somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচন ২০০৮ : ভোট-রঙ্গ

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

***
জীবনের প্রথম ভোট দিতে, গত নির্বাচনে, সাথে করে একটা কলম নিয়ে গিয়েছিলাম । একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি খানিক আগ্রহ থাকলেও গতবার সে দল থেকে যাকে প্রার্থী করা হলো তাকে নিয়ে ভীষণ ক্ষোভ ছিল । সেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে ব্যালটের পেছনে কলম দিয়ে লিখে এসেছিলাম, ”প্রার্থী পছন্দ হয় নি” । :|

এবার যাদের এরকম প্রচন্ড ক্ষোভ আছে, তাদের এরকম কলম-পেন্সিলের প্রয়োজন নেই; তারা সজোরে ”না” ভোটে সিল দিতে পারেন । এমনকি যারা বাংলাদেশের রাজনীতির রুগ্ন দশায় হতাশ হয়ে যারা কখনই ভোট দেননা তারা অন্তত ”না” ভোট দিয়ে সকল দলের রাজনীতিবিদদের কাছে আপনার প্রতিবাদ জানিয়ে দিন ।


***

নির্বাচনের দিন রাস্তাঘাটে মানুষের ঢল দেখলে কেমন ঈদ-ঈদ লাগে ! একটু সেজেগুজে পিতৃদেবকে সাথে নিয়ে বার হলাম; সাথে ভোটার আই.ডি কার্ড; আই.ডি কার্ডে নিজের ছবির ভয়াবহ দশা তাকিয়ে দেখার সাহস হয়না এখনও! :((



এলাকায় প্রতিটা মোড়ে মোড়েই দেখলাম প্রধান দু’টি দলের স্বেচ্ছাসেবকরা চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আছে; সেখানে উপচে পড়া ভিড় । কারণ হলো, কেন্দ্রের ভোটার তালিকার ক্রমিক নম্বর জেনে নেয়া । এই ক্রমিক নম্বর না জেনে কেন্দ্রে গেলে সারাদিন হন্যে হয়ে কেন্দ্রের এ-কক্ষ থেকে সে-কক্ষের বিশাল কক্ষপথ আবর্তন করতে যেয়ে এই শীতেও গলদঘর্ম হতে হবে।

***

আই.ডি কার্ড দেখিয়ে ক্রমিক নং খুঁজে বার করতে যেয়ে দেখি আরেক ফ্যাকড়া । পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টিয়েও আমার নাম মেলেনা; এদের তালিকাটি ক্রমান্বয়েও সাজানো না , তাই বোঝাও যাচ্ছিল না টেবিল ঘিরে বসা ঠিক কোন কর্মীর কাছে দিলে নাম খুঁজে পাওয়া যাবে। একজন ব্যর্থ হয়ে পাশের জনকে দিলে, সে অবশ্য খুব ঝটপট নাম খুঁজে পেল ; তাদের দলীয় প্রচারণা মূলক একটা কাগেজ লিখে দিল নাম, আই.ডি নং আর ভোটার ক্রমিক নং ।



আমার ভোটার আই.ডি কার্ডে আবার বাংলা নামে বিশাল ভুল ছিল; তবে ইংরেজী নাম ঠিক ছিল (জীবনে কোন কিছুই একবারে ঝামেলামুক্ত ভাবে হলো না আজো X( ) কর্মীদের সাথের তালিকায় দেখলাম নামধাম ঠিকঠাক আছে । তারপরও কর্মীরা বলে দিল আই.ডি কার্ড দেখানোর দরকার নেই; তাতে হয়ত ভোট প্রদান করতে নাও দিতে পারে। ই.সি. ’র ভাষণ মনে পড়ল; উনি বলেছিলেন কেন্দ্রের এজেন্টদের কাছে আই.ডি কার্ড দেখানোর প্রয়োজন নেই । যাক ! তাহলে, আই.ডি কার্ড না দেখানোর ব্যাপারটায় কোন রকম লুকোচুরি হচ্ছে না । :D

