somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কল্পদ্রুম
জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

ছায়া গল্পানু

১৪ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবেদ রশিদ এবং তাঁর ছায়া নিয়ে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে এক মধ্যরাতে এর সূচনা। নির্দিষ্ট ঐ রাতের কথা কিছুটা বলা যাক। রাতের বয়স তখন ঘড়ির কাঁটায় দুইটার কয়েক মিনিট বেশি। আকাশে কোন মেঘ ছিলো না। এক আকাশ ভর্তি তারার বুকের উপর কাস্তের মতো চাঁদ ছিলো। তার আলো মণিপুর আবাসিকের নাতিদীর্ঘ রাস্তার আদ্ধেকটা আলোকিত করতে পেরেছিলো। বাকি আদ্ধেকটাকে আড়াল করে ছিলো উঁচু উঁচু দালানের সারি। ঐ প্রান্তেই ক্লাব বেঙ্গল ওডিসির আলোকসজ্জা এবং নেমপ্লেটের আলো অন্ধকার রাস্তায় তার উপস্থিতি নজরে আনে।

রাস্তার অন্যপ্রান্ত শেষ হয়েছে একটি তিন রাস্তার মোড়ে। সেখানেই একটি ল্যাম্পপোস্ট। তার নীচে ছিলেন আবেদ রশিদ। চোখ লাল। তবে মেজাজ তেজপাতার মতো সতেজ। সাধারণত ক্লাব থেকে বের হয়ে তিনি হাঁটতে হাঁটতে এই ল্যাম্পপোস্টের নীচে এসে দাঁড়ান। ড্রাইভার গাড়ি বের করে আনার আগে একটি শেষ সিগারেট ধরান। অভ্যাস মতো ঐ নির্দিষ্ট রাতেও আবেদ রশিদ ঠোঁটে সিগারেট চেপে পকেট হাঁতরাচ্ছিলেন লাইটারের খোঁজে। তখনই ছায়া বিষয়ক জটিলতা তার চোখে পড়লো। তিনি আবিষ্কার করলেন তার পাশে পড়ে থাকা ছায়াটি তার নয়। তার এতদিনের পুরাতন ছায়াটি অন্যের সাথে বদলা বদলি হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ অজান্তে।

যে কোন সমস্যার সমাধানের পথে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। সবার আগে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো সমস্যার আসল রূপ ধরতে পারা। দুর্বল চিত্তের মানুষরা এ ধরণের সমস্যার চাপে ভেঙ্গে পড়ে। অতি সাহসীরা এটাকে একেবারে পাত্তা দেয় না। আবেদ রশিদ একজন চিন্তাশীল মানুষ। ব্যক্তি জীবনে তিনি সহজে উত্তেজিত হন না। তাই প্রথম ক দিন নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখলেন। পুরো বিষয়টা ঠান্ডা মাথায় ভাবলেন। এরপর ব্যক্তিগত চিকিৎসক বন্ধু মাহবুব আলীকে ফোন করলেন।

মাহবুব আলীর সামনে আবেদ রশিদকে গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে দেখা গেলো। মাহবুব আলীর মুখে সুক্ষ্ম হাসির রেখা। তিনি মনোযোগ দিয়ে আবেদ রশিদকে লক্ষ্য করছেন। তার সামনে বসে থাকা পঞ্চাশোর্ধ মানুষটিকে তিনি কলেজ জীবন থেকে চেনেন। তখনকার এক রোখা ছেলেটি কালে ক্রমে দেশের প্রভাবশালী মানুষদের একজনে পরিণত হয়েছে। আবেদের ব্যক্তি ইতিহাস এবং রোগের ইতিহাস — দুটোই মাহবুব আলীর খুব ভালো করেই জানা। তাই আবেদ রশিদের মুখে এ জাতীয় ঘটনা তার কাছে খুবই মজার কিছু বলে মনে হয়।

একসময় মাহবুব আলী প্যাডে ঘসঘস করে কলম চালালেন। মুখ তুলে বললেন, "তোমার লিভারের অবস্থাটা দেখা দরকার। এমএর আই টাও জরুরি। আরো কিছু টেস্ট আছে। পুরাতন ঔষধগুলোই খাও।"

"আর কি?"

