somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতি দয়ালু কিভাবে নামাজের মধুরতা আস্বাদন করা যায় পর্ব ১০

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ওযু আমরা সবাই জানি, যথাযথ ভাবে ওযু করা নামাজের একটি পূর্বশর্ত। এ কারনে আমরা ওযুকে কেবল নামাজে দাঁড়ানোর আগের একটি প্রয়োজনীয় কাজ মনে করি। আমরা ভাবি, ঠিকভাবে ওযু না হলে নামাজে দাড়াতে পারব না, তাই আমরা এই নিয়তেই ওযু করি। কিন্তু ওযুর মহত্ত্ব এর চেয়ে অনেক বেশি। এটা দুঃখজনক যে আমরা ওযু থেকে কোনরকম উজ্জীবিত না হয়েই এতো বছর নামায পড়ে চলছি। ওযুর মধ্যেও কিছু গুপ্তধন আছে। কিন্তু এই গুপ্তধনের স্বাদ আস্বাদন করতে আগে আমাদের নিজেদেরকে একটু পরিবর্তন করতে হবে। নিয়ত আব্দুল্লাহ বিন মোবারক বলেছেন, “এমন কত কাজ আছে যা ছোট মনে করে করা হলেও তা হয় বেশি সম্মানিত; আবার এমন কত কাজ আছে যা অনেক বড় মনে করে করা হলেও তা হয়ে যায় সামান্য; নিয়তের কারনে।” প্রথমে আমরা ওযুতে যে পরিবর্তন আনতে পারি তা হল এ থেকে প্রাপ্ত সওয়াবের পরিমান। কেউ কেউ বলতে পারে – ‘আমি তো ওযুর সমস্ত সুন্নাত পালন করি, পানির অপচয় করি না, শুরুতে শেষে দোয়া করি।’ তাহলে আর কিভাবে সওয়াব এর পরিমান বাড়ানো যাবে? লক্ষ্য করলে দেখবেন, ওযুতে আমরা যা যা করছি তা হল বাহ্যিক। যা বাকি রয়ে গেল তা হল – অন্তর। ইবনে আল কায়্যিম বলেছেন, যে বেক্তি অল্প আমল করল সে আল্লাহর নিকট বেশি আমলকারীর চেয়ে প্রিয় হতে পারে, যদি অল্প আমলকারীর অন্তর তার আমলে যুক্ত থাকে। এটা বোঝাতে তিনি একটি গল্প বর্ণনা করেন- এক লোক দেখল শয়তান মসজিদের দরজায় দাড়িয়ে আছে, ভেতরে ঢুকতে পারছে না। লোকটি ভেতরে তাকিয়ে দেখল, একজন লোক শুয়ে আছে আরেকজন দাড়িয়ে নামায পড়ছে। তখন সে শয়তান কে জিজ্ঞেস করল, যে লোকটি নামায পড়ছে তার কারনে কি তুমি মসজিদে ঢুকতে পারছনা? শয়তান উত্তর দিল- যে লোকটি শুয়ে আছে তার কারনে। কেন? তার মনের অবস্থার কারনে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি যখন ওযু করছেন আপনার মনের উদ্দেশ্য বা নিয়ত টি কি? আমরা বেশির ভাগ বলব নিজেকে নামাজের জন্য প্রস্তুত করা। কিন্তু আমাদের অন্তর কে এখানে আরেকটু গভীরে প্রবেশ করাতে হবে এবং আরেকটি উদ্দেশ্য যোগ করতে হবে- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এটা অনেকটা কিছু দান করার মত। আপনি যখন বাড়ি ফেরার পথে ভিখারিকে কিছু টাকা দিলেন, আপনি হয়ত তা নিয়ে আর তেমন কোন চিন্তা ই করবেন না। কিন্তু যখন আপনি এই নিয়তে টাকাটা দিবেন, যে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একজন অভাবীকে সাহায্য করছেন, তখন আপনার মনে অন্যরকম এক অনুভূতি আসবে, আপনি আরও অনুপ্রাণিত বোধ করবেন। আপনি নিজেকে সৃষ্টিকর্তার আরও নিকটে বোধ করবেন, তা ৫ টাকা দিয়েই হোক অথবা ৫০ টাকা। আরেকটি উদ্দেশ্য যোগ করুন, সেটি হল আমাদের প্রিয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সুন্নাহর অনুসরণ। আমাদের আরও নিখুঁতভাবে ওযু করার আগ্রহ জাগবে যখন আমরা চিন্তা করব আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কিভাবে ওযু করতেন। আমার মনে পড়ছে তখনকার কথা যখন আমি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুসরণের উদ্দেশ্যে ছোট একটি পাত্রে ওযুর পানি নেই, এটি আসলেই