somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কল্পদ্রুম
জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

সাপ সম্পর্কে যা যা জেনে রাখতে পারেন।

১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতি বছর ৭ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের স্বীকার হন। বাৎসরিক মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার। এই তথ্যটি ২০১৯ সালের। আর এখন ২০২২ সাল। বর্তমানে কী অবস্থা সঠিক না জানলেও কোন কোন গবেষক এখনো এটিকে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কম আলোচিত জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিগুলোর একটি হিসেবে দেখছেন। সাপ নিয়ে জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপে মানুষের উপস্থিতি এবং হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করলে এই দাবিকে উপেক্ষা করা যায় না।

গুগল বলছে Ophidiophobia অর্থ সাপকে অতিরিক্ত মাত্রায় ভয় পাওয়া। অতিরিক্তমাত্রায় কী না জানি না। তবে এই প্রাণীটিকে আমি যথেষ্ট ভয় পাই। আমার ধারণা সাপকে লক্ষ্মীসোনা মনে করার মতো মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে কমই আছে। এই জিনিসকে সবাই কমবেশি ভয় পান এবং এড়িয়ে চলতে চান। আবার উপমহাদেশে সাপের একটি ধর্মীয় যোগসূত্র আছে। লোকসাহিত্যে নানা ধরণের গল্প গাঁথা চালু আছে। ভয়, ধর্মীয় আবেগ কিংবা লোকরীতি যে কারণেই হোক এই প্রাণীটির সম্পর্কে আমরা খুব বেশি জানি না। শুনেছি গ্রামের মানুষেরা বিভিন্ন ধরণের সাপের সঙ্গে পরিচিত। তবে শহরের মানুষেরা আবার তেমন পরিচিত নন। তাছাড়া সব অঞ্চলে সব প্রজাতির সাপ দেখা যায় না। তাই আমার মনে হয়, সাপ নিয়ে যে কোন ধরণের আলোচনার ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হলো বিভিন্ন প্রজাতির সাপ চিনতে পারা। পৃথিবীতে প্রায় ৩৯০০ হাজার প্রজাতির সাপ আছে। বাংলাদেশে ৯৪ প্রজাতির সাপের মধ্যে ২৬ প্রজাতির সাপ বিষধর। সবগুলো না চিনলেও অন্তত যেগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি সেগুলো চিনে রাখা যেতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো, সাপ চেনা জরুরি কেন?

কারণ প্রথমত আপনি বিষধর এবং অবিষধর সাপ আলাদা করতে পারলে আপনার আতঙ্ক অনেকটা কমে যাবে। কোথাও বিষাক্ত সাপ দেখলে নিজেকে এবং অন্যদেরকে সতর্ক করতে পারবেন। কখনো আক্রান্ত হলে আপনার চিকিৎসককে অবহিত করতে পারবেন। এই তথ্যটি আপনার চিকিৎসককে চিকিৎসা দিতে খুবই সাহায্য করবে।

নীচের এই সাপগুলিই সচরাচর দেখা যায়।

কিছু বিষধর সাপের ছবি













যারা আরো কিছু নাদুস নুদুস সাপের ছবি দেখতে আগ্রহী। এই লিংকে গিয়ে নিজ দায়িত্বে দেখে নিতে পারেন।

সাপ যেহেতু চিনে ফেলেছেন। এরপরের কাজ কী? অবশ্যই ওর থেকে দূরে থাকা। তাকে দূরে রাখার জন্য কী কী করতে পারেন?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত নির্দেশিকায় বেশ কিছু বুদ্ধি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেউ চাইলে সম্পূর্ণ নির্দেশিকাটি পড়ে নিতে পারেন। নিঃসন্দেহে উপকৃত হবেন। খুবই সংক্ষিপ্ত ধারণার জন্য কিছু বিষয় আলোচনা করা যাক।

