somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি দাড়াই যাবো, আপনি আমাকে বসায় দিবেন। লোকে দেখুক, আমাদের মাঝে কোন খাতির নাই।

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত এবং সমালোচিত ট্রাইবুনাল। এই ট্রাইবুনালের সঙে জড়িয়ে আছে স্কাইপ কেলেঙ্কারী। এই ট্রাইবুনালের সঙে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের আপামোর জনতার আবেগ অনুভূতি। সেই আবেগ অনুভূতিকে পুজিঁ করে আমরা আবার নিজেরে রাজনৈতিক স্বার্ধ হাসিল করছি না তো? এই প্রশ্নের উত্তর পুরো ব্লগ পড়লে আপনি নিজেই বলতে পারবেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আন্তজার্তিক ট্রাইবুনাল কে কম্বোডিয়ার ট্রাইবুনালের সঙে তুলনা করা হয়েছে। আমি ঠিক জানি না, এটা কি জেনে শুনে তুলনা করা হয়েছে নাকি বরাবরের মত হুছুকে বাঙালীর ন্যায় না জেনেই তুলনা করা হয়েছে। সে বিষয়ে জানতে হলে আমাদের কে কম্বোডিয়ার ইতিহাসের দিকে একবার চোখ বুলাতে হবে।

দীর্ঘ কয় এক দশকের গেরিলা অপারেশন, সশস্ত্র সংগ্রাম এবং আন্দোলনের পরে কমিউনিস্ট খেমাররুজ গেরিলারা ১৯৭৫ সালে কম্বোডিয়ার ক্ষমতা দখল করে। এই ক্ষমতা দখলের স্নায়ু যুদ্ধের সময়কার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আছে। ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের একটা অংশ হিসেবে, কম্বোডিয়াতেও মার্কিনীরা বোমা বর্ষণ করে, তাতে কয় এক লক্ষ কম্বোডিয়ান নিহত হয়। ফলে ক্ষুব্ধ কম্বোডিয়ানরা দলে দলে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেয়। যার শীর্ষ নেতা ছিল, প্যারিসে উচ্চ শিক্ষিত পলপট।

খেমাররুজ গেরিলাদের হাতে সরকার পতনের পরে, খেমাররুজরা মাওবাদের অত্যন্ত কঠোর একটা একটা ভার্শন চালু করে। তারা বলে, তারা এমন একটা সমাজ তৈরি করবে যেই খানে, কোন উঁচু নিচু থাকবেনা। ফলে, শহর অঞ্চলের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সহ সম্পূর্ণ শহুরে জনগণকে গ্রামে পাঠানো হয়। অর্থ ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত সম্পদ, ধর্ম, স্কুল, কালচার সব কিছুকেই তারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। প্রতিটা নাগরিককে, সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কৃষি উৎপাদনের টার্গেট দেয়া হয়।

কৃষি ভিত্তিক সমাজতন্ত্রের সাথে চরমপন্থি খেমার জাতীয়তাবাদীর মিশ্রণ ঘটায়। তারা বিশ্বাস করত,খেমার জাতি এশিয়ানদের মধ্যে সব চেয়ে উন্নত। তাছাড়া কম্বোডিয়া ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ভিয়েতনামি এবং চাইনিজ দখলদারিত্বের ভেতরে ছিল, ফলে কম্বোডিয়ান জাতি একটা অস্তিত্বের সংকটে আছে-এই ধারনাটা তারা সব সময় প্রচার করত। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ এই চার বছরে, খেমারুজ গেরিলারা কম্বোডিয়াতে কৃষি ভিত্তিক সমাজ তন্ত্র প্রতিষ্ঠার নাম পুরো দেশে একটা ব্যাপক দমন অভিযান চালায় এবং শহরের অধিবাসীদেরকে জোর করে গ্রামে স্থানান্তর করে। সকলকে একটা কাল কাপড় পরতে বাধ্য করা হয়। এই পুরো সময়ে চার বছরে প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ মারা যায় যাদের অনেকেকেই বিভিন্ন শহরে গণহত্যা করা হয় , বিভিন্ন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বা লেবার ক্যাম্পে জোর করে কাজ করা এবং না খাইয়ে মারা হয়। ২১A নামের একটা জেল খানায় ১৪০০০ বন্দিদের মধ্যে মাত্র ৭ জন জীবিত ফিরে আসে। এই সময়ে কম্বোডিয়ার ২৫% জনগণ মারা যায় এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ২০,০০০ গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে এবং নিয়মিত হচ্ছে। এই সময়ে কম্বোডিয়া কম্পুচিয়া নাম পরিচিত ছিল। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের সামরিক বাহিনী কম্বোডিয়া আক্রমণ করে, খেমাররুজদের পরাজিত করে এবং ছায়া সরকার স্থাপন করে। এবং তারা নিজেরাও ১০ বছর কম্বোডিয়াতে দখল বজায় রাখে, এবং ১৯৮৯ সালে কম্বোডিয়া থেকে তারা সৈন্য সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে খেমাররুজ গেরিলাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয় এবং একই সালে খেমাররুজরা দলের নাম পরিবর্তন করে, ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল ইউনিয়ন মুভমেন্ট গঠন করে। এবং ১৯৯৯ সালে খেমাররুজকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

