somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্বপ্নবেলা - ১

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুরুর কথাঃ

খুব খাপছাড়া ভাবে লিখবো এই কথাগুলো। আমার ছেলেবেলা, আমার স্বপ্নবেলা... খুব বেশী মিস করি সেই সময় গুলো... আমি লেখালেখির ব্যাপারে খুবই অলস প্রকৃতির, কোন কিছু শুরু করলে সেটা শেষ করাটা আমার জন্য কঠিন। বিশেষ করে ধারাবাহিক লেখা। এখানে যা লিখবো, কিছু অন্যের মুখ থেকে শোনা, কিছু আমার নিজেরই মনে আছে। হয়তো আগের কাহিনী পরে, পরের কাহিনী আগে চলে আসতে পারে... যাইহোক...শুরু করি।

ন্যাদাগ্যাদাঃ

জন্ম আমার যশোর শহরের ফাতেমা হাসপাতালে। জন্ম মুহূর্তে বিপদে পড়েছিলাম আমি ও আমার মা, দুজনেই। তখন আমি আট মাসের পেটে। আম্মুর সমস্যা হয়েছিলো, এপেন্ডিসাইটিস। পেটের ভেতর সেটা ফেটে গিয়েছিলো। ডাক্তার আশা করেন নাই আমি বাঁচবো। সিজার করে বের করতে হলো আমাকে। আম্মুর সারা পেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো এপেন্ডিসাইটিসের টুকরা, একটা একটা করে বের করে আনতে ডাক্তারদের সময় লেগেছিলো ঘন্টা চারেক। বড়ই ঘাড়তেড়া এই আমি মরতে অস্বীকার করি, প্রিম্যাচিউর বেবী হিসেবে জন্ম নিলেও চমৎকার টিকে যাই! আব্বু নাকি প্রথম দর্শনে আমারে বিশেষ পছন্দ করেনাই! কালো, শুটকা এক মাংসপিন্ড! সেই দেখে আম্মুর হয় রাগ! তাঁর প্রাণপন চেষ্টাতেই হয়ে যাই তিন মাসের মাথায় নাদুস নুদুস এক মিষ্ট হাস্য বাচ্চা, তিন তিন বার শিশুদের স্বাস্থ্য প্রতিযোগীতায় ১ম হয়েছিলাম! তখন শিশুসদন বলে জেলা শহরে এক সরকারী স্থানে এই প্রতিযোগীতা হতো, এখনো হয় কিনা জানিনা।

আমি নাকি খুব শান্ত শিষ্ঠ আর ভালো ছিলাম। যেখানে বসিয়ে রাখতো সেখানেই চুপচাপ বসে থাকতাম। বেশীক্ষণ বসিয়ে রাখলে মাজা ব্যাথা করলে করুন মুখে আড়মোড়া ভাংতাম। শিশুরা সাধারনতঃ ঘুম থেকে উঠে কাঁদে। আমি ঘুম থেকে উঠে মিষ্টি করে একটা হাসি দিতাম। বেড়ে ওঠা আমার চুয়াডাঙ্গা শহরে। আব্বু আম্মু দুজনেই ছিলেন শিক্ষক। স্থানীয় একটা কলেজে পড়াতেন। আম্মু অনেকদিন আমাকে ডেস্কের উপর শুইয়ে রেখে ক্লাস নিয়েছেন। চুপচাপ শুয়ে থেকে আমিও ক্লাস করতাম। তো একবার হলো কি, আব্বু আম্মু পরীক্ষার খাতা দেখছেন কয়েকদিন ধরে। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি সারা দিন দুজনে কি যেন লেখা লেখি করে ঐ হিজিবিজি খাতার মাঝে! আম্মু রান্না ঘরে ছিলেন। আমি আস্তে করে খাট থেকে নেমে হাঁচড়ে পাঁচড়ে চেয়ারে উঠে একটা খাতা খুলে গম্ভীর ভাবে লেখালেখি শুরু করে দিলাম। ইকটু পর আম্মু এসে দেখে পিচ্চি টিচার খাতা দেখে চলেছেন! আমার হাত থেকে কলম নেয়ার আগেই দুইটা পাতা মোটামুটি আমার হস্ত শিল্পে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে! আম্মু আমারে বকা দিলে আমি ফিক করে হেসে আম্মুরে জড়িয়ে ধরি। আম্মু আর কিছু বলতে পারে না।

আমি পড়তে শেখার আগেই আমার ১০-১২ টা বই পড়া শেষ হয়ে গেছিলো। মানে আব্বু গল্পের বই কিনে আনতো পিচ্চিদের, আর আমি আম্মুরে খালি গুতাইতাম, কখন পড়ে শোনাবে! না পড়া পর্যন্ত শান্তি নেই! ততদিনে একটু একটু বড় হয়ে গেছি। খেলা করতাম আমারা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেই বাসার উপরের দুইটা বড় আপু আর পাশের বাসার একটা ছেলের সাথে। মাঝে মাঝে বাসার পিছনে খাঁচার খরগোস গুলোকে খুঁচাতাম। তখন ছড়া শেখা শুরু করেছিলাম। বাসার গেটের সামনে পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আবৃতি করতাম-

কাঠবেড়ালী, কাঠবেড়ালী
পেয়ারা তুমি খাও?