সাপ একটি শীতল রক্তের প্রাণী। ফলে খুব বেশি গরম অথবা খুব বেশি ঠান্ডা জায়গায় ওর পছন্দ না। সাধারণত ভেজা শ্যাতশ্যাতে, অন্ধকার জায়গায় সে থাকতে চায়। এক্ষেত্রে বাড়িতে আসবাবপত্রের আড়ালে, কাঠ বা পাতার স্তুপে, মাটির গর্তে, স্টোররুমে, রান্নাঘরে, গোয়ালঘরে, এসব জায়গা সাপের পছন্দ। সুতরাং এই ধরণের জায়গাগুলোতে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। পুরনো গর্তের ভিতরে হাত দেওয়া যাবে না। ঝোঁপ ঝাঁড়ের ভিতরে হাঁটাচলার সময়ে শব্দ করে হাঁটতে হবে। তবে আমাদের দেশে কার্বলিক এসিড দিয়ে সাপ তাড়ানোর একটা ধারণা প্রচলিত আছে। এইটার কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নাই।

জাতীয় নির্দেশিকা মতে আমাদের দেশে মে থেকে অক্টোবর এই সময়ে সাপে কাটার সংখ্যা বেশি। তাই এই সময়টাতে সাবধানে থাকা জরুরি। বিশেষত যারা ডোবা নালায় রাতে মাছ ধরতে যান, তাদের সতর্ক থাকা উচিৎ। গাম বুটের মত জুতো ব্যবহার করতে পারেন। জালের ভিতরে হাত দেওয়ার সময়ে সতর্ক থাকা উচিৎ।

সাপে কাটলে কী করবেন?

সবার প্রথমে নিশ্চিত হবেন আসলেই সাপে কেটেছে কী না। অনেক পরিস্থিতে হয়তো কামড়ানোর সময়ে খেয়াল করা হয় না। তবে কিছু একটা কামড়েছে বলে বুঝতে পারেন। সেক্ষেত্রে আশেপাশে সাপ আছে কী না দেখা উচিৎ। যেহেতু চিকিৎসা পেতেও এই তথ্য আপনাকে সাহায্য করবে। এছাড়া সাপে কাটার স্থানে বিষ দাঁতের দাগ এক্ষেত্রে সাহায্য করবে। কালাচ সাপের ক্ষেত্রে দংশনের দাগ খুব একটা স্পষ্ট নয়। এছাড়া অন্য সাপের দংশনের দাগ স্পষ্ট। সাধারণত বিষধর সাপগুলোর দংশনে ২টা ফ্যাং মার্ক থাকে। তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন, কখনো কখনো চারটাও থাকতে পারে। কারণ বিষধর সাপের পুরনো ফ্যাং পড়ে গিয়ে নতুন ফ্যাং উঠে। এক্ষেত্রে পুরনো ফ্যাং পড়ার আগেই নতুন ফ্যাং উঠে বলে এই অবস্থায় কামড় দিলে চারটা ফ্যাং মার্ক দেখা যেতে পারে। কখনো কখনো স্পষ্ট ফ্যাং মার্কের বদলে আঁচড়ের মতো দাগ থাকে। এরকম দাগ থাকলে সেক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এজন্যই সাপ দেখে চিহ্নিত করা জরুরি। অনেকে সাপের ছবি তুলে রাখেন। আমার কাছে এটাও বেশ বুদ্ধিমানের কাজ মনে হয়। তবে সাপে কাটলে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে সাপ ধরা বা মারার পেছনে সময় নষ্ট করা উচিৎ নয়। এটা আসলে রোগীকে কোনভাবে সাহায্য করবে না।

সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা

সাপে কাটা রোগীদের আসলে ঘরোয়া তেমন চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির একমাত্র কাজই হলো দ্রুত চিকিৎসকের স্বরণাপন্ন হওয়া। সেখানে যাওয়ার আগে কিছু কাজ করা যেতে পারে। জাতীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী, সাপে কাটা স্থানটি যথাসম্ভব কম নড়াচড়া করা উচিৎ। যত বেশি নড়াচড়া করা হবে, তত রক্ত প্রবাহ বাড়বে। ফলে বিষ রক্তে ছড়িয়ে পড়বে। কাউকে পায়ে কামড় দিলে হাঁটা বন্ধ করে বাহন অথবা অন্য কারো সাহায্যে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। হাতে কামড় দিলে হাড় ভেঙ্গে গেলে গলায় যেভাবে ঝুলানো হয়, সেভাবে ঝুলিয়ে নিয়ে আসা উচিৎ। হাত পায়ে কামড় দিলে আমরা প্রচন্ড শক্ত করে বাঁধন দেই। এই বাঁধন ঐ অঙ্গে রক্ত সঞ্চালনে বাঁধা দেয়। দীর্ঘক্ষণ এই অবস্থায় থাকলে অঙ্গটি ফুলে যেতে পারে। ফলে কামড়ের দাগ চিহ্নিত করা মুশকিল হয়ে যায়। অঙ্গটিতে পচন ধরণ ধরতে পারে। সাপটি Locally venomous হলে বিষ ঐ স্থানে খুব দ্রুত ক্ষতি করবে। সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য বাঁধন দেওয়া খুব জরুরি নয়। যদি দিতেই হয় এক আঙ্গুল সমান ঢিলা রাখতে হবে।