আমাকে আরও উদ্দিপ্ত করে এবং আমি বুঝতে পারি ওযু করতে আমাদের কতই না অল্প পানির প্রয়োজন হয়। পরিশেষে আমরা আরেকটি মাত্রা যুক্ত করতে পারি যাতে ওযুর ব্যাপারে আমরা আন্তরিক হতে পারি এবং একে আল্লাহর কাছে পছন্দনীও করতে পারি। তা হল- আমাদের কিছু গুনাহ মুছে ফেলার নিয়ত। ওযু হল পবিত্রতা আনয়নকারী কারন এটি আমাদের ছোট গুনাহ গুলকে ধুয়ে ফেলে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন – ‘যে বেক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে তার শরীরের গুনাহগুলি ধুয়ে যাবে, এমনকি তার আঙ্গুলের নখের নীচ থেকেও।’ (মুসলিম) ওয়াসওয়াসা অনেকে নিখুঁতভাবে তাদের ওযু এবং নামায করার সময় এক কঠিন সমস্যার মুখমুখি হয়- ওয়াসওয়াসা; যা একধরনের মনের ফিসফিসানি, এখানে এটি একধরনের সন্দেহবাতিক বোঝায়। উদাহরনস্বরূপ, এমন বেক্তি যে নিখুঁত করার জন্য সন্দেহবশতঃ একাধিকবার ওযু করে এবং ঠিক হল কি হল না এই সন্দেহে একাধিক বার নামায ও পড়তে চায়। আপনার যদি এই সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তার সমাধান ও আছে ইনশাল্লাহ। অনেকে এটি প্রয়োগ করেছেন এবং বলেছেন তারা আল্লাহর রহমতে আরোগ্য লাভ করেছেন। আলেমরা বলেন, যারা এরকম তীব্র সন্দেহে ভগেন তারা যেন তাদের কাজগুলোর ব্যাপারে উত্তমটাই ধরে নেয়। যেমন কারো যদি সন্দেহ হয় আমার ওযু আছে কি নেই, তবে যেন তারা ধরে নেয় তাদের ওযু আছে। যদি কারো মনে হয় আমি কি তিন রাকাত পরলাম না চার রাকাত, সে যেন চার রাকাত ধরে নেয়। কেউ কেউ এতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। আসুন তাহলে এ ব্যাপারে মনে জাগা কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই। প্রথমত, আমরা কেন বারবার ওযু করব? আমাদের ভয় আমরা ঠিক মত ওযু করিনি বা আমাদের ওযু নেই এবং আল্লাহ হয়ত তা কবুল করবেন না। যেহেতু আপনি এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করছেন, জেনে রাখুন- আল্লাহ চান না আপনি বারংবার ওযু করবেন। কিভাবে বুঝবেন? মহানবী (সাঃ) বলেনঃ “কেউ যদি পেটের অস্বস্তিতে ভোগে এবং নিশ্চিত হতে না পারে যে সে বায়ু ত্যাগ করেছে কিনা, সে যেন মসজিদ ত্যাগ না করে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে শব্দ বা গন্ধ পায়।” (মুসলিম) এভাবে সে যেন ১০০% নিশ্চিত হয়। ওযুর পরের কিছু দোয়া কিছু দোয়া আছে যা ওযুর করে পড়া উচিত। “আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুল্লাহি ওয়া রাসুলুহ” (আমি সাক্ষ্য দিছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল।) তাহলে তাঁর জন্য বেহেস্তের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোন দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।(মুসলিম) আবার, “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা লা ইলাহা ইল্লা আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক” এটি তাঁর জন্য শ্রেষ্ঠতম কাগজে লিপিবদ্ধ করে সীলমোহর দিয়ে বন্ধ করে রাখা হবে, যা কেয়ামত দিবসের আগে খোলা হবে না। (সহিহ আল জামিই) আল্লাহ আমাদের হৃদয় দিয়ে ওযু করার তৌফিক দিন। আমীন।


চলেব...............................
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:১১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×