somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্লাস-মাইনাস ২য় পর্ব(শেষ)

০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেদিন খুশবু কারো সাথেই আর কথা বলেনি। বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেছিলো তবুও সে বিছানা ছেড়ে উঠেনি। তার মা-বাবা অনেক ডাকাডাকির পরও সে কোন সাড়া দেয়নি। চুপ হয়ে শুয়ে ছিলো। মাঝেমধ্যে দুই/এক ফোটা জল গাল বেয়ে পড়ছিলো। খুশবুর মা-বাবা খুব চিন্তিত হয়ে গেল, তাদের এতো ভালো একটা মেয়ের হঠাৎ কি হয়ে গেল আজ।

কাউকে মনে-প্রাণে ভালোবাসা কি কোন অপরাধ? হয়তো না, কিন্তু এই নিস্পাপ মেয়েটা তবুও কেন অর্ককে সেই প্রথম থেকেই ভালোবেসে এসে শেষ পর্যন্ত কষ্ট পেল। যখন সে ভালোবাসা কি তাই বুঝতোনা তখন থেকেই তো সে অর্ককে আজীবনের জন্য পাশে চাইতো। সে কখনোই ভাবেনি অর্ক আর তার মাঝে এতোটাই দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যাবে। নিয়তির খেলায় কেন যে এমন লেখা ছিলো তা ঐ সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। এতো করে চাওয়া জিনিসগুলোই হয়তো দূরে চলে যায়, খুব দূরে। যেখান থেকে সেটাকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়না। যদি এমন ভাবে হারিয়েই যাবে তাহলে কেন জীবনের অনেকটা অংশের সাথে সেই বিষয়গুলো জড়িয়ে দিবেন তিঁনি? এর উত্তর হয়তো তিঁনি ছাড়া আর কেউ দিতেও পারবেনা। হয়তো এর মাঝেই তিঁনি লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন আগামীর ভবিষ্যৎ।

রাত ঠিক তিনটার দিকে খুশবুর মা তার কপালে হাত দিয়ে দেখলো খুব গরম হয়ে আছে। জ্বরে খুশবুর হাত-পা পুড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে এরপর অনেকক্ষণ ধরে গোসল করার কারণে হয়তো জ্বর উঠে গেছে তার। সারা রাত জল পট্টি, মাথায় পানি দিলো খুশবুর মা। সকালের দিকে একটু সুস্থ হলো খুশবু। এরপর অনেকদিন খুশবু খুব অসুস্থ ছিলো। ঠিকমতো কারো সাথে মিশতোনা, কথা বলতোনা। খুব নিরব হয়ে গেল সে। এখন আর আগের মতো বান্ধবীদের সাথে হইহুল্লোড় করে বেড়ায়না খুশবু। আগের সেই খুশবুটা এখন অন্য রকম হয়ে গেছে।

এভাবে করে কয়েক বছর কেটে গেল। খুশবু এসএসসি, এইচএসসি পাড়ি দিয়ে এখন অনার্সও শেষ করে ফেলছে। যেই খুশবুটা এক সময় অনেক কিছু বুঝতোনা, সেই এখন অনেক কিছু বুঝে। অনেক কাজ সে একাই করতে পারে এখন। ভালো একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরিও করছে সে এখন। খুশবু নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে আজ। হয়তো এতটা পথ পাড়ি দিতে তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, অনেক বাঁধা পেতে হয়েছে। কিন্তু আজ সে সফল হয়েছে। আজ আর কেউ তাকে কষ্ট দিতে পারেনা। কাউকে ভালোবাসার অপরাধে তাকে আজ আর কষ্ট পেতে হয়না।

খুশবুর বান্ধবী তন্বীর বিয়ের দাওয়াত আজ। খুশবু তাই সকালে খুব আগেই আজ বিছানা ছেড়ে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে, বাড়িঘর গোছগাছ করলো। এসব করার পর তন্বীর বিয়েতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছিলো খুশবু, এমন সময় খুশবুর স্বামী এসে তাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরলো। খুশবু তখন লজ্জায় লাল হয়ে গেল। খুশবু বললো "এই কি করছো এসব! দেরী হয়ে যাচ্ছে, তুমি রেডি হও যাও। " "না " "না কি আবার! যাবেনা তুমি? " "যাবো " "তাহলে না বলো কেন " "তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা " খুশবু তখন খুব হাসি দিয়ে বসলো। খুশবুর এরকম সুন্দর হাসি খুব কম মানুষই দেখছে। আর হাসির সময় যদি তার মাথার কিছু চুল দুই ঠোঁটের মাঝে চলে আসে তখন তাকে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। খুশবুর স্বামী খুশবুর চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর আয়নার দিকে তাকিয়ে খুশবুর সেই হাসির সৌন্দর্য অনুভব করছে মনের গভীর অনুভূতি দিয়ে। সে যেন অন্য কোন জগতে নিমিষেই হারিয়ে গেছে। এখন শক্ত করে ধরে আছে খুশবুকে সে। কিছুতেই যেন সে আজ খুশবুকে ছাড়ছেনা। ঠিক তখনই তাদের রুমের দরজায় খুশবুর শাশুড়ি কড়া নাড়লো। খুশবু তখন বললো "আসছি মা ", এই বলে খুশবু তার স্বামীর কাছ থেকে ছুটে দরজা খুলতে চলে গেল।

ঠিক বারোটার দিকে খুশবু আর তার স্বামী তন্বীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বের হলো। সেখানে তার স্কুল-কলেজের অনেক বন্ধু-বান্ধবী থাকবে। যাদের সাথে বহুদিন পর আজ তার দেখা হতে চলছে। এমনকি কেউ আজ পর্যন্ত জানেওনা খুশবুর স্বামী কে তা। কারণ খুশবুর বিয়েটা হয় হঠাৎ করেই ঘরোয়া ভাবে। পরে আর কাউকে অনুষ্ঠান করে জানানো হয়নি। আজ তন্বীর বিয়ের সুযোগে সবাই খুশবুর স্বামীকেও দেখতে পারবে।

তারা দুপুর ২টার দিকেই পৌঁছে গেল। তাদের আগেই সবাই উপস্থিত ছিলো সেখানে। তারা যখন একসঙ্গে সবার সামনে উপস্থিত হলো তখন কারও মনেই এ ধারনা হয়নি যে তারা স্বামী-স্ত্রী। তারা সবাই ভাবলো খুশবুর স্বামী হয়তো ব্যস্ত তাই তার সাথে আসছে। এক বান্ধবী তো বলেই বসলো "কিরে ছোটবেলার সেই একসাথে সব জায়গায় যাওয়ার অভ্যাস কি তোদের এখনো আছে? " খুশবু তখন তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে হাসছিলো তার স্বামীও হাসছিলো। তখনো তারা তাদের বন্ধুদের সত্য কথাটা বলছিলোনা। অর্কই যে খুশবুর স্বামী তা সেদিন বলা হয়নি আর। কারণ খুশবু চায় তাদেরও একটা বিশাল ধুমধাম করে অনুষ্ঠান হোক, যেখানে সবাই জানবে খুশবু অর্কর বউ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×