"আর কি! এলকোহলটা কম খাও। সিগারেট ছাড়ো। এসব তো শুনবা না জানি। তাও বলছি।"

আবেদ রশিদ বিরক্ত গলায় বললেন, "ছায়ার ব্যাপারটা নিয়ে তো কিছু বললা না।"

মাহবুব আলী পিছনে হেলান দিয়ে বসলেন, "বলার মতো কিছু নেই তাই বলিনি। আগে টেস্টগুলো করাও। আর আমি তো সাইকিয়াট্রিস্ট না। বাট আই ক্যান সাজেস্ট সাম নেইম ইফ ইউ ওয়ান্ট।"

আবেদ রশিদ ভ্রুঁ কুঁচকে বললেন, "তুমি আমার কথা বিশ্বাস করো নাই। জানলা বন্ধ করো। লাইট অফ করো। তুমি নিজের চোখে দেখলেই বুঝবা এই ছায়া আমার না।"

মাহবুব আলীর ভিতর কোন গতি দেখা গেল না। তিনি সেই হাসি এখনো ধরে রেখেছেন। "তার দরকার নেই। আর আমার বিশ্বাস অবিশ্বাসটা গুরুত্বপূর্ণ না। তোমারটাই আসল।"

তারপর ঝুঁকে এসে বললেন, "বাড়িতে কি কেউ জানে?"

"না।"

"অফিস?"

"অফিসে যাচ্ছি না।"

"আচ্ছা ঐ দিন রাতে ক্লাবে কি কিছু ঘটে ছিলো?"

"কেন?"

"না। এমনিতেই৷ হয়তো কোন ঘটনায় আপসেট হয়ে ছিলে।"

"সেরকম কিছু মনে পড়ছে না।''

মাহবুব আলী ধীরে সুস্থে আগের মতো হেলান দিলেন। শেষ দুইটা প্রশ্ন।

" ছায়া কি তোমার সাথে কমিউনিকেট করার চেষ্টা করে। কিছু চায় অথবা করতে বলে?"

"না।"

"তাহলে তাকে ঘাটানোর দরকার কি!" মাহবুব আলীর গলার স্বর রহস্যময় হয়ে ওঠে। হাসিটা তবু অটুট। তাকে দেখে মনে হয় যে প্রশ্নটি তিনি করতে চেয়ে ছিলেন অবশেষে সেই মুহূর্তটি এসে গেছে।

"ছায়াটিকে কি তুমি চেন?"


আবেদ রশিদ একটি দীর্ঘ যাত্রা বিরতিতে চলে গেলেন। এই যাত্রা কোথাও আক্ষরিক অর্থে পথচলার যাত্রা নয়। এটা তাঁর দীর্ঘ কর্ম জীবনের যাত্রা। সেই যাত্রায় তিনি বিরতি নিলেন। নিজের আলিশান হোম অফিসে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেললেন। তাতে তার সাম্রাজ্যের কোন সমস্যা হলো না। তার অঙ্গুলি হেলনে ঠিকই কাজ হতে লাগলো। পার্থক্য কেবল আগে যারা অফিসে আসতো। তারা এখন বাড়িতে আসে। এটার বাইরেও একটি পার্থক্য আছে। পুরাতন ক্লায়েন্টরা তা অনুভব করেন। সেটা আবেদ রশিদের চোখ নিয়ে। তার সেই চোখের দৃষ্টিভঙ্গি যেন বদলে গেছে। আগের শীতল প্রস্তরিত দৃষ্টির বদলে সেখানে একটা অস্বস্তিকর তীক্ষ্ণতা ভর করেছে। দীর্ঘদিন রোগে ভোগা ব্যক্তির চোখে ওরকমটা দেখা যায়। তারা এখন আবেদ রশিদকে আগের চেয়েও সমীহ করেন।

