somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা সেই মেয়েটি (গল্প)

১৬ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডাক্তার আজ কদিন হল মানুষের সাথে দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন। দেখতে আসাদের মাঝে অনেককেই পরিচিত মনে হয়, কিন্তু ঠিক খেয়াল করে উঠতে পারি না যে, আমরা কিভাবে পরিচিত। ডাক্তার বলেছেন আমি মস্তিষ্কের অটোমিউক কনডিশানে ভুগছি। যা ধীরে ধীরে সকল স্মৃতিকেই মুছে দেবে। আর এর প্রতিক্রিয়া শরীরের মাঝেও একই ভাবে দেখা দেবে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের সাথে সাথে শরীরটাও মৃত হয়ে যাবে আমার।
আজ দুই মাস তের দিন হল এই হসপিটালে আছি। জায়গাটি বেশ ভালোই। কেমন নিরিবিলি। সমস্যা একটাই, এখান থেকে আকাশ দেখা যায়না। আগে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে কালো রঙের চেয়ারটি জানালার কাছে নিয়ে গিয়ে আকাশ দেখতাম। দেখতাম চাঁদ তার আলো দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে আকাশটাকে। আবার মাঝে মাঝে দেখতাম আকাশটি কেমন আধারে ভরে গিয়েছে। সেখানে চাঁদ-তারার কেউই নেই। অন্ধকার রাতের সে আকাশের নিচে নিজেকে বড় একা মনে হত।
আজকাল কেন জানি সবসময়ই জেগে থাকি। ডাক্তারের দেয়া মোটা মোটা এন্টিবায়োটিকগুলোও ঠিক পেরে উঠছেনা মনে হয়। তাই জেগে জেগে ভুলে যাওয়া স্মৃতিগুলোকে আবার মনে কারার চেষ্টা করি। মনে করতে চাই আমার সেই আগলে রাখা কষ্টগুলোকে। কিন্তু আমি যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি কোন এক আলোআঁধারির ঘোড়ে।
আজ আমাকে দেখতে অনেক মানুষ এসেছে। এদের অধিকাংশই আমার কাছে অপরিচত। আমার ডান পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। মেয়েটি দেখতে উজ্জ্বল শ্যামলা। হালকা পাতলা গড়ন। নীল রঙের শাড়ী পড়েছে সে। আমার দিকে কেমন করুনা ভাব করে তাকিয়ে আছে। অবশ্য সাদা রঙের এই বেডে শুয়ে থাকা যে কারোর প্রতিই করুণা হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অন্য দিকে মুখ ফেরালাম। চিনতে না পারার বেদনাটা তার চোখের পানি হয়েই ঝড়ে পড়ছিল মনে হয়। চোখ বেয়ে পড়া সেই পানির কয়েকটি ফোটা আমার হাতের তালুতে এসে পড়ল। আমি তার দিকে আবার তাকালাম। সে তার মাঝে লুকিয়ে থাকা সকল সঙ্কোচ আর ভয়কে তুচ্ছ করে আমার হাত জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলামনা কি করা উচিত এই সময়। হয়তো আগে জানতাম যা এখন আর ঠিক মনে করতে পারছিনা।
সে আমার হাত ধরেই শাড়ির আচোল দিয়ে চোখ দুটি মুছতে মুছতে বলল, আমি তোমার রেকো। এই নামে শুধু তুমিই আমাকে ডাকতে। আমাদের দেখা করার কথা ছিল গত মেয়ে মাসের ১৭ তারিখে। আমার পারিবারিক সমস্যার কারণে তোমাকে না করে দিয়েছিলাম সেদিন। তুমি খুব অভিমান করেছিলে। তোমার বন্ধু হাসানের কাছ থেকে শুনেছি, তুমি ছোট বাচ্চার মত কেঁদেছিলে। আজ দেখ আমি এসেছি। আর তোমার পছন্দের সেই নীল শাড়িটিই পড়েছি।
আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি, আর তাকে স্মরণ করার আপ্রাণ চেষ্ঠা করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছুতেই তাকে মনে করতে পারছি না। তাকে কিছুক্ষন পর বাহিরে নিয়ে যাওয়া হল। আমাকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেখান থেকে তাকে দেখা যাচ্ছে। সে তখন কাঁদছে।

আজ আমার অনেক ঘুম পাচ্ছিল কেন জানি। মেয়েটির চলে যাওয়ার পর থেকেই কেমন চোখ দুটি নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে আসছিল। রাজ্যের ঘুম এসে ভর করেছে যেন চোখের পাতা দুটোয়। আমার এমন অবস্থা বাকিরাও মনে হয় খেয়াল করছিলেন। ডাক্তার সবাইকে বের করে দিলেন। সেই মেয়েটি কাচের দেয়ালের ওপার থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তার দিকে তাকিয়ে গভির ঘুমে তলিয়ে যাবার আগে শেষ চেষ্টাটা করলাম তাকে চিনতে পারার।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৬:৪৪
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×