দেশের জন্য, মাতৃভূমির জন্য প্রথম চোখের জল ফেলেছিলাম ১৯৯৭ সালে, যেদিন বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেদিন। না না ভুল বললাম যেদিন বাংলাদেশ বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল সেদিন প্রথম কেঁদেছিলাম। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমার জন্ম হয়নি তাই সেদিনের বিজয়ের অনুভুতি কেমন ছিল জানি না, বাবার কাছ থেকে শুনেছি বিজয়ের আনন্দে তখন অনেকে হাউমাউ করে কেঁদেছিল। আমি, আমরা, আমাদের প্রজন্ম কেঁদেছিলাম ১৯৯৭ সালের ৪ এপ্রিল, আরেকটি মহান বিজয়ের আগে ও পরে।
৪ এপ্রিল ১৯৯৭ রোজ শুক্রবার, আইসিসি ট্রফির ২য় রাউন্ডের শেষ খেলায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ড। হেরে গেলেই বিদায়, হেরে গেলেই দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যাবে। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে নেদারল্যান্ড করা ১৭১ রানের জবাবে ১৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন ধুকছে, পরাজয়ের চোখ রাঙানিতে আমরা তখন হতবিহবল। মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে এলো বৃষ্টি, ডার্কওয়াথ লুইস পদ্বতিতে বাংলাদেশের টার্গেট গিয়ে দাড়ালো ৩৩ ওভারে ১৪১। ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতা, চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে, টেনশন সহ্য করতে পারছিলাম না। মসজিদে গেলাম জুম্মার নামাজ পড়তে, অন্যদের অবস্থা আমার চেয়েও খারাপ, সবার মুখ থমথমে, চোখে জল টলটল করছে। নামাজ শেষে মোনাজাতে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, চোখ দিয়ে জলের ধারা বইতে শুরু করলো, অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখি সবার অবস্থা আমার মতো। খোদার কাছে শুধু একটা জিনিসই চাইলাম, খোদা তুমি আমাদের দেশকে জিতিয়ে দাও।
বাসায় এসে রেডিও খুলে শুনলাম আবার খেলা শুরু হয়েছে। আকরাম খান ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ৫২ রানের অসাধারণ জুটি গড়লেন। ৭৭ রানে নান্নু আউট হয়ে গেলে আবার হার্টবিট বেড়ে যায়, কিছুক্ষণ পর মনিও আউট হয়ে গেল, আর বসে থাকতে পারলাম না, বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। ঠিক করলাম আর খেলা শুনব না, কিন্তু মন মানছিল না বলে আবার ফিরে এলাম। এসে শুনি বাংলাদেশ জয়ের দারপ্রান্তে, আকরাম খান পেসার সাইফুলকে সাথে নিয়ে ৫০ রানের কালজয়ী পার্টনারশীপ গড়ে তুললেন। সাইফুল যখন আউট হলো বাংলাদেশ তখন জয়ের বন্দর মাত্র ৫ রান দূরে। আকরাম-পাইলট জুটি তুলির শেষ আচড় টুকু দিয়ে দিল, বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জিতে গেল। বুক থেকে পাথর নেমে গেল, আবার কাঁদলাম তবে এবারের কান্না আনন্দের কান্না।
দেশের জন্য ২য় বার চোখের জল ফেলেছিলাম ২০১২ সালের মার্চ মাসের ২২ তারিখে। সেদিন এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ মাত্র ২ রানে পাকিস্থানের কাছে হেরে গিয়েছিল। সাকিব মুশফিকের কান্না দেখে নিজের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল।
এবার ভারতের কাছে ষড়যন্ত্রের পরাজয়ে বুকের ভেতর কান্নার সৃষ্টি হয়নি, হয়েছে ক্ষোভের সৃষ্টি। কিন্তু কিভাবে এই ক্ষোভ প্রকাশ করব বুঝতে পারছি না.
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩৫