somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাফাকুমের পথে তিন্দু,বড় পাথর,রেমাক্রি আর স্রোতস্বিনী সাঙ্গু

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাফাকুম ,রেমাক্রি,তিন্দু,স্রোতস্বিনী সাঙ্গু নদী এসব :
বর্ষায় পাহাড়ের রুপ সবচেয়ে ভয়ংকর সুন্দর থাকে । পাহাড় থাকে সবুজ আর ঝর্ণাগুলো ভরে উঠে বৃষ্টির পানিতে । আমার কাছে বর্ষার ঘোরলাগেছে বহু আগেই । এরকম বর্ষার সময় রওনা হলাম নাফাকুমে পথে,টিমে প্রায় ২২ জনে । এক টিম বিকেলেই পৌছে যায় থানচিতে , গাড়িতে পেতে দেরি হওয়ায় আমরা থানচিতে পৌছি তখন রাত ২ টা । এটাই আমার প্রথম থানচি আসা । ভালোই লেগেছে । পুরো পথই ছিলাম মেঘের অচেনা বন্ধু হয়ে, বাস যখন থানচির পথ বেয়ে উঠছে ,তখন কেবল মেঘমালা । বাসের ছাদেই ছিলাম । যাত্রা পথে বৃষ্টিতে ভেঙ্গে যায় রাস্তা ,গাড়ি থেকে সবাই নেমে যায় । খালি গাড়ি সেই রাস্তায় কোনভাবে পার হয় । যাহোক ওখানে হালকা বিরতির সুযোগ হয় । চা পানের আড্ডা ,অদূরেই চারপাশে পাহাড় । পাহাড়ের বুকে জমে থাকা মেঘ । তখন থানচি ব্রীজের কাজ প্রায় মাঝিমাঝি । নৌকায় সা্ঙ্গু পার হয়ে বাজার । রাত যাপন থানচি গেষ্ট হাউস । গাইড পাতেং মারমা । সব কিছু আয়োজন শেষ । সকাল হলেই নাফাকুম । রাতে ভালই বৃষ্টি পড়েছে। তবে সারা রাত সবাই জেগে ছিল সবাই আড্ডা ,কার্ড এসব । সকাল হতেই প্রস্তুত আমাদের ৩ টি নৌকা । সকাল ৮ টায় ছেড়ে দেয় ইন্জ্ঞিনের নৌকা । সাঙ্গুর তীব্র স্রোতের বিপরীতে আমাদের বোট(নৌকা)। নদীর দুপাশে’র পাহাড়.পাহাড়ে শরীরজুড়ে সাজানো সবুজ ,কোথাও কোথাও সেই সবুজের গায়ে লাগে থাকা সাদা মেঘ । পথেই তিন্দু বাজার । স্রোতস্বীনি নদীর পাশেই তিন্দু বাজার । আমাদের নৌকায় যান্ত্রিক সমস্যা সারানো জন্য অপেক্ষা,এসময়ই ঘুরে দেখলাম তিন্দু বাজার । তীব্র স্রোতের পথগুলো পর্যটক নামিয়ে দেয় নৌকা থেকে । ভাল সাঁতারুর আত্মবিশ্বাস! আমি কখনোই নৌকা থেকে নামতাম না । স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে উঠানামা করত নৌকা । এই অনুভুতি কেবলই নিজে নৌকাতে থাকলেই বুঝা যাবে! রেমাক্রি পথে পথে বড় পাথুরে জঙ্গল । পাথরের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চলছে আমাদের বহনকারী নৌকা । সবাই গলা ছেড়ে গান ধরেছে ……ঝর্ণা’র ছন্দে ঢাল বেয়ে নেমে আসে দুরন্ত পাহাড়ী মেয়ে,তার বুকে গভীর গর্জে উঠে….. । রেমাক্রি ফলস পেরিয়েই রেমাক্রি বাজার । নদীর পাশে উচু পাহাড়ের বাজার । বাজার তেমন বড় নয় । তখন দুপুর ১২ টা । রেমাক্রি গেষ্ট হাউসে আমাদের থাকার ব্যবস্থা । যেহেতু ফিরে আসতে হবে তাই বেশী সময় না নিয়ে আমরা রওনা হলাম নাফাকুমের পথে,বিশাল টিম,মাত্র একটা দড়ি,আর ২ টা টর্চলাইট এই আমাদের প্রস্তুতি ।