***



এক সময় "আমাদের বিদ্যালয়" রচনার শুরুই করতাম, ”পল্লবী এম.আই. মডেল হাই স্কুল পানির ট্যাংকির নীচে অবস্থিত...” ! যদিও খুব আশে-পাশেই থাকি তারপরও অনেক অনেক বছর পর সেই স্কুলের হাট করে খুলে রাখা বিশাল ফটক দিয়ে মাঠে প্রবেশ করলাম । বিশাল মাঠ কিন্তু কেমন সাহারা মরুভূমি; এতো বালি চারপাশে! শীতের দিনে শিশির ফোঁটায় মাখামাখি মাঠ ভর্তি সবুজ ঘাস তেমন নেই !

সারা এলাকার রাস্তা-ঘাট জুড়ে যেমন মানুষ তেমনি মাঠ জুড়ে মানুষ আর মানুষ; দুটো প্রধান বিল্ডিং এর একটাতে মহিলাদের আর অন্যটিকে পুরুষদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে দেখলাম । ক্রমিক নং দেখে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবক পুলিশ কিনবা দলীয় কর্মীরা সবাইকে যার যার কক্ষ দেখিয়ে দিচ্ছিলেন ।

***
বিল্ডিং –এ প্রবেশ করতেই পরিচিত একজনকে দেখলাম হুড়মুড় করে ভোট কক্ষ থেকে বার হয়ে এলো; আমাকে দেখেই জানাল, তার নাম, স্বামীর নাম, কেন্দ্রের তালিকায় ভুল থাকায় তাকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি ! জানতে চাইলাম উনি বাইরে থেকে ক্রমিক নম্বর নিয়েছেন কিনা । উনি বললেন, বাইরের কর্মীরা যে নাম্বার দিল ওটার সাথেই মিল পেল না এখানে। আমি উনাকে আবারও যাচাই করে দেখতে বললাম ।

***

লাইনে দাঁড়িয়ে এই অবসরে আশে-পাশে তাকিয়ে দেখছিলাম; অনেক পুরনো পরিচিত মুখ দেখলাম, আবার অনেক এমনি এমনি মুখচেনা মানুষদেরও দেখলাম । স্কুল জীবনে একরকম টানা প্রথম হওয়া সহপাঠিকে এক ঝলক দেখা গেল, তাও বেশ কয়েক বছর পরে; মেয়েটা এখনও তেমনই আছে ! বাড়ির একটু সামনের পিঠার দোকানীকে দেখলাম; পাশের লাইনে দাঁড়ানো একহারা গড়নের এক সুন্দরীকে দেখে মনে হলো, ”আমি চিনি গো চিনি তোমারে ...”; কিন্তু কেন-কিভাবে তা মনে করতে মস্তিস্কে খচখচে অবস্থা । সম্ভাব্য সবক’টি জায়গায় নিজেকে আর সেই সুন্দরীকে এক সাথে দাঁড় করালাম। অবশেষে মস্তিস্কের নিউরন সহযোগিতা করল । B-)

***

হুট করে এক বৃদ্ধা , প্রায় ৮০-৯০ বছর তো হবেই, কিভাবে জানি আমার সামনে চলে এসেই কাঁপা কাঁপা হাতে ক্রমিক নং লেখা কাগজটা দেখিয়ে পোলিং এজেন্টদের বললেন, ”....... মার্কায় ভোট দিব” । ভোটের মার্কার কথা প্রকাশ্যে বলে দেয়ায় মহিলা পোলিং এজেন্ট বৃদ্ধাকে চুপ হতে বললেন তাড়াতাড়ি । বয়সের ভাড়ে বেঁকে যাওয়া শরীরের বৃদ্ধা সেটা বুঝতেই পারছেনা; উনি বলেই যাচ্ছেন । বৃদ্ধা আরো যোগ করলেন, ”একা ভোট দিতে পারবোনা, কাওরে লাগবো সাথে” ।

