somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝে মাঝে যদি তব দেখা পাই - ১ম পর্ব

১০ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[১]
“ফাগা...। ফাগা ওঠ...”
কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার, “ফাগা ওঠ । ফাটাফাটি নিউজ আছে ।” আমি তারপরও নাক-মুখ গুঁজে শুয়ে থাকলাম ।
“ফাগা, দোস্ত... ইমারজেন্সী ।” এইবার ধীরে ধীরে খুব বিরক্ত ভঙ্গীতে পাশ ফিরে তাকালাম আমি । রিফাত । ওর পরিচয় হিসেবে বলা যায়, আমার রুমমেট, একজন কবি এবং আধ-পাগল । আমি ঝিমাতে ঝিমাতে প্রার্থনা করতে লাগলাম যাতে ও পুরো পাগল হয়ে যায় আর রুম ছেড়ে পাগলা-গারদে ঠাঁই পায় । হাই তুলতে তুলতে বললাম, “বল তোর কি ইমারজেন্সী ?”
রিফাত এবার মহানন্দে বলতে লাগল, “আমি একটা কবিতা লিখেছি । দাঁড়া তোকে পড়ে শোনাই ।” তারপর আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে শুরু করে দিল,
“যার ‘ওয়েট’ আমি করি সারারাত,
যার ভাবনায় ভাঙ্গে ঘুম, আমার হঠাৎ হঠাৎ ।
সে আসে, হ্যাঁ আসে আসে,
কিন্তু দেয় না ‘নক’ আমায় দেখ, সে আজ...”
কবিতার মাঝেই আমি বলে উঠলাম, “কয়টা বাজে দেখ তো ?”
“সাড়ে চারটার মত ।”
“এই মাঝ রাতে তোর ইমারজেন্সী কাজ হিসেবে আমাকে কবিতা শুনতে হচ্ছে ?”
“আসলে হঠাৎ লিখে ফেললাম তো । তাই ভাবলাম, তোকে শুনিয়ে দেখি কেমন হয়েছে । কেমন লেগেছে ?”
“গুড । কিন্তু হাউ হাউ জানি লাগে। ”
“মানে কি ?”
“তোর বাংলিশ কবিতার মতই বাংলিশ মন্তব্য করলাম ।” রিফাত মুখ কালো করে ফেলাতে জিজ্ঞেস করলাম, “অর্ককে বাদ দিয়ে আমাকে শোনাতে আসলি কেন ? আমি কি পাপ করেছিলাম ?”
রিফাত আরও গম্ভীর হয়ে উত্তর দিল, “রিফাতকে একদিন কবিতা শোনাতে, বাজে কথা বলেছিল ।”
“কি বাজে কথা ?”
“হালার পো । দূরে গিয়া মর – এটা বলেছে । তুই-ই বল, কোন সুশীল মানুষ এরকম মন্তব্য করতে পারে ?”
আমি অনেক কষ্টে আমার হাসি চাপলাম । রিফাত বয়সেই বড় হচ্ছে, মনটা এখনও বাচ্চাদের মতই রয়ে গেছে । আমি আবার শুয়ে পড়লাম । শেষ রাতে এসে ঘুম নষ্ট করার কোনো মানে হয় না ।
অর্ক আমার আরেক রুমমেট । আমরা তিনজনই মহসীন হলের এই ছোট রুমটাতে থাকি । এখানে প্রথম আসার পর অর্ক, রিফাত দু’জনকেই অদ্ভুত মনে হত । রিফাতের কথা বলেছি, এখন অর্কেরটা বলা যাক । অর্কের সাথে পরিচয় হবার সময় ও নিজের নাম বলেছিল, “আর্খ”। এটা ওর নাম না, অন্য কিছু এটা জানতে আমার কয়েকদিন লেগে গিয়েছিল । পরে বুঝেছি, ও ডিজুস প্রজাতির মানুষ । হেই হেই, ইয়ো ইয়ো ছাড়া কথা-ই বলতে পারে না । প্রতি মাসে নাকি দুইবার করে গার্ল ফ্রেন্ড পাল্টায় । অর্কের মুখ থেকে এসব শুনতাম, আর মুখ গোল করে বলতাম, “ও আচ্ছা,” সব কিছু ঠিকই ছিল, কিন্তু প্রায় প্রতি মাসেই আমার কাছ থেকে টাকা ধার করার ব্যাপারটা ছাড়া । মাসে কমপক্ষে একবার অর্ক আমাকে দেখে বলে, “দোস্ত, ইম্পরট্যান্ট কথা আছে ।” আর আমি বুঝে যাই, আমার বিপদ সংকেত । অর্ককে ধার দেয়া টাকাটা আর কখনোই পাওয়া হয় না আমার । কালেভদ্রে যদি কখনও কথায় কথায় টাকার কথাটা তুলি, তখন অর্ক হঠাৎ করে ব্যস্ত হয়ে যায়, এখান ওখান থেকে ফোন আসা শুরু করে । আমিও নিতান্তই ভালোমানুষের মত টাকার ব্যাপারটা ভুলে যাই ।