এই হলো, এই আলোচনার সাপেক্ষে যতটুকু জানা প্রয়োজন ততটুকুর ইতিহাস।

আমাদের যে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে তা বাংলার মানুষের স্বাধিকারের জন্যে! আর সে লক্ষ্যে দু’টো দেশের মাঝে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। আর কম্বোডিয়ার টা, তাদের নিজের দেশের একটা শাসনের সময়ের শাসকদের বিচার। তাহলে দু’টো বিষয় এক হল? তাদের গণহত্য্যা আর বাঙালীর আন্তত্যাগ কি সমান হল? এভাবে কম্বোডিয়ার সঙে তুলনা করে স্বাধীনতা যুুদ্ধের শহীদদের কি অবমাননা করা হল না??

আমরা একটু দেখি কম্বোডিয়া বিচার কি ভাবে করছে ? ১৯৯৭ সালে কম্বোডিয়ান সরকার ইউএনকে চিঠি দিয়ে জানায় তাদের গণহত্যার এই ঘটনার বিচার প্রসেসে হেল্প করার জন্যে। ২০০৬ সালে ইউএন এর সাথে কম্বোডিয়ার চুক্তি সাক্ষরিত হয় এবং এর ভিত্তিতে গঠন কর হয় Extraordinary Chambers in the Courts of Cambodia বা ইসিসিসি। এই চুক্তির ভিত্তিতে কম্বোডিয়া এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে ইউএনের কাছে ফান্ডিং নিছে।

কম্বোডিয়ান আইনে দুই ধরনের চেম্বার করা হয়। একটা চেম্বারে জজরাই ইনভেস্টিগেশন করে। আর একটা চেম্বার যেইটাকে বলা হয়েছে, সুপ্রিম চেম্বার হচ্ছে মূল বিচার। প্রি ট্রায়াল চেম্বার যারা ইনভেস্টিগেট করছে, তাদের মধ্যে ৩ জন রাখা হইছে দেশী জজ আর দুই জন রাখা হইছে বিদেশী জজ। আর সুপ্রিম চেম্বারে ৪ জন রাখা হইছে দেশী আর তিন জন বিদেশী জজ। আমরা এখন কুইকলি দেখি মিল এবং অমিলের জায়গা জায়গা হচ্ছে। মিলের জায়গা হচ্ছে কম্বোডিয়ান বিচারটা করা হয়েছে, কম্বোডিয়ার লোকাল আইনে এবং লোকাল প্রসেসে। এবং এই খানেই হিসেব মিলের শুরু এবং মিলের শেষ।

