আইএমএফের শর্ত মেনে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনজীবনে। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে শহরের জনজীবনের অবস্থা গণমাধ্যমে কিছুটা উঠে আসছে। মানুষ যানবাহন পাচ্ছে না, যানবাহন তথা জ্বালানি সংশ্লিষ্ট সেবারগুলোর মূল্য বেড়েছে....
কিন্তু মফস্বলের কি অবস্থা?! জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে মফস্বলের দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষজন কি কি সমস্যার সম্মুখীন হবেন?! আমি গ্রামের মানুষ। আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে গ্রামে... তাই জ্বালানির অকল্পনীয় মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই মফস্বল বা গ্রামের খেটে-খাওয়া মানুষদের বিবর্ণমুখ আমার চোখে ভাসছে। আমি ভাবছি গ্রামাঞ্চলের কৃষির সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী বা সেবাদাতা ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলা (মিনি রাইস মিল বা ছোট ছোট ধানভাঙ্গার মেশিনের মালিকগণ, জমি চাষ, পানি সেচ তথা কৃষিতে ব্যবহৃত পেট্রোল- ডিজেলচালিত যন্ত্রপাতির মালিকগন) তাদের সেবার মূল্য কত পার্সেন্ট পর্যন্ত বাড়াতে পারেন সেটা নিয়ে! ভাবছি, গাড়ি চালকদের সমিতিগুলা ছোটছোট যানবাহনের ভাড়া কত টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে?! সেবা বা পণ্যের মূল্য মাত্রাতিরিক্ত বাড়ালে গ্রামীণ মানুষজন সারভাইভ করবে কিভাবে?!
জ্বালানী মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট সেবাগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া ও নিয়মিত মনিটরিং করা দেশের সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সরকারের সেই ক্ষমতা বা সদিচ্ছা আছে বলেও মনে হচ্ছেনা। অতীতে দেখেছি, বছরে একাধিকবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু সরকার কখনো জ্বালানি সংশ্লিষ্ট সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার চেষ্টা করেনি। প্রতিবার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পর যানবাহনের ভাড়া বা সংশ্লিষ্ট সেবার মূল্য নিয়ে মফস্বলে ছোটবড় হইহট্টগোল, মারদাঙ্গা বা কনফ্লিক্ট হয়েছে... এবং আস্তে আস্তে বেসরকারিভাবেই সংশ্লিষ্ট সেবাগুলোর একটা মূল্য নির্ধারণ হয়েছে। অথচ জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির পরপরই জ্বালানী সংশ্লিষ্ট সবধরনের সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া ও নিয়মিত মনিটরিং করা সরকারের দায়িত্ব ছিলো।
শুধু জ্বালানি নয়,
জনভোগান্তি নিরসনে জনবান্ধব সরকারের দায়িত্ব অঞ্চলভেদে যেকোনো সেবা বা পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া এবং নিয়মিত মনিটরিং করা। আমাদের দেশের কোনো সরকারই এইসব দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব অনুধাবন করেনি। ফলে জ্বালানি বা অন্যকোন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হলে সাধারণ মানুষ প্রচুর ক্ষতি বা ভোগান্তির সম্মুখীন হন।
সাধারণ মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যারা হন তারা হচ্ছেন মফস্বলের দরিদ্র কৃষক। আমি দেখেছি, ধনী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে (জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে) উচ্ছমূল্যে সেবা দিচ্ছেন এবং ফসল উৎপাদনের পর সিন্ডিকেট গড়ে সল্প মূল্যে ফসল ক্রয় করছেন।
'জমি চাষ থেকে ফসল বিক্রি পর্যন্ত' সময়টা ভালোভাবে অবজারভার করলে কমনসেন্স আছে এমন যেকোনো মানুষই ব্যাপারটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারবে। বুঝতে পারবে কথা দিনদিন দেশের মানুষজনের কৃষিতে আগ্রহ কেনো হারিয়ে যাচ্ছে।
এনিওয়ে,
কয়েকমাসের ব্যবধানে জ্বালানি বেড়ে প্রায় দিগুণ হয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত জ্বালানি সংশ্লিষ্ট সকলপ্রকার সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের সর্বনিম্ন স্যালারি নির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং নিয়মিত বাজারে মনিটরিং করা। নইলে জনভোগান্তি, ও অপরাধ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। কবি বলেছেন, ক্ষুধার্ত পেট নীতিকথা মানে না, বুঝেনা ন্যায় অন্যায়.... ভালো মন্দ!
ছবিঃ গোগল থেকে নেওয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৫৪