somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরা সবকিছুই বিক্রি করে দেবে

২৯ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতালির পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির আঁকা বিশ্ববিখ্যাত ‘মোনালিসা’ ছবিটি কিন্তু রোমে নেই, আছে ফ্রান্সের প্যারিস যাদুঘরে। ফ্রান্স তা ছলে-বলে-কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে প্যারিস যাদুঘরে রেখে কোটি কোটি ডলার উপার্জন করছে। শুধু এক ‘মোনালিসা’ই নয়, পৃথিবীর অসংখ্য পুরাকীর্তি চুরি করে ফ্রান্স তাদের যাদুঘরটিকে বিশ্বের এক নাম্বার যাদুঘরে পরিণত করেছে। আর এর মাধ্যমে কামাই করছে কোটি কোটি ডলার। বাংলায় একটি বিখ্যাত পংক্তি আছে-‘ধনীর হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’। আমেরিকা ইরাক দখল করার পর অসংখ্য পুরাকীর্তি চুরি করে ফ্রান্স ,আমাদের দরিদ্র বাংলাদেশও ফ্রান্সের চৌর্যবৃত্তির শিকার হয়েছে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি ঘটনা ছিল পুরাকীর্তি পাচার। প্যারিসে পুরাকীর্তি প্রদর্শনী উপলক্ষে ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশ সরকারের কাছে সাময়িকভাবে শুধু প্রদর্শনীর জন্য পুরাকীর্তিগুলো চেয়েছিল। তৎকালীন সরকার কারো সাথে পরামর্শ ছাড়াই তা প্যারিসে পাঠিয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় এর বিরুদ্ধে লেখালেখি ও প্রতিবাদ। কিন্তু ততদিনে যা হবার তা হয়ে গেছে। পুরাকীর্তির প্যাকেট প্যারিসে যাওয়ামাত্র তারা সেগুলো নকল করে ফেলে। কিন্তু প্যারিসে অবস্থানরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রুহুল আমিন ব্যক্তিগতভাবে পুরাকীর্তির ভক্ত হওয়ায় এ সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ছিল প্রচুর। তাই তিনি নকল পুরাকীর্তিগুলো দেখেই চিনে ফেলেন এবং চুরি করা আসল পুরাকীর্তিগুলো ফেরত দিতে অনুরোধ করেন। ফ্রান্স সরকারের পক্ষ থেকে তার সাথে কয়েক দফা মিটিং-সিটিং করে তাকে বেশ কয়েক কোটি টাকা অফার করা হয় বিষয়টা ধামা-চাপা দেওয়ার জন্য। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে সৎ হওয়ায় ব্যক্তিস্বার্থের কাছে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে তিনি রাজি হননি। প্রলোভনে কাজ না হওয়ায় বেশ কয়েক দিন যাবত তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনও করা হয়। এরপরও তিনি রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে তাকে মেরেই ফেলা হয়। পত্রিকায় খবর আসে যে, তাঁর আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে! অন্যদিকে তার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে তড়িঘড়ি করে ঢাকায় এনে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। রাষ্ট্রদূত রুহুল আমীন সম্পর্কে আমার ভাগিনা হওয়ায় পারিবারিক সূত্রেই বিষয়টি আমি জানতে পারি। এখন তার স্ত্রীকে সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি চাকরি দেওয়া হয়েছে বটে। পুরাকীর্তি চুরি ফ্রান্সের বহুদিনের বদঅভ্যাস। এরশাদ সরকারের আমলে জেনারেল আবদুর রহমান সাহেবকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়েছিল। তখনো বাংলাদেশের পুরাকীর্তি নিয়ে তার সাথে ফ্রান্স সরকারের মনোমালিন্য হয় এবং একপর্যায়ে তাকেও পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হয়। সংবাদে যথারীতি বলা হয়, তার আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। মানবাধিকারের অন্যতম হোতা, জাতিসংঘে ভেটো-ক্ষমতার অধিকারী এই আধুনিক রাষ্ট্রটি পুরাকীর্তি চুরির ব্যাপারে বহু দিন থেকেই এক নাম্বারে রয়েছে। প্রদর্শনীর নাম করে বিভিন্ন দেশের পুরাকীর্তিগুলো হাতিয়ে তা হুবহু নকল করে এবং ফেরত পাঠিয়ে দেয়। মাঝখানে একশ্রেণীর পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। অর্থের লোভে অসৎ ব্যক্তিরা তা পাচার করে বেড়ায়। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যার পুরাকীর্তি প্যারিস যাদুঘরে নেই। হঠাৎ কেউ সততার কারণে বাধ সাধলে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আগেই বলা হয়েছে যে, শুধু বাংলাদেশই দু’ দুটো মর্মান্তিক খুনের ভুক্তভোগী হয়েছে, যার কোনো বিচার হয়নি। তবে সব দোষ ওই রাষ্ট্রের উপর চাপালে অবিচার করা হবে। কেননা, এই চুরি ও পাচার শুধু সেদেশের সরকার ও এদেশের গুটিকয়েক অসৎ পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে হয় না; তাতে সরকারের কর্ণধাররাও জড়িত থাকে। সরকারপ্রধানের সম্মতি ছাড়া এই পাচার কখনো সম্ভব নয়। তাই ধারণা করা হয়েছে যে, জেনারেল আবদুর রহমানের সময়কার পাচার ও তার মৃত্যুর জন্য তখনকার সরকারপ্রধানই দায়ী। আর রুহুল আমীনের সময়ের পাচার ও তার মৃত্যুর দায়ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। জনগণের প্রশ্ন, দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ যারা পাচার করতে পারে, এমনকি দেশের কৃতি সন্তানদের (রাষ্ট্রদূত) অন্যায় হত্যাকাণ্ডেও যারা জড়িত থাকতে পারে তাদের বিচার কি কোনো দিনই হবে না? অবশ্যই হবে। বড়শীতে বড় মাছ আটকা পড়লে প্রথমে সুতা ছেড়ে ঢিল দেওয়া হয় এই জন্য যে, সে যে ধরা পড়েছে তা যেন বুঝতে না পারে। অতঃপর যখন মাছটি ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন আস্তে আস্তে সুতা গুটিয়ে আনা হয়। এদের শাস্তিও তেমনিভাবে হবে। পরকালে তো বড় শাস্তি অবশ্যই রয়েছে তবে এখানেও হঠাৎ দেখা যাবে যে, জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা তাদের গলায় মহা ফাঁস হয়ে ঝুলে আছে। আমাদের প্রশ্ন, সভ্যতার দাবিদার এইসব রাষ্ট্রের কি কোনো বিচার নেই? এরা কি সভ্যতার দোহাই আর চৌর্যবৃত্তি দু’টোই একসাথে চালিয়ে যাবে? আমাদের আরো প্রশ্ন, যারা দেশের সম্পদ, সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের বিনিময়ে বিকিয়ে দিতে পারে, আমরা কি তাদের পক্ষেই মতামত ব্যক্ত করে যাব? যদি তাই হয় এবং এ পর্যন্ত তাই হতে দেখছি, তাহলে বলব, একটু অপেক্ষা করুন, অল্পদিনের মধ্যেই ওরা মীর জাফরের মতো সবকিছুই বিক্রি করে দেবে। তাই দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এই স্বার্থবাদীমহলকে প্রতিরোধ করা জনগণের অবশ্য করণীয়।লেখক:ইসহাক ওবাইদী ,মাসিক আল কাউসার ৩/২০১০
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৫৩
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×