বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা!
আমাদের এলাকায় খুব বিত্তশালী একজন বৃদ্ধ ছিলেন। তার জমির পরিমান ছিল প্রায় শত বিঘার মত। তার বাড়িটাও ছিল পুরো এক বিঘা জায়গা নিয়ে। বাড়ির সামনে পিছনে ছিল পুকুর, সেখানে মাছ চাষ করা হতো! বাড়ির পিছনে সুপারি বাগান, লিচু বাগান, আম বাগান থাকলেও তার মনে কোন শান্তি ছিল না। কারণ তিনি তার দুই ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে পারেন নি। বড় ছেলে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভিড়ে চাঁদাবাজ মাস্তান হয়েছে। আর ছোট ছেলে জুয়া খেলে বাপের অর্থবিত্ত উড়াতে শুরু করেছে। বড় ছেলেটা একটু বেশিই দুষ্টু ছিল। যার কারণে স্থানীয় লোকজন তার উপর খুবই বিরক্ত ছিল। তাই একদিন এলাকার কিছু মানুষ এ্যাকসিডেন্টের একটি নাটক সাজিয়ে তার পায়ের উপর ট্টাকের চাকা উঠিয়ে দেয়! আর সেই এ্যাকসিডেন্টের কারণে বড় ছেলেকে ডান ‘পা’ পুরোটা কেটে ফেলতে হয়। ছেলেদের এহেন কর্মে বৃদ্ধ পিতা তাদের প্রতি আত্নঃবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করলেন, উনি মারা গেলে ওনার ছেলেরা টাকা খরচ করে কুলখানি(ফতেহা) করবেন না। তাই তিনি বেঁচে থাকা অবস্থাতেই কুলখানি করে যেতে চান। বিষয়টা আপাতো দৃষ্টিতে হাস্যকর লাগলেও তিনি সত্যি সত্যি বেঁচে থাকা অবস্থাতেই কুলখানি করে গেছেন। আর তিনি মারা যাবার পর দেখা যায়, তার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি ওয়াকফ করে গেছেন। তার ছেলেরা সম্পদ ভোগ করতে পারবেন কিন্তু কখনও বিক্রি করতে পারবেন না।
গতকাল আওয়ামিলীগের ৫ জানুয়ারীতে সমাবেশ করা দেখে আমার মনে হল, আওয়ামিলীগ যেন সেই বৃদ্ধের ন্যায় মরার আগেই ‘কুলখানি’ অনুষ্ঠান করলেন(!) কারণ আওয়ামিলীগ কিংবা সরকার প্রধান নিজেও জানেন, একবার গদি হাত ছাড়া হলেই তাদের মৃত্যু অনিবার্য। তখন হয়তো নেতা কর্মীরাদের তাদের কুলখানি অনুষ্ঠানও পালন করার জন্য খুজেই পাওয়া যাবে না। কারণ আজও কোন কোন এলাকায় সররকার দলের নেতারা পুলিশ প্রহারা ছাড়া চলতে পারেন না। তাই সেই সংশয় থেকে মৃত্যুর আগেই বিবিএভিনিউ এ কুলখানি অনুষ্ঠান করলেন সরকারদলীয় নেতা কর্মীরা!
মৃত্যুর আগেই কাফনের কাপড়সহ কবরের জায়গাও সুনিশ্চিত করে ফেলেছে বর্তমান সরকার। যার উদাহারণ, ঢাকা সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন। এ দুটি নির্বাচনেও মানুষ স্বাধীন ভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নি। সিটি নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে পুলিশরাই বলেছে, সরকার দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে আসলে ভোট দেন। না হলে চলে যান। এই হল আমাদের গণতন্ত্রের মানসকন্যার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা! আর পৌরসভা নির্বাচনের আগে তো নির্বাচন কমিশনার নিজেই বললেন, সংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীরা বেশিক্ষন ভোট কেন্দ্রে থাকবেন না। সবচেয়ে মজার বিষয় সরকারী মদদ এবং বিজ্ঞাপনপুষ্ট চ্যানেল এটিএন বাংলার বার্তা প্রধান তার ক্যামেরাম্যান সহ রাজশাহীর একটি ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সরকারের ভয়! যদি ভুল করেও ভোট কেন্দ্রের ভিতরের চিত্র বাহিরে প্রকাশ হয়(!) কিন্তু সত্য কি চাপা থাকে!
আর সিটি নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বানি কি মুন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কে ফোন দিয়েছিলন। “হাসিনাকে মুনের ফোন : তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। তিনি জানিয়েছেন সিটি নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য সংস্থার সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ফোনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী মানবজমিনকে জানান, শুক্রবার বেলা ১টা ৪৮ মিনিটে বান কি মুন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে প্রায় ১৪ মিনিট কথা বলেন।” আর পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা ঘটছে। সহিংসতা দিন দিন বাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে আমরা সংশয়ের মধ্যে আছি।’ সরকারী মদদপু্ষ্ঠ মিডিয়াগুলোতেই মানুষ দেখেছে ভোট কেন্দ্রের কি করুন চিত্র!
গতকাল তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বললেন, “সংবিধান রক্ষার্থেই গত বছরের ৫ জানুয়ারী বিনা ভোটে ১৫৩ জন সংসদ সদস্যকে জয়ী করে সরকার গঠন করা হয়েছে”। তাহলে প্রশ্ন হল, মানুষের প্রয়োজনে সংবিধান নাকি সংবিধানের প্রয়োজনে মানুষ? মানুষের প্রয়োজনেই যদি সংবিধান হয়ে থাকবে, তাহলে ভোটের অধিকার নিশ্চিত না করে কি জন্য সংবিধান রক্ষার দোহাই দেয়া হচ্ছে?
দেশ প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ‘বিপন্ন গণতন্ত্র’ নামে একটি বই লিখেছেন। যিনি গণতন্ত্রকে এতোট বিশ্বাস করেন, তার দ্বারাই যে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে তা হয়তো তিনি নিজেও ভাবেন নি! তারই বা দোষ কি! গ্রামের ভাষায় একটা কথা আছে, “ পেটের আর দোষ কি ভাই, জিহব্বায় চায় সে জন্যে খাই! আর ভুড়ি খালি সামনের দিকে আগায়”! তেমনি করে হাসিনাও হয়তো বলবেন, চিন্তাধারার আর দোষ কি ভাই! মনটা ক্ষমতা চায় তাই গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে হলেও ক্ষমতাতেই থাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