আক্রান্ত স্থানটি সাবান বা এন্টিসেপ্টিক সলিউশন দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে। তবে ক্ষতস্থানে ওঝা বা ঝাড়ফুঁকের নামে অন্য কোন কিছু লাগানো উচিৎ নয়। মুখে দিয়ে টেনে অথবা ব্লেড দিয়ে কেটে রক্ত বের করে বিষ নামানোর চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই।

বিষধর সাপে কাটা রোগীর কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায়?

এটা নির্ভর করছে বিষের ধরণের উপর। সাপের বিষের রকমভেদ আছে। যেমন,

১/ হিমোটক্সিন - আক্রান্ত স্থান থেকে অনবরত রক্ত পড়া, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, প্রস্রাব লাল হয়ে যাওয়া, মাঁড়ি,চোখ,নাক,কান দিয়ে রক্ত পড়া, রক্তবমি, প্রস্রাব পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ কমে যাওয়া এই ধরণের লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণত Viperidae গোত্রের প্রজাতিগুলোতে (যেমন, বাংলাদেশে রাসেল ভাইপার/চন্দ্রবোড়া) এই ধরণের বিষ থাকে। ২/ নিউরোটক্সিন- মাংশপেশীকে অবশ করে ফেলে বলে এই বিষের ক্ষেত্রে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ঘাড় সোজা রাখতে না পারা, চোখের পাতা ভারি হয়ে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব, গলার স্বরের পরিবর্তন (nasal tone) এসব স্নায়ুবিক লক্ষণগুলো প্রকাশ পাবে। সাধারণত Elapidae গোত্রের প্রজাতিগুলোতে ( বাংলাদেশে কোবরা,ক্রেট) এরকম বিষ তৈরি হয়। রাসেল ভাইপার নিরোটক্সিসিটিও দেখাতে পারে। ৩/ নেফ্রোটক্সিন-.কিছু বিষ কিডনীকে আক্রমণ করে। এক্ষেত্রেও ঘুম ঘুম ভাব, দুর্বলতা, প্রস্রাব কমে যাওয়া, লাল প্রস্রাব, বুকে ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, এসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে। ৪/ মায়োটক্সিন- আক্রান্ত স্থানে মাংশ পেশীতে পচন ধরে। যেমন, গোখরার বিষ। ৫/ কিছু বিষ কেবল মাত্র আক্রান্ত স্থানে ক্ষতি করে। এগুলো Locally venomous। এদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান ফুলে যাওয়া, প্রচন্ড ব্যাথা এসব লক্ষণ দেখা যায়। যেমন Green pit viper/সবুজ বোড়া সাপ খুব পরিচিত একটি Locally venomous snake.

এছাড়া নির্বিষ সাপের কামড়ের জায়গায় ইনফেকশন হওয়ার সুযোগ থাকে। ইনফেকশন হলে সেখানে একই রকমভাবে ফুলে যাওয়া,ব্যাথা এ জাতীয় সমস্যা হবে।

কোন কোন প্রজাতিকে একই সাথে বিষধর এবং বিষাক্ত (Venomous and poisonous) বলা হয়। এর অর্থ এরা বিষদাঁতের পাশাপাশি শরীর থেকে বিষাক্ত তরল ক্ষরণ করতে পারে। যেমন, Redneck keelback/লালগলা ঢোঁরা সাপ।



উল্লেখযোগ্য তথ্য, সাপের কামড়ে আক্রান্ত কোন মায়ের বাচ্চাকে দুধ পান করাতে কোন বাঁধা নেই।

একটা বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সাপের কামড়ের ফলে প্রকাশিত লক্ষণ সবসময় একই নাও হতে পারে। কেননা একটা বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে সবসময় যে বিষ দেবে এমন নয়। কোন বিষ না থাকলে তাকে বলে Dry bite. আবার বিষ দিলেও সে একই পরিমাণে দেবে এমন নয়। এজন্য লক্ষণগুলোর প্রকাশ এবং প্রকাশ মাত্রায় বেশ পার্থক্য থাকে। WHO এর তথ্যমতে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় elipidae গোত্রের কামড়ে ২-৩ ঘন্টা এবং Viperidae গোত্রের কামড়ে কোন চিকিৎসা ছাড়াও কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন লাগতে পারে মারা যেতে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শান্ত থেকে দ্রুত এন্টিভেনম আছে এমন জায়গায় পৌছানোটাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।

এন্টিভেনম কী?

