somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯ ডিসেম্বর ২০১০, দ্বিতীয় বাংলা ব্লগ দিবসঃ যা হলো, যা হলো না, যা হতে পারতো

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগ এর সংজ্ঞায়নে এখন যথেষ্ট বহুমুখীতা এসেছে। এক সময় ব্লগ বলতে বোঝানো হতো আন্তর্জালিক ডায়েরী। তারপর এর ব্যবহার, প্রচার একে বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছে। ক্রমাগত ব্লগ এমন একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠলো যেখানে একই সাথে বিদ্যমান পাওয়া গেল তত্ত্ব, তথ্য এবং সাহিত্য। বাঙলা ব্লগাররা ব্লগের সংজ্ঞায়নের বিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছে প্রতি বছর। বাংলা ব্লগিংয়ের পাঁচ বছর বয়সে একে আর বিকল্প গণমাধ্যম নয় বরং নাগরিক সাংবাদিকতার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে দ্বিতীয় বাংলা ব্লগ দিবসে আড্ডাচ্ছলে করা উদযাপন অনুষ্ঠানে এই বিশেষ সংজ্ঞাটির উপর জোর দেয়াটা লক্ষণীয় ছিল।

বাংলা ব্লগ দিবস এর উদযাপন নিয়ে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ না থাকলেও এই দিবসটি কারা উদযাপন করবে, কবে উদযাপিত হবে তা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ দলগত অবস্থান সুষ্পষ্ট। কেউ কেউ অবশ্য নীরব অবস্থানে আছেন। মৌন্যতা সম্মতির লক্ষণ। তবে এই সম্মতি পক্ষে নাকি বিপক্ষে তা বুঝতে বিভিন্ন ব্লগ ও ব্লগারদের ব্লগাতিহাস বিচার-বিশ্লেষণ প্রয়োজন। পক্ষের সাবলীলতা, স্বতঃস্ফূর্ততা, প্রচারণা অনেক প্রাণবন্ত। কিন্তু বিপক্ষের অপপ্রচার ও খেদ-প্রচারের চেষ্টাও আন্তর্জালে এখনো অল্পবিস্তর দেখা যায়। ধরে নেয়া যায়, কারো কারো নীরব অবস্থানের পেছনের কারণ এই ব্লগ রাজনীতি। কেউ কেউ এই রাজনীতি এড়াতে, কাউকে সরাসরি সমর্থন জানাতে বিরত থাকেন, কারো বিরোধীতা করা থেকেও বিরত থাকেন। তাতে পক্ষ-বিপক্ষ দু’পক্ষের সাথে সহজ-স্বাভাবিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা যায়।

এই নাতিদীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকার কারণ হলো কিছুদিন আগে উদযাপিত হয়ে যাওয়া বাংলা ব্লগ দিবস নিয়ে দু’টো কথা বলার সুযোগ-সুবিধা খোঁজা। এরমধ্যে ব্লগাররা তাদের বহুমাত্রিক অনুভূতি ব্যক্ত করে ফেলেছেন। কেউ কেউ চেনা-অচেনা ব্লগার-মুখ দেখে আনন্দে উদ্বেলিত। ফুচকা-জিলাপী’র কথা স্বরণ করে কারো কারো জিভে জল আসছে এখনো। কেউ কেউ আয়োজন নিয়ে মৃদু মনোক্ষুন্ন। কেউ কেউ কারো কারো বক্তব্য নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। আয়োজনে স্বশরীরে অংশগ্রহণ, অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ, আলোচনা শ্রবণ এবং পরবর্তীতে ব্লগে বেশ কিছু ব্লগালোচনা পঠন এর পর আমিও উচ্চমাত্রায় অনূভূতিপ্রবণ হয়ে আমার দু’চারটে বা তারও বেশী মতামত তুলে ধরার চেষ্টা করলাম ।

