পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাতে রাজধানীতে পণ্যের দাম অনেক বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে কোনও তদারকি আছে কিনা(?)
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আজ (বৃহস্পতিবার, ১১ আগষ্ট) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তো করবে না। কতটুকু বাড়ার কথা সেটা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ঠিক করছে। আরও আলোচনা চলছে, এক্সাক্টলি কত হওয়া উচিত।’
‘আশপাশের দেশের সঙ্গে সমন্বয় করেই জ্বালানি তেলের দাম ঠিক করা হয়েছে। এখনও যদি ধরা হয় ডিজেলের দাম আজকের বাজারে প্রতি লিটারে ৮ টাকা করে লোকসান হচ্ছে।’ [সূত্র বাংলাট্রিবিউন]
সরকারের মন্ত্রী এম্পিদের সাম্প্রতিক বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে তারা বাংলাদেশকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলানোর চেষ্টা করছেন। সাংবাদিকেরা মন্ত্রী এম্পিদের এইসব ব্যক্তব্য সাংবাদিকেরা চুপচাপ শুনছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ানো সাথে সাথে যে মানুষের আয় ইনকাম বাড়ানো দরকার সেসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকেরা মন্ত্রীদের কোনপ্রকার প্রশ্ন করছেন না। কিংবা সেসব প্রশ্ন করলে মন্ত্রী এম্পিরা কি বলবেন, তারা সেটা জানেন। আমি নিশ্চিত সাংবাদিকেরা এমন প্রশ্ন করলে (দেশকে ইউরোপ আমেরিকার সাথে কম্পেয়ার করা) গলাবাজ মন্ত্রী এম্পিরা এখন দেশকে পাকিস্তান, ভারতের সাথে নিজেদের কম্পেয়ার করবেন।
এনিওয়ে,
শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের মূল্য নির্ধারণে আশেপাশের দেশের সাথে বা বিশ্বের সাথে তাল মিলালে তো হবেনা। দেশের মানুষের দৈনিক বা মাসিক ইনকামের সাথে আশেপাশের দেশ বা বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ইনকামের সমন্বয় করার ভাবনাচিন্তা করতে হবে। গতমাসে ১৫৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করে জনশুমারি করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়- "একজন কৃষকের জীবন দুর্ভোগ, একজন শ্রমিক বা ভ্যানচালকের দৈনিক ইনকাম সম্পর্কে সরকার নিশ্চয়ই টাটকা ধারণা পেয়েছে। একজন গার্মেন্টস কর্মীর বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন স্যালারিতে চাকুরী করা কর্মী জীবনযাপন সম্পর্কেও সরকারের নিশ্চয়ই ধারণা আছে। অতএব, সরকারের উচিত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে হিসেবে নিকেশ করে যতটা সম্ভব নাগরিকদের দৈনিক ইনকাম বা স্যালারি ঠিক করে দেওয়া। কিন্তু দেশের যে অবস্থা, সরকার চাইলেও এখন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না।
সমসাময়িক সমস্যা মোকাবেলায় জ্বালানি মূল্য না-বাড়িয়েও জ্বালানি সাশ্রয়ে যেসব পদক্ষেপ নিতে পারতো বলে আমি মনে করিঃ
ক। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে একটা ওয়েবসাইট করে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে সাইকেলসহ জ্বালানীনির্ভর যাবতীয় প্রাইভেট যানবাহন ব্যবহারকারীদের যানবাহন ব্যবহারের অনুমতিপত্র নিতে বাধ্য করতে পারতো। এতে অকারণ ঘুরাঘুরি লং ড্রাইভ, ঢং ড্রাইভ জাতীয় বিলাসিতা কিছুটা কমতো।
খ। একটা বৈধ প্রাইভেট কারে বা সাইকেলে সপ্তাহে কতটুকু জ্বালানি নেওয়া যাবে, সে বিষয়ে একটা আইন তৈরি করতে পারতো। এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের দাম না কমা পর্যন্ত শক্তভাবে সেই আইন প্রয়োগ করতে পারতো।
গ। অবৈধগাড়ি ও লাইসেন্সহীন চালক যাতে রাস্তায় গাড়ি বের করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রশাসন শক্ত অবস্থান নিতে পারতো। অবৈধ গাড়ি ও লাইসেন্সহীন চালকদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিলে মেক্সিমাম জনগণ খুশি হতো; এবং জ্বালানিও সাশ্রয় হইতো।
ঘ। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য কাউন্সিলিং করতে পারতো। চাইলে কার্যকর কিছু নিয়ম জারি করতে পারতো।
ঙ। পয়সাওয়ালাদের বাংলো বা এক্সট্রা বাড়িতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যাবহার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারতো। যেমন বিদ্যুতে কর, ভ্যাট ইত্যাদি কয়েকগুণ বৃদ্ধি।
ইত্যাদি...
ইত্যাদি...
জ্বালানি তেল ব্যবহার কমাতে বা রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে সরকার এমন আরো অনেক পদক্ষেপ নিতে পারতো। কিন্তু সেটা করে সরকার হুটকরে জ্বালানির মূল্য বাড়িয়ে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের জীবন দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এবং প্রমাণ করেছে এই সরকার 'এলিট চোর-ডাকাতদের সরকার'। এলিট চোর-ডাকাতদের সরকার দেশের দরিদ্র জনগণের কথা ভাববে না; ভাববার কথাও নয়।
ছবি সুত্রঃ গোগল মামার সাহায্যে যুগান্তর অনলাইন সংস্করণ থেকে নেওয়া
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ২:৪৫