somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ( কাজল বিলাস )

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ল্যাম্প নিভিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো বিলাস, একটু নারকেল তেল চামচে লাগিয়ে অবশেষে কাজল তৈরি করতে পেরেছে সে।

বলছি মাহমুদ বিলাসের কথা। হটাৎ করে বান্দ্রামি বুদ্ধি খুজে বের করাটা যেন ওর কাছে পান্তা ভাতের মতই সহজ।
অলস আর ঘুম পাগল বিলাসের কথা বলতে গেলে শেষ হবে না, সোজাসাপ্টা কথা বলা আর যা মন চায়, তাইই করে বসা পাগল ছেলেটা বোধহয় একটু বেশিই আসক্ত হয়ে পড়েছে পদ্মের প্রতি। ও হ্যা, পরিচয় দেয়া হয়নি পদ্মের।
পদ্ম, একটা খুবই সাধারণ মেয়ে। আর পাচটা মেয়ের থেকে একটু আলাদা আর সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় বিলাসের পছন্দের কারন।
পদ্ম ও বিলাস, এই দুইজন আজ আমাদের গল্পের চরিত্র। তো চলুন, গল্পে ফেরা যাক।
কোথায় যেন ছিলাম, ও হ্যা, কাজল তৈরিতে,,,,

১.

বিলাস অনেক দূর থেকে এসে দেখা করব পদ্মের সাথে। বলতে গেলে দুইজন দুই জেলার মানুষ। আসতে আসতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে। বিলাসের পছন্দ চোখে কাজল দেয়া। আর শ্যাম বরন চেহারার মায়াবতী। বিলাস চায়, তার প্রিয়তমাও তেমনই হোক। শ্যাম বরন গায়ের রঙ, আর চোখে কাজল দেয়া শ্যাম নয়ন। এই ভেবে সে একটা কাজল কিনে এনেছে। পদ্মের জন্য। যেদিন প্রথম চোখে চোখ রাখবে, সেদিন যেন চোখে কাজল দেয়া থাকে। যেন চোখের মায়ায় হারাতে হয়। সে চায়, এমন সময় আসুক, যেন পদ্মের চোখে নিজ হাতে কাজল লেপ্টে দিতে পারে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খেয়াল হল, অনেকগুলো কালি জমা হয়েছে চামচে। কেরোসিনের ল্যাম্পে এমনিতেও অনেক কালি হয়। কাজল উপহার দেয়ার কথা ভাবতে ভাবতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল, চোখে ভেসে উঠছিল প্রথম কাজল দেয়ার দিনগুলোর কথা।



আজ বৃহস্পতিবার। সাপ্তাহিক দেখা করার দিন। বিকেলে অফিস ছুটি নিয়ে একটু বেশি সময় দিতে আগেভাগেই নদীর পাড়ে গিয়ে বসে আছে পদ্ম। আর বিলাসের আসার নামই নেই, সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে বসে থাকা পদ্ম বসে বসে নদীর উপর উড়ে যাওয়া পাখি দেখছে। ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখি হতে খুব ইচ্ছা তার। বাবা মার কড়া শাসন থাকা সত্বেও লুকিয়ে নদীর পাড়ে এসে বসে আছে পদ্ম। বিলাসের আসার অপেক্ষা। অপেক্ষা করতে যদিও কারোই ভালো লাগে না, বিরক্তির ছাপ পড়ে যায় চেহারায়। তবে পদ্মের চেহারায় তেমনটা নেই। আর থাকলেও দেখা যায় না। আপদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা সে বোরকা পরা নারী।
নদীর পাড়ে বসে বসে কি কি যেন ভাবতে ভাবতে নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলে পদ্ম। ভালোবাসার মানুষটার আসার অপেক্ষা৷ এমন সময় বিলাস এসে পাশে বসে পড়লো, দুজনের মাঝে এক হাত দূরত্ব। বিলাস এসে জিজ্ঞেস করল, আইসক্রিম খাবে ?? কেমন আছি, কতক্ষণ ধরে বসে আছি কিছুই জিজ্ঞেস না করে আপনি বলেন আইসক্রিম খাবো কিনা, এমন আজব ক্যান আপনি ?
আমি জানি অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছো, আর আইসক্রিম তোমার অনেক পছন্দের। তাই জিজ্ঞেস করলাম। তাছাড়া, তুমি ভালো থাকবে, আমার দোয়া তো এটাই।
বিলাসের কথা শুনে বিরক্তি কোথায় যেন মিলিয়ে গেল পদ্মের। বিলাস তার হাতে থাকা কাজলটা এগিয়ে দিলো পদ্মের দিকে। বলল, তোমার জন্য কিছুই আনতে পারলাম না, আমার পছন্দের শ্যাম নয়নার জন্য এই ছোট্টো উপহার। কাজলটা তোমার চোখে খুব মানাবে।।
আপনি আমার চোখ দেখেছেন ??
না দেখিনি, তবে আমার বিশ্বাস। শ্যাম বালিকার কাজল দেয়া চোখে হারাবো আমি।
কথা গুলো ভাবছিল পদ্ম, আজ বিলাস তার জন্য নিজ হাতে কাজল তৈরি করছে। আর সে তার জীবনের প্রথম কাজল উপহার পাওয়া মুহুর্তের কথা ভেবে চলছে। জীবন বোধহয় এমনই স্বপ্নময়, স্বপ্ন বোধহয় এতটাই মধুর।

৩.

