একটু আগে সময় টিভির একটা প্রতিবেদনে দেখলাম, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত একটা ছেলে নিজের মেধা ও পরিশ্রমে মাত্র ১২ হাজার টাকা খরচ করে একটি পুরানো বাইসাইকেলকে মোটরসাইকেলে রূপান্তরিত করেছে। মোটরসাইকেলটি ১ লিটার জ্বালানিতে ৯০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে সক্ষম।
বাইসাইকেলকে মোটরসাইকেলে রূপান্তরিত করা ছেলেটির নাম নাহিদ। তার বাবা বাউল, মা গৃহিণী। অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে না-পারা নাহিদের (অটোরিকশা মেরামতের) ছোটখাটো একটা গ্যারেজ আছে। সে গ্যারেজে ব্যাটারি চালিত রিকশা ও অটোরিকশা মেরামতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
নাহিদের পুরানো বাইসাইকেল মডিফাই করে সাইকেলে রূপান্তর বা সাইকেল উদ্ভাবনের গল্প শুনে বিখ্যাত স্পোর্টস কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বরগিনি'র প্রতিষ্ঠাতা ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনির স্পোর্টস কার তৈরির গল্পটা মনে পড়ছে। গল্পটা সম্ভবত ইউটিউবে শুনেছিলাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি একটি দ্বীপে ইতিলিয়ান বিমানবাহিনীতে মেকানিক হিসেবে (যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমান ও যানবাহন মেরামত) কাজ করতেন। ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনির বাবা ছিলেন কৃষক। যুদ্ধ শেষে বাড়িতে যাওয়ার পর বাবার কৃষককাজে সহায়তায় উদ্দেশ্যে ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি পরিত্যক্ত যানবাহনের নানা যন্ত্রাংশ জোগাড় করে একটি ট্রাক্টর তৈরি করেন। অল্ল সময়ে তার তৈরী করা ট্রাক্টর জনপ্রিয় হয়ে উঠলে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ল্যাম্বরগিনি ট্রাক্টর ব্রান্ড।
ট্রাক্টর নির্মাতা ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি তখনকার সময়ে বিখ্যাত স্পোর্টস কার ব্র্যান্ড ফেরারীর ২৫০জিটি মডেলের একটি গাড়ি কিনেছিলেন। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে, 'ফেরারী ২৫০জিটি' গাড়িটি মেরামতের জন্য ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি একবার ফেরারীর হেড কোয়াটারে যান। গাড়িটি মেরামত শেষ হলে তিনি লক্ষ্য করলেন- ট্রাক্টর তৈরি করতে তিনি যে পার্সটি ব্যবহার করেন, ফেরারী কোঃ সেই পার্সটি তার স্পোর্টস কারে ব্যবহার করেছে। এটা দেখে ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি ফেরারি ব্যান্ডের মালিক এঞ্জো ফেরারীকে পার্টসটি বদলিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন । এতে এঞ্জো ফেরারী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন “ তুমি একজন ট্রাক্টর নির্মাতা, তুমি স্পোর্টস কারের কি বুঝবে।"
এঞ্জো ফেরারির কথায় ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি অপমান বোধ করেন। এবং স্পোর্টস কার তৈরীর কাজ শুরু করেন। তার বানানো প্রথম ল্যাম্বরগিনি গাড়িটির মডেল ছিল “ল্যাম্বরগিনি৩৫০জিটিভি।
অর্থাৎ
পরিত্যক্ত যানবাহনের যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে ফেরুসিও ল্যাম্বরগিনি 'ট্রাক্টর তৈরি' করে শুরু করেছিলেন। তারপর ক্রমশ চমৎকার চমৎকার স্পোর্টস তৈরি করে বিশ্বকে অবাক করেছেন। আমাদের অটোরিকশা ম্যাকানিক নাহিদ পরিত্যক্ত বাইসাইকেল মডিফাই করে তৈরি করেছে মোটরসাইকেল। পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে হয়তো এই নাহিদ একদিন নিজস্ব ব্যান্ডের মোটরসাইকেল তৈরী করবে। গাড়ি তৈরি করবেন। এটা মোটেও অসম্ভব নয়।
এখন কথা হচ্ছে, আমাদের এই শিক্ষাবঞ্চিত দরিদ্র নাহিদকে সুযোগ'টা দেবে কে? আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোটচুরি করে ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকলেও দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নাহিদদের শ্রম ও মেধা মূল্যায়ন করার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেননি। তিনি হাজার কোটি টাকা ব্যায় করে স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছেন। মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর চাইতে দেশের নাহিদদের শ্রম ও মেধা বিনিয়োগের জন্য ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যে বেশি জরুরী... এটা শেখ হাসিনার সরকার ১৩ বছরেও বোঝেনি! আজীবন ক্ষমতায় থাকলেও বুঝবে বলে মনে হয়না। এনিওয়ে,
আমাদের নাহিদদের জন্য, আমাদের পাশ করা বেকার ইঞ্জিনিয়ারদের শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করার জন্য প্রচুর ইন্সটিটিউট গড়ে তোলা দরকার। সরকারি অর্থ বিনিয়োগ দরকার। আশাকরি, সরকার এসব ব্যাপারে মনোযোগ দিবে।
নাহিদকে নিয়ে সময় টিভির প্রতিবেদন-
"নাহিদের মতো মেধাবী প্রতিভাবানদের দরকার কারিগরি সহায়তা এবং আর্থিক সহায়তা। তাহলে আমাদের মতো দেশে অনেক উদ্ভাবনী সহায়ক সাফল্য পেতে পারে, দেশের মানুষ উপকৃত হবে। বগুডা ও যশোরে তৈরী কৃষি যন্ত্রপাতি এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। অথচ ওখানকার ইঞ্জিনিয়ারিং শপে যারা মেকানিক হিসেবে কাজ করছেন তাদের বেশীরভাগ মেকানিকদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাই, সবাই দেখে দেখে নিজ নিজ চিন্তার প্রয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরী করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করছে।
আমাদের দেশে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ বিএ, এমএ পাশ লোকের দরকার নাই। আমাদের দরকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পাশ উদ্যোমী তরুণ যারা মাঠ পর্যায়ে হাতে কলমে কাজ করে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সমৃদ্ধির দিকে।" - জুল ভার্ন
তথ্যসূত্রঃ সময় টিভি, উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৩৪