কম্বোডিয়ান সরকার পুরো প্রসেসটার নিরপেক্ষতার ব্যাপারে অন্ত্যন্ত সতর্ক ছিল। তারা এই বিচারের সম্পূর্ণ দায় এবং ক্রেডিট নিজের ঘাড়ে নিতে চায় নাই। এই জন্যে তারা ইউএনকে ইনভলভ করছে। ফলে যেইটা হইছে। কোন ভাবে এই বিচারের ভুল ত্রুটি এবং সাফল্য কম্বোডিয়ান সরকারের কাছে আসে নাই। আমাদের বিচারের কার্যকরী প্রক্রিয়া শুরু হয়, ২০০৯ সালের জুলাই মাসে যখন সরকার ICT Act of 1973 কে সংশোধন করে। এবং ২০১০ সালের মার্চে তিন জনের ট্রাইব্যুনাল, ৭ জনের ইনভেস্টিগেশন টিম এবং ১২ জনের প্রস্কিকিউশান টিম করে।

আর আমাদের দেশে পুরো প্রক্রিয়াতে কোন বিদেশী শক্তি বা ইউ এন এর সহায়তা নেয়া হয় নাই। সরকারের যুক্তি ছিল, এইটা একটা দেশীয় অপরাধ এইটার দেশী বিচার হবে। কিন্তু আমরা কি আমাদের বাঙালীয়ানা খাইসলত ভুলে গেছি! যেখানে আছে স্বজনপ্রীতি,রাজনৈতিক প্যাঁচ এবং স্বেচ্ছাচারিতার উদাহরণ। আর সেটাও প্রমাণিত হয়েছে স্কাইপ কেলেঙ্কারীর মাধ্যমে! স্কাইপ ক্যালেঙ্কারিতে যেই সব প্রশ্ন লজ্জাজনক ইস্যু এসেছে গালি দেয়া বাদে, প্রপার উত্তর সরকারের কাছ থেকে আসে নাই। স্কাইপে শোনা গ্যাছে- সাক্ষী কি ভাবে কি কি বলবে, বিচারপতি সেইটা শিখিয়ে দিচ্ছেন। শোনা গ্যাছে, বিচারপতি সাহেব নিজের মুখে বলছেন, রায় দেয়ার বিনিময়ে,আপিল বিভাগে প্রমোশন দেয়া হবে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বিচারক, কিংবা, শোনা গ্যাছে চিফ প্রসিকিউটর বিচারপতির রুমে গিয়ে বলছেন, “আমি দাড়াই যাবো, আপনি আমাকে বসায় দিবেন। লোকে দেখুক, আমাদের মাঝে কোন খাতির নাই।“

এই সব লজ্জা জনক ঘটনাগুলো একটা আন্তর্জাতিক ট্রায়াল হলে কোন মতেই হতো না। সেই খানে, একটু হলেও মান নিয়ন্ত্রণ হতো। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে, বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশে এতো রাজনীতি এবং মুভমেন্ট হইছে। এর পরে, আমরা জাতি হিসেবে সত্যি ডিজারভ করেছিলাম, একটা ট্রায়াল যেইটাতে এই ধরনের লজ্জা জনক অভিযোগ উঠবেনা।

কারন এই বিচার, আমাদের জন্মের ইতিহাসের বিচার। বাংলাদেশের এই জাতির জন্ম যেই যুদ্ধের মাধ্যমে হয়েছে, যে যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে- তার বিচারে রাজনৈতিক গোল দেয়ার জন্যে এই ধরনের অসততার আশ্রয় নেয়া- আমাদের জাতির জন্যে কত বড় কলঙ্কজনক উদাহরণ হিসেবে রয়ে গেলো সেইটা সহস্র বছর ,লক্ষ বছর পরেও রয়ে যাবে । আর এভাবে কি সুষ্ঠু বিচার হওয়া সম্ভব?