আকাশে চাঁদ আছে। পরিষ্কার আকাশ, রাতের আধার হলেও চাঁদের আশে পাশে উড়ে আসা সাদা মেঘ দেখা যাচ্ছে। ছাদে বসা বিলাস চাঁদ দেখছে, এক কোনায় একটা প্লাস্টিকের ড্রামে বোনা হাসনাহেনা ফুলের গন্ধ, আর সাথে মৃদু বাতাস। কেমন যেন মাতাল করা মুহুর্ত। পাশে পেতে ইচ্ছা করে কোনো মানবীকে।
হাল্কা বাতাস থাকায় চাদের জোছনা ঢেকে ফেলতে বৃথা চেষ্টা করে সাদা মেঘগুলো। যে বাতাসে মেঘ উরে আসে, সেই বাতাসেই মেঘ উড়ে যায়, আনমনা হয়ে বিলাস ভাবতে থাকে, একে চলে কতটা স্বপ্ন। চাদের আলোতে প্রেয়সীর মুখটা দেখার খুব ইচ্ছা তার। রাতে চোখে কাজল দেখা যায় না, তবুও সে চোখে কাজল দিয়ে প্রেয়সীকে চাদের জোছনা মাখাতে চায়। চোখে চোখ রেখে প্রেয়সীকে দেখতে চায়।

স্টীলের চামচ তাপ পরিবাহী, ল্যাম্পের আগুনের তাপ হালকা আচ করলো বিলাসের হাতে। সে দেখলো, পর্যাপ্ত কালি জমেছে।
গ্রাম অঞ্চল। ছোট এক কুটিরে বিলাস ও পদ্ম তাদের ছোট্ট সংসার পেতেছে। বিদ্যুৎ নেই বলে এই চার্জিং লাইট কিংবা এনার্জি লাইটের যুগেও ল্যাম্পের মৃদু আলোতে পদ্মের দিকে তাকালো বিলাস। সে যেন এক মনে কি ভেবে চলছে।
একটু নারকেল তেল মাখিয়ে কাজল বানিয়ে নিলো বিলাস। পদ্মকে কাছে টেনে নিয়ে পরম যত্নে চোখে কাজল একে দিচ্ছে। নিজের হাতে বানানো কাজল দিতে গিয়ে কেমন যেন অনুভূতির প্রকাশ পাচ্ছে। চোখে কাজল দিয়ে পদ্মের হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেল বিলাস।

আজও আকাশে পরিষ্কার চাঁদ। ভরা যৌবনে চাঁদ যেন তার রূপের জৌলুশ ছড়াচ্ছে। আজ বিলাসের ভাবনার সেই ছাদ নেই। নেই তার প্লাস্টিকের ড্রামে হাসনাহেনা ফুলের সৌরভ।
পদ্মের চুলের গন্ধে নিজেকে বিমোহিত করে নিচ্ছে বিলাস। বিড়বিড় করে বলছে, তোমাকে আমি প্রাচুর্যে ভরপুর জীবন উপহার দিতে পারিনি, দিতে পারিনি খুব বেশি জৌলুশ, খুজে নিও আমার প্রেম। আকাশে ঐ চাঁদকে জিজ্ঞাসা করে দেখো, ওর দেয়া জোছনায়, দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী রমনীটা আজ আমার সর্বাঙ্গীনি।

কথা গুলো শুনে পদ্মের কাজল দেয়া চোখ থেকে ঝড়ে পড়া দুই ফোটা জল তার গাল বেয়ে নামলো। বললো, ওই চাদকে আপনিই জিজ্ঞাসা করুন, তার জোছনায় রূপবতী হওয়া এ সুন্দরীটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভাগ্যবতী। যে ভালোবাসা নামক প্রাচুর্যে ভরপুর একটা মানুষের অর্ধাঙ্গিনী না হয়ে সর্বাঙ্গীনি হতে পেরেছে।

পদ্মের চুলে বিমোহিত হওয়া বিলাস বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
আর বিমোহিত হওয়া বিলাসের মাঝে ভালোবাসা খুজে পাচ্ছে পদ্ম। এ যেন জনম জনম ধরে লিখে চলা কথিত লেখকের " অতঃপর একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প"

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×