৫ মাস আগে যখন গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ শিখছিলাম তখন হোম ওয়ার্ক এর অংশ হিসেবে এই ছবিটি করেছিলাম। কাজ করতে করতেই হঠাৎ আউডিয়াটা আসে মাথায় ।
ব্যক্তিগত ভাবে খাঁচায় পশু পাখি পোষা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে কারন ওদেরও একটা আলাদা পৃথিবী আছে । মানুষের মত ওদেরও ওদের জায়গায়ই থাকার কথা । কিন্তু আমরা মানুষ আমাদের নিজেদের মনোরঞ্জন আর শখ পূরণ করার জন্য অথবা কিছু অর্থ উপার্জন করার জন্য ওদেরকে খাঁচায় বন্দী করি । ওদের খাঁচার ভেতরে যত ভালো ভালো খাবার আর যতকিছু দেইনা কেন ওরা কি তাতে খুশী হয় ? ওরা কি ওখানে ভালো থাকে ? থাকেনা ।
আমাদের মানুষকে যদি এমন খাঁচায় বন্দী করে অনেক ভালো ভালো কাপড়, খাবার, আরও অনেক কিছু দেওয়া হয়, কোন কাজ করা লাগবেনা অথচ ৫ টি মৌলিক চাহিদার সব পেয়ে যাচ্ছি ওই একটি খাঁচার ভেতরেই, তারপরেও কি থাকতে পারবো আমরা ? অসম্ভব । আমাদের যেমন লাগবে ওদেরও তেমনই লাগে খাঁচার ভেতরে । তাই আমরা মানুষরা যেন পশু পাখিদের প্রতি নির্মম না হই এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই ছবিটা বানানো ।
কাল হঠাৎ এই ছবিটির কথা মনে পরে আর অবাক হই খুব। ৫ মাস আগের করা এই ছবি আজ বাস্তব। আমরা মানুষরাই খাঁচায় বন্দী হয়ে গেলাম আর পশুপাখিরা মুক্ত । কি অসহায় আমরা এখন, ছাঁদে গিয়ে, বারান্দায় গিয়ে, কিংবা জানালার গ্রিল দিয়ে বাইরে দেখছি অথচ বাইরে যেতে পারছিনা । কখনো কি ভেবেছিলাম মানুষ হয়ে জন্মে ক্ষমতার দাপটে অসহায় পশু পাখিদের খাঁচায় বন্দী করা আমরা নিজেরাই একদিন খাঁচায় বন্দী হয় যাবো ।
যাদের বাসায় এখন খাঁচায় পাখি, একুরিয়ামে মাছ আছে কিংবা অন্য কোন পশু পাখি আছে বন্দী, আপনার আর আপনার বাসার সেই বন্দীর সাথে কিন্তু এখন আর কোন পার্থক্য নেই । আপনি তাঁর চোখে চোখ রাখতে পারছেন তো ? নাকি এখনও অনুধাবন হয়নি কিছু ?
