somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কক্সবাজার পরিচিতি

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জেলা পরিচিতিঃ পর্ব ১ (কক্সবাজার)

কক্সবাজারের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে বিশাল সমদ্র সৈকত। সমুদ্রের গর্জনে আন্দোলিত হয় মন। প্রায়ই আমরা ছুটি পেলে পরিবার , বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজন মিলে ঘুরেতে চলে যাই কক্সবাজারে। যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে কক্সবাজারের তুলনা শুধু কক্সবাজার । চলুন জেনে নেই কক্সবাজার জেলা সম্পর্কে কিছু তথ্য ।

কক্সবাজার জেলা : আয়তন: ২৪৯১.৮৬ বর্গ কিমি।

জনসংখ্যা ১৭৭৩৭০৯; পুরুষ ৯২৭১৯৬, মহিলা ৮৪৬৫১৩। মুসলিম ১৬৪৮২১১, হিন্দু ৮৭১২৩, বৌদ্ধ ১৭২২, খ্রিস্টান ৩৫৭৩৭ এবং অন্যান্য ৯১৬।

সীমানা: উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বান্দরবান জেলা, মায়ানমারের আরাকান রাজ্য ও নাফ নদী, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। কক্সবাজারে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ১১টি জেলার মধ্যে সপ্তম এবং বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২৬তম। জেলার প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে পার্বত্য অঞ্চল এবং অর্ধেক সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চল।

প্রধান দ্বীপসমূহ: মহেশখালী, কুতুবদিয়া, মাতার বাড়ি, সোনাদিয়া, শাহ পরীর দ্বীপ এবং সেন্ট মার্টিনস বা জিনজিরা দ্বীপ। শাহ পরীর দ্বীপ কিছুদিন আগে মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। উপকূলীয় জেলা হওয়ার কারণে দ্বীপ ও চর অঞ্চল সৃষ্টি ও ভাঙনের ফলে জেলার আয়তন হ্রাস -বৃদ্ধি হয়।

কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানঃ

সমুদ্র সৈকত :
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। এর দৈর্ঘ্য ১২০ কি:মি: সৃষ্টিকর্তা যেন রূপসী বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছে বালুর আঁচলে। সুর্য্যস্নান কিংবা সমুদ্রস্নানে নিজেকে বিলীন করে দিন নীলাভ প্রকৃতিতে। খোলা জীপে, স্পীড বোটে বা ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানো আর সমুদ্রের বালির বিছানায় দাঁড়িয়ে শামুক-ঝিনুকের সাথে লোকোচুরি খেলতে খেলতে উপভোগ করুন সূর্যাস্তের অনাবিল আনন্দ। কক্সবাজারের নাজিরার টেক থেকে শুরু করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত এই প্রকৃতি। কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে ইহা অবস্থিত। এর মধ্যে লাবনী পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, ডায়বেটিক হাসপাতাল পয়েন্টসহ আরো কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখযোগ্য।

হিমছড়ি:
কক্সবাজার হতে প্রায় দশ কি:মি: দক্ষিণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেযর লীলাভূমি হিমছড়ী। হিমছড়ি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা রয়েছে। কক্সবাজার শহর হতে মেরিন ড্রাইভ সড়কে সমুদ্র আর পাহাড়ের মধ্যদিয়ে প্রাণচঞ্চলতায় জীপে কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে অনায়াসে বেড়িয়ে আসুন ঝর্ণাধারা প্রবাহমান হিমছড়ি। সেখানে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উদ্যোগে একটি পিকনিক স্পট তৈরী করা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সেখানে ভ্রমন করে সাগর ও পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

প্রাচীন ঐতিহ্য:
১৬০০-১৭০০ খৃষ্টাব্দে শাহ সুজার আমলে একটি মসজিদ তৈরী হয়েছিল। এটি চৌধুরী পাড়া মসজিদ বা আজগবি মসজিদ বা গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিত। এটি কক্সবাজার সদরের বি.ডি.আর ক্যাম্পের উত্তর দিকে অবস্থিত।

প্যাগোড়া (জাদী):
১৭৯০ ইংরেজী সালের দিকে বার্মিজরা আরাকান বিজয়ের পর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায় এটি নির্মাণ করে। তারা এটিকে স্মৃতিচিহ্ন বলে। কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড় বা উচুঁ টিলায় এ ধরনের প্যাগোড়া দেখা যায়।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ:
টেকনাফ থেকে প্রায় ৮ মাইল দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে প্রবাল দ্বীপটি অবস্থিত। জিঞ্জিরা, দক্ষিণ পাড়া, গলাছিরা ও চেরাদিয়া এই চারটি দ্বীপ নিয়ে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপ’ গঠিত। এর প্রাচীন নাম নারিকেল জিনঞ্জিরা, পরবর্তীতে বৃটিশ আমলে এ দ্বীপকে সেন্টমার্টিন নাম করণ করা হয়। ভূ-তাত্ত্বিকগনের মতে দ্বীপটির বয়স ২০ লক্ষ বছর। এদ্বীপের মূল আকর্ষন সামুদ্রিক কাঁকড়া, কাছিম, প্রবাল, মুক্তা আর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রাকৃতিক এ্যাকুরিয়াম। অনেকের মতে এখানে জীবন্ত পাথরও রয়েছে। অপনার চিরকাঙ্খিত প্রবাল দ্বীপ এবং ছেঁড়াদিয়ার নির্জনতা আপনাকে বিমোহিত করবেই।