নাফাকুমের পথে তীব্র স্রোত তবে সবজায়গায় গভীরতা বেশি নেই । কিছু জায়গা স্রোত বেশি ছিল । টিমের সদস্য শান্ত দা তো প্রায় ভেসে যাচ্ছিল । কোন রকমে সেভ করলাম । কখনো জলে কখনো ডাঙ্গায় এভাবে চলছে হাঁটা । কতবার যে এই তীব্র স্রোত পার হতে হয় । একবার তো পথই চিনছে না পাতেং (গাইড) ,ওকে বললাম আমি সাঁতার দিয়ে দেখি এদিকের গভীরতা কেমন ? আমি আর মনোজ দা সাঁতার কেটে পার হলাম । গভীরতা গলা সমান আর স্রোতও ব্যাপক । মাঝপথে একটু উচু জায়গায় দাঁড়িয়ে দড়ি ফেললাম ওপারে । এই দড়িই একমাত্র ভরসা । পাতেং সবাইকে কিছু জায়গা পার করিয়ে দিচ্ছি,এরপর আমার হাতে ধরে দিচ্ছিল। এভাবেই পার হল সবাই । নাফাকুমের পথে পথেই এমন সব । তাছাড়া হাটার পথে বৃষ্টির পানি বেশ পিচ্ছিল । প্রায় ৪ টায় আমরা নাফাকুমে পৌছায় । এত প্রশস্ত জলপ্রপাত খুব কমই আছে । ভালো লাগার নাফাকুম । বৃষ্টিতে ভিজে আছে চারপাশ । ঝর্ণার পানির স্রোত বেশি । অবাক তাকিয়ে রয় । বিরতিহীন পানির স্রোত ধারা । অবিরাম । অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে এবার ফেরা পালা । সেটা মোটেও সুখকর ছিল না । অল্পকিছু হাঁটার পর চারপাশে অন্ধকার নেমে আসে । অমাবস্যার রাত ,তার উপর ২২ জন মানুষে জন্য মাত্র ২ টা টর্চলাইট । আলো স্বল্প হাঁটার গতিকে ধীর করতে বাধ্য করে । এই অন্ধকারই পাড়ি দিতে হয় নদী । কোথাও বুক সমান পানি আর কোথা্ও চিবুক সমান । পানি উপর উড়ে বেড়েছে মশার দল । কোথাও আবার পিচ্ছিল পথ,হালকা পানি গড়িয়ে পড়ছে,এক এক সবাইকে ধরে পার করাছিলাম । নায়ানগন্জ্ঞের ব্যাংকার আনোয়ার হাত ধরেছি মাত্র ,এক পা দিতে তিনি তার শরীরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে,নিচু হয়ে যাই আনোয়ার ভাই ।আমি ধরে ছিলাম তার হাত । কীভাবে যে রক্ষা করলাম নিজেই বুঝতে পারিনি । আমি বুঝেছি যাই হোক হাত ছাড়া যাবে না । সেইদিন হয়তো একটা বড় দুর্ঘটনার খাদের কিনার তাকে রক্ষা হল । ততক্ষণে গাইড পাতেং এসেই ধরে তুলল আনোযার ভাই কে । নীচেই নদী, গড়িয়ে পড়লেই খুজে পাওয়া সম্ভব না হয়তো । যাহোক এমনই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমরা যখন রেমাক্রি বাজার পৌছায় তখন রাত ১০.৩০ এর মত ,তীব্র বৃষ্টি, সবাই ভিজে একাকার। বাজারে সব মানুষই আমাদের অপেক্ষায় ছিল । পেটেই ক্ষুধাও অনেক ,ভিজা কাপড়ে খাবারের পাতে বসে যায় । খাবারে পাতে –শামুক,ব্যঙ,মুরগী সবই, সাথে তো নাপ্পি ছিলই ।ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবীর কোন কবিতাই ভাল লাগে না ।এমন কান্তি কর ভ্রমণের পর ,কাপড় চেন্জ করেই ঘুম । সকালে উঠে গাইড পাতেং বলল,আপনাকে নিয়ে সাকাহাফং যাব । সকালটা কাটিয়েছি রেমাক্রি ফলসে.. সফল ট্রিপ শেষে, নৌকায় করে যথন ফিরছি তখন বড় পাথর,তিন্দু ,নাফাকুমে সেই তীব্র স্রোত,বৃষ্টি’র কথা যখন মনে পড়ছে তার সাথে আনোয়ার ভাইয়ে’র সেই কথাটিও কানে বাজছিল প্রায় ‘সমীর আমি কি বেঁচে আছি?” — — at Thanchi Upazila.
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×