এত্তোকিছুর পরও এই আদালতের রায়ে ইতমধ্যে বেশ কয়েকজনের রায় কার্যকর করা হয়েছে। আসছে সপ্তাহে মীর কাসেম আলী মিন্টু সাহেবের আপিলের রায় দেয়া হবে। তার রায় কি হবে,তা এ্যাটর্নি জেনারেল পরোক্ষভাবে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। কিনি ফাঁসি আশা করছেন। কিন্তু একজন ব্যক্তিকে ফাঁসি দিকে যে এভিডেন্স এর প্রয়োজন তার সবটুকু কি রাষ্ট্র পক্ষ দাখিল করতে পেরেছিল? আর সেই সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কি মীর কাসেম আলীকে ফাঁসি দেয়া যায়? এই প্রশ্নের জবাব পুরো ব্লগ শেষে নিজেই বলে দিতে পারবেন। এবার একটু ইতিহাস সাক্ষ্য এবং ডকুমেন্টগুলোর দিকে চোখ বুলান।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত বেশ কিছু খবরের কাটিং জমা দেয়া হয়েছে ডকুমেন্ট আকারে। এসব খবরে মীর কাসেম আলীর বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি এবং নাম উল্লেখ রয়েছে। গতকাল আপিল শুনানিতে মীর কাসেম আলীর পক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া ওই সব পেপারকাটিং উপস্থাপন করে দেখান যে, ঘটনার সময় মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামে ছিলেন না। তিনি তখন ঢাকায় ছিলেন।

মীর কাসেম আলীকে যে ১০টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি অপরাধ ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে চার্জে। অথচ ১৯৭১ সালে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সংবাদে দেখা যায় মীর কাসেম আলী ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া বিভিন্ন পত্রিকার খবরে দেখা যায় মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকার বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য রাখেন। ৮ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিতভাবে মীর কাসেম আলীর নাম, বক্তব্য, বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া ডকুমেন্টই তার সাক্ষ্য বহন করছে।

দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার খবরেও বলা হয়েছে মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। কাজেই মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে ডালিম হোটেলকেন্দ্রিক অপহরণ, নির্যাতন এবং হত্যার যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে এর সাথে তার কোনোরকম সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান।
তিনি বলেন, মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার আগ পর্যন্ত তিনি ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ছিলেন। কিন্তু ৬ নভেম্বর তিনি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ঢাকায় চলে আসেন। তার প্রমাণ রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সেই পত্রিকায়, যা রাষ্ট্রপক্ষই জমা দিয়েছে। দৈনিক আজাদী পত্রিকায় ৬ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত প্রকাশিত খবরে চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি হিসেবে মীর কাসেমের নাম ছাপা হয়েছে। কিন্তু সেই পত্রিকায় ৬ নভেম্বরের পর প্রকাশিত খবরে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রসংঘ সভাপতি হিসেবে আবু তাহেরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের এ ডকুমেন্ট থেকেও প্রমাণিত যে, মীর কাসেম আলী ডালিম হোটেলের ঘটনার সময় চট্টগ্রামে ছিলেন না।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, সবচেয়ে বড়কথা হলো মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে চট্টগ্রামে গেছেন বা ছিলেন সে মর্মে একটি ডকুমেন্টও দেখাতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। তদন্ত কর্মকর্তাও ট্রাইব্যুনালে এটা স্বীকার করে বলেছেন তাদের কাছে এ মর্মে কোনো ডকুমেন্ট নেই।

অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় আগামসি লেনে তার বোনের বাসায় অবস্থান করেন ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে। এ সময় তিনি কখনো চট্টগ্রামে যাননি এবং তিনি কখনো আলবদর সদস্যও ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষও তাকে আলবদর সদস্য বলেনি।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন। গতকাল মীর কাসেম আলীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। এরপর শুনানি আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তি উপস্থাপনের পর মীর কাসেম আলীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এক ঘণ্টা সময় পাবেন পাল্টা যুক্তি পেশের জন্য।

রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টে রয়েছে মীর কাসেম ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলেন : বদর দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য রাখেন মীর কাসেম আলী। পরের দিন ৮ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তানসহ সে সময়কার বিভিন্ন পত্রিকায় সে খবর প্রকাশিত হয়। খবরে মীর কাসেম আলীর নাম ও বক্তব্য ছাপা হয়।

৮/১১/১৯৭১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘বদর দিবসের সমাবেশে ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতির ভাষণ।’ প্রতিবেদনে লেখা হয় ‘আলবদর দিবস উপলক্ষে গতকাল (রবিবার) বিকালে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতা রক্ষায় জনগণের দৃঢ় সংকল্পের পুনরুক্তি করা হয়।’
সমাবেশে যারা বক্তব্য রাখেন, তাদের নামের তালিকায় মীর কাসেম আলীর নাম রয়েছে ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।

