somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর আগেই ‘কুলখানি’ অনুষ্ঠান পালন করল আওয়ামিলীগ (!)

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা!
আমাদের এলাকায় খুব বিত্তশালী একজন বৃদ্ধ ছিলেন। তার জমির পরিমান ছিল প্রায় শত বিঘার মত। তার বাড়িটাও ছিল পুরো এক বিঘা জায়গা নিয়ে। বাড়ির সামনে পিছনে ছিল পুকুর, সেখানে মাছ চাষ করা হতো! বাড়ির পিছনে সুপারি বাগান, লিচু বাগান, আম বাগান থাকলেও তার মনে কোন শান্তি ছিল না। কারণ তিনি তার দুই ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে পারেন নি। বড় ছেলে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভিড়ে চাঁদাবাজ মাস্তান হয়েছে। আর ছোট ছেলে জুয়া খেলে বাপের অর্থবিত্ত উড়াতে শুরু করেছে। বড় ছেলেটা একটু বেশিই দুষ্টু ছিল। যার কারণে স্থানীয় লোকজন তার উপর ‍খুবই বিরক্ত ছিল। তাই একদিন এলাকার কিছু মানুষ এ্যাকসিডেন্টের একটি নাটক সাজিয়ে তার পায়ের উপর ট্টাকের চাকা উঠিয়ে দেয়! আর সেই এ্যাকসিডেন্টের কারণে বড় ছেলেকে ডান ‘পা’ পুরোটা কেটে ফেলতে হয়। ছেলেদের এহেন কর্মে বৃদ্ধ পিতা তাদের প্রতি আত্নঃবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করলেন, উনি মারা গেলে ওনার ছেলেরা টাকা খরচ করে কুলখানি(ফতেহা) করবেন না। তাই তিনি বেঁচে থাকা অবস্থাতেই কুলখানি করে যেতে চান। বিষয়টা আপাতো দৃষ্টিতে হাস্যকর লাগলেও তিনি সত্যি সত্যি বেঁচে থাকা অবস্থাতেই কুলখানি করে গেছেন। আর তিনি মারা যাবার পর দেখা যায়, তার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি ওয়াকফ করে গেছেন। তার ছেলেরা সম্পদ ভোগ করতে পারবেন কিন্তু কখনও বিক্রি করতে পারবেন না।

গতকাল আওয়ামিলীগের ৫ জানুয়ারীতে সমাবেশ করা দেখে আমার মনে হল, আওয়ামিলীগ যেন সেই বৃদ্ধের ন্যায় মরার আগেই ‘কুলখানি’ অনুষ্ঠান করলেন(!) কারণ আওয়ামিলীগ কিংবা সরকার প্রধান নিজেও জানেন, একবার গদি হাত ছাড়া হলেই তাদের মৃত্যু অনিবার্য। তখন হয়তো নেতা কর্মীরাদের তাদের কুলখানি অনুষ্ঠানও পালন করার জন্য খুজেই পাওয়া যাবে না। কারণ আজও কোন কোন এলাকায় সররকার দলের নেতারা পুলিশ প্রহারা ছাড়া চলতে পারেন না। তাই সেই সংশয় থেকে মৃত্যুর আগেই বিবিএভিনিউ এ কুলখানি অনুষ্ঠান করলেন সরকারদলীয় নেতা কর্মীরা!

মৃত্যুর আগেই কাফনের কাপড়সহ কবরের জায়গাও সুনিশ্চিত করে ফেলেছে বর্তমান সরকার। যার ‍উদাহারণ, ঢাকা সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন। এ দুটি নির্বাচনেও মানুষ স্বাধীন ভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নি। সিটি নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে পুলিশরাই বলেছে, সরকার দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে আসলে ভোট দেন। না হলে চলে যান। এই হল আমাদের গণতন্ত্রের মানসকন্যার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা! আর পৌরসভা নির্বাচনের আগে তো নির্বাচন কমিশনার নিজেই বললেন, সংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীরা বেশিক্ষন ভোট কেন্দ্রে থাকবেন না। সবচেয়ে মজার বিষয় সরকারী মদদ এবং বিজ্ঞাপনপুষ্ট চ্যানেল এটিএন বাংলার বার্তা প্রধান তার ক্যামেরাম্যান সহ রাজশাহীর একটি ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সরকারের ভয়! যদি ভুল করেও ভোট কেন্দ্রের ভিতরের চিত্র বাহিরে প্রকাশ হয়(!) কিন্তু সত্য কি চাপা থাকে!

আর সিটি নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বানি কি ‍মুন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কে ফোন দিয়েছিলন। “হাসিনাকে মুনের ফোন : তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। তিনি জানিয়েছেন সিটি নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য সংস্থার সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ফোনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী মানবজমিনকে জানান, শুক্রবার বেলা ১টা ৪৮ মিনিটে বান কি মুন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে প্রায় ১৪ মিনিট কথা বলেন।” আর পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা ঘটছে। সহিংসতা দিন দিন বাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে আমরা সংশয়ের মধ্যে আছি।’ সরকারী মদদপু্ষ্ঠ মিডিয়াগুলোতেই মানুষ দেখেছে ভোট কেন্দ্রের কি করুন চিত্র!







গতকাল তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বললেন, “সংবিধান রক্ষার্থেই গত বছরের ৫ জানুয়ারী বিনা ভোটে ১৫৩ জন সংসদ সদস্যকে জয়ী করে সরকার গঠন করা হয়েছে”। তাহলে প্রশ্ন হল, মানুষের প্রয়োজনে সংবিধান নাকি সংবিধানের প্রয়োজনে মানুষ? মানুষের প্রয়োজনেই যদি সংবিধান হয়ে থাকবে, তাহলে ভোটের অধিকার নিশ্চিত না করে কি জন্য সংবিধান রক্ষার দোহাই দেয়া হচ্ছে?

দেশ প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ‘বিপন্ন গণতন্ত্র’ নামে একটি বই লিখেছেন। যিনি গণতন্ত্রকে এতোট বিশ্বাস করেন, তার দ্বারাই যে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে তা হয়তো তিনি নিজেও ভাবেন নি! তারই বা দোষ কি! গ্রামের ভাষায় একটা কথা আছে, “ পেটের আর দোষ কি ভাই, জিহব্বায় চায় সে জন্যে খাই! আর ভুড়ি খালি সামনের দিকে আগায়”! তেমনি করে হাসিনাও হয়তো বলবেন, চিন্তাধারার আর দোষ কি ভাই! মনটা ক্ষমতা চায় তাই গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে হলেও ক্ষমতাতেই থাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×