بسم الله الرحمن الرحيم
জাল রেওয়ায়াত বর্ণনা করা কবীরা গুনাহ
জাল ভিত্তিহীন রেওয়ায়াতের বিষয়টি হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই ।প্রমান ছাড়া কোন কিছুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বলে দাবী করা ইসলামে জঘন্যতম কবীরা গূনাহ বলে সাব্যস্ত তাই এ ব্যাপারে তার পক্ষ থেকে জাহান্নামের হুশিয়ারী পর্যন্ত এসেছে ।হাদীস শরীফে আছে
من كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار -
)صحيح بخاري 21-1‘رقم:110)
যে ব্যক্তি ইচছাপূর্বক আমার উপর মিথ্যারোপ করবে ,সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা খূঁজে নেয় ।
অন্য হাদীসে আছে
إن كذبا علي ليس ككذب على أحد ، فمن كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار
আমার উপর মিথ্যারোপ করা অন্য কারো উপর মিথ্যারোপ করার
মত নয় । যে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয় ।(সহীহ বুখারী ১/১৭২, হাদীস নং১২৯১, সহীহ মুসলিম ১/৭ হাদীস নং ৪)
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে ঃ
من يقل علي ما لم أقل فليتبوأ مقعده من النار
যে ব্যক্তি আমার ব্যপারে এমন কথা বলবে যা আমি বলি নি সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয় ।(সহীহ বুখারী ১/২১, হাদীস নং ১০৯)
জাল রেওয়ায়াতের ব্যাপারে এ বাহানাও যথেষ্ট নয় যে হাদীস জাল করে থাকলে করেছে অন্যজন , আমরা তো শুধু বণর্না করছি ।কেননা , শরীয়ত ও যুক্তি উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই মিথ্যা প্রচারকারীও মিথ্যাচারীর ন্যায় গুনাহগার ও শাস্তির যোগ্য ।হাদীস শরীফে এসেছে ঃ
من حدث عني بحديث يرى أنه كذب فهو أحد الكاذبين .
(صحيح مسلم 61)
যে ব্যক্তি আমার বরাতে বুঝে-শূনে মিথ্যা হাদীস বনর্না করবে সেও মিথ্যাবাদীদের একজন ।( সহীহ মুসলিম ১/৬ হাদীস নং)
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে ঃ
كفى بالمرأ كذبا أن يحدث بكل ما سمع .
কেউ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শুনে সবই বর্ণনা করে ।
বুঝা গেল জাগতিক কোন ব্যাপারেও সংবাদ শুনামাত্র তা বর্ণনা ঠিক নয় ।বরং সত্য –মিথ্যা যাচাই করা জরুরী । নতুবা তদন্ত ছাড়া যে কোন শ্রুত কথা প্রচারকারী মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভূক্ত হবে ।
যখন জাগতিক ব্যাপারে এবং সাধারণ সংবাদ সম্পর্কে এমন কড়া নির্দেশ, তা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের ব্যাপারে যাচাই-বাছাইয়ের বিধান কত তাকিদ পূর্ন হবে তা বলাই বাহুল্য। আল্লাহর নবীর নামে কোন কিছু বণর্না করতে কত সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ,সামান্য চিন্তা করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
অন্য হাদীসে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ঃ
«اتقوا الحديث عني إلا ما علمتم فمن كذب على معتمدا فليتبوأ مقعده من النار ،ومن قال في القرأن برأيه فليتبوأ مقعده من النار.