তা ছাড়া দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় ৮/১১/১৯৭১ তারিখে ‘বদর দিবস পালিত’ শিরোনামে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সমাবেশের খবর ছাপা হয় এবং তাতেও মীর কাসেম আলীর নাম ও বক্তব্য ছাপা রয়েছে।
১৯৭১ সালে ১১ নভেম্বর ছাত্রসংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সেক্রেটারি জেনারেল মীর কাসেম আলীর যুক্ত বিবৃতি প্রকাশিত হয় জুমাতুল বিদা দিবস পালনের আহ্বান জানিয়ে। ঢাকা থেকে এ বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আরেকটি ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য রাখেন মীর কাসেম আলী।
১১ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদের শিরোনাম হলো ‘হিন্দুস্তানী হামলার বিরুদ্ধে গণসমাবেশ।’ এ খবরেও মীর কাসেম আলীর বক্তব্য ছাপা হয়।

১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর দৈনিক আজাদসহ আরো কয়েকটি পত্রিকায় ইসলামী ছাত্রসংঘের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বিবৃতির শিরোনাম ছিল ‘ছাত্রসমাজের প্রতি ডাক-হিন্দুস্তানী হামলার বিরুদ্ধে গণসমাবেশ।’ খবরে বিবৃতি প্রদানকারী হিসেবে ছাত্রসংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম আলীর নাম রয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায়ও এ বিবৃতি প্রকাশিত হয় এবং তাতে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা থেকে তারা এ বিবৃতি প্রদান করেছেন।
৭ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার একটি শিরোনাম হলো ‘ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা’। ছাত্রসংঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ১৯৭১-৭২ সেশনের জন্য কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন মর্মে খবরে উল্লেখ করা হয়। খবরে বলা হয়, ৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের এক জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে এবং তাতে সব সদস্যকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া এসব ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে বলেন, এ থেকে প্রমাণিত এবং খুবই স্পষ্ট যে, ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মীর কাসেম আলী ঢাকায় ছিলেন, চট্টগ্রামে নয়।
ওই সময়ে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামে অবস্থান করেছেন বা গেছেন, এ রকম একটি ডকুমেন্টও দেখাতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালত জানতে চান মীর কাসেম আলী ঢাকায় থাকলেও চট্টগ্রামে যে কখনো যাননি তা কী করে বলা যায়। কারণ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যেতেন। তা ছাড়া ঢাকার বাইরে থেকেও বিবৃতি প্রদান করা যায়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও বলেন, ২৩ নভেম্বর ঢাকায় থাকলেও ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামে গিয়ে অপহরণের সাথে যুক্ত হওয়া সম্ভব।

তখন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান রাষ্ট্রপক্ষের আট নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দী পড়ে শোনান যেখানে সাক্ষী বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানের মৌরিপুর এয়ারবেজ থেকে পালিয়ে আসি, ... ... ... আমি পাকিস্তান থেকে সম্ভবত পিআইএ-এর বিমান যোগে ঢাকায় পালিয়ে এসেছিলাম। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমি সড়কপথ, নৌপথ, রেলপথ ব্যবহার করেছিলাম। ঐ সময় সড়কপথ ও রেলপথ বিধ্বস্ত ছিল তবে নৌপথ বিধ্বস্ত ছিল না। আমি ঢাকা থেকে প্রথমে সদরঘাট হয়ে নৌপথে চাঁদপুরে পৌঁছি।’

অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, এটা সবারই জানা কথা যে, তখন যুদ্ধের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা কী রকম বিপর্যন্ত ছিল। চাইলেই কেউ হুটহাট করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে পারতেন না। ২৩ তারিখ ঢাকায় বক্তব্য দিয়ে ২৪ তারিখ চট্টগ্রামে গিয়ে অপহরণ ঘটনায় যুক্ত হওয়া কতটা বাস্তবসম্মত তা আপনারা বিবেচনা করবেন।