আবেদ রশিদ নিজে অবশ্য এই পার্থক্য অনুভব করেন অন্যভাবে। তিনি রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে পাশের দেওয়ালে তাকিয়ে থাকেন। সেখানে আরো একজন ছায়া শরীর তার মতো করেই দোল খাচ্ছে। একটুও ছন্দ পতন হচ্ছে না দুজনের। আবেদ রশিদ দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে নানান অঙ্গ ভঙ্গি করেন। এক সময় সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যান। তারপর ছায়া মানবকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। অনেক কিছু আরো স্পষ্ট হয়ে চোখে পড়ে তখন। যেমন ছায়াটি যার, সেই মানুষটি তার থেকে লম্বায় চার পাঁচ আঙ্গুল ছোট হবে এবং ছায়াটি তার নিজের পরিস্থিতির বিবেচনায় অপরিবর্তনীয়। তিনি কি পড়লেন না পড়লেন তাতে ছায়ার কোন পরিবর্তন হয় না। তিনি ন্যাংটো হয়ে দাঁড়ালেও দিব্বি দেখা যাচ্ছে ছায়ামানবের পরনে ঢোলা পাজামা, লম্বা পাঞ্জাবি। ডানহাতে একটি ঘড়ির অস্তীত্ব পাওয়া যায়। বাম হাতের রিং ফিঙ্গারে একটি আংটিও আছে না কি! তবে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা আছে। এটা নিশ্চিত। মাথায় চুল অল্প। ডান দিকে সিঁথি। আধো আলো, আধো অন্ধকার ঘরে আবেদ রশিদ স্থির চোখে তাকিয়ে থাকেন দেওয়ালের উপর ছায়ামানবের দিকে। ছায়ার চোখ থাকলে সেটিও তার দিকে তাকিয়ে থাকার কথা। তিনি অপেক্ষা করেন। কিছুই ঘটে না। বিচিত্র কারণে আবেদ রশিদ নিজের ভিতরে দুর্দমনীয় ক্রোধ অনুভব করেন। কেউ ঐ মুহূর্তে ঘরটাতে চোখ রাখলে দেখতো একজন মধ্য বয়স্ক নগ্ন মানুষ দাঁত মুখ খিচিয়ে তার ছায়াকে ভেঙচি কাটছে। ছায়াটিও তার জবাব দিচ্ছে।

শহরের কোথাও বিক্ষোভ হচ্ছে। কোন একজনকে খুঁজে পাওয়া দরকার। কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছে না কেন এই নিয়ে স্লোগানের নামে চেঁচামেচি। সেই চেঁচামেচি যত জোরেই করা হোক আবেদ রশিদের মতো মানুষের কানে তা পৌছায় না। তিনি আপাতত নিজস্ব জটিলতায় ডুবে থাকেন। তবুও একেবারেই যে উপেক্ষা করতে পারেন তা নয়। এক সকালে সেই চেঁচামেচি নীরবে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাতে একটি পেপার কাটিং।

পত্রিকায় হেডলাইন "রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ব্যবসায়ী জমিরউদ্দীন"। বিস্তারিত লেখায় শেষে লেখা তাঁকে সর্বশেষ দেখা গেছিলো ক্লাব বেঙ্গল অডিসিতে। প্রায় এক মাস আগে৷ আবেদ রশিদ লেখাটা পড়লেন। তারপর পরের পাতায় চলে গেলেন। তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে জমিরউদ্দীনের মেয়ে। সাথে একটি ছেলে। ছেলেটির ভাব ভঙ্গী সাংবাদিকের মতো। ছেলেটি তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলো। তিনি চশমার উপর দিয়ে তার দিকে তাকালেন। এটা অধস্তন ব্যক্তিদের দিকে তাকানোর তার একটি বিশেষ কায়দা। এর অর্থ " কি চাও?"

"জমিরউদ্দীনের ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিতে এসেছি।"

"আমার কাছে কেন?"

"কারণ যে রাতে তিনি ক্লাব থেকে নিখোঁজ হয়ে ছিলেন সে রাতে আপনিও সেখানে ছিলেন।"

"আরো অনেকেই ছিলো।"

"কিন্তু আপনার সাথেই উনি দেখা করতে গেছিলেন।"

"তোমাকে কে বললো?"