*********************************************************
বাংলা ব্লগ দিবস বনাম সামহোয়্যার ইন ব্লগ দিবস
*********************************************************
বাংলা ব্লগ দিবস সংক্রান্ত প্রস্তাবনার জন্ম যেহেতু সামহোয়্যার ইন ব্লগ থেকেই তাই প্রাথমিক পর্যায়ে এই ব্লগটিকেই উদ্যোগী হয়ে বাংলা ব্লগ দিবস আয়োজনে তৎপর হতে দেখা যাবে, সেটাই স্বাভাবিক। কেউ কেউ সামহোয়্যার ইন এর এই তৎপরতাকে ভিন্ন অর্থ দিতে পুরো দিবসটির নয়া নামকরণ করেছেন, সামহোয়্যার ইন ব্লগ দিবস। এটা অবশ্যই হিংসাত্মক প্রচারণা । তবে ভষ্মখনি থেকে হীরকখণ্ড খুঁজে পাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। এই অপপ্রচারের ভেতর থেকে শিক্ষণীয় অংশটুকু ছেঁকে নিতে হবে। যেহেতু বাংলা ব্লগ দিবস একটি সার্বজনীন দিবস। একে অন্তত সামহোয়্যার ইনের প্রাতিষ্ঠানিক উঠোন ডিঙ্গিয়ে বাইরের কাদা-মাটি-হাওয়া-পানি-ভিড়ভাট্টার মাঝে গড়াগড়ি খেতে দেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।

সুযোগ কে করে দেবে? সুযোগ কিভাবে করে দেবে? পথিকৃৎ হিসেবে সামহোয়্যার ইন ব্লগকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সম্ভবত সে কারণেই সামহোয়্যারের মঞ্চে বাংলা ব্লগ দিবসের আয়োজন হয়েছে দু’বার। কিন্তু সামহোয়্যার ইন ব্লগ কর্তৃপক্ষের এখন জায়গা করে দিতে হবে, ছেড়ে দিতে হবে অথবা গড়ে দিতে হবে অন্যান্য ব্লগের পরিচালনা কমিটিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম পরিমাণ উদ্যোমী ভূমিকা রাখার জন্য। কেবল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সৌজন্য যোগাযোগ এবং বিভিন্ন ব্লগের এ্যাডমিন/মডারেটরদের নিমন্ত্রণপত্র হিসেবে একটি ইমেইল নয়, বরং বিভিন্ন ব্লগের কর্তৃপক্ষের সাথে ব্লগ দিবসের বহুপূর্বেই এই নিয়ে মুখোমুখি মত বিনিময় আলোচনা করা যেতে পারে। সামহোয়্যার ইন ব্লগ বড়জোর এখানে প্রধান সমন্বয়কারীর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। নিশ্চিত করতে পারে ব্লগ দিবস আয়োজনে কেবল নিজ ব্লগের পরিচিত মুখ নয়, বরং অন্য ব্লগের পরিচালকদের, ব্লগারদের আন্তরিক পদচারণা। এই সমন্বয় সাধন সফল হলে বাংলা ব্লগ দিবস উদযাপন আর কোথায় কোথায় এবং আর কিভাবে পালন করা যেতে পারে, সবাই সে পরামর্শের ফুলঝুড়ি বইয়ে দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আশা করছি, বাংলা ব্লগ দিবসে এককভাবে কোন আয়োজক, আয়োজন নয়, যুগ্ম আয়োজক, আয়োজন দেখাটা অনেক বেশী সুখকর হবে যে কোন ব্লগ ও ব্লগারের কাছে।