(رواه الترمذي وقال : حديث حسن (
তোমরা আমার নামে হাদীস বণর্নার ক্ষেত্রে ভয় কর ।তোমরা যা নিশ্চিত জান (যে তা আমার হাদীস ) শুধু তা-ই বণর্না কর । যে ব্যক্তি ইচছাপূর্বক আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলবে , সে যেন তার ঠিকানা
জাহান্নামে বানিয়ে নেয় এবং যে ব্যক্তি নিজের মর্জি মত মনগড়া তাফসীর করে , সেও যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয় ।
(জামে তিরমিজি ঃ ২/১২৩,হাদিস ২৯৫১
সুতরাং প্রমাণিত হল , হাদীস বলার পূর্বে এ কথা যেন নেওয়া জরুরী যে এটি বাস্তবেও হাদীসে নববী কি না । এ ব্যাপারে অসতর্কতা নবীর উপর মিথ্যারোপ করার শামিল , যার পরিণাম জাহান্নাম ।
হাদীস বর্ণনায় সতর্কতা অবলম্বন করা ফরয
হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন সার কথা এই যে , নিম্মোক্ত কারণসমূহের ভিত্তিত করা ফরযঃ
ক-যে কোন কথা বণর্নার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল , বণর্নার পূর্বে যাচাই করে দেখা , তা বণর্নাযোগ্য কিনা । হাদীসের ব্যাপারটি তো সঙ্গত কারনেই আরো গূরুত্বপূর্ন ।
খ- বর্ণনার ক্ষেত্রে অসতর্কতা মিথ্যারোপের শামিল , যা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের নিকট নিন্দনীয় । আর হাদীসের ব্যাপারে মিথ্যারোপ করা তো আরো ভয়ংকর , যা বলার অপেক্ষাই রাখে না ।
গ-হাদীসের সম্পর্ক দ্বীনের সাথে; বরং এটি দ্বীনের অন্যতম দলীল এবং দ্বীনী বিধানাবলীর ভিত্তি । সুতরাং হাদীসের ব্যাপারে অসতর্কতা দ্বীন নিয়ে খেল-তামাশা করার নামান্তর । যার অশুভ পরিণতি কারো অজানা নয় ।
ঘ-হাদীসের সর্ম্পক সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে । তাঁর মর্যাদা সৃষ্টিজীবের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ।আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে , যে ব্যক্তি যত বড় হয় তাঁর ব্যাপারে মিথ্যারোপ এবং তাঁর বানী বর্ণনার ক্ষেত্রে অসতর্কতা তত বড় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এ কথাই হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে
إن كذبا علي ليس ككذب على أحد ، فمن كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار
আমার ব্যাপারে মিথ্যারোপ করা অন্য কারো ব্যাপারে মিথ্যারোপ করার
। মত নয়
(বরং তার ভয়াবহতা সাধারণ মিথ্যারোপ থেকে অনেক অনেক বেশী)
ঙ - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু দ্বীনী ব্যাপারে ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না, তাই কোন কথা হাদীসে নববী হওয়ার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, এটি তাঁর প্রতি আল্লাহ তা আলার ওহী ও পয়গাম। সুতরাং যদি কোন কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেননি , তথাপিও তাঁর বরাত দেওয়া হয় তাহলে তার মাঝে খারাবী ও ক্ষতি শুধু এতটুকুই নয় যে, এটি রাসুলের উপর মিথ্যারোপ করা হচ্ছে ; বরং পরোক্ষভাবে আল্লাহ তাআলার উপরও মিথ্যারোপ করা হচ্ছে ।আর আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যারোপ করা কত জঘন্য অপরাধ , তা কারো অজানা নয় ,
ইরশাদ হয়েছেঃ
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أُولَئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَى رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
আর ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালেম কে যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে ।তাদেরকে তাদের পালনকর্তার সম্মুখীন করা হবে আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে, এরাই ঐ লোক যারা আপন পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল । সাবধান!যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে । (সূরা হুদঃ১৮ )
বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা ফরয।এ কারণেই হাদীসএসব
সতর্কতার একমাত্র পথ এই যে, হাদীস বিশেষজ্ঞদের নিকট সেসব কিতাবের নাম যেন নেওয়া , যেগুলোতে শুধু সহীহ হাদীস বণির্ত আছে । এতদভিন্ন অন্য কিতাব থেকে হাদীস গ্রহণের সময় বিশেষজ্ঞদের কাছে যেনে নেওয়া যে হাদীসটি সহীহ কিনা ।উম্মতের সচেতন ব্যক্তিদের মাঝে আজো এনিয়মই বিদ্যমান আছে ।