এবার আমার পরিচয় দেওয়া যাক । আমার নাম, সৈয়দ ইরফান হাসান । ডানে,বামে,উপরে,নিচে- কোনোভাবেই আমার নামের সাথে “ফাগা” শব্দটার মিল খুঁজে পাই নি আমি । অথচ আমার বন্ধুরা আমাকে ‘ফাগা’ নামেই ডাকে । আমি বড় হয়েছি ছোট্ট শহর কুমিল্লায় । কিভাবে কিভাবে যেন, ঢাবিতে চান্স পেয়ে গেলাম । সাড়ে তিন বছর পরও অবাক লাগে আমার । ভাই-বোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হওয়ায় অনেক বেশী সুযোগ-সুবিধা পেয়েই বড় হয়েছি । কিন্তু মা এর হুমকি-ধমকি থেকে রেহাই পাই নি । আমার বাবাটাও নিতান্তই ভালোমানুষ গোত্রের । কোনদিন যে, মায়ের ‘অত্যাচারে’ ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যান, কে জানে । বাবার ছোট ব্যবসায়ের যা আয়, তা দিয়েই আমাদের চার ভাই-বোনের সংসার মোটামুটি চলে যেত । এখন অবশ্য বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে । ভাইয়াও বিয়ে করেছে, মাস খানেক আগে । বাকি আছি, শুধু আমিই আর কি । [:P]
আমার বাবা বেশ খানিকটা খরুচে স্বভাবের । সেই দিক থেকে মায়ের অত্যাচারগুলোকে সাধুবাদ জানাতে হয় । মাঝে মাঝে মনে হয়, মায়ের কড়া নজর-দারির কারণেই আজ আমরা চার ভাই-বোনের সবাই শিক্ষিত হতে পেরেছি (আমি পেন্ডিং এ যদিও)।
মাসের শুরুতে মায়ের গুনে গুনে হিসেব করে পাঠানো টাকা পাওয়ার দুই দিনের মাথায় বাবার কাছ থেকে আরও কিছু টাকা পাই । বাবা অনেক দুঃচিন্তায় থাকেন, আমি কিভাবে থাকি, না থাকি তা নিয়ে । হাজার হোক তাঁর ‘একমাত্র ছোট ছেলে’ বলে কথা । আমি অবশ্য ঢাকায় এসে বেশ খানিকটা কিপ্টে হয়ে গেছি । আসলে, কিপ্টেও বলা যায় না ঠিক । ছোট-খাট সমাজসেবী হয়ে গেছি, তাই মিতব্যয়ী বলা যেতে পারে । বস্তির শিশুদের নিয়ে বিনামূল্যে পড়ানোর জন্য একটা স্কুল আছে । আমি সেখানে পড়াই । মাঝে মাঝে কাঁটাবন বা শাহবাগের রাস্তার আশেপাশে কোন অস্থায়ী পরিবার পেলে তাদের একবেলা খাবার কিনে দেই । বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আমি একটা টিউশনিও করি । বাবা-মা’র কাছ থেকে পাওয়া টাকায় আমার মাস চলে যায় কোনোমতে । তাই টিউশনির টাকাটা খরচ করি ওদের পেছনে । মাঝে মাঝে জ্বর-টর হলে দলবেঁধে যখন আমার খোঁজ নিতে আসেন তারা, আনন্দে চোখে পানি এসে যায় আমার । না চাইতেই যে ভালবাসা পাওয়া যায়, সেটাই বা মন্দ কি !
ও... আমি কিন্তু গিটারও বাজাই । আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোবাসা এই গিটারই । এমনকি আমার ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসেও লেখা আছে – “In a relationship with “My Guitar”.
লেখাপড়ায় অমনোযোগী আমি । সারাদিনের ছোট-খাট সমাজ-সেবা, গিটার প্র্যাকটিস, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সময় দিতে গিয়ে নিজেকে খুব ব্যস্ত বলেই মনে হয় দিন শেষে । আমি খুব সাধারণ একটা মানুষ । এরচেয়ে বেশী আর কি-ই বা চাইতে পারি ? তবে আমিও কোনো একদিনের ঘটনায় বদলে যেতে থাকি... ধীরে ধীরে ।
(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×