somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাটতে হাটতে, পথ চলতে চলতে

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
কি এক অজানা কারনে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাটতে থাকি। রাস্তাটা মোটামোটি ঝঞ্জাটমুক্ত। মানুষের কোলাহল আছে তবে মাঝে মাঝে কয়েকটা রিকশা ছাড়া তেমন বাহনের আনাগোনা নেই। মহিলারা তাদের কোলের বাচ্চাকে নিয়ে ইতস্তত গল্পগুজব করছে। সকালে এবং বিকালে দুই সময়েই এ রকম দৃশ্য আমার পরিচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়ার আয়োজনের আগ পর্যন্ত, আবার বিকেলে খাবার পরে অলস সময়গুলো কাটিয়ে দেয় গল্প গুজব, আড্ডা আর গলাবাজিতে। বিশেষ কোন বিষয়ে নয় স্রেফ যার তার নিন্দা, দোষত্রুটির সরস খোচাখুচি, কার ছেলে পড়ে হাত ভাঙে কার মেয়ে কি করে বেড়ায় এসব নিয়ে কানাকানি ফিসফাস একসময় ঝগড়া, হাতাহাতি। অশিক্ষিত বাঙালী নারী সমাজ তার মুল্যবান সময়কে এভাবেই পার করে দেয়। অথচ এদেরই হবার কথা ছিলো দেশের সার্বিক উন্নতির অন্যতম স্তম্ভ। কেউ এদের ডাকেনা এরাও কেউ কোথাও যায়না।

যদি শিক্ষিত হতে পারতো তাহলে এরাই হয়তো এখন অন্তত তাদের ছেলেমেয়েদের হাতের লেখা লিখে দেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতো । তা হয়নি। এরা এভাবেই দিন কাটিয়ে যায়। এদের পরবর্তী প্রজন্মও এভাবেই দিন কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

একটা কাজ এরা খুব ভালো পারে। সেটা হলো মানুষ পিটানো। স্বামী স্ত্রীকে পিটায়। আবার দুজনে পর্যায়ক্রমে বাচ্চাদের পিটায়। বড় সন্তান ছোট সন্তানকে পিটায়. ছোটটা কাউকে না পেয়ে তার পাশের ঘরেরটাকে পিটায়্। সেটা নিয়ে আবার দুই ঘরের কর্তা কর্ত্রীদের মধ্যে ব্যাপক পিটাপিটি। যাকেই পিটাক পিটানোর সময়ে মানুষকে পিটানো হচ্ছে নাকি কোন জড় বস্তুকে পিটানো হছে এমন কোন বিবেচনার আভাষ পাওয়া যায় না। পিটানোর নিত্য নতুন কৌশলে তাদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ দেখে থ হয়ে যেত হয়। এদের ছেলেরা রাজপথের পিটাপিটিতে যে কোন দলের মুল হাতিয়ার।

পৃথিবীর যা কিছু ভালো কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়োছে নারী,
অর্ধেক তার নর।
(লাইন দুটো কারো পরিস্কার জানা থাকলে একটু ধরিয়ে দিবেন।)

বাংলাদেশের নারী এখনও সে পর্যায়ে যেতে পারেনি। পোষাকী পরিবর্তন হয়েছে, তবে কাজের কাজ হয়নি। এজন্য আপাতত দোষ সমাজের, তবে নারীর নিজেরও রয়েছে সচেতনতার অভাব।

রাস্তার পাশে স্রেফ গুজবে মত্ত থাকা নারীরা যেদিন সুশিক্ষিত হবে, সুবিবেচক হবে। বাংরাদেশের পরিবর্তন ঠেকিয়ে রাকতে পারবেনা কেউ। :|

দুই.

সকালে হাটাহাটি হচ্ছেনা বেশ কিছুদিন ধরে। আগে নিয়মিতই হাটতাম সকাল এবং এমনকি বিকেলেও। শীতের সকাল এই অভ্যাসে ছেদ ঘটিয়েছে। সুতরাং সূর্যের অপেক্ষা করতে করতে দ্বিতীয় দফায় ঘুম চালিয়ে যাছি। এ অবস্থার উত্তরন প্রয়োজন। ফাল্গুনকে তাই সাদোরে অভ্যর্থনা জানাই।

