ছোটবেলায় পড়েছি বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ । সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের বাংলাদেশ । আর এখন মনে হয় আমাদের দেশ একটি ইস্যুময় দেশ । দুইদিন পর পরই একটি একটি নতুন ইস্যু । কোনটা রাজনৈতিক কোনটা সামাজিক কিংবা কোনটা বিনোদন জগতের এমন আরও অনেক ধরনের দুইদিন পর পর নিত্য নতুন ইস্যু নিয়েই আমাদের বসবাস ।
আমরা হুজুগে মাতি বেশী । ফ্রি থাকতে মনে হয় ভালো লাগেনা আমাদের । ভালো লাগেনা পুরনো কিছু । নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে মেতে থাকতে ভালোবাসি আমরা । কয়দিন এটা নিয়ে খুব মাতামাতি হই হুল্লোড়। তারপর যখন আবার নতুন কিছু আসবে তখন আগেরটার সমাধান হোক বা না হোক ওমনি নতুনটা নিয়ে মাততে হবে আর আগেরটা যাবো ভুলে ।
আর ফেসবুক হওয়াতে তো আরও সুবিধা । ওখানে শেয়ার নামে একটা অপশন আছে যে । হয়তো পারিবারিক কোন ঝগড়ায় এক মহিলা আরেক মহিলার চুল ধরে টান দিলো কিংবা দুজন পুরুষ মারামারি করতে গিয়ে একজনের লুঙ্গি খুলে গেল কিংবা রিকশাওয়ালা ও যাত্রীর মধ্যে তর্কাতর্কি হল, এমন বা এমন না যে কোন ঘটনা হোক হাতে যে একটি স্মার্ট ফোন আছে সেটি দিয়ে সুযোগ পেলেই কেউ একজন তা ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দিবে আর আমরা দিব শেয়ার সাথে সাথে তা ভাইরাল লাইক কমেন্টের বন্যা । আর হা হা রিয়াক্ট দেওয়াতো আরও সহজ ।
এমনকি একজন মানুষ অফিসে কাজ করতে করতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করলো আমরা সেই ভিডিওও সিসি ক্যামেরা থেকে নিয়ে কিংবা নিজে ভিডিও করে আপলোড দিবো কিংবা দিবো শেয়ার । আরেহ একজন সুস্থ মানুষ হুট করে এভাবে মারা গেলো তাতে কি এমন আছে যে তা ফেসবুকে ভাইরাল করতে হবে ? শেয়ার অপশনে ক্লিক করার আগে একবারও কি ভাবি ফেসবুকের মাধ্যমে এই ভিডিও যখন ঐ মানুষটার পরিবারের কেউ দেখে এবং তা একবার না বারবার তখন তাদের মানসিক অবস্থা কেমন হয় ।
দুইদিন আগে ধানমন্ডি ৩২ নং দিয়ে যাচ্ছিলাম । দেখতে পেলাম একদল তরুন তরুণী তাঁদের মধ্যে একজন ছেলে একজন শাড়ি পরা মেয়েকে কোলে করে নিয়ে কিছুদুর যাচ্ছে এবং তাঁদের বন্ধুদের মধ্যে একজন তা ভিডিও করছে দূর থেকে আবার দেখতে পেলাম অন্য আরেক ছেলে তাঁদের সবাইকে ভিডিও করছে । এখন আমি অপেক্ষায় আছি লাইভ দেখা সেই কাহিনী আমি কবে যেন ফেসবুকে পেয়ে যাই ।
কিংবা কখনো কেউ বিপদে পরেছে আমরা তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার না করে তাঁর ভিডিও করতে ব্যস্ত । সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করতে হবে যে । মেতে থাকতে হবে তা নিয়ে কয়দিন । এ যেন আমাদের মনের একটা ক্ষুধার মত ।