নাফ নদীর দৃশ্য:
টেকনাফ শহরে প্রবেশের পূর্ব মুহুর্তে বি.ডি.আর চেকপোষ্টের পরে পাহাড়ের চূঁড়া থেকে নাফ নদীর দৃশ্য খুবই সুন্দর দেখায়। নাফ নদীর অপর পাড়ে বার্মা (মিয়ানমার) সীমান্ত খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায়।

ইনানী:
পাথর আর নীল জলরাশির অাঁচল বিছানো ইনানীর সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের গর্জন, পাখীর কাকলী আর পাহাড়ী ঝর্ণার ধ্বনির অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে এখানে। সুপারী গাছেল ছায়াঘেরা ইনানীতে যেতে হলে কক্সবাজার থেকে উখিয়া কোটবাজার হয়ে জীপে পশ্চিমে প্রায় তিন মাইল গেলেই ইনানী সৈকত। এতে বন বিভাগের একটি সুন্দর ডাক বাংলো রয়েছে। কক্সবাজার থেকে এর দূরত্ব ৩৩ কি:মি:। এখানে ‘ইনানী বীচ রিসোর্ট’ নামে একটি অবসর যাপন কেন্দ্র রয়েছে। ইচ্ছে করলে সেখানে রাত্রি যাপন করতে পারেন।

আধাঁর মানিক:
রামু থানার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নে উখিয়ার ঘোনায় একটি রহস্যময় গর্ত আছে। যার শেষ কোথায় কেউ জানে না। তাই একে কেন্দ্র করে জন্ম নিয়েছে অনেক কিংবদন্তী। স্থানীয় জনগণ একে ‘অাঁধার মানিক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

কৃত্রিম হ্রদ:
ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের অভ্যন্তরে বন্যপ্রাণীর পানীয় জলের জন্য ২টি কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে। কৃত্রিম হ্রদের পাশদিয়ে হাতির পিঠে চড়া আপনাকে অন্যরকম আনন্দে ভাসিয়ে তুলবে। আরো দেখেতে পাবেন।
অসংখ্য অতিথি পাখি ও জলজ পাখি। প্রাকৃতিক লীলাভূমি বঙ্গোপসাগর বিধৌত পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক কার্পেট বিচানো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আসা পর্যটকগন সাফারীপার্ক পরিদর্শন করে নির্মল আনন্দ লাভ করা ছাড়াও প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে বেশকিছু সময় বন্য পরিবেশে থাকার সুযোগ পাবেন।

অগ্গ মেধা বৌদ্ধ ক্যাং:
কক্সবাজার সদরে ছোট বড় মিলিয়ে ৭টিরও বেশী বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগ্গা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগীক্যাং সবচেয়ে বড়। এ সবে স্থাপিত বৌদ্ধ মুর্তিগুলো দেখবার মতো। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও বিষু উৎসব ক্যাং এ উদযাপন হয়।

কুতুবদিয়া বাতিঘর:
কুতুবদিয়া বাতিঘরের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু পুরাতন বাতিঘর এখন আর নেই। স্বাধীনতার পর পর সাগরের ক্রমাগত ভাঙ্গনের ফলে সে পুরাতন বাতিঘরটি সাগর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এখন একটি বাতিঘর কুতুবদিয়ায় নির্মান করা হয়েছে যা আগের বাতিঘরের মতো নয়। এটি দক্ষিণ ধুরুং-এ অবস্থিত। কুতুবদিয়াতে সাগর পাড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়কূল স্থাপন করা হয়েছে যা থেকে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জনগনের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

মালেক শাহের দরবার শরীফ:
শাহ্ আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল্-কুতুবী (রহঃ) এক অধ্যাত্মিক সাধক। তাঁর দরবার শরীফ কুতুবদিয়া’র দক্ষিণ ধুরুং-এ অবস্থিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য নর-নারী তাঁর আস্তানায় আসেন। নৌ-পথে মালেক শাহ্ হুজুরের সমাধি বা মাজারে যেতে মালেক শাহের ঘাটে নেমে অনায়াসে দরবার শরীফে যেতে পারেন। অন্যদিকে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপঘাটে নেমে রিক্সায় থানা সদরে এসে জীব বা রিক্সায় তাঁর সমাধি বা মাজারে যেতে পারেন। বড়ঘোপ থেকে দরবার শরীফের দূরত্ব আনুমানিক ৮ কি:মি:।

এ ছাড়াও দেখার মতো রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা, যা আপনার সময়কে করবে আনন্দময় । হয়তো সে মুহূর্ত গুলি মনে পরে আপনার মুখে ফুটে উঠবে প্রশান্তির হাসি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×