****************************
ব্লগ এ্যাকশন ডে
****************************
গতবছর ব্লগ দিবসে আমার ব্যক্তিগত একটি অনুসন্ধিৎসা ছিল, কেন একটি দিবসের প্রয়োজন পড়ে। অথবা কেন বাংলা ব্লগ দিবসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। আমি এখন পর্যন্ত কোন দিবস বিরোধী নই। আমার জানার ও জানানোর উদ্দেশ্য ছিল দিবস আয়োজক এবং পালনকারীদের মাঝে দিবসের উদ্দেশ্য-বিধেয় পরিস্কার কিনা। ধরে নেই প্রাথমিক ভাবে বাংলা ভাষার চর্চাকে স্বীকৃতি দিতে বাংলা ব্লগ দিবস পালন। কিন্তু এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। অথবা প্রতি বছর বাংলা ব্লগ দিবসকে কেবল ব্লগারদের মিলনমেলাতেই সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্লগ দিবস পালিত হয়। এখানে উল্লেখ করা যায়, ব্লগ এ্যাকশন ডে' কথা। যা পালিত হয় প্রতি বছর ১৫ই অক্টোবর। যতদূর জানা যায়, ব্লগ এ্যাকশন ডে’তে একই দিনে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ব্লগে পোস্ট দিতে উৎসাহিত করা হয়। বিষয় হিসেবে বেছে নেয়া হয়, জনসচেতনামূলক কোন ইস্যুকে। এর মধ্যে ব্লগ এ্যাকশন ডে'র টাইটেলের সাথে সাব-টাইটেল হিসেবে এসেছে, সুপেয় পানি সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। বাংলা ব্লগ দিবস পালনে প্রতি বছর আমরা ব্লগাররাও একেকটি জনগুরুত্বপূর্ণ, সচেতনতামূলক বিষয়কে তুলে ধরতে পারি।

বাংলা ব্লগ দিবস নিয়ে লোগো করা যেতে পারে প্রতি বছর। যেখানে সচেতনতামূলক ইস্যুটিরও উল্লেখ থাকতে পারে স্লোগান আকারে। বিভিন্ন ব্লগে সেই ইস্যুতে আসা পোস্টগুলোর একটি বিশেষ সংকলন লিংক প্রদর্শিত হতে পারে প্রতিটি ব্লগে। লোগো, স্লোগান নিয়ে যে কোন ব্লগ উদ্যোগী হতে পারে।


**************************************
ব্লগ দিবস অনুষ্ঠান পরিচালনা
**************************************
ব্লগার কৌশিক বাকপটু। চৌকষ ও সাবলীল। অনেক সিনিয়র ব্লগার হওয়ায় ব্লগ সংক্রান্ত আলোচনা দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে পারেন। বিভিন্ন ব্লগ আড্ডায় হৈচৈ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে একে একে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেয়ার মত দক্ষ উপস্থাপক তিনি। গতবারের বাংলা ব্লগ দিবসের অনুষ্ঠানে মঞ্চ পরিচালনায় তিনি ছিলেন। ছিলেন এবারও। গতবারের চেয়ে এবারের উপস্থাপনা আরো বেশী প্রাণবন্ত ছিল। কিন্তু ব্লগার কৌশিক এখনো সামহোয়্যার ইন ব্লগের ব্লগার বলে অধিক পরিচিত ব্লগারদের কাছে। তাই বাংলা ব্লগ দিবস অনুষ্ঠানে অন্য কোন ব্লগের ব্লগার পরিচয়ে পরিচিত কাউকে অন্তত সহযোগী উপস্থাপক হিসেবে পেলে সেই ’মিশ্র-রসায়ন’ অনুষ্ঠানটিকে আরো বৈচিত্র্যময় করতে পারতো। আগামীতে বিভিন্ন ব্লগের সমন্বয়ে এধরনের বিশাল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন উপস্থাপক দিয়েও পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা যেতে পারে।

***************************************************
অন্যান্য ব্লগের কর্তৃপক্ষ ও ব্লগার পরিচিতি
***************************************************
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, বুঝি সামহোয়্যার ইন ব্লগের ব্লগাররা মিলেই বাংলা ব্লগ দিবস পালন করেছে। অথচ অন্য ব্লগের ব্লগারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। একে একে এসেছিলেন অন্যান্য ব্লগ পরিচালনায় জড়িত ব্যক্তিরাও। অন্যান্য ব্লগের ব্লগার ও কর্তৃপক্ষকে সম্মুখ মঞ্চে বেশী বেশী ফ্লোর দেয়া জরুরী ছিল। তাতে অবশ্যই দুটো ভিন্ন ব্লগ পরিবেশের ’ভিউ এক্সচেঞ্জ’ এর বিশাল সুযোগ তৈরী হয়। এবং কেবল ব্লগ নয়, ব্লগাররাও সার্বজনীন হওয়ার সুযোগ পায়।

