somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিসংখ্যান ব্যরোর ডিজিটাল ওয়েবসাইট দেখলেই বুজা যায় ডিজিটাল দেশ কোন অবস্থায় আছে!

০৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতমাসে পরিসংখ্যান ব্যরো ১৫৭৫ কোটি টাকা খরচ করে 'জনশুমারি' জরিপ করেছে। গণমাধ্যমে পাওয়া জনশুমারি জরিপের প্রাথমিক ফলাফল চোখে পড়েছে। বিস্তারিত ফলাফল জানার আগ্রহ থাকায়
পরিসংখ্যান ব্যরোর সাইটে কয়েকদিন ধরে উঁকি ঝুঁকি দিয়েও কোনো প্রকার তথ্য পাচ্ছি না। সাইটের "জনশুমারি সংক্ষিপ্তসার ২০২২" শিরোনামে ক্লিক করলে স্কীনে যে লেখাগুলো শো করছে তা হুবহু নিচে ক্যোট করলাম-
"শুমারি সংক্ষিপ্তসার (জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১) জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ এর মাস্টার প্ল্যান"
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য লিংকে ক্লিক করলেই ফলাফল error দেখাচ্ছে। কিংবা বলছে the requested page could not be found।
আরেকটা বিষয় খেয়াল করলাম, "পরিসংখ্যান ব্যরোর বাংলা সাব-সাইটে বা বাংলাসংস্করণে ২০১১ সাল বা পূর্বের কোনো জরিপের কোনপ্রকার ফলাফলও নেই। কিন্তু ইংরেজি সাইটে আছে। ইংরেজি সাইটে ২০১১ বা পুর্বের তথ্য থাকলেও 'তথ্য উপত্ত সার্ভ করার মান খুবই সস্তা বা সেকেলে'

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যরো ও প্রতিবেশী ভারতের জনজরিপ সংক্রান্ত censusindia.gov.in সাইট দুটো ভিজিট করলে অনুধাবন করতে পারবেন বাংলাদেশের সাইটের মান কোন পর্যায়ে আছে। এনিওয়ে,
গণমাধ্যমে পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৫১৬ জন। অর্থাৎ ১ জন মানুষ গুনতে আমাদের পরিসংখ্যান ব্যরো নামক প্রতিষ্ঠান'টি গড়ে খরচ করেছে প্রায় ৯৫ টাকা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কোটিকোটি টাকা খরচ করে সংগ্রহ করা এইসব তথ্য ডিজিটাল দেশের ডিজিটাল ওয়েবসাইটে আপডেট হতে কতবছর লাগবে আমরা জানিনা!
জরিপের ফলাফল কৃষক, শ্রমিক তথা খেটে-খাওয়া বঞ্চিত ঘরহীন ভাসমান মানুষের কল্যাণে কোনো ভূমিকা রাখবে কি-না আমরা সেটাও জানিনা। এই জরিপ দেশের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কোনোপ্রকার ভূমিকা না রাখলে কোটিকোটি টাকা খরচ করা করা এইসব জরিপটরিপ করার কি কোনো দরকার আছে?!

দেশের সরকারি ওয়েবসাইটে উকি দিলে দেশের ডিজিটাল অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
সরকারি ওয়েবসাইটের কথা বলতে গিয়ে একটা গল্প মনে পড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ছিলাম। এক বিকেলে রাস্তায় এলাকার এক দাদীর সাথে দেখা হলে কুশল বিনিময় শেষে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে বুঝলাম, বৃদ্ধা তার অষ্টমশ্রেণীতে পড়ুয়া নাতির জন্মসনদ সংক্রান্ত ঝামেলা নিয়ে পেরেশান। বৃদ্ধা বললেন, রোজ রোজ এলাকার মেম্বরের বাড়ি যাচ্ছেন, ইউনিয়নে যাচ্ছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। তারা (ইউনিয়নের লোক) বলছে ৪-৫ হাজার টাকা লাগতে পারে।
বিস্তারিত শুনে বৃদ্ধারে আশ্বস্ত করে বললাম, দাদী চিন্তার কিছু নাই। আমি ইউনিয়নে যাবো। বৃদ্ধা খুশি হলেন।
পরদিন বৃদ্ধার নাতির পিএসসির সার্টিফিকেট থেকে তথ্য উপাত্ত দিয়ে অনলাইনে আবেদন করলাম। এবং প্রিন্ট কপিসহ যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গেলাম।
ইউনিয়ন পরিষদের কর্মরত এক ব্যক্তি আবেদনের প্রিন্ট কপি দেখে নবমাশ্চর্য দেখার মতো করে আমার দিকে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন-
এটা কই পাইছেন? কই থেকে নিয়া আইছেন?
জবাবে বললাম, 'অনলাইন থেকে নিয়া আইছি'।
লোকটা সবগুলা পেপার কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখে বললো, এটাতে ঝামেলা আছে, এটা হবেনা। কারণ জানতে চাইলে বললো, পূর্বের হাতে লেখা নিবন্ধনের জন্মতারিখ ও সার্টিফিকেটে প্রদত্ত জন্মতারিখের মিল নেই।
আমি বলবার বা বুঝানোর চেস্টা করলাম- অনলাইনে পূর্বের হাতে লেখা জন্মসনদ চায়নি। ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা সব কন্ডিশন মেনেই আবেদন করা হয়েছে। এবং যাবতীয় ডকুমেন্টস নিয়ে আসা হয়েছে।

লোকটা আমার কোনো কথাই শুনতে চাইলো না। তার এককথা 'ফাইল মেন্টেইন করতে হবে; সবকাগজপত্র সঠিক থাকতে হবে....'

'সিরিয়াল নাম্বারহীন হাতে লেখা জন্মসনদ কোনো কাজের না'। এটার কোনদিন প্রয়োজন পড়বেনা... ইত্যাদি বলে টলেও তারে তার অবস্থান থেকে নড়াতে পারলাম না। শেষপর্যন্ত আবেদন পত্র নিয়ে ইউ.পরিষদের সচিবের দ্বারস্থ হতে হলো। সচিব বিস্তারিত শুনে সরকার নির্ধারিত ফি-সহ নিজেই আবেদনপত্র গ্রহণ করলেন। সাপ্তাহ খানেক পর জন্মনিবন্ধনের সদনও পাওয়া গেলো।

তারপর খোজখবর নিয়ে আমি যতটা জেনেছি, এটা শুধু আমাদের তালিমপুর ইউনিয়নের চিত্র নয়। দেশের মেক্সিমাম ইউনিয়ন পরিষদেরই একিই হাল। অতিরিক্ত ফি আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যাচাল করে তারা প্রতিদিন সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে, হয়রানি করাচ্ছে।
মানুষ পাসপোর্ট করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে৷ দেশে এমন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে হয়রানি নেই!
আর বর্তমান ডিজিটাল দেশে তুলনামূলক বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে মফস্বলের সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি রেলের দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করা রনি'র মতো শিক্ষিতরা হয়রানির শিকার হলে ক্ষোভ ঝাড়ার সুযোগ পাচ্ছেন কিন্তু মফস্বলের সাধারণ মানুষের টুশব্দ করারও ক্ষমতা নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে গেলে তারা স্রেফ জ্বি স্যার, জ্বি স্যার করতে পারেন। এই জ্বি স্যার জ্বি স্যারের বাইরের কোনো শব্দ মুখে আনার সাধ্য বা ক্ষমতা কোনটাই তাদের নেই।




সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×