চট্টগ্রামের আজাদী পত্রিকার খবরে যা রয়েছে : এস এম শাহজাহান বলেন, মীর কাসেম আলী যে ৭ নভেম্বরের পর কখনো চট্টগ্রামে ছিলেন না এবং যানওনি, তার প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষের আরো কিছু ডকুমেন্টে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের আজাদী পত্রিকার যেসব খবর জমা দিয়েছে, তাতে দেখা যায় মীর কাসেম আলী ৭ নভেম্বরের আগে চট্টগ্রামে ছিলেন। মীর কাসেম আলী ৬ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ছিলেন। সে হিসেবে তিনি সেখানে যেসব অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তা সেখানকার স্থানীয় পত্রিকায় তখন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের স্থানীয় কোনো পত্রিকায় ৭ নভেম্বরের পর মীর কাসেম আলীর কোনো নাম আর দেখা যায় না। এ থেকে প্রমাণিত যে, মীর কাসেম আলী ৭ নভেম্বরের পর চট্টগ্রামে ছিলেন না।
যেমন ১/৮/১৯৭১ তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় লেখা হয়, মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে মীর কাসেম আলী সভা আহ্বান করেছেন।
১৪/৮/১৯৭১ তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় মাওলানা মাদানীর মৃত্যু উপলক্ষে ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মীর কাসেম আলীর শোকবার্তা প্রকাশিত হয়েছে।

২/৯/১৯৭১ তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি মীর কাসেম আলী প্রতিরক্ষা দিবস পালন উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন।

৮/৯/১৯৭১ তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকার খবরে লেখা হয়েছে, প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মীর কাসেম আলী।

৬ নভেম্বর মীর কাসেম আলী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা চলে আসেন। তাই ৬ নভেম্বরের পর দৈনিক আজাদী পত্রিকায় মীর কাসেম আলীর নাম আর দেখা যায় না; বরং চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রসংঘের সভাপতি হিসেবে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় আবু তাহের নামে একজনের নাম বারবার দেখা গেছে।
যেমন ৭/১১/১৯৭১ ও ৫/১২/১৯৭১ তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় মোহাম্মদ আবু তাহেরের নাম প্রকাশিত হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রসংঘের সভাপতি হিসেবে।

দৈনিক আজাদীর এ খবর থেকে এটা স্পষ্ট যে, ৭ নভেম্বর মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন না এবং চট্টগ্রামেও অবস্থান করেননি।

৬ নভেম্বর মীর কাসেম আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকার আগামসি লেনে তিনি তার বোনের বাসায় বসবাস শুরু করেন, যা তার বোন ট্রাইব্যুনালে এসে বলে গেছেন তার জবানবন্দীতে।

মীর কাসেম আলী ঘটনার সময় চট্টগ্রামে ছিলেন এ রকম কোনো ডকুমেন্ট নেই রাষ্ট্রপক্ষের : মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ৬ অথবা ৭ নভেম্বরের পর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে কখনো গেছেন বা অবস্থান করেছেন এ রকম একটি ডকুমেন্টও দেখাতে পারেনি। তদন্ত কর্মকর্তা ২৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বরের পরে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামে ছিলেন মর্মে কোনো পক্রিকার কাটিং আছে কি না তা আমার এই মুহূর্তে স্মরণ নেই। তবে এ মর্মে অন্য কোনো দালিলিক প্রমাণ আমি সংগ্রহ করিনি।’
ঘটনার সময় ঢাকায় বোনের বাসায় ছিলেন মীর কাসেম আলী : মীর কাসেম আলীর বোন মমতাজ নুর উদ্দিন ট্রাইব্যুনালে দেয়া সাক্ষ্যে বলেছেন, ১৯৭১ সালে আমি পুরান ঢাকার আগামাসি লেনে স্বামী-সন্তানসহ একটি ভাড়া বাসায় থাকতাম। মীর কাশেম আলী আমার সহোদর বড় ভাই। তিনি ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার ঢাকার বাসায় আসেন। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে আমার স্বামী কুমিল্লায় একটি কলেজে চাকরি পাওয়ার সুবাদে আমরা কুমিল্লায় চলে যাই। আমার ভাই ওই মার্চ মাসেই আমার বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমাদের কুমিল্লা যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো সময় আমার ভাই আমাদের সাথে ঢাকার বাসায় থাকতেন।