উদাহরণ হিসেব বলা যায়, এবার অর্ফিয়াস নিকে একজন ব্লগার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ব্লগ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছেন। ব্লগার অর্ফিয়াস প্রথম আলো ব্লগে স্বনামে ব্লগিং করতেন/করেন। এখন সম্ভবত তিনি সদ্যজাত মুক্তব্লগের পরিচালনা/পরামর্শক কমিটিতে আছেন। অথবা স্বনামে কেবল ব্লগার হিসেবে আছেন। সামহোয়্যার ইন এর অনেক ব্লগার এটা নাও জানতে পারে। উনাকে পুরস্কার বিতরনী পর্বের পর মঞ্চে ডেকে কিছুক্ষণ কথা বলার সুযোগ দিলে সম্ভবত অন্য ব্লগে উনার পদচারণার বিষয়টি উপস্থিত ব্লগাররা জানতে পারতেন। বিশেষত যেহেতু পুরস্কারপ্রাপ্তদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন তাই উনার কাছে অভিব্যক্তি জানতে চাওয়ার পর কিছু বাড়তি প্রশ্ন জানতে চাওয়া যেতো। যেমন, উনি অন্য কোন ব্লগে লেখেন কিনা। বা কী নিকে লিখেন। প্রশ্ন করা যেতে পারতো, অন্য ব্লগে স্বনামে লেখার পরও সামহোয়্যারে উনি ছদ্মনামে লেখেন কেন? অথবা উনার কাছে জানতে চাওয়া যেতো, যেহেতু এই প্রতিযোগিতা উন্মুক্ত ছিল সবার জন্য, তাই উনি স্বনামে এবং অন্য ব্লগের হয়েও পাঠাতে পারতেন। এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগ টিম অন্য ব্লগের একটি পোস্টকে পুরস্কৃত করে প্রতিযোগিতাটিকে সার্বজনীন করে তোলার সুযোগ পেতো। ব্লগার ইলিয়াছ চৌধুরী ছিলেন অনুষ্ঠানে। উনি অবশ্য বক্তব্যও দিয়েছেন। কিন্তু যে বিষয়টা অনেকের কাছে খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি , ইদানীং সামহোয়্যার ইন ব্লগে বেশী দেখা গেলেও উনাকে সাধারণত প্রথম আলো ব্লগে বেশী সরব দেখা যায়। প্রথম আলো ব্লগের ব্লগারদের মাঝেই উনি পরিচিত বেশী।

এই উদাহরণ দেয়ার কারণ হলো, যেহেতু আঙ্গিনাটা সামহোয়্যার ইন এর, তাই সেখানে অন্যান্য ব্লগের কারা কারা পা রেখেছেন, সেটাই হাইলাইট করা প্রয়োজন খুব গুরুত্বের সাথে। অথবা একাধিক ব্লগে লেখেন কারা কারা তা জানতে চাওয়া যেতো সবার কাছে একে একে। অথবা যারা একাধিক ব্লগে লেখেন তারা কি একই পোস্ট কপি-পেস্ট করেন নাকি ভিন্ন ভিন্ন ব্লগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পোস্ট দেন এমন প্রশ্ন করা যেতো সুযোগ বুঝে। অথবা জানতে চাওয়া যেতো কোন ব্লগের ফিচার ইউজার ফ্রেণ্ডলি বেশী? কোন ব্লগের ইন্টারফেস আকর্ষণীয় বেশী? যারা একাধিক ব্লগে ব্লগিং করেন, তাদের কাছে জানতে চাওয়া যেতো সবকিছু মিলিয়ে কোন ব্লগে ব্লগিং করতে স্বাচ্ছন্দ পান তারা?

