ফেসবুক আসলে একটা অদ্ভুত জিনিস । এর ভালোরও অনেক রকম আবার ফেসবুকে তামাশারও শেষ নেই । অন্যান্য সময়ে তো লেগেই থাকে তবে এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে যেন এইসব তামাশা আরও বেড়ে গিয়েছে । এ ওইটা করে তাঁর দেখাদেখি আরেকজনও করে । এ ওরে চ্যালেঞ্জ দেয় আরও কত কি । যাক, এই সময়ে নিচের কিছু ফেসবুক তামাশা, যা চলছে যারা ফেসবুক ব্যাবহার করেন তাঁরা ভালো বুঝবেন
(তামাশা নং ১) স্বামীর চুল কেটে দেওয়া ও ফেসবুকে পোষ্ট
রুবেলের ফোন বাজছে । স্ক্রিনে দেখলো জেসি ।
হ্যালো । কি অবস্থা ?
কইগো তুমি ? ওহ আচ্ছা, কই আর থাকবে বাসায়ই তো আছো
(অন্যান্য সময়ে বয়ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে সবার আগেই যে কথাটা জিগ্যেস করা হতো এখন সেই কথাটাই অনর্থক )
হ্যাঁ মুভি দেখছিলাম ।
তুমি কি করছো ?
কিছু করছিনা । আমার মন খারাপ ।
কেন কি হয়েছে ?
তোমাকে বললাম এতো গোছগাছ করার দরকার নেই চল এবার বিয়েটা করেই ফেলি । না। কে শোনে কার কথা '
ও আচ্ছা এই জন্য মন খারাপ । অবশ্য হ্যাঁ তখন বিয়েটা করে ফেললে এই হোম কোয়ারেন্টাইনের সময়ে তোমাকে বেশী পাশে পেতাম । যাহ ভুল হয়ে গেলো ।
হুম। বেশীক্ষণ পাশে পেতাম না ছাই । বাসায় থেকে থেকে আমাকে জ্বালাতে । কিন্তু আমার মন খারাপ অন্য কারনে ।
কি হয়েছে বলোতো।
আমার অনেক বান্ধবী ও কাজিনরা যার যার বরের চুল কেটে দিচ্ছে ও ফেসবুকে ছবি দিচ্ছে ।
তো তাতে কি হয়েছে? এটা নিয়ে মন খারাপ করার কি হলো ?
তো ? মন খারাপ করবোনা ? আজকে একটা জামাই নেই বলে আমিও ওদের মত জামাইর চুল কেটে দিতে পারছিনা ফেসবুকেও দিতে পারছিনা
রুবেল -
---------------------------
(তামাশা নং ২) - ডালগুনা কফি
মা, কফি খাবো (মলির ১১ বছরের বাচ্চা বলছে)
ঠিক আছে বাবা। সন্ধার দিকে বানিয়ে দিবো ।
না মা। সবসময় যে কফি বানাও সেটা না । আজকে ডালগুনা কফি খাবো ।
মলি বললো ডালগুনা কফি ? সেটা আবার কি ? ডাল দিয়ে আবার কফি বানায় নাকি ?
মাআআ তুমি দেখি কিচ্ছু জানো না । আমার বন্ধুর মা বানিয়েছে ডালগুনা কফি । এখন সবাই ওটাই বানাচ্ছে আর ফেসবুকে দিচ্ছে । ওর মা এর টা নাকি খুব ভালো হয়েছিলো । আমার মা বানায়নি তাই ও খুব ভাবও নিলো ।
ও আচ্ছা। তা আমাকে এখন কি করতে হবে?
কি করতে হবে আবার । ডালগুনা কফি বানাতে হবে ।
মলি -
-------------------------------------------------
(তামাশা নং ৩)- বড়োলোকের বেটি গানের জ্যাকলিনের মত সাঁজ
কলিং বেল বাজছে । কি ব্যাপার এই সময়ে কে এলো আবার।
দরজা খুলে দেখলো রুমি দাড়িয়ে আছে। মলির খালাতো বোন।
কিরে রুমি তুই ? সব ঠিক আছে তো । বাসা থেকে বের হয়েছিস কেন ?
আপা বেশীক্ষণ বসবোনা একটা কাজে এসেছি ।
কি কাজ যে এই লকডাউন এর সময়েও তোর বাইরে বের হতে হলো ?
ঐযে আপা গত পহেলা বৈশাখে তুমি একটা শাড়ি কিনেছিলে সাদা কাতানে লাল পাড় দেওয়া । ওই শাড়িটা লাগবে আমার আর গলার একটা সেট ।
হ্যাঁ লাগবে তো নিবি কিন্তু এবার তো পহেলা বৈশাখ বাইরে যাওয়া যাচ্ছেনা ওইটা নিয়ে কি করবি তুই এখন ?
