somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুকুর

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউনিভার্সিটি হল কমপ্লেক্সে অনেক কিছুর মধ্যে বিশিস্টতা অর্জন করেছিলো একটি নাদুস নুদুস সোনালী বর্ণের দেশি কুকুর, সাধারনত সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১ টা সময়ের মধ্যে যেটাকে ক্যান্টিনের সামনের লবিতে কখনো বিচলিত, কখনো ক্ষুধার্ত, কখনো পরিতৃপ্ত, কখনো অনুসন্ধিৎসু, কখনো বিরক্ত, কখনো ব্যস্ত, কখনো আলস্যযুক্ত এবং বিবিধ মানষিক অবস্থায় বিচরন করতে দেখা যেতো।

আমার কুকুরভীতি প্রবল। সকাল সাড়ে এগারো কিংবা বারটার দিকে কাজ না থাকলে তিনতলা থেকে নিচে নেমে সাগর কলা সাথে একপিছ রুটি খেতে শুরু করলেই কুকুরটি এসে সামনে দাড়াতো। হুশ-হাশ করে তাড়ানোর চেস্টা করলেও ওটি নাছোড়বান্দা। একটু আধটু দুরে ছুড়ে দিলেও চট করে খেয়ে আবার সামনে এসে দাড়ায়। খাবারের লোভে হাতের উপর ঝাপিয়ে পড়ে কিনা ভয়ে কোন কোন দিন রুটি ফেলে তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করেছি। তবে আস্তে আস্তে বুঝলাম কুকুরটি যতটা ভীতিকর মনে করিছিলাম অতটা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কুকুর কিনা! তাছাড়া হলের প্রভোস্টের সাথে এর একটা বোঝাপড়া ছিলো যে কারনে কোন আইডি কার্ড না থাকলেও আবাসিক হিসেবে তার প্রবেশাধিকার ছিলো সবসময়। যা হোক বলছিলাম অনেক ছাত্র ক্যাম্পাস জীবন পার করেও কিছু শিখতে পারে না সত্য তবে নুন্যতম ভদ্রতা জ্ঞান কুকুরটির মধ্যে পয়দা হয়ে গিয়েছে।

যখন দীর্ঘ ছুটিতে বাড়িতে যেতাম টের পেলে কুকুরটি বিদায় জানাতে গেট পর্যন্ত আসতো এবং এমনকি আলেক চাচার দোকান পর্যন্ত কখনো কখনো। সারা বছর রুটির ভাগ পাবার একটা কৃতজ্ঞতা বোধ ছিল ওটার মধ্যে। তবে থাকতো না বেশি সময়। ক্যাম্পাসের কুকুর আর বাইরের কুকুর এক থাকতে পারেনা মনে হয়। ছুটি কাটিয়ে হলে ফিরলে ওটাকে দেখলেই মায়া জাগতো। আহারে বেচারা... না খেতে পেয়ে জীর্ণ শীর্ণ। আবশ্য খুব আফসোসের কারণ ঘটতো না কারন দুদিন পরেই আবার নাদুস নুদুস হাসিখুশি।

দিনে দিনে সখ্যতা গড়ে ওঠে এই অবলা চারপেয়ের সাথে। তবে বিরক্ত হয়ে যেতাম ওটার নাছোড়বান্দা স্বভাবের জন্য। হাতে রুটি দেখলেই করুণ দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকা, আস্তে আস্তে কাছে এসে একদম গা ঘেষে লেগে থাকা পারলে দুপা উচিয়ে কোলে উঠে যায় এমন ভাব। যেদিন মন মেজাজ খারাপ থাকে সেদিন বিরক্ত হয়ে রুটি ছুড়ে দিয়ে চলে আসি। যেদিন ভাল থাকে সেদিন রুটির ভাগ দিতে গিয়ে মাথায় দুস্টামীও চাপে। কুকুরটি সামনে আসা মাত্রই ডাকদিকে ঘুরি, ওটা ঘুরে ডানপাশে চলে আসে, আবার বাম পাশে ঘুরি একটু পরে ওটাও পিছন দিয়ে ঘুরে বামপাশে চলে আসে। পর্যায়ক্রমে ডানে, বামে, সামনে, পিছনে, করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ওটি যখন হাল ছেড়ে দেয় তখন যখারীতি একটুকরো লুটি দিয়ে আবার আশা জাগাই। এভাবে খেলা চলতে থাকে। খেলা বললে ভুল হবে আসলে কুকুরটাকে আমি পরিশ্রমী বানাচ্ছি। রুটি খাবি খা তবে খেটে খা। খানিক ফিজিক্যাল এক্সারসাইজও হলো সাথে সাথে।

আগেই বলেছি কুকুরটাকে একটা নির্দিস্ট সময়েই কেবল এমনভাবে ক্যান্টিনের সামনে করিডোরে পাওয়া যেতো। সকাল, দুপুর, এবং রাতে তার ডিউটি ছিলো ক্যান্টিনের পেছনে। বিকেল সময়টাতে মনে হয় সে একটু ভ্রমনে বেড়াতো। আলেক চাচার দোকানের সামনে কেক বিস্কুটের স্বাদে রুচির পরিবর্তন আসতো । আবার আলেক চাচা আর চাচীর উপভোগ্য ঝড়গা যখন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যেতো তখন মুরব্বী স্টাইলে ঘেউ ঘেউ করে হুশিয়ারী দিতো কঠোরভাবে। এভাবেই কেটে যায় ওর সময়। আমাদের সাথে তার এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিলো কেবল দুপুরের আগের নাস্তার টাইমে।
দিনে দিনে আমরাও। প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম কুকুরটাকে নিয়ে সময় কাটানোর জন্য।

এখন সবই অতীত। হল ত্যাগ করার একদম শেষ মুহুর্তে জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে আমার উপদেশ ছিলো একটাই। কুকুরটাকে তোরা দেখে শুনে রাখিশ। হাজারো মানুষ যখন দিনে দুপুরে কুকুর হয়ে যাচ্ছে তখন একটা কুকরকে যদি মানুষ করা যায় ক্ষতি কি!

(শেষ কথাটা এমনি বললাম, কোন অর্থ ছাড়াই। )
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×