ঘোড়া, গাঁধা, খচ্চরের শরীরে অল্প পরিমাণে বিষ(Venom) প্রবেশ করালে তার বিরুদ্ধে শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে এক ধরণের প্রোটিন (এন্টিবডি) তৈরি করে। এন্টিবডি সবসময় নির্দিষ্ট এন্টিজেনের (শরীরে যেটা প্রবেশ করানো হয়) বিপরীতে তৈরি হয়। ফলে একটি নির্দিষ্ট এন্টিভেনম নির্দিষ্ট ভেনমের বিপরীতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। এজন্যই কোন সাপ কাঁমড়াচ্ছে সেটা চিহ্নিত করা জরুরি।

এন্টিভেনম উৎপাদনকারী কোন কোন প্রতিষ্ঠান দাবি করে তাদের উৎপাদিত এন্টিভেনম ঐ প্রজাতি ছাড়াও কাছাকাছি মিলসম্পন্ন অন্য কিছু প্রজাতির ভেনমের বিরুদ্ধেও কাজ করে। একে বলে প্যারাস্পেসিফিক এক্টিভিটি।

আমাদের দেশে যে এন্টিভেনম দেওয়া হয় সেটি ভারত থেকে আমদানিকৃত ভেনম পুলের বিপরীতে তৈরি একটি পলিভ্যালেন্ট এন্টিভেনম। পলিভ্যালেন্ট বলা হচ্ছে কারণ, এটি একসাথে কয়েকটি প্রজাতির সাপের ভেনমের বিরুদ্ধে কাজ করে। সেগুলো হলো, গোখরো, কালাচ, রাসেল ভাইপার এবং স' স্কেল্ড ভাইপার(Saw scaled viper)।


এটি একটি এন্টিভেনমের ভায়াল। এক ডোজ এন্টিভেনমে এরকম ১০টি ভায়াল থাকে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এটি দেওয়া হয়। তবে চাহিদার তুলনায় মজুদ কম বলে রোগীদেরকে অনেক ক্ষেত্রে নিজের খরচে কিনতে হয়। বর্তমানে প্রতি ভায়ালের মূল্য ১০০০টাকা।

এন্টিভেনমের প্রয়োগ সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা উচিৎ। বর্তমানে ভেনমের একমাত্র এন্টিডোট হলো এন্টিভেনম। কেবলমাত্র লক্ষণ প্রকাশ পেলেই এন্টিভেনম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর পিছনে বেশ যুক্তিও আছে। প্রথমত, এন্টিভেনম নিজেও অত্যন্ত বিপদজনক। এর প্রভাবে মানুষের শরীরে তীব্র হাইপারসেন্সিটিভিটি রিএকশন হতে পারে যা একটি মারণঘাতি পরিস্থিতি। অনেকেই এন্টিভেনম দেওয়ার জন্য চিকিৎসককে চাপ দিয়ে থাকেন। যেটা অনুচিৎ। কেবল পর্যাপ্ত যৌক্তিকতা থাকলেই চিকিৎসক এটা দেবেন। এন্টিভেনম দিলেও এটি যে নিজেই ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা এই ব্যাপারটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