এতো গেলো ছোটখাটো তুচ্ছ ঘটনার ইস্যু । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসকল ছোট ও তুচ্ছ বিষয় ছাড়াওতো সারা বছর জুড়ে জুড়ে থাকে আরও কত ঘটনা আর এসকল বিভিন্ন ধরনের ঘটনা কিংবা ইস্যুতে আমাদের মাঝে দেখা যায় কয়েক ধরনের মানুষ । যেমন -
১। লেখক/লেখিকা - যাদের মুল কাজই হচ্ছে লেখা । পত্র পত্রিকা, ফেসবুক, ব্লগ যে কোন মাধ্যমে লেখা । এদের মাধ্যমেই সাধারণত আমরা আসল ঘটনা সম্পর্কিত সকল খবরাখবর জানতে পারি । তাঁরা না লিখলে কত ঘটনাই থেকে যেতো অন্তরালে ।
২। নিরীহ লেখক/ লেখিকা- এরা পত্রপত্রিকার লেখক লেখিকার মত সিরিয়াস কেউ নন হয়তো ফেসবুকে কিংবা টুইটার কিংবা ব্লগে সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে তাঁর মতামত প্রকাশ করলো এমন । লেখালিখির মাধ্যমে কিছু মত বিনিময় কিংবা দু চারটি লাইক কমেন্ট পেলেই এরা খুশী ।
৩। নীরব দর্শক - এরা নীরব দর্শক হয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ হওয়া লেখা পড়বে, ছবি ও ভিডিও দেখবে সব জানবে তবে কোথাও কোন মন্তব্য করবেন না । এরা একদিক দিয়ে অনেক ভালো । কোন সাতপাঁচে নেই এরা কোন ঝুট ঝামেলায় নেই এরা । শান্তিতে নাকে তেল দিয়ে বাকী জীবনটা পার করে দিতে পারলেই শান্তি । কোথায় কি হলো না হলো তা নিয়ে এদের কোন মাথা ঘামানো নেই ।
৪। গোল টেবিল বৈঠকের শ্রেণী - এরা হচ্ছেন এমন মানুষ যারা সাম্প্রতিক বিষয়ে যেখানেই যান দু তিনজন মিলিয়ে গোল টেবিলের বৈঠক সাজিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা করবেন অবশেষে আলোচনা শেষে যে যার ঘরে । এরা ইস্যু নিয়ে অনেক কথা বললেও নিতান্তই গোবেচারা টাইপ মানুষ । এদের দৌড় ঐ বৈঠক করা পর্যন্তই আলোচনা সমালোচনা করা পর্যন্তই ।
৫। ট্রোল বানায় যারা - এরা হচ্ছে বাংলাদেশের হিডেন ট্যালেন্ট । যে কোন বিষয়ে এরা মজাদার ট্রোল বানাতে ওস্তাদ । আমরা খুব মজা নিয়ে সেসব ট্রোল দেখি, শেয়ার করি টাইম লাইনে কিংবা ইনবক্সে কিন্তু বেশীরভাগ সময়ে যে কিনা এই ট্রোলটা বানিয়েছে তার পরিচয় জানিনা । এরা ফ্রি একদম বিনা পয়সায় আমদের বিনোদন দিয়ে যায় আর কখনও কখনও কাউকে খোঁচা ।
৬। বেশি সিরিয়াস লোক - এরা অতিমাত্রায় সিরিয়াস । দেখা গেলো কোন ইস্যু সম্পর্কিত কথাবার্তায় কারও সাথে তাদের মতের মিল হলোনা তখন এক কথা দুই কথায় ওমনি হাতাহাতি থেকে মারামারি পর্যন্ত লেগে যেতে পারে । এসব লোক থেকে সাবধান ।
৭। বিপরীত পন্থী - এরা মনে হয় সোজা পথে হাটতে পারেননা । যে কোন ঘটনায় এরা ভিক্টিম যিনি তার দোষ খুজে বের করবেন সবার আগে । ধরুন একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো তখন এই টাইপ লোকজন সবার আগে বলবে সেই মেয়ের পোশাক তার ধর্ষণের জন্য দায়ী, কিংবা সে যে যায়গা দিয়ে বাড়ী ফিরছিল সেখান দিয়ে কেন গিয়েছিলো কিংবা কোন সড়ক দুর্ঘটনায় কোন পথচারী মারা গেল তারা বলবে নিশ্চয় সেই লোক ফুটপাত দিয়ে না হেটে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটছিলো নিশ্চয় ।