আমার বান্ধবী চ্যালেঞ্জ দিয়েছে বড়লোকের বেটি গানের জ্যাকলিনের মত করে সাজার জন্য। ও ওর চ্যালেঞ্জ কমপ্লিট করে ফেলেছে । একদম জ্যাকলিন ও ফেল আপা ।
যাক আপা এসব কথা পরে ফোনে বলবো । এখন শাড়ি আর গলার সেট টা দাও । আমি চলে যাই তাড়াতাড়ি । রাস্তায় আবার আর্মি ধরলে বিপদ।
মলি -
---------------------------------
(তামাশা নং ৪) - ভালো ভালো খাবার রান্না করে ফেসবুকে পোষ্ট
হ্যাঁলো আম্মা কেমন আছেন ? শরীর টা ভালো ?
হ্যাঁ বৌমা আছে কোনোরকম । তা তোমরা ঠিকঠাক আছতো? বাসায় বাজার সদাই আছে তো নাকি শেষ হয়ে গিয়েছে ? আমার ছেলেটাকে ভালো মন্দ খেতে দিচ্ছ তো ?
হ্যাঁ মা কোন চিন্তা করবেন না । বাসায় বাজার ও আছে আর আমরা ভালো মন্দ সবই খাচ্ছি ।
কই ফেসবুকে তো কোন ছবি টবি দেখছিনা তোমার রান্না করা খাবারের । ও বাড়ীর বউ দেখছি প্রতিদিনই এটা ওটা রান্না করে আবার কি সুন্দর ছবিও দিচ্ছে । তা তোমার তো ওমন কিছু দেখছিনা তাই ভাবলাম তোমরা কি খাচ্ছ না খাচ্ছ ।
------------------------------------
(তামাশা নং ৫)- হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে কার সাথে কি করবে
অনেকদিন পর বান্ধবী কে ফোন দেওয়া
কিরে কেমন আছিস দোস্ত ?
এইতো দোস্ত আছি কোন রকম ।
কি করছিলি?
তেমন কিছুনা ফেসবুকিং এই আরকি ।
ওহ । রিমির সাথে কথা হল কাল ।
আমি ফোন দিয়েছিলাম আজ । রিসিভ করেনি ।
ওহ। মনে হয় বিজি ছিল । পরে ব্যাক করবে ।
নারে দোস্ত । ও ইচ্ছে করে ধরেনি ফোন । রাগ করেছে আমার সাথে ।
কেন রে কি হলো তোদের ?
গতকাল ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছিলাম কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে কার সাথে আগে দেখা করবো, কার সাথে ব্রেকফাস্ট কার সাথে লাঞ্ছ এসব । ওখানে ওর নাম কেন দেইনি তাই ।
ওহ তা এতে রাগ করার কি আছে ?
ও বলছে আমি নাকি চিটিং করেছি । ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওর নাম নাকি আসার কথা ছিল সবার আগে কার সাথে দেখা করতে যাবো তাতে । আর ওর নাম দেইনি বলে ও নাকি অন্যদের কাছে ছোট হয়ে গিয়েছে ।
------------------------------
ঘটনা গুলো কাল্পনিক তবে তামাশা গুলো কিন্তু সত্যি
(এটা একটা ফান পোষ্ট । ফান হিসেবেই নিবেন প্লিজ। কাউকে ছোট করা বা জাজমেন্টাল টাইপ লেখা না । এই মুহূর্তে সবাই অনেক মানসিক সংকটে সময় পার করছি । কেউ যদি নামাজ রোজা কোরআন ও অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এসব করে মানসিক ভাবে ভালো থাকে স্ট্রেস ফ্রি থাকতে চায় তাতে দোষের কিছুনা । কোন না কোন ভাবে সারভাইভ তো করতে হবে । সেক্ষেত্রে একেকজনের তরীকা একেক রকম )
(অন্ধকারে খোঁজো আলো থাকতে যদি চাও ভালো - আজকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে । বিষয়টি একদিক দিয়ে চিন্তার তবে অন্যদিক দিয়ে ভাবলে যত বেশী রোগী শনাক্ত করে তাঁদেরকে আইসোলেশনে রাখা যাবে ততই অন্যদের নিরাপদ রাখা যাবে । রোগী কম শনাক্ত হয়ে ঘুরে বেরিয়ে অন্যদের আক্রান্ত করার চাইতে তাঁরা শনাক্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে অন্যদের নিরাপদ রাখাটা বেটার না ? দোয়া করি আক্রান্তরা সব শনাক্ত হোক, শনাক্তরা সুস্থ হোক, মৃত্যুর হার কম হোক এবং ধীরে ধীরে শনাক্তের সংখ্যা শুন্য হোক । আল্লাহ্ ভরসা )
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৩