সামহোয়্যার ইন ব্লগের মঞ্চে সামহোয়্যার ইন ব্লগের ব্লগাররা ঘরের মানুষ হিসেবে সামান্য কম ফ্লোর নিয়ে অতিথি বিবেচনা করে অন্যান্য ব্লগের ব্লগারদের বেশী বেশী বলতে উৎসাহিত করার সুযোগ নিতে পারতেন।

*********************************************
ব্লগারদের নিয়ে আরো আরো খুনসুঁটি
*********************************************
তেমন কোন লিখিত স্ক্রিপ্ট মেনে এরকম অনুষ্ঠান চালনা করার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ তাতে আয়োজনটা প্রাণ হারায়। ব্লগারদের মিলন সভায় কথার অভাব নেই। তারপরও এমন একটি অনুষ্ঠানে ব্লগার পরিচিতি ছাড়াও আর কী কী করা যেতে পারে তার একটি খসড়া পরিকল্পনা আগে থেকে ভেবে রাখা যেতে পারে। ধরে নিচ্ছি এবারও তেমন কিছু ছিল। তবে তাতে বৈচিত্র্যতা কম কম ছিল অথবা সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখতে গেলে, প্রত্যাশা মাফিক ছিল না। পরবর্তীতে ব্লগ দিবস আরো সুসংগঠিত ভাবে পালিত হলে তখন হয়ত অনুষ্ঠানের পূর্বে রিহার্সেলেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।

একটা মজার ইভেন্ট ছিল; সবাইকে বিশাল একটি বৃত্তাকার মানববন্ধন(ব্লগার বন্ধন) করে দাঁড়াতে হলো। সেখান থেকে একে একে ডানপন্থী দিকে মাইক্রোফোন ঘুরতে থাকে ব্লগারদের হাত থেকে হাতে। এতে অনেকে অনেক কথা বলার সুযোগ পান। তবে সামহোয়্যার ইন এর ব্লগার ছাড়া অন্যান্য ব্লগারদের এই বৃত্তের আওতায় আনার প্রতি খুব সচেতনভাবে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন ছিল। এই খেলায় একেবারে প্রাচীন ব্লগারদের একবার আলাদা করা হয়। আবার আলাদা করা হয় নতুন ব্লগারদের। এটাও বেশ মজার। কিন্তু আরো মজার অবকাশ ছিল। ব্লগ এবং ব্লগের বাইরে ব্লগাড্ডাগুলোতে এখন তরুণ ব্লগারদের আগমণ খুব বেশী। তাই এখনকার তরুণ প্রজন্ম ব্লগ থেকে কী প্রত্যাশা করে তা জানার সুযোগ নেয়া যেতো। আরো জানার সুযোগ ছিল ব্লগার হিসেবে যারা প্রাচীন তারা তাদের ব্লগিং ধারার বিপরীতে নব্য ব্লগারদের ব্লগিংয়ের ধারাকে কেমন চোখে দেখেন? ঠিক এর উল্টোটা চানতে চাওয়ার অবকাশ ছিল নতুন ব্লগারদের কাছ থেকে। ব্লগে নবীণ অথচ বয়সে প্রবীণ, এবং ব্লগে প্রবীণ অথচ বয়সে নবীণ ব্লগারদেরও আলাদা ভাগে ভাগ করা যেতো। শোনা যেতে পারতো এই ’জেনারেশন গ্যাপ’গত ব্লগিং ভাবনা।

************************************
গণমাধ্যমে বাংলা ব্লগ দিবস
************************************
যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল থেকে ক্যামেরা এসেছিল তাই এই অনুষ্ঠান ভাল ভাবে কাভারেজ পায় টিভিতে। পত্রিকাগুলোর বেলায় নিশ্চিত নই যে সবক’টি প্রধান প্রধান পত্রিকায় খবর এসেছে কিনা। তবে কিছু কিছু পত্রপত্রিকাতে খবর ছাপা হয়েছে বাংলা ব্লগ দিবস উদযাপন নিয়ে । বাংলা ব্লগ দিবসকে প্রতিষ্ঠা দিতে গণমাধ্যমে এই প্রচার আরো নিয়মিত ও নিশ্চিত করতে হবে। তাতে এর সার্বজনীনতা দ্রুততর হবে। সামহোয়্যার ইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ নোটিশ বোর্ড নিক থেকে বাংলা ব্লগ দিবস নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রচারিত সকল খবরের লিংক, পেপার কাটিং ইমেজ ও টিভি ফুটেজগুলো নিয়ে একটি পোস্ট দিতে পারে। ডয়চে ভেলে তাদের খবরে জানিয়েছে এবার প্রথমবারের মত বাংলা ব্লগ দিবস পালিত হলো। সামহোয়্যার ইন ব্লগ টিম এর কোন সংশোধনী পাঠিয়েছে কিনা জানিনা। না পাঠালে এটা অবশ্যই সংবাদদাতাকে পরিস্কার করে জানানো উচিৎ, এ বছর দ্বিতীয়বারের মত বাংলা ব্লগ দিবস পালিত হয়েছে।

