পান)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মার্কনি ইতালীয় বেতার-সার্ভিসের কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে ইটালীর তৎকালীন রাজা তাকে ‘মারকুইস’ খেতাব দান করেন। অবশ্য মার্কনির আগেও ম্যাক্সওয়েল, হার্ৎস কেলভিন, বাঙালী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, আলেক্সান্দর পপোভ প্রমুখ বিজ্ঞানী এ বিষয়ে গবেষণা করে গেছেন।


(স্যার জগদীশচন্দ্র বসু)
রেডিও সম্পর্কে একটা অজানা তথ্য হলো, মার্কনি রেডিও আবিস্কার করার আগেই আমাদের দেশের বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও আবিস্কার করেছিলেন কিন্তু তিনি তখন এর স্বীকৃতি নিতে পারেন নাই । তবে তাদের সেই অসমাপ্ত কাজকে সাফল্যের দিকে ধাবিত করে বিজ্ঞানী মার্কনি অমর হয়ে আছেন। সম্প্রতি জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথম বেতার আবিস্কারক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন । ১৯১২ সালে Institute of Electrical and Electronics Engineers স্যার জগদীসচন্দ্র বসুকে রেডিও আবিস্কারক স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে। স্বীকৃতি স্বরূপ জগদীশ বসুর স্বরনে তারা কলকাতায় একটা মাইল ফলক স্থাপন করেছে ।প্রসঙ্গত এশিয়ার টোকিও ছাড়া কলকাতাই হলো দ্বিতীয় শহর যেখানে এই মাইল ফলক স্থাপন করা হয়েছে । আর মার্কনির নাতি কয়েকদিন আগে কলকাতায় বেড়াতে আসলে তিনিও স্বীকার করে নেন জগদীশচন্দ্র বসুর রেডিও আবিস্কারক হিসেবে।
বেতার আবিস্কারক গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কনি ১৯৩৯ সালের ২০ জুলাই মাত্র ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।


আজ এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যুদিন, মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×