আমাকে বাসায় রেকে আব্বু আম্মু যখন কলেজে যেত, খুব রাগ হতো। আব্বুর কোলে উঠে বায়না ধরতাম। চার আনা দামের পয়সা বিস্কুট অথবা পাঁচিলের ওপর গজিয়ে ওঠা বরবটি ছিঁড়ে দিয়ে তবেই আব্বুর মুক্তি মিলতো। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলে বারান্দার পিলারটা ধরে হাপুস নয়নে কাঁদতাম কিভাবে আব্বু আম্মু ফিরবে এই চিন্তা করে। আম্মু বরাবরই আগে ফিরতো, আব্বু ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপ্যাল ছিলো বলে বিকালের পর ফিরতো। ফিরলেই আমার প্রশ্ন, আমার জন্য কি এনেছো? তখন নতুন নতুন গান জনপ্রিয় হয়েছে, হাওয়া হাওয়া ও হাওয়া... সারা পাড়া চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে এই গান গেয়ে বেড়াতাম বন্ধুদের সাথে। মাঝে মাঝে পাশের শোভা নার্সারীতে বেড়াতে যেতাম কারো সাথে, সেটা নার্সারী নাম হলেও ছিলো একটা ছোটখাটো চিড়িয়াখানা। খরগোস আর বানর দেখে খুব মজা পেতাম। পাড়ায় মাঝে মাঝে আসতো সাপখেলা দেখানোর সাপুড়ে। চিকন থেকে মোটা, এমন কোন সাপ নেই যা তাদের কাছে ছিলোনা! তারা বীণ বাজাতো আর আমি অন্যদের থেকেও একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখতাম। একবার এক সাপ সাপুড়ের বাক্স থেকে বেরিয়ে ঝোপের মাঝে পালিয়ে গেলো। ভয়ে দুই দিন বাসা থেকে বের হইনি। পরে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে পাড়ার লোকগুলো, আমি খুব খুশী হয়েছিলাম।

দিব্যজ্ঞান অর্জনের শুরুঃ
কিছুই বুঝতাম না। একদিন দেখি উঠানে মহা হৈচৈ! উপরের দুই আপু (আমার চেয়ে ৩/৪ বছরের বড় হবেন), পাশের বাসার ছেলেটা আর আরো দুইটা ছেলে বেলুন মতো দেখতে কিছু জিনিস নিয়ে খুব মজা করতেছে। কেউ সেই বেলুনের মাঝে পানি ভরে বড় করছে, কেউ ইলাস্টিক গুলো ছিঁড়ে ম্যাচের বাক্স জোড়া দিয়ে পিস্তল বানিয়েছে, আপুরা মুখ দিয়ে বেলুন ফুলিয়ে হাতে ধরে আছে। আমি ছুটতে ছুটতে গিয়ে হাজির। বললাম আমারেও একটা দাও না! মনে মনে ভাবি এতগুলো বেলুন এদের কে দিলো? কেউ দিতে চায় না! আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তা দেখে দুই আপুর মধ্যে বড়জনের মায়া হলো। তিনি হাফপ্যান্টের কোমরের পকেট থেকে চারকোনা একটা প্যাকেট বের করে আমারে কাছে ডাকলেন, আমার হাতে প্যাকেট দিয়ে কানে কানে বললেন, কাওকে বলবানা আমি দিছি। আমিতো কনফিউজড! বলি এইটা কি? আপু ফিক করে হেসে বলে, ক্যানো, বেলুন! বলে প্যাকেট ছিঁড়ে হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি বলি, বেলুনে তেল মাখানো! আপু বললেন, ট্যাপের পানিতে ধুয়ে ফেলো। তারপর আমিও খুব খুশী মনে তাদের সাথে মিশে গেলাম। বাসায় ফিরলে আম্মু আমার হাতে ঐ জিনিস দেখে মহা ঝাড়ি দিছিলো!






উফ! পরের পর্বে আরো লিখুম নে, হাত ব্যাথা করতেছে।

[টু বি চলিবেক....]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১১
৬২টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×