*********************************
মডু’র সাথে পরিচিতি
*********************************
বসে বসে অনুষ্ঠান শুরুর অপেক্ষা করছি। ব্লগার জিশান শাহ ইকরাম ফোনে অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত একজন ব্লগারের সাথে আলাপরত। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কে কে আসছে? এপাশ থেকে উনাকে বলতে শুনলাম, সব মডু’রা চলে আসছে। আমি তাকিয়ে দেখলাম এবং বুঝলাম, যেহেতু সবার মাঝে উনিও আছেন, তাহলে উনিও একজন মডু!!!!!

************************
অন টাইম শো
************************
বাঙালির অনুষ্ঠান কোনকালেই যথাসময়ে শুরু হয়না, এমন সব জল্পনাকল্পনার মুখে চুনকালি লেপে কথা মত ঠিক ঠিক পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পুরো কৃতীত্ব আয়োজকদের অবশ্য অবশ্যই দিতে হবে।

**********************************************
স্ট্যাচু অফ লিবার্টি ও ঠেলাগাড়িওয়ালা
**********************************************
আমার ধারনা স্ট্যাচু অফ লিবার্টিও মাঝে মাঝে মশাল নামিয়ে হাত ঝাড়া দিয়ে নেয়। অথচ লাভলু’দা পুরো অনুষ্ঠানে নির্বিকার ভঙ্গিতে ওয়েব ক্যাম উঁচিয়ে ধরে রেখেছিলেন এক হাতে। স্ট্যাচু অফ ব্লগার, মূর্তিমান লাভলু’দাকে পুরো মঞ্চে ঠেলা সহায়তা দিয়েছেন ব্লগার জীবনানন্দ দাশের ছায়া। আমি জানিনা উনি ইতিপূর্বে ট্রলি ঠেলার কোন পেশায় জড়িত ছিলেন কিনা। অনেক সময় কোন কোন পোস্টে ব্লগাররা ’দিলাম ঠেলা’ টাইপ মন্তব্য করে। হয়ত এখান থেকেই উনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। আগামীতে যে কোন ঠেলাঠেলিতে তাকে অগ্রগামি ভূমিকায় দেখা যাবে নিশ্চিত।

**************************
খাইদাই
**************************
ফুচকা ঝাল ঝাল মজাদার ছিল। কুড়মুড়ে, মচমচে মজাদার ছিল জিলাপি। এইরকম পাতলা, মচমচে জিলাপি আমার ব্যাপক পছন্দ। এতোক্ষণ এতো এতো জিলাপির প্যাঁচ দিলাম কেবল এই একটা কথা জানার জন্য, অনুষ্ঠানে যে জিলাপি খাওয়ানো হলো, আমার ধারণা সেটা গুলশান-১ এর ফকরুদ্দিন রেস্টুরেন্ট থেকে আনানো। কর্তৃপক্ষ অনুগ্রহ করে এইটা জানিয়ে যান, কোন দোকানের জিলাপি খাইলাম?



পুনশ্চঃ
আমি অনুষ্ঠানের মধ্যে দুই দফা গায়েব ছিলাম। কারণ টিটি খেলায় বিজি ছিলাম। কোথাও গিয়ে বছর খানেক পর টেবিল, ব্যাট-বল দেখে না খেলে থাকা গেল না। খেলতে দেয়ার জন্য সামু’র ডেভু’দের ধইন্যা। কিন্তু কেউ যেন না ভাবে টিটি খেলতে গিয়ে আলোচনায় ফাঁকি দিয়েছি আমি। আমার চউক্ষে যে কিছু এড়ায় নাই এই পোস্ট তারই প্রমাণ হয়ে রইল। হুমমমম!

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০২
৪৬টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×