somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন ছুটি হবে (ছোট গল্প)

০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টং টং টং টং টং টং ঘণ্টা বেজেই চলেছে
শিশির এর চোখ তন্দ্রাচ্ছন্ন । মাত্র বিছানায় গা টা এলিয়ে দিয়েছে । মা এসেছিলো দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে কিন্ত সে বললো রাতে ঘুমুতে পারেনি একটূ ঘুমিয়ে নিক তারপর খাবে ।
রাতে এক ফোটাও ঘুম হচ্ছেনা । ল্যাপটপ নিয়ে শুয়ে বসে এটা ওটা করতে করতে কখন যে ভোর হয়ে যায় তারপরও ঘুম আসেনা । ভোরের দিকে ঘুমুতে গেলেও এক ঘণ্টা পর পর ঘুম ভাঙ্গে তারপর দুপুরের দিকে উঠে বিছানা ছাড়ে । আবার সেই মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ গুঁতোগুঁতি । এভাবেই চলছে গত দুই মাস।
একটু ঘুম ঘুম লাগায় শিশির সুযোগ টা হারাতে চাইলোনা । ঘণ্টার আওয়াজ অবজ্ঞা করে চেষ্টা করছে আরও ঘুমে তলিয়ে যেতে । কিন্তু ঘণ্টা যে বেজেই চলেছে বেজেই চলেছে । সেইযে স্কুল এ থাকতে ঘণ্টার আওয়াজ শুনেছে তারপর তো আর শুনতে পায়নি সেই শব্দ । ওদের এলাকায়ও তো কোন স্কুল নেই তাহলে কিসের ঘণ্টা বাজছে । শিশির খুবই বিরক্ত হচ্ছে । ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে যে ঘণ্টা বাজাচ্ছে তাঁকে ইচ্ছে মত গালিগালাজ করে আসে । কিন্তু সে কোনভাবেই ঘুমটা নষ্ট করতে চাচ্ছে না । ওপাশ ঘুরে সে কানের উপর বালিশ দিয়ে দিলো । তারপরও কানে আসছে টং টং টং টং টং । মনে হচ্ছে মাথার ভেতর কেউ হাতুড়ী পেটাচ্ছে ।
আবার ওপাশ ঘুরে ফুল সাউন্ডে গান ছেড়ে দিয়ে দুই কানে এয়ার ফোন গুজে দিলো । এখনও সেই শব্দ টং টং টং টং টং
এবার সে আর থাকতেই পারলোনা । তাঁকে এই অসহ্য ঘণ্টার আওয়াজ বন্ধ করতেই হবে। ঘরের বাইরে এসে দেখলো বাসায় কেউ নেই সদর দরজাও খোলা । কি ব্যাপার সবাই কই গেলো । এই লকডাউনের সময়ে কারও তো বাইরে যাওয়ার কথা না । সে দরজা খুলে বাইরে বের হল । সিঁড়ি দিয়ে নামছে । কিন্তু ঘণ্টা বেজেই যাচ্ছে এখনও ।
নিচের গেট দিয়ে বাইরে বের হতেই পশ্চিমে হেলে যাওয়া সূর্যের আলো এসে চোখে লাগলো শিশিরের । আর ওমনি যেন চোখ জ্বালা করে উঠলো ।
পাঁচতলা বাসার তিন তালায় থাকে ওরা । বাসাটা পেছন দিকে হওয়ায় সূর্যের আলো আসেনা আর এই দুইমাস বন্দী থাকা অবস্থায়ও বাড়ী ওয়ালার কাছে থেকে ছাঁদে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়নি ।
শিশিরের মন চাইলো কিছুক্ষণ সূর্যের আলো গায়ে লাগুক কিন্তু ঘণ্টা যে তখনও বেজেই চলেছে । সবার আগে এই ঘণ্টার আওয়াজ থামাতে হবে ।
একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো অনেকগুলো মানুষ জড়ো হয়ে আছে সামনে । পুরুষরা অনেকে একে অপরের সাথে কোলা কুলি করছে আর মহিলারাও একে অপরের সাথে খুব হেসে আনন্দ নিয়ে কথা বলছে । আজকে তো ঈদ না তাহলে কেন সবাই এতো খুশী । আরও একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলো একটা ১০ কি ১১ বছরের বাচ্চা একটু উচু একটা জায়গায় দাড়িয়ে ঘণ্টা বাজাচ্ছে । শিশির কে দেখেই বাচ্চাটা ঘণ্টা বাজানো থামিয়ে দিলো । শিশির ভাবলো কাউকে জিগ্যেস করে কি হচ্ছে । কিন্তু জিগ্যেস করলোনা ।
থাক হবে কিছু একটা । ঘণ্টার বিরক্তিকর শব্দ যে থেমেছে এতেই সে খুশী ।
মনেতে শান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো সে । এবার যদি ভাঙা ঘুমটা পুরো করা যায় ।
বাড়ি ফিরেই দেখলো বাবা মা আর বড় আপা খুব হাসি হাসি চেহারা নিয়ে খবর দেখছে । শিশির টিভির পর্দায় চোখ রাখতেই দেখলো খবরের শিরোনাম - "অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও গত ১৫ দিনে নতুন কোন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে করোনা মুক্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন ও সবাইকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে বলেছেন"
ওমনি শিশির এক দৌড় দিলো ঘরের বাইরে । বাবা জিগ্যেস করলো কই যাচ্ছিস তুই ।
আকাশ দেখবো বাবা, নিঃশ্বাস নেবো সূর্যস্নানে আর ঘণ্টা বাজাবো ।
-------------
এবার ঘরের দরজায় টোকা পরছে একের পর এক । শিশির ঘড়ি দেখলো সন্ধ্যা ৬ টা বাজে । মা ডাকছে, কিরে ভাত খাবিনা? উঠ। ধুম করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলি । সন্ধ্যা হয়ে গেলো যে ।
দরজা খুলে দিয়ে শিশির মা কে জিগ্যেস করলো , মা, তুমি কি কোন ঘণ্টার আওয়াজ শুনেছো ?
কই না তো । কি বলছিস আবোল তাবোল । এই লকডাউন এর সময়ে ঘণ্টার আওয়াজ কই থেকে শুনবো ? যেতে যেতে মা বললো, এখন শুধু সারাক্ষণ করোনা সংবাদ শুনি আর অপেক্ষা করি কবে শুনবো পৃথিবীর আর কোথাও কোন করোনা ভাইরাস নেই ।
শিশির মন খারাপ করে খাটে গিয়ে বসলো ।
পাশের রুম থেকে গানের আওয়াজ আসছে
"একদিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো
নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশীতে হারাবো"
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×