একটি ভিডিও দেখলাম কক্সবাজার সমুদ্র তে ডলফিন ঘুরে বেড়াচ্ছে । কি নিশ্চিন্ত ওরা এখন । আমরা নিষ্ঠুর মানুষরা যে খাঁচায় বন্দী । আর কিছুদিন আমরা বন্দী থাকলে হয়তো দেশ বিদেশের ছোট বড় বন জঙ্গলের পশু পাখিরাও বাইরে চলে আসবে আমাদেরকে সমবেদনা জানাতে অথবা উপহাস করতে।
এ পৃথিবীটা শুধুমাত্র মানুষের বসবাসের জন্য নয়। আমরা পৃথিবীকে নিজেদের বসবাসের যোগ্য করেছি কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য জীবের জন্য করেছি অযোগ্য । পশু পাখিরা আমাদের সাথে কথা বলতে পারেনা কিন্তু আল্লাহ তো দেখেন তাঁদের কষ্ট তিনি শোনেন সবার কথাই ।
তাই বুঝি সময়ের এই পরিনতি।
থাকি না হয় কয়দিন বন্দী হয়ে আর ওরা বাঁচুক, উপভোগ করুক জীবনকে । হেসে খেলে বেড়াক । আনন্দময় হোক ওদের পৃথিবীও ।
হোম কোয়ারেন্টাইনে্র সময়ে সবাই সময় কাটানোর জন্য অনেক কিছু করছি, সময় পেয়ে অনেকে নতুন কিছু শিখছি, নামাজ রোজা আর আল্লাহকে স্মরণ করার মাধ্যমে নিজেকে শুদ্ধ করছি তবে কিছু সময় যেন আমরা ভাবিও ।
মৃত্যু অবধারিত, সেটা করোনাতে হোক আর যেভাবে হোক তবে সব কিছুর পেছনে আল্লাহ্র এর একটি উদ্দেশ্য থাকে । আমাদের তাঁর উদ্দেশ্য বোঝার দরকার নেই আমরা শুধু অনুধাবন করার চেষ্টা করি নিজেদের ভুলগুলো আর অন্যায়গুলো এবং ক্ষমা চাই আল্লাহর কাছে । ইনশাআল্লাহ্ তিনি সব ঠিক করে দিবেন।
তবে আমি নিশ্চিত, একসময় যখন আল্লাহ্র রহমতে সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্, তখন আমরা এখনকার সব ভুলে যাবো আবার হয়ে যাবো দস্যু। তাই যদি হয় তাহলে আমরা যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করে যাই আবার বহু বছর পরে এমন কোন মহামারীর জন্য।
এবার আসি পোষ্ট এর শিরোনামের কথায় তা না হলে আবার শিরোনামের সাথে অপ্রাসঙ্গিক লেখার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে যেতে পারি যেটা বলছিলাম
হোম কোয়ারেন্টাইন - সবচেয়ে লাভবান কারা ।
এইযে বাইরের সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে ঠায় ঘরের ভেতরে বসে আছে সবাই, অনেকে পরিপূর্ণ অবসর সময় কাটাচ্ছেন আবার অনেকে বাসায় বসেই অফিসের কাজ কর্ম করছেন তবে এসবের মধ্যেই যারা আছেন লেখক সমাজ, ব্লগ কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে লেখালেখি করেন তাদের জন্য মোক্ষম সময় সুযোগ লুফে নেওয়ার ব্যস্ততাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই সুযোগে এই অবসর সময় টুকুকে কাজে লাগিয়ে নিজের লেখার জগতটাকে আরও প্রসিদ্ধ করি । অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এই সময়গুলোতে বেশী বেশী পড়ি আর লিখি ।
প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও অনেক লেখক অনেক লেখা হারিয়ে যায় শুধুমাত্র জীবন জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে । কারন লেখার জন্য প্রয়োজন সময় যেটা আসলে হয়ে উঠেনা অনেকের । তাই হোম কোয়ারেন্টাইন এর এই সময়গুলোতে আমরা লিখি, আমাদের ড্রাফট এ অনাদরে পরে থাকা লেখাগুলোকে পূর্ণতা দেই, প্রসিদ্ধ করি আমাদের সামু পারা কে ভালো ভালো লেখা দিয়ে।
এখন আগেরমত ব্লগে আসা হয়না, গত কয়েকদিনও আসিনি তেমন তাই বলতে পারবোনা সুযোগ আমরা লুফে নিয়েছি কিনা যদিও আমি নিজেও লিখছিনা কারন এই অবস্থায় আসলে মনে শঙ্কা নিয়ে লেখায় মন বসেনা তবে হোম কোয়ারেন্টাইন এ না থাকলে আজকের লেখাটিও যে লিখতাম না এটাও সত্যি। হয়তো আজকের পর থেকে আরও কিছু লেখা লিখতেও পারি ।
যে কোন সময় মৃত্যু আসতে পারে এই জেনেও আমরা জীবনকে নিয়েই থাকি । তাঁই আল্লাহ কে স্মরণ করি সবসময় । বিপদ মুক্তির জন্য দোয়া ও ক্ষমা চাই আর পাশে পাশে চালিয়ে যাই জীবনের আয়োজন, চালিয়ে যাই লেখা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২০