"আব্বার ডায়েরিতে লেখা ছিলো।'' এবার মেয়েটি কথা বললো।

আবেদ রশিদ হাত দিয়ে উড়িয়ে দিলেন, "তিনি লিখলেই কিছু প্রমাণ হয় না। আমার সাথে তার দেখা হয় নি।"

আবেদ রশিদ উঠে পড়লেন। ইঙ্গিত — এই জাতীয় আলোচনার এখানেই পরিসমাপ্তি। সাংবাদিক ছেলেটি তেমন বিচলিত হলো বলে মনে হলো না। বরং দ্রুত প্রশ্নের ধরণ বদলে ফেলল, "আপনি জমিরউদ্দীন সাহেব নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। পাবলিক প্লেসে আপনাকে দেখা যায় নি। কারণ কি?"

"ডক্টরদের পরামর্শে আমি বিশ্রামে আছি।"

"কেন? হঠাৎ বিশ্রামের প্রয়োজন হলো কেন?"

আবেদ রশিদ স্পষ্ট বিরক্তি বোধ করলেন। সেটা লুকানোর চেষ্টাও করলেন না। "এসব প্রশ্নের সাথে জমিরউদ্দীনের কোন সম্পর্ক দেখছি না। তুমি আমাকে নিয়ে কোন ফিচার করলে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসো। তখন উত্তর দেবো।"

"জমিরউদ্দীনের সাথে আপনার স্বেচ্ছা ঘরবন্দীর আসলেই কি কোন সম্পর্ক নেই?" সাংবাদিক ছেলেটির মুখে হাসি। তার বলার ভঙ্গিতে আবেদ রশিদ ছোট্ট একটা ধাক্কার মতো খেলেন। ছেলেটা কি কিছু জানে! জানতে পারে। একেবারেই কোন খোঁজ না নিয়ে নিশ্চয়ই আসেনি। এজন্যেই হয়তো আসার পর থেকে আশে পাশে তাকাচ্ছিলো। হয়তো ছায়ার দেখার চেষ্টা করছিলো। তিনিও তো কম যান না। আগেই ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এই ছেলে খবরটা পেলো কোথায়! বাড়ির চাকর বাকরগুলো কিছু বলতে পারে! কেউ হয়তো লুকিয়ে লুকিয়ে তার উপর নজর রেখেছিলো। এসব বদগুলোর সাথে সাংবাদিকগুলোর ভালো খাতির থাকে। আবেদ রশিদ দাঁত কিড়মিড় করেন। সবকটাকে তাড়াতে হবে! একটাকেও রাখবো না!

সত্যিই তিনি তাই করেন। আবিদ রশিদ সবাইকে একে একে বিদায় করেন। আরো বিদায় করেন অন্ধকারকে। সারা বাড়িতে আলো জ্বালিয়ে রাখেন। কোথাও যেন কোন ছায়া না পড়ে। ছায়া বিষয়ক জটিলতার এটা সাময়িক সমাধান। তবে আবিদ রশিদের মতো মানুষ যে কোন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বিশ্বাসী। এতদিন সেরকমটাই হয়ে এসছিলো। নির্জন বাড়িতে আবেদ হাঁটেন আর ভাবেন। কিন্তু এবার ঝামেলাটা কোথায় হয়েছে সেটা ধরতে পারেন না!

ভাবতে ভাবতে তার চোখে অশান্তির ঘুম নেমে আসে। ঘুমের মাঝে তিনি একটি বদ্ধ ঘরে উপস্থিত হন। ঘরটা প্রায় ফাঁকাই বলতে হবে। একটি টেবিল, একটি চেয়ার। টেবিলের ঠিক উপরে একটি ষাট ওয়াটের বাতি জ্বলছে। চেয়ারে একজন মোটা সোটা লোক বসে আছে। মাথা ঝুলে আছে বুকের উপর। পরনে সাদা পাঞ্জাবি। বুকের কাছটা ভেজা ভেজা। এক কানে ভাঙ্গা চশমার ডাঁটি। লোকটা ওভাবেই বসে থাকলো অনেক ক্ষণ। জীবিত না কি মৃত ঠিক বোঝার উপায় নেই! আবেদ রশিদ তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর ঝুকে পড়ে লোকটার মুখের কাছে মুখ নিয়ে ঠোঁট গোল করে ধোঁয়া ছাড়লেন। লোকটা খক খক করে কাশতে শুরু করলো।