৮। বিশ্লেষণধর্মী - এরা খুবই জ্ঞানী মানুষ । এদের জ্ঞান আমার আপনার চাইতে কয়েকগুন বেশী । যে কোন ঘটনা ঘটুক তাঁরা সেটিকে এমনভাবে বিশ্লেষণ করবেন যার সাথে ঘটনা ঘটেছে তিনি নিজেও হয়তো বিষয়গুলো জানেন না । ওটা আসলে অমন না, বিষয়টি তেমন হয়তো কিংবা যে যাই বলুক আসল বিষয়টি হচ্ছে------------------।
৯। আন্দোলনকারী- এরা সাংঘাতিক তবে সমাজ কিংবা দেশের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ মানুষ । যে কোন সিরিয়াস ইস্যু হলে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড আরও কত কি নিয়ে আন্দোলনে নেমে যাবেন । কখনো হয়তো সে আন্দোলন সফল হয় নিয়ে আসে ভালো কিছু কিংবা কখনো না ।
১০। মজা লুটে নেওয়া শ্রেণী - কিছু মানুষ আছে যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নন । ঘটনার প্রতি আগ্রহীও নন । সমস্যা সমাধানে পারদর্শী নন তবে যখন ঘটনা ঘটে হই হুল্লোড় কিংবা মারামারি হাতাহাতি করে তিল কে তাল বানিয়ে তারপর উধাও । ঘটনার প্রেক্ষিতে মারামারি একটু দাঙ্গা হাঙ্গামা করে মজা লুটে নেওয়াতেই তাঁদের মজা ।
উপরের দশটি শ্রেণী নিতান্তই আমার খামখেয়ালী মনে চিন্তা ভাবনা করে বের করা । আর কিছু খুজে পাচ্ছিনা আপাতত । কেউ আরও কিছু পেলে অবশ্যই জানাবেন । আর কে কোন শ্রেণীতে পরেছেন সেটাও জানাতে পারেন
শান্তি! শান্তির মা নাকি মরে গিয়েছে । তবে আমার মনে হয় আমাদের দেশে শান্তির মা এর জন্মই হয় নাই । আজ এই ঘটনা তো কাল সেই দুর্ঘটনা । আতঙ্কিত লাগে এখন শুধুই কখন কি শুনি বা দেখি । আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে ভালো রাখুন ।
তবে এতো অশান্তির মাঝেও এটা অনেক বড় শান্তি এখন আর অপেরা মিনি দিয়ে চোরের মত সিঁধ কেটে ব্লগে লগ ইন করতে হয়না । আসলেই কেমন যেন চোর চোর লাগতো নিজেকে । যেন কেউ দরজা আটকে দিয়েছে তারপর চোরের মত এটা করে ওটা করে তাঁর ঘরে প্রবেশ । কত কসরত করে তারপর ব্লগে লগ ইন । উফ কখনো মাত্র ৬ জন ৭ জন অনলাইনে দেখেছি মনে হয়েছে আমাদের প্রিয় ব্লগ অসহায়ের মত পরে আছে
অবশেষে আমাদের ব্লগ দুর্ঘটনার সমাপ্তি ঘটেছে । এখন আমরা মুক্ত এখন আমরা মন চাইলেই ব্লগে আসতে পারি এবং তাও চোরের মত সিঁধ কেটে নয় বরং বুক ফুলিয়ে মহানন্দে । আর আমাদের ব্লগপারাও আগের মত সরগরম।
ব্লগের আলোকিত দিনে সবাইকে অভিনন্দন কথার ফুলঝুরির পক্ষ থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৮