এইবার হলো মুশকিল; কে যাবে সাথে। পোলিং এজেন্ট কক্ষের "....." দলের কর্মীকে বললেন, ”আপনি যাবেন কি ? আমাদের তো যাওয়ার নিয়ম নেই মনে হয়” । "..." কর্মীও বললেন, ”আমিও তো যেতে পারিনা উনার সাথে, উনার নিজেরই কাউকে লাগবে” । বৃদ্ধার সাথে উনার ছেলেকে পাওয়া গেল বলে রক্ষে; মহিলা পোলিং এজেন্ট তখনও বৃদ্ধাকে চুপ করিয়ে যাচ্ছেন তার "......" মার্কার ভোটের কথা জনসমক্ষে জোরে-শোরে বলে ফেলায় । :P

***

লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম, সেই সুন্দরী ঠিক ভোট কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে কথা বলছে । খুবই দৃষ্টিকটু ; কারণ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নিয়মে ভোট কেন্দ্রে অনুমতি ছাড়া মুঠোফোন নিষিদ্ধ । দেশের শিক্ষিত সমাজের কাছে এই সচেতনতাটুকু আশা করাই যায়। জরুরী প্রয়োজনে সাথে করে মুঠোফোন থাকতে পারে হয়ত -পকেটে বা ব্যাগে; তবে ঠিক ভোট-কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে এরকম অসচেতন আচরণ অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করতে পারে ।

অবশ্য এটাও ঠিক যে, কারো সাথে মুঠোফোন আছে কিনা তা নিরাপত্তা কর্মীদের কেউ তল্লাশী করে দেখছিল বলে মনে হলো না । এজন্যই বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে ভোটারদের জন্য অপেক্ষারত আত্মীয়-স্বজন-পরিবার-পরিজন-বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে বেশ অনেককেই মুঠোফোন হাতে দেখা গেল। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাদের ঘোষিত মুঠোফোন সংক্রান্ত নিয়ম যথার্থভাবে পালিত হয়েছে কি না তা কিভাবে যাচাই করে দেখবেন তা ঠিক বোধগম্য হচ্ছিল না।

***

একটা কক্ষকে ভাগ করতেই মাঝে বিশাল একটা কাপড় ঝুলানো ছিল; কাপড়টি অবধারিত ভাবেই কোন কমিউনিটি সেন্টার থেকে আনা হয়েছে; কারণ, কাপড়ের গায়ে রঙির নকশা আর প্রতি ভাঁজে লেখা ”শুভ বিবাহ” !:P

***

অত:পর বুড়ো আঙ্গুলের উপর কালি মেখে, কাপড় ঘেরা দেয়া এক কোণে, ব্যালট কাগজ নিয়ে সংগোপনে ভোট প্রদান করলাম। স্বচ্ছ্ব ব্যালট বাক্স দেখতে ভালই লাগছিল; টুপ করে ফেলে দিলাম তাতে ভাজ করা ব্যালট কাগজ ।

***


নির্বাচন অধ্যায় শেষ হলো কিন্তু শুরু হলো আরেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । কে জিতবে ? কে শাসন ভার গ্রহণ করবে ? আসলেই কোন পরিবর্তন হলো কি ? অভাগা জাতি কি এবার একটু উন্নতির ছোঁয়া পাবে ? আগামীতে ক্ষমতাশীন সরকার দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে ? সরকার কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মুখর জনতার পাশে এসে দাঁড়াবে ?

সময় এসেছে পর্যবেক্ষণের ...
সময় এলো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ...
লাল-সবুজের চেতনা যেন সমুন্নত থাকে ...


=========
পুনশ্চ : ছবিগুলো বিকালের দিকে নেয়া; ভোটের সময়সূচীর প্রায় শেষের দিকে এবং অবশ্যই কেন্দ্রের আশেপাশের; সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও কেন্দ্রের ভেতরের কোন ছবি তুলিনি ইচ্ছে করেই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৪০
৫৪টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×