এন্টিভেনম কোথায় কোথায় পাওয়া যায়ঃ

এন্টিভেনম পাওয়া যায় এমন কিছু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম:
১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২.মিডফোর্ড হাসপাতাল
৩.চিটাগাং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৪.কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৫.কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৬.ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৭.রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৮.রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৯.দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
১২.শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এছাড়া সিভিল সার্জনের চাহিদামতে কোন কোন সদর ও উপজেলা হাসপাতালে এন্টিভেনম থাকতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে ব্যবহৃত পলিভ্যালেন্ট এন্টিভেনমের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দুর্লভ। প্রতিবছর আমরা প্রায় ১ বিলিয়ন টাকার ভেনম ভারত থেকে আমদানি করি। ভারত থেকে যেসব ভেনম আমদানি করা হয়, তার সাথে আমাদের দেশে প্রজাতিগুলোর ভেনমের বেশ পার্থক্য আছে। একই প্রজাতির গোখরা সাপের বিষে অঞ্চলভেদে পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়। তাছাড়া ভারতীয় ভেনম থেকে তৈরি পলিভ্যালেন্টে স স্কেল্ড ভাইপারের এন্টিভেনম থাকে। এই প্রজাতি আমাদের দেশে নেই। আমাদের দেশে মনোক্লেড ভাইপার/পদ্মগোখরা আছে। যেটা আবার আমদানীকৃত ভেনমগুলোতে অনুপস্থিত। ভারতে কেউটের একটা জাত আছে। বাংলাদেশে আছে চারটি। আমদানিকৃত ভেনমের বিপরীতে তৈরি এন্টিভেনমের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে WHO এর পরামর্শ হলো, স্থানীয় সাপের বিষ সংগ্রহ করে তার বিপরীতে এন্টিভেনম তৈরি করা। এটিই শতভাগ কার্যকর ও নিরাপদ হবে।

ভেনম রিসার্চ সেন্টার






গত চার বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং জার্মানির গ্যেটে ইউনিভার্সিটি দেশীয় সাপের একটি পরিপূর্ণ ভেনম পুল তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ভেনম রিসার্চ সেন্টারটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে অবস্থিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে এই প্রজেক্টটি সফল হলে দেশেই অল্প খরচে শতভাগ কার্যকর এন্টিভেনম তৈরি করা সম্ভব হবে। ব্যক্তিগতভাবে এই রিসার্চ সেন্টারটিতে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এদেশে গবেষণার কাজে খুব উৎসাহ দেওয়া হয় না। এর সাথে আর্থিক এবং জনবলের সংকট তো রয়েছেই। এত কিছুর মাঝেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ এই রিসার্চে নীরবে কাজ করে যাওয়া মানুষগুলোর কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই।

একটা ব্যাপার নিয়ে আমরা অনেকেই বিভ্রান্ত থাকি। কোথাও বিষাক্ত সাপ দেখলে আমরা সেটাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করি। অনেকে আসলে বুঝতে পারি না যে কী করা উচিৎ। কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিৎ। বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু স্বক্রিয় গ্রুপ তৈরি হয়েছে যারা সাপ উদ্ধার করে থাকে। যেমন, Snake awareness, Deep ecology and snake rescue foundation. উল্লেখযোগ্য।

সবশেষে, সাপকে ভালোবাসুন। তবে নিরাপদ দূরত্ব থেকে আর কি!



সহায়কঃ
১. Snake bite as a public health problem: Bangladesh perspective
২. Snake - Wiki
৩. বাংলাদেশে বিষধর সাপ ও তার চিকিৎসা
৪. NCDC guideline: Management of snake bite in Bangladesh.
৫. Guidelines for treatment of snake bite - WHO
৬. দেশেই এন্টিভেনম...
৭. Snakes of Bangladesh.

ফিচার বিষয়ঃ জ্ঞান ও প্রযুক্তি

[বাংলাদেশে স্থলচর সাপগুলোর ভেতরে সবচেয়ে বিষধর সাপ মনোক্লেড কোবরা বা পদ্মগোখরা। আবার বাংলাদেশে সবচেয়ে বিষধর সাপ কোনটি জিজ্ঞেস করলে উত্তর হবে ইয়েলো বেলিড সি স্নেক (Yellow bellied sea snake)। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই সাপটি সামুদ্রিক। এই লেখাতে ইচ্ছে করেই বাংলাদেশের সামুদ্রিক সাপ নিয়ে কিছু লেখা হয় নি। এর পেছনে কারণ দুটো। প্রথমত, এদের আক্রমণের ঘটনা বিরল এবং নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। দ্বিতীয়ত, আমার উদ্দেশ্য ছিলো সাপ নিয়ে অনলাইনে যত তথ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তার ভিতরে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোকে একই লেখার ভিতরে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা। কেউ কোন তথ্য সংশোধন বা নতুন কিছু যোগ করলে সেটা সাদরে গ্রহণ করা হবে।]

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:১০
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×