জমিরউদ্দীনকে নিয়ে চলমান বিক্ষোভে বক্তারা গলা কাঁপিয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। পুলিশের নিস্পৃহতায় তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা জানতে চান কাদের ছত্রছায়ায় অপরাধীরা পালিয়ে বেঁড়াচ্ছে। ছত্রছায়ার ব্যাপারটা নিয়ে পুলিশের কিছু বলার নেই। বিক্ষোভকারীরা তো আসলে জানে না। ছত্র এবং ছায়া নিয়ে তারা ভুল জায়গায় প্রশ্ন করছে। তবে সকলের ভুল ভাঙ্গার আগেই আবেদ রশিদের ছায়া বিষয়ক জটিলতার আচমকাই পরিসমাপ্তি ঘটে। কোন এক রাতে যেভাবে এর শুরু হয়ে ছিলো। শেষটাও হয় সেভাবে।

অত্যন্ত সহজ উপায়ে আবেদ রশিদ তার সমস্যার সমাধান বের করে ফেলেন। টেম্পোরারি কিছু নয়। স্থায়ী বন্দোবস্ত। তিনি বুদ্ধিমান মানুষ। নিজেই নিজেই সমাধানটা বের করলেন। বলতে গেলে কোন পূর্ব পরিকল্পনা সেটি ছাড়াই তার মাথায় চলে আসলো৷ সে রাতেও আকাশটা অবিকল মাস খানেক আগের সেই নির্দিষ্ট রাতের মতো ছিলো। আবিদ রশিদ লাল চোখে তাকিয়ে ছিলেন স্বপ্নার দিকে। স্বপ্নার লাল ঠোঁটে তার সকল মনোযোগ আটকে ছিলো। স্বপ্নার গায়ের দামি পারফিউমের মাদকতায় ভুলেই গেছিলেন আর সব। তাই ঘরের বাতি কখন নিভে গেছে তা লক্ষ করেননি। এটাও লক্ষ করেননি খোলা জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় দুজনার ছায়া পড়েছে। নরম বিছানায় স্বপ্নার উন্মুক্ত শরীর আবেদ রশিদকে ডাকতে থাকে। আবেদ রশিদ বুভুক্ষুর মতো তার দিকে এগিয়ে যান। উষ্ণ ঠোটের স্পর্শের মাঝে তার চোখ আটকে যায় দুজনের ছায়া মিলনের দিকে। স্বপ্নারটা ঠিক আছে। কেবল তার ছায়ার উপরে ভর করে আছে অন্য কেউ। আবেদ রশিদের মাথা ঝিম করে ওঠে। পরক্ষণেই তিনি পরিষ্কার বুঝতে পারেন তাকে কি করতে হবে।

মাহবুব আলী রীতিমত বিস্মিত হলেন। তার গেটের কাছে আবেদ রশিদ দাঁড়িয়ে আছেন। মুখে হাসি। চোখ দুটো অস্বাভাবিক ভাবে জ্বলজ্বল করছে। কাঁচা ঘুম থেকে উঠে আসার কারণে নিজের মাথার ভিতরেও কেমন জট পাঁকিয়ে আছে। আবেদ রশিদের ব্যাপারে কিছু একটা ঠিক নেই। কিন্তু সেটা কি তা শুরুতে ধরতে পারলেন না। আবেদ তাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর পর পারলেন। বাড়ির সামনের ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়েছিলো তাদের দুজনের গায়ের উপর। মাহবুব আলীর দীর্ঘ ছায়া পড়লেও আবেদের শরীর ছায়াহীন। মাহবুবের কাছে পুরো দৃশ্যটা একই সাথে স্বাভাবিক এবং হাস্যকর মনে হলো। হয়তো মস্তিষ্কের সব অংশ জেগে ওঠেনি বলে এমনটা হচ্ছে। যুক্তির অংশটা ঠিকমত কাজ করছে না। আবার চোখের সামনের দৃশ্যেও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ছে না। আবেদ রশিদের ছায়াহীন শরীর ধীরে ধীরে তার সামনে থেকে দূরে মিলিয়ে যেতে থাকে। পিছনে ঘুম ঘুম চোখে মাহবুব সত্য মিথ্যার দোলাচলে আটকে থাকেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×