সকালে হাটতে বেরোলে নানাজনের নানা প্রশ্ন।

কি ব্যাপার সকালে হাটাহাটি যে

কি ভাই হাটতে বেরুলেন ডায়বেটিকস ধরেছে নাকি।

কিরে দোস্ত, ভালই তো হাটাহাটি করি­স, মুরব্বী হয়ে গেছিস ।

এই বয়সে হাটাহাটি শুরু! আমরা তো এখনও কিছু টের পাছিনা।

আমি আর কি বলব। যখন যা মনে হয় তাই জবাব দেই। বলি হাটার আবার বয়স কি। আবার বলি কেন ভাই অসুস্থ না হলে কি হাটা নিষেধ! যেদিন মেজাজ ফুরফুরে থাকে সেদিন রসিকতা মিশিয়ে বলি বয়সতো আর কম হলো না ভাই। কথার সূত্র ধরে সরস আলোচনা আরো অনেকদুরে গড়ায়।

আমি মনে মনে ভাবি আমাদের চিন্তায় কত দৈনতা। যেন অসুস্থ না হলে, ডাক্তার না বললে কোন কারণ না থাকলে অল্প বয়সে হাটাহাটি করা যাবেনা। অথচ স্বাস্থবিশেষজ্ঞরা বলেন প্রত্যেক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সুস্থতাকে ধরে রাখতে হলে কমপক্ষে একটা নির্দিস্ট পরিমান হাটাহাটি করা উচিত। এখানে বয়সের কোন বিষয়না।

আমার হাটাহাটিতে উৎসাহিত হয়ে কেউ কেউ মহা শোরগোলে শুরু করে। জুতা ঝেড়ে মুছে, নতুন মোজা কিনে.. পরদিন সকালের জন্য ব্যাপক প্রস্ততি। দুদিন পরে তৃতীয় দিন আর পাওয়া যায়না। তার পরিবর্তে হয়তো অন্য আরেকজন একই ভাবে শুরু করে। আবার হারিয়ে যায়। কারণ একটাই। হাটতে হলে সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। এটাই সমস্যা।

ঘুম থেকে ওঠার জন্য ইচ্ছা প্রয়োজন, আগ্রহ প্রয়োজন। রুটিন মেইনটেইন করা প্রয়োজন। সর্বাগে প্রয়োজন মানসিক তাড়না। বিশ্বাসীর তাড়না হচ্ছে ফজরের নামাজ। নামাজ নামক অনিবার্য দ্বায়িত্ব কারো আরো ডেইলী রুটিনে পারমানেন্ট মার্ক হয়ে রয়েছে। পারিনা সবসময় তবুও আমি সেই রুটিনে নিজেকে বাধতে চাই।:)

তিন.

ব্রিজটা পার হলেই বিলবোর্ডটা চোখে পড়ে। আমার মতো অনেকেরই চোখে পড়ে । কেউ তাকিয়ে থাকে কেউবা ব্যস্ততায় দ্রুতই মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে আপন উদ্দেশ্যে চলতে তাকে। বিলবোর্ডটার বক্তব্য খুব সুন্দর। আপনি মাত্র ২৮ দিন নিযমিত মাখবেন। আলটিমেট ব্রাইট হয়ে যাবেন। কিভাবে আপনার পরিবর্তন হবে সেটাও দেখানো আছে। পরপর সাজানো আছে চারটি ছবি। হাটার পথে প্রায়ই দেখি বিলবোর্ডটা আর কিভাবে আরো ব্রাইট হওয়া যায় তাই নিয়ে মাথায় বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে থাকি। ছবিগুলো খুব মোহনীয়। যুবক শ্রেণী যেন বিশেষ আগ্রহী হয় এজন্য কিছু স্পেশাল ট্রিটমেন্টও আছে ছবিগুলোতে। ব্যবসায়িক কোম্পানীগুলোর কাজই হলো কিভাবে বিজ্ঞাপনকে মানুষের চোখে লোভনীয় করা যায় তার নিত্যনতুন উপায় বের করা। তারা সফল। দিনে দিনে তাই স্পেশাল ট্রিটমেন্ট গুলো আরো জীবন্ত হতে থাকে। হয়তো এভাবে ট্রিটমেন্ট দিতে দিতে আমারা আদিম যুগে ফিরে যাবে।

আমরা কি আবার আদিম যুগে ফিরে যাবো! এ প্রশ্নের উত্তর খুজে পাইনা। আমার কেবল একটাই আফসোস। ইস! যদি সত্যিই বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনের মত এমন একটা উপায় বের হতো। কিংবা লাইফটা যদি এমন হতো যে ফটোশপে নিয়ে লাইট বাড়িয়ে দিলেই ফর্সা হয়ে যেতো পৃথিবীর সকল কৃষাঙ্গ মানুষগুলো।

কি জানি তখন আবার সবাই কালো হবার জন্য বায়না ধরতো কিনা!! /:)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×