মীর কাসেম আলীর লিখিত জবানবন্দী ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছিল। তবে তা গ্রহণ করেনি ট্রাইব্যুনাল। মীর কাসেম আলীর লিখিত সেই জবানবন্দী গতকাল আপিল শুনানির সময় পড়ে শোনান অ্যাডভোকেট শাহজাহান। জবানবন্দীটি ছিল নি¤œরূপ :
‘আমার নাম মীর কাসেম আলী, বয়স ৬২ বছর। আমার আব্বা জনাব মীর তাইয়েব আলী ১৯৬৫ সালে চডউ- এর উরারংরড়হধষ অপপড়ঁহঃধহঃ হিসেবে ফরিদপুর থেকে চট্টগ্রাম বদলি হয়ে আসেন। আব্বার চাকরির সুবাদে ১৯৬৫ সাল থেকেই আমরা চট্টগ্রাম শহরে থাকতাম।

আমি ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হই ও ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাস করি। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি এবং ওই কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অনার্স কাসে ভর্তি হই। আব্বা ১৯৭১ সালে কুমিল্লা বদলি হয়ে চলে আসেন। তবে পরিবারের অন্য সবাই আমরা ভাইবোনসহ চট্টগ্রামে থেকে যাই। ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি আমার ওপর চট্টগ্রাম শহর ছাত্রসংঘের সভাপতির দায়িত্ব আসে। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি আমার বোনকে বাবা ঢাকায় তার স্বামীর কাছে রেখে আসেন এবং আমিসহ আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা কুমিল্লায় বাবার কাছে চলে আসি।
১৯৭১ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ছাত্রসংঘের মিটিংয়ে যোগদানের উদ্দেশে ঢাকায় আসি এবং পুরান ঢাকার আগামাসি লেন এলাকায় আমার আপন বোন মমতাজ নুরুদ্দিনের বাসায় উঠি। ১৯৭১ সালের নভেম্বরের ৬ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাই। এই দায়িত্ব পালনের উদ্দেশে ঢাকাতেই বোনের ওই বাসায় অবস্থান করি। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ৮ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত আমি ঢাকায় ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। এ সময় আমি কখনই ঢাকার বাইরে যাইনি। যাওয়ার অবস্থাও ছিল না।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের প্রদত্ত বক্তব্য যথা ১. ১৯৭১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে আমার চট্টগ্রামের অবস্থান, ২. তথাকথিত নির্যাতন ক্যাম্প ডালিম হোটেলসহ অন্যান্য ক্যাম্পে আল-বদরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন বা ৩. ওই সময়ে ভিকটিমদের আটক করে নির্যাতন ও হত্যা করার ব্যাপারে আমার সংশ্লিষ্টতা-সংক্রান্ত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত ওই সময়ের সংবাদপত্রের সংবাদ থেকেই দেখা যায়, ওই পুরো সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ৮ তারিখ থেকে ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। এ সময়ের মধ্যে আমি কখনো চট্টগ্রাম যাইনি। কাজেই আমার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের প্রদত্ত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি এসব সাক্ষীর কাউকে কখনো দেখিনি বা চিনিও না।

ইসলামী ছাত্রসংঘ পাকিস্তান অখণ্ড রেখে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানের পক্ষে ছিল। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ঐতিহাসিক দলিল থেকে এটা প্রমাণিত যে, ইসলামী ছাত্রসংঘ শুধু রাজনৈতিকভাবেই পাকিস্তানি অখণ্ডতার পক্ষে ছিল। আমি কোনোপ্রকার অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডে কখনই জড়িত হইনি। রাজাকার, আল-বদর বা অন্য কোনো সশস্ত্র সংগঠনের সাথে আমার কখনই কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এ কারণেই ১৯৭২ সালের দালাল আইনে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। - এখানে দেখুন

তারপরও কি তাকে এই গণহত্যার জন্য দায়ী করা যায়? যদি দলকানা এবং বিবেকশুণ্য মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে বলবেন ফাঁসি চাই!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০২
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×