somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুঙ্গ থাঙ
আমার মাতৃভাষার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি । পৃথিবীর মাত্র তিন লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে । ভাষাটিকে ইউনেস্কো এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে ঘোষনা করেছে ।

আজ ১৬ই মার্চ । শহীদ সুদেষ্ণা দিবস ।

১৬ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৬ই মার্চ। শহীদ সুদেষ্ণা দিবস। ১৯৯৬ সালের এই দিনে মাতৃভাষার অধিকার চাইতে গিয়ে রাষ্ট্রের নৃশংস বন্দুকের গুলিতে প্রাণ দেন বত্রিশ বছর বয়স্কা এই মহিয়সী ভাষাবিপ্লবী। দুনিয়ায় এ যাবত দু’জন নারী ভাষার লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছেন। কমলা ভট্টাচার্য আসামের বাংলাভাষা আন্দোলনে শহীদ হন এবং সুদেষ্ণা সিংহ শহীদ হয়েছেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের জন্য। সুদেষ্ণাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম আদিবাসী ভাষাশহীদ যিনি মাতৃভাষা স্বীকৃতির আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেছেন।

আসামের বিলবাড়ী নামের একটি প্রত্যন্ত প্রামে ১৯৬৪ সালে সুদেষ্ণা সিংহের জন্ম। মা বাবা আদর করে নাম রেখেছিল বুলু। ছোটবেলা থেকেই স্কুলে বিজাতীয় ভাষায় শিক্ষাগ্রহনের যথার্থতা নিয়ে মা বাবাকে অসংখ্য প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তুলতো। বড় হয়ে সম্পৃক্ত হলেন মাতৃভাষা স্বীকৃতির আন্দোলনের সাথে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ভাষাবিপ্লবীরা বরাক উপত্যকায় ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে ৫০১ ঘন্টার রেল অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৬ই মার্চ, শনিবার বেলা ১২টা ১০ মিনিটে করিমগন্জ থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহি ট্রেনটি যখন কলকলিঘাটের গুংগাঝরি স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছিল সে সময় সত্যাগ্রহীরা ট্রেনটিকে শান্তিপুর্ণভাবে থামালো। কিন্তু বাধ সাধল রাস্ট্রের নিয়োজিত পুলিশ। তারা প্রায় বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষন শুরু করলো, সেখানে তাদের নির্দেশ দেবার জন্য ছিলনা কোন ম্যাজিষ্ট্রেট বা অফিসার। এর আগে পুলিশ কোন ফাকাঁ আওয়াজও করেনি। ঘটনার বিহ্বলতায় ছত্রভঙ্গ হওয়ার আগেই সত্যাগ্রহীরা আবিষ্কার করলেন বুকে গুলি খেয়ে মৃত্যূর কোলে ঢলে পড়েছেন বুলু। তার সাথে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে কাতরাচ্ছেন অরুন সিংহ(২৬), প্রমোদিনী সিংহ (২৫), কমলাকান্ত সিংহ (৪৫), দীপংকর সিংহ (২৫), প্রতাপ সিংহ(২৬), নমিতা সিংহ(৪০), রত্না সিংহ(২৪), বিকাশ সিংহ(২৭), শ্যামল সিংহ(২০) সহ অসংখ্য সত্যাগ্রহী। এ অবষ্থার মধ্যে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় করে, গ্রেফতার হন শতাধিক ভাষাবিপ্লবী।

আসামের বরাক উপত্যকায় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের দীর্ঘ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৬ই মার্চ একটি রক্তক্ষয়ী দিন। সুদেষ্ণার মৃত্যূর পর আন্দোলন আরো বেগবান হয় এবং একপর্যায়ে সহজ সরল মানুষগুলোর ভাষার দাবীকে উপেক্ষা করতে পারে না ভারত সরকার। ২০০১ সাল থেকে বরাক উপত্যকার ১৫২টি স্কুলে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা চালু হয়। এরপর ২০০৬ সালের ৮ই মার্চ ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী’ ভাষাকে রাষ্ট্রীয় অনুমোদন দেয়।

সুদেষ্ণা সিংহ মৃত্যূ দিয়ে একটি ভাষাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন তার মৃত্যূদশা থেকে। তাই ১৬ই মার্চ পৃথিবীর ভাষার ইতিহাসে এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ দিন। বাংলাদেশের সিলেট-মৌলবীবাজার-হবিগন্জ-সুনামগন্জে এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা সুদেষ্ণা এবং তার আত্মত্যাগের কথা পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করে থাকে। আসাম এবং ত্রিপুরা সরকার দিনটিকে ভাষা দিবস হিসাবে ঘোষনা করেছে।

সুদেষ্ণা, প্রিয় বোন, আজ পৃথিবীর সমস্ত ভালবাসা শুধু তোমার জন্য।



আ রো প ড়ু ন:
* পাভেল পার্থের লেখা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের দিনপন্জী
* উইকিপিডিয়ায় শহীদ সুদেষ্ণা সিংহ
* A tribute to Sudeshna Singha
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১:১৪
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×