somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দাদা

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যু বিষয়টি সব সময় অনাকাঙ্খিত। কখন কার জীবনে তা হঠাৎ চলে আসে তা বুঝা বড় মুশকিল। আমরা সবাই জানি প্রত্যেকটি প্রাণিই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, কারণ আল্লাহ তায়ালা ইহকাল থেকে পরকালে যাওয়ার পথ হিসেবে মৃত্যুকেই বাছাই করেছেন। তাই মৃত্যু অনাকাঙ্খিত কিংবা যতই সময়ের সাথে বেমানান হোকনা কেন তা ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঠিক তেমনি আমার দাদা আবুল আজাদ খন্দকার মৃত্যুর এই স্বাভাবিক পর্যায় পাড়ি দিয়েছেন আজ হতে এক বছর পূর্বে। যদিও তিনি চলে যাবেন হঠাৎ করে এভাবে তা কারোরই চিন্তা ভাবনায় আসেনি। হয়তো তার অনেক বয়স হয়েছিলো, অনেক অসুস্থ ছিলো সে সময়। কিন্তু মৃত্যু যে তার খুব নিকটবর্তী ছিলো তা আমরা একচুল পরিমানও অনুধাবন করতে পারিনি। তিনি জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। জীবনে টিকে থাকার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছিলেন। তার মুখ থেকে বিভিন্ন গল্প শুনা যেত। এসব গল্পের মধ্যে বৃটিশ যুগের গল্প,অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের গল্প, যুদ্ধের পূর্বে পাকিস্তানের গল্প উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন ভাষায় চমৎকার ভাবে কথা বলতে পারতেন।বাংলা ভাষার পাশাপাশি উর্দু, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় স্বতস্ফুর্ত ভাবে কথা বলতে পারতেন। এসব ভাষায় তিনি বিভিন্ন কথোপকথন, গল্প ও গান আমাদের শুনাতেন। তিনি ইপিআর-এ কর্মরত ছিলেন অনেকদিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের পূর্বে চাকরি ত্যাগ করে চলে আসছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকেই তার জন্য সংসার চালানো সবচেয়ে কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। তবুও শত কষ্ট সহ্য করে সে সম্মুখে অগ্রসর হয়েছিলো। তিনি ছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী। গায়ের রং কালো ছিলো তার। শক্তিতে তার সাথে কয়েক গ্রামের মানুষ হেরে যেত নিশ্চিত। তবে তিনি শক্তিশালী হলেও কখনও কারও সাথে লাগতে যাননি। সমস্ত শক্তি তিনি ব্যয় করেছিলেন জীবন যুদ্ধে নিজেকে ও তার পরিবারকে টিকিয়ে রাখার জন্য। অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিলো তার জীবন নিয়ে। অনেক ধরনের সমস্যার সঠিক সমাধান তিনি তাই অতি সহজেই দিতে পারতেন। তিনি ছিলেন অতি সাধারণ ও সহজ সরল একটা মানুষ। তিনি যে কতটা সহজ সরল ছিলেন তা তার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা থেকে অতি সহজেই বুঝা যায়। তার এই সহজ সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেক মানুষ নানা সুবিধা ভোগ করেছে তার কাছ থেকে। ঐসব সুবিধাবাদী মানুষগুলো আমার দাদাকে ঘিরে না রাখলে দাদা অনেক কিছুই করতে পারতেন। তিনি অনেক পরিশ্রমী ছিলেন। বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি প্রচুর পরিশ্রম করতেন। তিনি হয়তো পরিশ্রমের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন যার কারণে তিনি বার্ধক্যে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হোন। তার মতো একটা সুঠামদেহীর মানুষ সহজেই এতোটা বার্ধক্যের ভারে নুব্জ্যে যাওয়ার কথা নয়, হয়তো এরজন্য তার অতিরিক্ত পরিশ্রমই দায়ী। বার্ধক্যে তিনি নানান ধরনের অসুখবিসুখে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পরে যান। বিছানায় পরে যাওয়ার পর থেকে বড্ড কষ্টকর হয়ে গিয়েছিলো তার জন্য। একটা মানুষ হাত-পা থাকা সত্ত্বেও চলতে না পারলে, নিজের কাজ নিজে করতে না পারলে কতটা কষ্ট লাগে তা তাকে দেখলে বুঝা যেত। এতো অসুস্থতা ও প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও সে সর্বদা ঈমান ঠিক রেখেছিলেন। গতবছর রমজান মাসে তিনি একটা রোজাও ভাঙ্গেনি। এমনকি তাকে হুইল চেয়ারে করে দেড়-দুই মাইল দূরে ঈদগাহ ময়দানেও নেওয়া হয় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করার জন্য। কিন্তু কে জানতো এটিই তার শেষ ঈদের নামাজ ছিলো, এটিই তার জীবনের শেষ ঈদের আনন্দ ছিলো। এরপরের দিন হঠাৎ করেই খুব অসুস্থ হয়ে তিনি চলে গেলেন এ পৃথিবী ছেড়ে, আমাদের ছেড়ে চিরতরে। তার পুরো জীবনের সব কষ্টের ফলাফল আল্লাহ তাকে দিবেন অবশ্যই। আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবেন এ প্রার্থনাই করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×